ভিন্ন স্বাদের কিছু গল্পের ঠিকানা - অধ্যায় ১৬

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-33818-post-2834088.html#pid2834088

🕰️ Posted on January 13, 2021 by ✍️ Mr Fantastic (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1006 words / 5 min read

Parent
                                         "   নীল বিড়াল  “ নীল বিড়ালটা যখন লাফিয়ে জানালার তাকে নেমে এসে দুই জ্বলন্ত চোখে আমার দিকে তাকাল, ঠিক তখনই বিদিশা দরজা খুলে ঘরে আসে। কোনটা আমার নিয়তি তা আমি ঠিক জানি না, কিন্তু আমার শরীরে সূক্ষ্ম বিদ্যুৎ-তরঙ্গ বয়ে গেল।  বিদিশা দরজার চৌকাঠে থমকে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল জানলার দিকে। হ্যাঁ, নীল বিড়ালের কথা ও জানে। বিড়ালটা অবশ্য বিদিশাকে লক্ষ্য করছিল না, সে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আমার দিকে। বিদিশা ধীরে ধীরে মুখ ফেরাল আমার দিকে। তার চোখের দৃষ্টি ঝাপসা। বিদিশা পৃথিবীর মেয়ে, তাকে আমার কিছু বলার নেই। আমার চুলের ভিতর আঙুল দিয়ে আমার ফাইবার এন্টেনা ক্রিয়াশীল করে তুললাম। হঠাৎ এক অদ্ভুত গমগমে যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর জিজ্ঞেস করে, " তুমি সুস্থ আছো তো? কোনো জীবাণু, খাদ্যে বিষক্রিয়া, জলের বিষ তোমাকে আক্রমণ করে নি তো? বা তেজস্ক্রিয়তা? যুদ্ধ? প্রেম? " আমি আমার ঘড়িসুদ্ধ হাত মুখের কাছে তুলে এনে মৃদুস্বরে বললাম, আমি ভালো আছি। সুস্থ, সবল ও দ্বিধাহীন। -- চমৎকার, আমরা চারশো মাইল ওপরে আমাদের মহাকাশযান তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। সংকেত পাঠানো মাত্র চৌম্বকীয় রশ্মি তোমাকে টেনে আনবে ওপরে, স্পেসসুট নিতে ভুলো না। -- না ভুলব না। আমি হাত নামিয়ে বিদিশার দিকে তাকাই। বিদিশা সুশ্রী মেয়ে, তার চোখ দুখানা বড় গভীর। আমি গভীর চোখের কোনো মর্ম জানি না। যে ইউনিভার্সে এক ভিন্ন পরিমণ্ডলে আমার বাস সেখানে এরকম কোনো চোখ নেই, তবে উর্বশীর মতো সুন্দরীরা আছে। বিদিশা দুই অস্থির চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,  তোমার সেই নীল বিড়াল? আমি মাথা নাড়লাম। এ বিড়াল আমার গতিবিধির নিয়ন্ত্রক, সুদূর যাত্রাপথের সঙ্গী হতে চলেছে।   বিদিশা দুহাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। আমি নানা ঘটনায় বিদিশাকে কাঁদতে দেখেছি। যখন তার মন খারাপ হয়, কেউ অপমান করে বা অভিমান হয় তখন সে কাঁদে। পৃথিবীতে কান্না, মন খারাপ, দুঃখ এসবের একটা মাহাত্ম্য আছে যা আমার বোধগম্য হয় নি। এই ক'বছরে আমি পৃথিবীর মানুষদের বিশেষ করে বিদিশাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পযবেক্ষণ করেছি। আমার চোখের ইনফরমেশন রে দিয়ে ওর মস্তিষ্কের অভ্যন্তর থেকে সব তথ্য টেনে বের করেছি। রাতের পর রাত জেগে বিশ্লেষণ করেছি কিন্তু তাও অনেক কিছু দুর্বোধ্য থেকে গেছে। বিদিশা ভালোবাসা নামক অদ্ভুত এক শব্দে বিশ্বাস করে। আমার গ্রহের বিজ্ঞানীরা এই ব্যাপারে আমাকে আগে থেকে সাবধান করে দিয়েছিল। পৃথিবীতে নাকি একজন মানুষকে ছাড়া একজন মহিলার জীবন বৃথা বলে মনে করা হয়, এ কেমন নিয়ম? বা সেই মহিলাটিকে দেখলে পুরুষটির হৃদয়ে ঝড় উঠবে এটাই বা কেমন নিয়ম? আমাদের গ্রহে এরকম হয় না। আমি আড়ষ্ট গলায় জিজ্ঞেস করলাম, বিদিশা কাঁদছো কেন? বিদিশা তার সজল তীব্র দুখানি চোখে আমার দিকে চেয়ে বলে, কেন জানো না? -- আমার তো একদিন চলে যাওয়ারই কথা বিদিশা। -- কেন চলে যাবে? তুমি আমার স্বামী নও? আমি তোমার স্ত্রী নই? এসবই সত্য, বিদিশার মতানুসারে বাস্তবিকই আমি ওর স্বামী। পৃথিবীর এক মানবীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করে এখানকার সব তথ্য সংগ্রহ করার জন্যই আমাকে পাঠানো হয়েছে। হ্যাঁ পৃথিবীর নিয়মানুযায়ী ও আমার স্ত্রী, কিন্তু মহাকাশে তো এই নিয়ম নেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলি আমি।        বিদিশা ধীর পায়ে এগিয়ে আসে আমার দিকে। ওদিকে আমার মাথার ভেতর থাকা এন্টেনায় বাজতে থাকা ধাতব শব্দ জানান দিচ্ছে সময় বেশি নেই, একটু পরেই চারশো মাইল ওপরে থাকা মহাকাশযান থেকে আমাকে নেওয়ার আয়োজন শুরু হবে। বিদিশাকে আলিঙ্গন করে আমি এই গ্রহে শেখা কিছু কথা বলতে থাকি, সবই ভালোবাসার কথা। নীল বিড়ালটা জানলা থেকে একটু সরে এসে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে আমার দিকে। বিদিশা আমার বুকে দুহাতের ছোট মুঠিতে কিল মারতে মারতে রুদ্ধ গলায় বলে, কতদূরে চলে যাবে তুমি, কত দূরে? -- খুব বেশি দূরে নয় বিদিশা। -- তবু তো কয়েক হাজার আলোকবর্ষ ! আমি হাসলাম। আলোকবর্ষ দিয়ে দূরত্ব মাপার প্রাচীন রীতি এই গ্রহে এখনো বিদ্যমান। এরা জানে না যে মহাকাশের বিপুল অসীম বিচরণক্ষেত্র আলোকবর্ষ অত্যন্ত ছোটো মাপকাঠি। ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলি, দূরত্বটা কোনো ব্যাপার নয়। -- তুমি আর ফিরবে না? কোনোদিনও না? -- ফিরতেও পারি, হয়তো হাজার বছর পর। -- কয়েক হাজার ! তখন তো আমি থাকবো না -- মানুষ থাকবে বিদিশা। -- কিন্তু আমি, আমি তো তোমাকে দেখতে পাবো না আর। কথাটা সত্য। এই গ্রহে মানুষের আয়ু বড় ক্ষণস্থায়ী। আমাদের গ্রহে সবার অফুরন্ত যৌবন আর আয়ু, এখানে সেরকম নয়। বিদিশা তার মুখখানা আকুল ভাবে তুলে ফিসফিস করে বলে, প্রিয়তম, আমাকে হাজার বছরের আয়ু দাও। আমি তোমার প্রতীক্ষায় চেয়ে থাকবো। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এই মানবী শুধুমাত্র তার প্রিয় পুরুষটির জন্য মাত্র কয়েক হাজার বছরের আয়ু চায় ! আমি পৃথিবীর নিয়ম অনুসারে বিদিশার ওষ্ঠ চুম্বন করি। তবে ভয় নেই, আমার ঠোঁটে লাগানো আছে অদৃশ্য জীবাণুনাশক। আমি যথাসম্ভব গদগদ স্বরে বলি, “ তোমাদের গ্রহটি কম সুন্দর নয়, চমৎকার সব পুরুষেরা আছে তুমি বেশিদিন একলা বোধ করবে না। “ বিদিশা  ব্যাকুল ভাবে আমার হাত জোরে চেপে ধরে কাতর স্বরে বলল, “ আমাকে তোমার সঙ্গে নিয়ে যাও। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো কিভাবে? “ -- তা হয় না বিদিশা, আমাদের গ্রহে পৃথিবী থেকে কাউকে নিয়ে যাবার নিয়ম নেই। ওখানে পরিবেশ অন্যরকম। -- কিরকম, যেখানে তুমি থাকতে পারো সেখানে আমি পারবো না? -- না বিদিশা, তোমাদের তুলনায় ওখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অনেক বেশি। নীল বিড়ালের চোখে সবুজ সংকেত এলো, অর্থাৎ আমার যাবার কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। বিদিশাকে ছেড়ে আমি দ্রুত স্পেসস্যুট পড়ে নিলাম। এই জীবাণুতে ভরা নোংরা ক্লেদাক্ত পৃথিবী ছেড়ে নিজের স্বর্গের মতো পবিত্র গ্রহে ফিরে যাচ্ছি আমি। বিদিশা স্তম্ভিত হয়ে মাটিতে বসে পড়ল।        নীল বিড়ালটা আমার দিকে এগিয়ে এলো। ছোট্ট থাবা তুলে ওর গলার বকলেসে থাকা একটা সুইচ টিপতেই ওর চোখ দিয়ে সবুজাভ রশ্মি বেরিয়ে আমাকে ঘিরে নিল। আমি ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে গিয়ে জানলা দিয়ে নিজের শরীর বাইরে ভাসিয়ে দিই। পরমুহূর্তে এক হলুদ রঙের চৌম্বকীয় রশ্মি আমাকে বিদ্ধ করে ওপরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। বিদিশা শেষ বারের মতো আমার নাম ধরে ডেকে চিৎকার করে উঠলো।আমাদের গ্রহে দুঃখ বা বিষাদের মতো কোনো অনুভূতি নেই কিন্তু এখন এক অদ্ভুত বিষন্নতা ঘিরে ধরে আমাকে এই প্রথমবারের জন্য।                         *************** মহাকাশযানে এক তদন্তকারী অফিসার আমাকে নানা প্রশ্ন করছিল। --- তোমার সব কাজ শেষ করেছো? --- হ্যাঁ --- পৃথিবী ও তার বাসিন্দাদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য তোমার মাইক্রোচিপে সংগ্রহ করেছো? --- হ্যাঁ --- পৃথিবীর কোনো ধুলো বা জীবাণু তোমাকে স্পর্শ করে নি? --- না তেজস্ক্রিয়তা? --- না অফিসার মৃদু হাসলেন। বললেন, প্রেম নামে একটা ছোঁয়াচে মানসিকতা আছে এইসব প্রাচীন গ্রহে জানো? --- হ্যাঁ জানি। -- তোমাকে স্পর্শ করেনি? আমি চুপ করে থাকি। তারপর মাথা নেড়ে বলি, না আমাকে তেমন কিছু স্পর্শ করেনি। তবু আবার ফিরে যাবার একটা ইচ্ছে হচ্ছে। খুব ইচ্ছে হচ্ছে, গিয়ে দেখে আসি একজন মানবী আমার জন্য, শুধু আমার জন্য, শুধু আমার বিরহে কেঁদে চলেছে। অফিসার উচ্চকন্ঠে হাসলেন। আমার কিন্তু হাসি পেল না।                            **************                                  (সমাপ্ত)
Parent