ভৌতিক গল্প সংকলন (সমাপ্ত) - অধ্যায় ৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-56866-post-5320282.html#pid5320282

🕰️ Posted on August 10, 2023 by ✍️ Sanjay Sen (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1056 words / 5 min read

Parent
গল্প - ভয় ২ লেখক ও প্রচ্ছদ - বাবান  মানব জীবনকে নানান সব পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে পার করতে হয় প্রতিটা দিন। কোনোটা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা আবার কোনোটা হয়তো না চাইতেও কর্তব্য পালনের উদ্দেশে দিতেই হয় পরীক্ষা গৃহে গিয়ে। সে কক্ষ বিলাসবহুল হোক, বা ছোট্ট কামরা। যাইহোক এসব ফিলোসফিকাল জ্ঞানের কথা বলে আমি বেশি সময় নস্ট করবোনা। তার চেয়ে আসল ঘটনায় আসি। আসলে উপরের ওই কথা গুলি বলার কারণ হলো এই প্রতিদিনের কর্ম ব্যাস্ততায় ঘেরা চেনা জীবনেও হয়তো মাঝে মাঝে এমন কিছু দিনের সাক্ষী হতে হয় মানুষকে যা হয়তো সত্যিই অস্বাভাবিক, অবর্ণনীয়। যার সাক্ষী কেউ হয়তো হতে চায়না কিন্তু সেই অন্ধকার ঠিক নিজের রাস্তা খুঁজে নিয়ে ঢুকে পড়বে ঘরে..... আর তারপর.....!! ঘুমটা হটাৎই ভেঙে গেছিলো সেদিন রাতে। এমন হওয়াটা কোনো বড়ো ব্যাপার নয়। এর আগেও আমার সাথে এমন হয়েছে। উঠে বসলাম বিছানায়। পাশের টেবিলে রাখা ঘড়িটা হাতে তুলে নিয়ে দেখলাম রাত  আড়াইটে। একবার ওপাশ ফিরে তাকালাম। বাবা ছেলে দুজনেই একেবারে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আস্তে করে উঠে ঘড়িটা আবার টেবিলে রেখে  আমার পাশবালিশটা ছেলের পাশে দিলাম। উনি আবার ঘুমের মধ্যে মাঝে মধ্যেই গড়াগড়ি খান। একবার তো সকালে একা ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় বিছানা থেকে পড়েই যাচ্ছিলো সে। ঐটুকু বয়স ওর। পড়ে গেলে খুবই লাগতো। সেই থেকে নজর রাখি আমি। যাইহোক উঠে আরমোড়া ভেঙে এগিয়ে গেলাম বাথরুমের দিকে। আমাদের বাড়ি একতলা। কিন্তু বেশ বড়ো। আসলে পুরানো দিনের বাড়ি বলেই প্রতিটা ঘর বড়ো। এমনকি বাথরুমটাও বিশাল। শুধু সমস্যা একটাই....... ঘরের সঙ্গে সরাসরি যোগ নেই। তাই সোজা ভাষায় বাথরুম না বলে কলঘর বলাই উচিত হবে হয়তো। ঘরের দরজা খুলে বাইরে গিয়ে সেই কলঘরে যেতে হয়। যদিও পুরো জায়গাটাই উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। আর ওপর দিয়েও চাল করা আছে। তাই চোর ঢোকার কোনো ভয় টয় নেই। মিথ্যে বলবোনা.... এতো রকম প্রটেকশন থাকা সত্ত্বেও শুরুর দিকে রাতে একা একা টয়লেটে যেতে একটু কেমন যেন লাগতো। কয়েকবার তো ওকে জোর করে তুলে নিয়ে গেছি। কিন্তু ধীরে ধীরে সেসব ভয় গায়েব হয়ে যায়। এখন তো কোনো ব্যাপারই নয়। তাই সেদিনও কোনো কিছু না ভেবে আমি সোজা গিয়ে দরজা খুলে কলঘরের দিকে চলে যাই। নিজের কাজ সারতে যাবার জন্য এগিয়ে যাচ্ছি এমন সময় যেন অদ্ভুত একরকমের আওয়াজ শুনতে পেলাম। একটু অন্যরকম আওয়াজ। কেউ  বমি করলে যেমন তার মুখ থেকে ওয়াক ওয়াক জাতীয় আওয়াজ বেরিয়ে আসে অনেকটা তেমনি। একবার যেন কেউ চিল্লিয়ে কিছু বলার মতোও হালকা আওয়াজ পেলাম, কাউকে ডাকছে যেন,তারপরে আবার সেই বমির মতো আওয়াজ। কিন্তু শুধুই যেন ঠিক বমির আওয়াজ নয়। যেন কাশির আওয়াজও পেলাম যেন। যদিও দূর থেকে আসছে তাই হয়তো ভুলই শুনছি ভাবলাম। সত্যিই হয়তো কেউ বমি করছে বা চেষ্টা করছে কোনো বাড়িতে।  কারো শরীর খারাপ হয়তো। কিছু পরে আর কিছু শুনতে পেলাম না। আমি আর কিছু না ভেবে নিজের কাজে চলে গেলাম।এমনিতেই এমন রাতে পুরো পাড়া স্তব্ধ ছিল। সেই শান্তি সাময়িক ভঙ্গ করে ওই আওয়াজ দূর থেকে ভেসে আসছিলো, এখন আবার সব শান্ত। ঝিঁঝিঁর ডাক স্পষ্ট কানে আসছে। পাড়ার ভেতর বাড়ি বলে সেইভাবে গাড়ি ঘোরার শব্দ দূষণের ঝামেলা নেই। নয়তো মেন রোডের ওপর হলে দিন রাত নির্বিশেষে প্যা পু করে কান ঝালাপালা করে দিতো যেমনটা আমার বাপের বাড়িতে শুনে বড়ো হয়েছি। আমি আমার কাজ সেরে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলাম। দড়িতে টাঙানো গামছায় হাত মুচ্ছি এমন সময় হটাৎ কেন জানি শরীরটা শিহরিত হয়ে উঠলো! কেন জানিনা! কিন্তু কেমন যেন কেঁপে উঠলাম আমি। ঘাড়ের পেছনটায় কেমন শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। কিন্তু এমন হবার কারণ কি? আজ এতদিন ধরে এই বাথরুমে রাতে আসছি, এমন কি এর থেকেও বেশি রাতে আমি একা এসেছি কলঘরে। কই? কোনোদিন তো এমন হয়নি। হ্যা শুরুতে এমন হতো ঠিকই।   এদিকে দরজার সামনে আলো জ্বলছে তাতে পুরো উঠোনের জায়গাটা আলোকিত। কিন্তু তাও আজ এই এতদিন পর কেন হটাৎ আমার এমন অনুভব হচ্ছে? জানিনা। কিন্তু এই মুহূর্তে অনুভব করলাম আমার এই অজানা ভয় যেন তিনগুন বেড়ে গেলো হটাৎ করেই। যেন কিছু একটা কারণে আমার প্রচন্ড ভয় হচ্ছে হটাৎ। গায়ের লোম খাড়া হয়ে ওঠা যাকে বলে সেই ভয়। যেন এখানে আর এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক নয়। আমি.... যে কিনা এই বাড়িতে এতোদিন রয়েছি সেই আমি টয়লেটের দরজা লাগিয়ে আলো নিভিয়ে দ্রুত গতিতে পা চালিয়ে দরজার দিকে এগোতে লাগলাম। আর ঠিক তখনি দরজার পাশে ঝুলন্ত বাল্বটা কেঁপে উঠলো। একবার, দুবার, তিনবার। ব্যাস আর আমি সেখানে চতুর্থ বার কম্পন দেখার জন্য অপেক্ষা করিনি। জীবনে প্রথম বার নিজের বাড়িতে দৌড়ে ঘরে ঢুকে দরজায় ছিটকিনি দেবার কথা ভুলে ঘরে ঢুকে পড়েছিলাম। এতটাই ভয় হচ্ছিলো আমার! আর বেডরুমে ঢুকে ছেলের পাশে শুয়ে পড়েছিলাম। ওদিকে বর ছেলে দুজনেই আগের মতোই ঘুমিয়ে। কিন্তু আমি যেন ঘুমোতে পারছিনা। চুপচাপ শুয়ে রয়েছি। কি হলো হটাৎ করে? কেন অমন ভয় পেয়ে গেলাম আমি? কিসেরই বা ভয়? এই আমি যে কিনা স্কুলে পড়ার সময় বাপের বাড়িতে রাতে জেদ করে  ছাদে গরমের সময় শুতাম। যদিও একা নয় বাবার সাথেই,  তাছাড়া একা একা ফাঁকা জঙ্গলের রাস্তা ধরে শর্টকাটে কলেজ থেকে ফিরতাম, এমন কি কোচিং থেকে ফেরার সময় একটা শর্ট অন্ধকার গলি ধরে ফিরতাম, জোজো হবার পর কত রাত ওকে বার বার ওই কলঘরে নিয়ে যাওয়া আসা করেছি..... সেই আমি কিনা নিজের ঘরেই ঘাবড়ে গেলাম? আর এমন ভাবে পালিয়ে এলাম? নিজের এমন একটা কাণ্ডে নিজের ওপরেই রাগ হলো ভীষণ। উঠে পড়লাম আবারো। কয়েক সেকেন্ড থেমে নিজেকে তৈরী করে আবারো এগিয়ে গেলাম আমার চেনা কলঘরের দিকে। যত এগোচ্ছে আমার পাদুটো ততই সাহসের সাথে মিশে যাচ্ছে ভয় আবারো। ওই যে রান্না ঘরের দিকটায় হালকা আলো দেখা যাচ্ছে। আচ্ছা? আমি দরজা ভিজিয়ে ছিলাম না? তাহলে আলো আসছে কিকরে? তারপরে মনে পড়লো আমি তো ছিটকিনিই দিইনি। হাওয়ায় খুলে গেছে। আবারো দাঁড়িয়ে পড়লাম। আগে হাত বাড়িয়ে ডাইনিং রুমের আলো জ্বালালাম। চোখের সামনে থেকে অন্ধকার কেটে যেতেই সাহস অনেকটা বেড়ে গেলো। আবারো এগিয়ে গিয়ে রান্নাঘরের আলো জ্বালালাম।  তারপরে ওই খোলা দরজার কাছে গিয়ে বাইরেটা দেখলাম। হ্যা..... এখনো আলোটা কাঁপছে। এখন যেন আরও বেশি বেশি করে কাঁপছে। আশ্চর্য! এই রাতে ঘুমাতে যাবার আগেও ওটা একদম ঠিক ছিল। হলোটা কি হটাৎ করে? তারপরে ভাবলাম এইসব আলো ও এমন হটাৎ করেই যায়। আমি সুইচ টিপে ওটা নিভিয়ে দিলাম। ঘন অন্ধকার এসে জড়ো হলো কলঘরে। আমি ইচ্ছে করেই ওখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। দু পা এগিয়ে গেলাম। এই ভয়টা কিছুতেই চেপে বসতে দেওয়া যাবেনা। আমি কোনো ছোট বাচ্চা মেয়ে নই যে এমন সিলি একটা ব্যাপারে ভয় পাবো। আমি আজ নিজেই একজন মা। আমার ভয় পাওয়া মানায়না। যদিও এতো সাহসের কথা ভাবতে পারছিলাম কারণ পেছনে রান্নাঘরের আলোটা এসে কিছুটা সামনে পড়ছিলো। নয়তো এই এতো সাহসী কথা মাথাতে আসতো কিনা সন্দেহ। তবু অনেকটা ভয় কমেছে বুঝলাম। পুরোটাই একটা ফালতু ম্যাটার ছিল। এই ঠান্ডায় শীতল বাতাস ভেজা হাতে গায়ে লাগতেই ওই শিহরণ অনুভব। আর আমি কিনা আবোলতাবোল ভেবে...... যত্তসব! ফিরে এসে দরজা এবার ভালো করে লাগিয়ে সব লাইট নিভিয়ে আবার ওদের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। অনেকটা রিলিফ লাগছিলো। কিন্তু আমি তো জানতাম না যে ওই সামান্য ভয়ের থেকেও বেশি কিছু অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য!
Parent