বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete - অধ্যায় ৩৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-21932-post-1593320.html#pid1593320

🕰️ Posted on February 9, 2020 by ✍️ samss400 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 772 words / 4 min read

Parent
একেই মেজাজ বিগড়ে আছে, তারপর বিজয়দার এই ব্যাবহার। আমিও আর নিজেকে সংবরন করতে পারলাম না। চেঁচিয়ে বলে উঠলাম ‘আপনি এতো বড় বড় কথা বলছেন, অথচ সত্যি এটা যে আপনি আমায় আর রমাকে নিজের প্রমোশনের জন্যে ইউস করলেন। আপনি কি ভেবেছিলেন আমরা গিনিপিগ? যদি আমাদের কিছু হয়ে যেত? আসলে পুলিশও একধরনের গুন্ডা, খালি রাষ্ট্র তাদের গুণ্ডামি করার পারমিশন দেয়। আর চার্জসিট! এটা একটা কমেডি সিনেমা ছাড়া কিছুই নয়। আমি অন্তত ১০ টা নামকরা কেসের নাম আপনাকে বলতে পারি; যেখানে সাক্ষীদের হয় কিনে নেওয়া হয়েছে নয় খুন করা হয়েছে। আদালত কিসসু করতে পারেনি’। প্রায় একি ভঙ্গীতে বিজয়দাও উত্তর দিলেন ‘হ্যাঁ, আমি আপনার সাহায্য হয়ত নিয়েছি, কিন্তু আপনি নিজেও জানেন এই কেসের ভিকটিম ও কিন্তু আপনি। যা করেছি তা আপনাকে বাঁচাতে। এই সিস্টেমের মধ্যে থেকেও অনেককিছু করা যায়। সিস্টেমটা শুধুই কিছু সমাজবিরোধী নয় আপনাদের মত তাত্বিক সিস্টেমবিরোধীদের জন্যও পচন ধরছে’ বিজয়দার শেষ লাইনটা শুনে খটকা লাগলো আমার মনে। চুপ করে গেলাম। আবার বিজয়দা বললেন ‘আমি আপনাকে আগেই বলেছি, নিজেকে শারলক হোমস ভাবা বন্ধ করুন। মনে রাখবেন গোয়েন্দাগিরিটা আমার পেশা’ শুধু যে বিজয়দাই আমায় কথা শুনিয়ে যাবে আর আমি শুনে যাবো তা হয়না। ‘বিজয়দা, আপনিও কিন্তু ঘুষ নেন। স্বীকারও করেছেন আমার কাছে। তাহলে?’ কিছুটা অবজ্ঞার হাঁসি হেঁসে বিজয়দা উত্তর দিলেন ‘তাহলে আপনার সন্দেহের তালিকায় আমিও প্রবেশ করেছি মিস্টার শারলক হোমস, তাইতো?’ বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকলাম। আজকে সত্যি বহুবার আমি নিজের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রন হারিয়েছি। আমার জীবনে যে আনসল্ভড রহস্যগুলো রয়েছে তা সল্ভ করতে বিজয়দার সাহায্য প্রতি মুহূর্তেই আমার দরকার। জানি আমি ভুল করছি। নিজেকে সংশোধন করলাম। গলাটা অনেক নামিয়ে বললাম ‘বিজয়দা, আমি সত্যিই আপনাকে নিজের দাদার চোখে দেখি। কিন্তু দাদা, একটা সত্যি কথা বলুন। আপনি কার দিকে?’ একটা মুচকি হেঁসে বিজয়দা উত্তর দিলেন ‘আমি আমার প্রফেশনের দিকে। আমার কাছে আদর্শ, আতলামি, ক্ষোভ, বিক্ষোভ এগুলোর চেয়ে বাস্তব অনেক অনেক বেশী দামী। তাই আমি শুধুই চার্জশিটে বিশ্বাস করি। একটা পাওয়ারফুল চার্জশিটই সবকিছু’ আমার কাছে উত্তর দেওয়ার মত কিছুই ছিলনা। চুপ করে বসে থাকলাম। নীরবতাটা বিজয়দাই ভঙ্গ করলেন। ‘দাদা, যখন ভাবেন তখন একটা কথা মনে রাখবেন, দাদা-ভাইয়ে লড়াই হয় ঝগড়াও হয়’ ওফ সত্যি এই কথাটাই দরকার ছিল। মনটা একদম হাল্কা হয়ে গেলো। আমি প্রায় হেঁসেই দিলাম। বিজয়দাও হেঁসে উঠলেন। ‘শুনুন বিপ্লববাবু, পুলিশ হিসেবে নয় দাদা হিসেবে দুটো কথা আপনাকে জানাই। যে জঙ্গলের মধ্যে আপনি রমাকে চড়টা মারলেন, সেখানেই আমার ৩ জন অফিসার লুকিয়ে আছে। রমা জুলি নয়। আমি এক মহিলাকে সন্দেহ করি। তিনিই জুলি। আজই হয়ত জুলি কে এই রহস্যটা সমাধান হয়ে যেত, যদি সত্যিই আপনি আমায় দাদা বলে ভেবে থাকতেন। আপনি আমায় বিশ্বাস করতে পারেননি এটাই আমার কষ্ট অন্যকিছু নয়। আর দ্বিতীয় কথাটা হোল, আপনি শারলক হোমস নন আপনার চেয়ে পুলিশ অনেক বেশী ইনটেলিজেন্ট, নিজেকে শারলক হোমস ভাবা বন্ধ করুন’ আমি আবার হেঁসে উঠলাম, এই হাঁসির মধ্যে যে কি তৃপ্তি রয়েছে তা বিজয়দাও বোঝেন। মুখ দিয়ে একটাই কথা বেরোল ‘অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা’। একটু হেঁসে বিজয়দা উত্তর দিলেন ‘আমি শুধুই চার্জশিটে বিশ্বাস করি’। বিজয়দা ফোনটা রেখে দিলেন। একরাশ কালো মেঘ কোথায় যেন উড়ে গেলো। সবার আগে রমার মুখের দিকে তাকালাম। জানি আমি যে ওকে চড় মেরেছি সেটাও হয়ত ওর আর মনে নেই। নিজেকে বিশাল বড় একটা জানোয়ার মনে হচ্ছিল। রমার কপালের ওপর একটা চুলের গোছা এসে পড়েছিল। হাত দিয়ে সরাতেই রমা আমার দিকে তাকাল। ওর মুখে জোর করে বসিয়ে দেওয়া একটা হাঁসি। আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বেরলনা শুধুই মনেমনে বিড়বিড় করলাম ‘আমায় ক্ষমা করে দিও রমা, আমি সত্যিই জানোয়ার নই’। মাত্র দুখানা প্রশ্ন যদি এর জবাবটা পেতাম, সমস্ত কিছুই আমার কাছে পরিস্কার হয়ে যেত। একবার চেষ্টা করেই দেখিনা। রমার দিকে তাকিয়ে হাসিহাসি মুখ করে বললাম ‘রমা, সোনা আমার। প্লিস একটু ভাববার চেষ্টা কর। তোমায় আমি এবার পুজায় একটা লাল বেনারসি সাড়ি দিয়েছিলাম। ওটা কোথায়? তুমি কি কাউকে দিয়েছ?’ রমা জানলার দিকে তাকাল আর কিছুক্ষন পর আমায় বলল ‘ঠিক মনে পড়ছে না, তবে মনে হয় আলমারিতেই আছে’। না এরও উত্তর পেলাম না। আলমারিতে তো রমার সব কাপড় ই থাকে। আলাদা করে এই কাপড়টার কথা ওর মনে নেই। দ্বিতীয় প্রশ্নটা ছিল, ‘মধুকর ভিলায় যে ডাকাত রয়েছে, এই কথাটা রমাকে কে বলেছে?’ না ওকে আর ওটা জিজ্ঞেস করলাম না। জানি ও উত্তর দিতে পারবেনা। নিজের হাতটা রমার কাঁধের ওপর দিয়ে জড়িয়ে দিলাম, রমাও নিজের মাথাটা আমার বুকে গুঁজে দিলো। দুজনেই চোখ বুজে দিয়েছিলাম। হুঁশ ফিরল ড্রাইভারের একটা প্রশ্নে। ‘কেমন আছেন দাদা? এতো রাতে বেরলেন? সকালেও তো ফিরতে পারতেন’ গাড়ির সামনের কাঁচটায় দেখলাম। আরে এতো মনিরুল। আহা, বেচারা বেকার ছেলের ক্যান্সার হয়েছে। কদিন বাঁচবে ঠিক নেই। ওকে এনজিও থেকে অনেকবার সাহায্য করেছি। হাঁসিহাঁসি মুখ করে উত্তর দিলাম ‘আরে তুমি। হ্যাঁ, ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? শরীর কেমন আছে? আর এই শরীরে এখনো ট্যাক্সি চালাচ্ছ?’ একটু হেঁসে উত্তর দিল ‘কি করব দাদা। যতদিন আছি সংসারটা টেনে যাই। তারপর কি হবে কেউ জানেনা’ আমারও মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। সত্যি মানুষের কপালে যে কি রয়েছে তা মানুষ সত্যিই জানেনা। প্রচণ্ড বেগে গাড়িটা ছুটে চলেছে দ্বিতীয় হুগলী সেতুর দিকে। আমরা প্রত্যেকেই নীরব, ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত।
Parent