ভালবাসার রাজপ্রাসাদ Written By Pinuram - অধ্যায় ৬১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-5264-post-212262.html#pid212262

🕰️ Posted on February 28, 2019 by ✍️ sorbobhuk (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1366 words / 6 min read

Parent
Part Omega বুকভাঙ্গা অশ্রু (#01) জীবন বড় বেদনাদায়ক, ঠিক যেন দাবার ৬৪ ছকে বাঁধা, একটা ছোটো ভুল কত বড় রুপ নিয়ে দাঁড়ায় সেটা কি আর কেউ জানত? অভির আর পরীর জীবনে এই রকম একটা ছোটো ভুল পদক্ষেপ ওদের জীবন তছনছ করে দেয়। সকাল বেলা, প্রায় দশটা সাড়ে দশটা নাগাদ, অভি বসার ঘরে বসে চায়ের কাপে আরাম করে চুমুক দিচ্ছিল। পরী রান্না ঘরের কাজে ব্যাস্ত ছিল। আকাশ সকাল থেকে মেঘলা, কোলকাতার বৃষ্টির ঠিক ঠিকানা নেই কখন কি ভাবে এসে পরে। মা সেইদিন আর স্কুলে যাননি, তাঁর আগের দিন, মায়ের শরীর একটু খারাপ ছিল। এমন সময়ে ওপরে নিজের ঘর থেকে মায়ের গলা শুনতে পেল অভি, মনে হয় অভির ঘরে বিছানার চাদর বদল করছিলেন। মা নিচে নেমে অভির দিকে রক্তাক্ত চোখে তাকিয়ে পরীকে ডাক দিলেন, "পরী এদিকে আয়।" মায়ের হাতে বালিশের কভার। পরী ওর ছোটমায়ের গোল এত গম্ভির হতে পারে, ভাবতে পারেনি। হন্তদন্ত হয়ে রান্না ঘর থেকে ছুটে এসে মাকে জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছে ছোটমা?" মা ওকে জিজ্ঞেস করলেন, "তুই সকাল থেকে তোর মুক্তোর কানের দুল খুজছিলিস, পেয়েছিস সেটা?" পরী অভির দিকে হাঁ করে তাকিয়ে, অভি জানেনা যে পরী ওর কানের দুল হারিয়েছে। মাকে উত্তর দেয়, "না ছোটমা, এখন খুঁজে পাইনি।" মা বালিশের কভার থেকে কানের দুল বের করে পরীর সামনে ধরে জিজ্ঞেস করলেন, "এটা কি তোর কানের দুল?" মায়ের হাতে পরীর মুক্তোর কানের দুল দেখে, অভির গলা শুকিয়ে যায়, বুকের মাঝে এক ভয় ঢুকে খাঁ খাঁ করে দেয়, সারা শরীরের রক্ত যেন মুখের ওপরে এসে জমা হয়ে যায়। ওর মাথায় যেন কেউ গরম তেল ঢেলে দিয়েছে। পরীর কান মুখ লাল, ভয়ে মৃদু কাঁপছে পরী। কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মায়ের দিকে তাকিয়ে। মা অভির দিকে তাকিয়ে হিম শিতল কণ্ঠে বলেন, "পরীর কানের দুল, তোর বালিশের কভারে, কেন? এর কি ব্যাখা আছে শুনি?" বড় নিঃশ্বাস নেয় অভি, "পরী হয়ত আমার ঘরে কোন কাজ করতে গেছিল সেই সময়ে ওর কানের দুল হয়ত পরে গেছে। আমি কি করে জানব, কখন পড়েছে।" মা দাঁতে দাঁত পিষে অভির দিকে তাকিয়ে বলেন, "কাল রাতে খাওয়ার সময়ে ওর কানে আমি দুল দেখেছিলাম আর আজ সকালে সেই দুলের একটা তোর বিছানায়।" মা পরীর দিকে দু পা এগিয়ে, ঘাড়ের কাছ থেকে চুল সরিয়ে দেখে যে ঘাড়ে অভির দাঁতের লাল দাগ। মায়ের চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে, "তোর ঘাড়ে এই লাল দাগ কিসের?" পরী দুচোখ বন্ধ করে নেয়, দাঁতে দাঁত পিষে বুকের মাঝের ভয় টাকে সংবরণ করতে প্রবল চেষ্টা করে। ভয়ে গা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায় পরীর। মা পরীর মুখের দিকে তাকিয়ে ঠাণ্ডা গলায় গর্জে ওঠেন, "তাহলে ব্যাপার এত সঙ্গিন যে, তোর কাঁধে দাঁতের দাগ। হ্যাঁ?" অভি মাথা নিচু করে মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, চোখে জল, কান গরম হয়ে গেছে অভির, গলা শুকিয়ে এসেছে। মা সপাটে এক থাপ্পর কষিয়ে দেন অভির গালে আর রাগে চিৎকার করে ওঠেন, "আমার নাকের নিচে থেকে এই কান্ড?" রাগে কাঁপতে কাঁপতে মা সোফায় বসে পড়েন। মাথায় হাত দিয়ে বলেন অভিকে বলেন, "আমি স্বপ্নেও ভাবিনি যে তুই ওর সাথে এই রকম করবি।" পরী মায়ের কাছে এসে কিছু বলতে চেষ্টা করে, কিন্তু মায়ের লাল চোখ দেখে সাহসে কুলায় না পরীর, চুপ করে পাথরের মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে থাকে মায়ের পাসে। মা পরীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন, "এটা কি পরী, তুই ওর চেয়ে বড়, আর তুই... সম্পর্কে তুই ওর মাসি।" পরী মায়ের পায়ের কাছে বসে পরে, মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকে এক ভাবে। অভি পরীর হাঁটু গেড়ে থাকা দৃশ্য সহ্য করতে পারেনা, বুক ফেটে যায় ওর। মা অভির দিকে রোষ কষিত নয়নে দেখে বলেন, "তোর একবারের জন্যেও মনে হল না যে পরী তোর মাসি আর তুই পাপ করছিস? এই সব শুধু তোর লালসার কারন, তোর গায়ের গরম রক্তের জন্যে তুই মেয়েটার জীবন অপবিত্র করে দিলি?" পরীর চোখের জল মায়ের পায়ের কাছে, মেঝেতে টপ টপ করে পরে। কারুর মুখে কোন কথা নেই কিন্তু মনে হল যেন ওই চোখের জলের বুক ফাটা শব্ধ ওদের নিস্তব্ধতা খানখান করে দিচ্ছে। পরীর বুক কেঁপে ওঠে থেকে থেকে ডুকরে কেঁদে ওঠে। মা অভির দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে ওঠেন, "কুলাঙ্গার তুই, আমাদের মুখে মুখে কালি দিয়ে দিলি। এই সব কিছু তোর পাপের ফল।" আর থাকতে না পেরে অভি জোর গলায় উত্তর দেয়, "আমি পরীকে ভালোবাসি।" মা বিশ্বাস করতে পারেন না, জোর গলায় জিজ্ঞেস করেন, "কি? তুই শেষ পর্যন্ত এই দিলি আমাকে আর ওকে? তুই ভালোভাবে জানিস যে পরী তোর চেয়ে বয়সে বড়, সম্পর্কে তোর মাসি হয়। আমার সম্পর্কে বোন আর তোর দিদার মেয়ে।" অভি মাকে বুঝানোর চেষ্টা করে, "মা, পরী আমার মাসি নয়, মা। ও তোমার বোন হতে পারে, কিন্তু আমার মাসি নয়। ও তোমার অনেক দূর সম্পর্কের বোন মা সেটা তুমি ভালো করে জানো মা। মা আমাদের মাঝে রক্তের কোন সম্পর্ক নেই মা। ও আমার মাসি নয়, আমি ওকে ভালোবাসি।" মা মাথা নাড়ান, "না না না, এ হতে দিতে পারি না আমি।" মা পরীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন, "তোর মাথায় কি চলছিল, যখন অভি তোর সাথে এই সব করছিল? তোর একবারের জন্য কিছু মনে হয় নি, পরী? বল, পরী, তুই কি অভিকে ভালবাসিস?" পরী মাথা দোলায়, হ্যাঁ অভিকে ও ভালবাসে। ওই কথা জানার পরে মায়ের দুচোখে জল চলে আসে। দুঃখে বা ভালবাসায় নয়, রাগে আর ঘৃণায় চোখে জল আসে মায়ের। পরীর চিবুকে আঙুল দিয়ে পরীর মুখ উঁচু করে নিজের দিকে ফেরায়। পরী দুচোখ শক্ত করে বন্ধ করে রাখে। মা ওকে জিজ্ঞেস করেন, "একবারের জন্যেও তোর আমার কথা, তোর মায়ের কথা মনে পরেনি? একবারের জন্যেও না? আমি যে তোদের দুজনকে একসাথে বড় করেছি রে।" পরীর বুক ফাটা আর্তনাদ যেন শুধু একা অভি শুনতে পায়। দুচোখে অবিরাম স্রাবনের ধারা বয়ে চলে। অভির বুকের মাঝে যেন এক বিশাল রেল গাড়ি ঝম ঝম করে দৌড়ে চলে যায়। মাকে আবার একবার বুঝানোর চেষ্টা করে অভি, "মা, পরী, তোমার মায়ের মামার ছোটো মেয়ের ছোটো মেয়ে, মা। দেখতে গেলে আমাদের মধ্যে কোন রক্তের সম্পর্ক নেই মা। হ্যাঁ আমার চেয়ে বড় হতে পারে পরী, কিন্তু মা আমি ওকে ভালোবাসি আর বয়সের ব্যাবধান কোন বাধা নয় মা।" মা ওর দিকে তাকিয়ে গর্জে ওঠেন, "তুই চুপ কর। তুই সত্যি আমাদের জন্য এক কলঙ্ক। সেই ছোটো বেলা থেকে তুই কোন দিন আমাদের কথা শুনিস নি, নিজের কথা মত সবসময়ে কাজ করিস।" মায়ের কথা আর সহ্য করতে পারেনা অভি, সব সময়ে শুধু একই কথা যে ও কুলের নাম ডুবিয়েছে। মায়ের দিকে চিৎকার করে ওঠে অভি, "আমি তোমার ছেলে হয়েও কেন তোমার ভালোবাসা পেলাম না মা, কেন?" অভির কানে সেই প্রথম অকাঠ সত্য কথা প্রবেশ করে। মা ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দেন, "আমি আর তোর বাবা, কোনদিন ছেলে চাই নি, কিন্তু ভগবান বিরূপ। সেই আমাকে ছেলেই দিল। আমাদের শারীরিক কিছু কারনে আর আমার কোন সন্তান হল না। আমি ছেলে চাই নি।" হাতের মুঠি শক্ত করে নেয় অভি, একি শুনছে, "আমার জন্মে আমার কি দোষ মা। আমি সারা জীবন শুধু দুঃখ পেয়ে গেলাম তোমাদের কাছে। আমার যা কিছু ভালো লাগে তাই তোমরা কেড়ে নিয়েছ। আমার মনের শান্তি, আমার পেন্টিং আরও অনেক কিছু। মা দয়া করে পরীকে আমার কাছে থেকে কেড়ে নিও না মা। আমি মরে যাবো, পরী বাঁচবে না মা।" সারা ঘর নিস্তব্ধতায় ডুবে যায়। বাইরের আকাশ যেন আরও কালো হয়ে আসে। থেকে থেকে মেঘ গর্জন করে ওঠে। ঘরের পরিবেশ মেঘের সাথে সাথে, কালো হয়ে আসে। পরী বুকের মধ্যে সাহস সঞ্চয় করে মায়ের হাতে হাত রেখে ম্যের দিকে তাকায়। মা পরীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "তোর কি বলার আছে?" পরী কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, "ছোটমা, অভিকে আমার কাছ থেকে দুরে সরিয়ে দিও না ছোটমা, আমি বাঁচবও না ছোটমা।" মা দাঁতে দাঁত পিষে মাথা নাড়ান, "না না, আমি বেঁচে থাকতে এ পাপ হতে দিতে পারিনা। সমাজ কি বলবে? আমাদের আত্মীয় সজ্জন কি বলবে?" অভি চিৎকার করে ওঠে, "কোথায় ছিল তোমার সমাজ যখন দাদু মারা যান? কোথায় ছিল তোমার আত্মীয় যখন পরীর মুখে দুধ জটেনি? কেউ আসে নি ওকে দেখতে। তুমি ওকে দুধ খাইয়েছিলে মা, তুমি ওকে বড় করেছিলে। আমি সমাজের কথা জানিনা মা, আমি আত্মীয় সজ্জনদের কথাও শুনি না। তুমি কি ভাব সেটা বল, মা।" মা খানিক ক্ষণ চুপ করে থেকে উত্তর দেন, "আমি আর তোর বাবা এই সমাজের এক সনামধন্য ব্যাক্তি। আত্মীয় সজ্জন, পরিবার পরিজন মিলে সমাজ তৈরি। আমি বেঁচে থাকতে এই পাপ হতে দিতে পারিনা। অভি, তুই পরীর ধারে কাছে থাকতে পারবি না। তোরা দুজনে একসাথে থাকতে পারিস না। আমি চাই না তুই পরীর হাজার মাইলের মধ্যে আয়। আজই তোকে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে।" মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে অভি, মা কি বলছেন? মা ওকে বাড়ি ছাড়া হতে বলছেন? মা বলে চলেন, "আমি মাসিমা কে, পরীর মাকে কথা দিয়েছি যে আমি ওকে দেখব। যত দুঃখ কষ্ট হোক, আমি আমার কথা রাখব। আজ থেকে তেইশ বছর আগে, আমি এই বুক কেটে দু ভাগ করে পরীকে বড় করেছিলাম যাতে ও বেঁচে থাকে। আজ আবার আমি সেই বুক কাটতে রাজি, যাতে ওর স্বপ্ন পূরণ হয় আর ও বড় হতে পারে।"
Parent