ভৌতিক গল্প সংকলন (সমাপ্ত) - অধ্যায় ৩৪

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-56866-post-5374416.html#pid5374416

🕰️ Posted on October 8, 2023 by ✍️ Sanjay Sen (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 697 words / 3 min read

Parent
|| রাগ || কলমে:- রিয়া মুখার্জী চৈতালী এইবার একটু উঁচু স্বরেই শান্তনু কে বলে উঠলো... এক কথা আর বারবার বলতে পারছি না ফোনটা রেখে দেখো রান্নাঘরে, আমি রোজ পায়ের আওয়াজ পাচ্ছি এখনও আসছে। শান্তনু আবার চোখ উল্টে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিল কাল অ্যাপইন্টমেন্ট নিতে হবে ডক্টর সরকারের, তোমার এই রোজকার পাগলামি আর সত্যি সহ্য হচ্ছে না। চৈতালী রাগ করে উঠে গেছিল জল নিতে, ফ্রিজের দরজা খুলেছিল ...পাশে মেঝেতে পায়ের ছায়া। শান্তনু........ এইবার বাধ্য হয়ে শান্তনু এসে দেখেছিল চৈতালী বোতলটার ছায়া একবার মাটিতে দেখে আঁতকে উঠছে, একবার তার নাম ধরে চেঁচিয়ে উঠছে। বাইরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছিল, বিদ্যুতের আলোয় ঘরময় সত্যি কেমন বিভীষিকা লাগছিল, যেমন ভূতের সিনেমায় লাগে। চৈতালী এইবার ইশারা করে ওকে নিজের কাছে ডাকছিল, ওর ঠোঁটের কোণে কেমন এক অদ্ভুত লোকাতীত হাসির রেখা। ...বাবাই রাগ করে আছো আমার ওপর? শান্তনুর চৈতালীর গলার স্বর শুনে কেমন অসস্তি বোধ হচ্ছিল, গলাটা যেন একটি ১৫-১৬ বছরের মেয়ের, তার নিষ্পলক দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারছিল না। চৈতালী বোতল থেকে খানিকটা জল খেয়ে বলেছিল... আহঃ বহুদিন পর রক্তের স্বাদ পেলাম। শান্তনু মনে মনে গভীর চিন্তায় চলে গেছিল, তার স্ত্রীয়ের এই ভয়ানক মানসিক রোগ কি আদৌ চিকিৎসা করা যাবে? একটা ভয়ঙ্কর জোরে বাজ পড়াতে চৈতালী দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেছিল। .....তুমি আমাকে পাগল ভাবো নাগো? বিশ্বাস করো আমি পাগল না, সত্যি কেউ আছে এইখানে। .....তুমি আর আমি ছাড়া এইখানে কেউ নেই, গোপালের মা সিড়িতে ঘুমোচ্ছে। চলো শোবে এখন, কাল ডাক্তার বাবুকে খবর দেওয়া হবে। ডাক্তারের নাম শুনে চৈতালী আবার কেমন হিংস্র হয়ে উঠেছিল, এইবার সে শান্তনুর কলার ধরে তাকে ঝাঁকাতে শুরু করে। জোরে জোরে চেঁচিয়ে বলে... তুমি আমাকে পাগল বানাতে চাও যাতে কোর্টে আমি পাগল বলে তুমি ডিভোর্স পেয়ে যাও আর তারপর আমার বোন রিমা কে বিয়ে করতে পারো। তুমি কি ভাবো আমি বুঝিনা!! এতো আওয়াজে গোপালের মা চোখ মুছতে মুছতে সেখানে এসে বলেছিল... ও বৌদি, রাতের ওষুধ আবার খাওনি নাকি? গোপালের মাকে দেখে চৈতালী খুব বিরক্ত হয়, মুখ ঘুরিয়ে বলে আবার সে এইখানে হাঁটছিল গোপালের মা, আমি ঘুমাই কি করে। হাতে ধরা কাঁচের বোতল গোপালের মা কে দেখিয়ে স্বর নিচু করে জিজ্ঞেস করে... আর রক্ত লেগে আছে নাকি? গোপালের মা এগিয়ে এসে হাত থেকে বোতলটা নিতে যায় কিন্তু চৈতালী সেটা আরো মুঠোয় চেপে ধরে...চলো বৌদি ঘুমোবে, সকালে থানা থেকে আবার জেরা করতে আসবে, না ঘুমোলে ঠিকমত উত্তর দিতে পারবে না। নাহ্ গোপালের মা তুমি যাও ঘুমিয়ে পড়ো আজ আমি একটা সমাধান করে শোবো, রোজ রোজ রাতে আমাকে এইভাবে ভয় দেখাতে পারবে না সেই অশরীরী! চৈতালীর চোখ যেন রক্তের গোলক, সে ফিসফিস করে শান্তনু কে বললো... আর রেগে থেকো না আমার ওপর, আমাকে ক্ষমা করে দাও। এই বলে সে হাত জোড় করে শান্তনুর সামনে কাঁদতে শুরু করে। এইবার শান্তনুর স্বর যেন একটু রুক্ষ হয়ে ওঠে, সে চেঁচিয়ে বলে ওঠে নো, নেভার!! তুমি নিজের অন্যায় স্বীকার না করা অব্দি প্রতি রাতে এইই হবে। চৈতালী আবার সেই রণমূর্তি হয়ে গিয়ে হাতের কাঁচের বোতলটা দিয়ে শান্তনুর মাথায় বারম্বার ঘা করতে শুরু করে....  শান্তনুর অট্টহাসি সারা ঘরে প্রতিধ্বনি তে পরিণত হয়.... চৈতী কবার মারবে আমাকে?? পরদিন সকালে আবার থানা থেকে এসেছিল, হল ঘরে চৈতালীকে নিয়ে এসেছিল গোপালের মা, অফিসারের সঙ্গে রিমা ছিল। ইন্সপেক্টর রিমাকে প্রশ্ন করলেন আর ইউ সিউর ডাক্তার সরকার যে আপনার পেশেন্ট নিজের স্বামীর খুন করেছে? রিমা চৈতালীর দিকে একটা অপলক ঠান্ডা চাউনি দিয়ে বলেছিল ... হ্যাঁ, ও আমার মামাতো বোন সিভিয়ার স্কিৎজোফ্রনিয়া আছে। ওই ওর স্বামীর সাথে আমাকে নিয়ে সন্দেহ করত, ওর স্বামী আমার কাছে চিকিৎসা করানোর জন্যে আনার পর থেকে। ইন্সপেক্টর এইবার চৈতালীকে জিজ্ঞেস করে মিসেস মিত্তির আপনার ডাক্তার যা বলছেন সেটা কি সত্যি? চৈতালী মুখ খুলে না বলতে গিয়েও আটকে যায়, তার চোখ চলে যায় ফ্রিজের দিকে...আবার আরেকটা রাত আসবে আবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে...শান্তনু তাকে ছাড়বে না। কাঁপা কাঁপা গলায় সে বলে হ্যাঁ ইন্সপেক্টর আমি খুনী!! আমি রাতে ভয় পেলেই শান্তনু রিমা কে ফোন করতো, আমার রাগ হতো... খুব রাগ! সেই রাগে সেদিন কাঁচের বোতল দিয়ে আমি নিজের স্বামীর মাথায় এত জোরে আঘাত করেছিলাম যে উনি মারা যান। বাকি আপনাদের যা বলেছিলাম সেটা আমার নিজের কল্পনা। আমি আর সহ্য করতে পারছি না রোজ রাতে শান্তনু আসে....আমায় গ্রেপ্তার করুন আমি অপরাধী!! চৈতালীকে পুলিশ গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়, রিমা এসে গোপালের মাকে বলে এইবার আপনি মুক্ত আর নিজের বাড়িতে কাজের লোক সেজে থাকতে হবে না। আপনার ছেলের আত্মার শান্তি কামনা করি। এই বলে নমস্কার করে রিমা রওনা হয়। গোপালের মা শান্তনুর ছবিটা বুকে আগলে ধরে বলে... গোপাল সোনা এবার শান্তিতে ঘুমা!!! || সমাপ্ত ||
Parent