আলোর জীবন কাহিনী by Rahuldas - অধ্যায় ১৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-15030-post-820838.html#pid820838

🕰️ Posted on August 31, 2019 by ✍️ ronylol (Profile)

🏷️ Tags:
📖 805 words / 4 min read

Parent
দেখতে দেখতে আরও দুই বছর কেটে গেল | যিষ্ণু আর আমার প্রেম লীলা একটুকুও কমে নি | বরঞ্চ আমাদের বন্ধন যেন আরও গভীর হয়ে গেল | ছয় মাস পর দীপ্তি খবর দিল যে সে আবার মা হতে চলেছে | কয়েক মাস পর দীপ্তির আর একটি মেয়ে হলো | যিষ্ণু কে ঠাট্টা করে বলেছিলাম, “কেমন লাগছে চার চার টে বাচ্চার বাপ হয়ে |” যিষ্ণু সিরিয়াস মুখে জবাব দিল, “চেয়েছিলাম তো একটি বউ এর সাথেই বাস করব আর তার বাচ্চার বাপ হব, কিন্তু তোমার পাল্লায়ে পরে আমার দুটো বউ আর দুটো বৌএর বাচ্চার বাপ হলাম | সব থেকে কষ্টের ব্যাপার হলো, দুটো বাচ্চা কে আমি কাছে পাই না |” শুনে আমার খুব খারাপ লাগলো | যাই হোক, দীপ্তি আর আমি, আমাদের ছেলে মেয়েদের মানুষ করতে ব্যাস্ত হয়ে পরলাম | যিষ্ণু একটি বাড়ি করলো কলকাতার থেকে ২০ কিমি দূরে | কাউকে এই ব্যাপার টি জানায় নি | আমকে যিষ্ণু সেখানে নিয়ে যেত | আমরা সেখানেই দুজনে মিলিত হতাম | এই ভাবাই আমাদের জীবন কাট তে লাগলো | দেখতে দেখতে আমার জীবনের ৫৪ টি বছর পার হয়ে গেল | আমার মেয়ে টিয়া, তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে | ছেলে দেবব্রত, ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরি করছে | দীপ্তির তখন ৫২ বছর বয়স | দীপ্তির বড় মেয়ে তানিয়া, আর ছোট মেয়ে পাপিয়া, তাদের দুজনার ও বিয়ে হয়ে গিয়েছে | হঠাত একদিন খবর পেলাম, দীপ্তি হসপিটালে ভর্তি হয়েছে, সিরিয়াস অবস্থা | লাস্ট স্টেজ এ ধরা পরেছে স্প্লীন ক্যান্সার | গিয়ে দেখি দীপ্তি বিছানায়ে শুয়ে আছে, আমাকে বলল, “আলোদি, তুমি এসেছ, খুব ভালো | আমার সময় হয়ে গিয়েছে, মেয়ে জামাই দের তোমার জিম্মায়ে রেখে গেলাম, তুমিও তো ওদের মা | একটু খবর রেখো ওদের |” বললাম, “কি যা তা বলছিস, তুই ঠিক হয়ে জাবি, তুই নিজেই তোর্ মেয়ে জামাই দের খবর রাখতে পারবি |” দীপ্তি হেসে বলল, “না আলোদি, আর আমার বেশি দিন বাকি নেই | ডাক্তার তিন মাস সময় দিয়েছে |” শুনে আমি চুপ করে গেলাম | যিষ্ণু ও সেখানেই ছিল | কিছুক্ষণ পর যিষ্ণু একটু বেরিয়ে গেল | তখন দীপ্তি বলল, “আলোদি, তুমি কি দুই এক দিনের মধ্যে একটু সময় নিয়ে আসতে পারবে | তোমার সাথে আমার একটু কথা আছে |” “কি কথা রে |” আমি প্রশ্ন করলাম | “তেমন কিছু না, তোমার সাথে বসে একটু কথা বলতে ইচ্ছে করছে |” দীপ্তি বলল | আমি বললাম, “ঠিক আছে দেখি, আসবো একদিন সকাল সকাল |” দীপ্তির মেয়ে জামাইরা ও ইতিমধ্যে খবর পেয়ে কলকাতা চলে এসেছে | আমাকে দেখে তানিয়া আর পাপিয়া খুব কাঁদতে লাগলো, খুব খারাপ লাগছিল | প্রায়ই দীপ্তি কে দেখতে যেতাম বিকেলে, এক দের ঘন্টার জন্য | দিন কুড়ির মধ্যে দেখলাম দীপ্তি যেন আরও দিন দিন শুকিয়ে যাছে | তা সত্তেও, দীপ্তি বাড়ি যেতে চাইছিল | ডাক্তার ও আপত্তি করলো না | দীপ্তি কে বাড়িতে নিয়ে আসা হলো | যিষ্ণু কেও দেখলাম ভীষণ মনমরা | মেয়ে দুটো যাতে কান্না কাটি না করে তাই নিজেকে শক্ত করে রেখেছে | মনে পরে গেল দীপ্তি আমাকে একদিন সকাল সকাল যেতে বলেছিল | পর দিন সকাল দশটা নাগাদ দীপ্তির বাড়ি গেলাম | দীপ্তি একা ঘরে শুয়ে আছে | দীপ্তি আমাকে দেখে একটু হাসলো | বললো, “আমাকে ধরে একটু বসিয়ে দাও না |” পেছনে দুটো বালিশ দিয়ে দীপ্তি কে বসিয়ে দিলাম | জিজ্ঞেস করলাম, “যিষ্ণু কোথায় |” বললো, “এই এক ঘন্টা আগে গেল | সারা রাত এখানে ছিল, কাল রাত্রে আমার শরীরটা ভীষণ খারাপ হয়েছিল, অক্সিজেন দিতে হয়েছিল | এখন আনেক ভালো আছি তাই যিষ্ণু কে অন্য ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছি বিশ্রাম নিতে |” পাপিয়া আর তানিয়া তাদের শশুর বাড়ি গিয়েছে, বিকেলে ফিরবে | আমি দীপ্তির পাসে বসে ওর হাথ ধরলাম | ভীষণ রোগা হয়ে গিয়েছে | কিছক্ষন চুপ করে থাকার পর দীপ্তি বলল, “আলোদি, তোমাকে একটা কথা বলছি, রাগ কোরো না আমার উপর, কেমন,” একটু চুপ করে থেকে আবার বলল, “তোমার আর যিষ্ণুর সম্পর্ক কি আমি সব জানি |” মাথায় কে যেন একটা হাতুড়ি দিয়ে মারলো | সারা গা হাথ পা কাঁপতে লাগলো, ভয়ে না লজ্জায়ে জানি না | মুহুর্তের মধ্যে মনে হলো, কি করে জানলো | মুখ, কান গরমে লাল হয়ে গেল | কোনো কথা বলতে পারছিলাম না | কিছুক্ষণ পর টের পেলাম, দীপ্তি আমার হাথ ধরে নাড়াচ্ছে | তাকালাম ওর দিকে | দীপ্তির চোখে মুখে তখন যেন প্রচন্ড একটা শান্তির ছাপ | আমার হাথ টা ধরে বলল, “ভয় পেয় না, এত বছর কাউকে বলিনি যখন, কোনো দিন কাউকে বলব না |” আমি তখনো চুপ করে আছি | দীপ্তি আবার বলল, “আসলে আমরা কেউ ঠিক ভাবে যিষ্ণুকে চিনতে পারিনি | ও কোনো দিন কাউকে ঠকাতে বা দুঃখ দিতে পারে না | সব সময় চায় অন্যদের কি করে সুখী রাখবে, কি করে সবাইকে হাসি খুশি রাখবে | নিজে খুব চাঁপা, নিজের কোনো অসুবিধা কাউকে বলেও না আর কখনো চিন্তা ও করেনা |” মনে মনে বললাম, ‘ঠিক চিনেছে ও যিষ্ণুকে’, কিন্তু মুখে কিছু বললাম না, চুপ করে থাকলাম | বেশ কিছুক্ষণ চুপ চাপ থাকার পর দেখলাম দীপ্তি ক্লান্ত হয়ে চোখ বুঝে আছে | আমার হাথটা তখনো ওর হাথের মধ্যে | আস্তে হাথ টা বের করতে যেতেই, দীপ্তি আবার আমার হাথ টা চেপে ধরে বলল, “যেও না |”
Parent