চাঁদের অন্ধকার_Written By Tumi_je_amar - অধ্যায় ৮৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-17908-post-1260737.html#pid1260737

🕰️ Posted on December 18, 2019 by ✍️ FuckEr BoY (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 535 words / 2 min read

Parent
দুর্ঘটনা (০৭) শ্মশানে গিয়ে গণেশ রাও আর কঞ্জরি দেবীর দেহ পাশাপাশি দুই চিতায় শোয়ানো হয়। চিতা সাজানোর পরে মুখাগ্নি করার সময় হয়। সুধীর দু হাত দুজনের বুকে রাখে। ওর মনে পড়ে ছোট বেলায় ভয় পেলেই মায়ের এই বুকে এসে মুখ লুকাতো। কতদিন মায়ের বুকে মাথা রাখেনি। আস্তে করে মাথা মায়ের বুকে রাখে। ওর চোখ দিয়ে বিন্দু বিন্দু জল গড়িয়ে পড়ে। ছোট বেলায় মায়ের বুকের লাব ডুব শব্দে ওর মনে স্বস্তি আসতো। অনেক চেষ্টা করেও মায়ের বুকের সেই শব্দ খুজে পায় না। ও কিছুতেই ভেবে পায় না ওর কোন দোষের জন্যে ভগবান ওর সব থেকে নিশ্চিন্ত আশ্রয় কেড়ে নিলো। তার পরেই বাবার দিকে তাকায়। এই বাবার হাত ধরেই ও পৃথিবীকে চিনেছে। বাবার দুই হাত ধরতে গিয়েই মনে পড়ে যে আজ বাবার এক হাত নেই – যে হাত ধরে ও সব চিনেছে সর্বনাশা ১১০০০ ভোল্টের কারেন্ট সেই হাত ওর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হয়। ওর মনে হতে থাকে ও যেন এক অনেক উঁচু পর্বতের চুড়ায় দাঁড়িয়ে আর এক এক করে ওর শরীর থেকে অক্সিজেন মাস্ক, দড়ি, বেল্ট সব এক এক করে খুলে পড়ে যাচ্ছে। আর ও দম বন্ধ করা পরিবেশে আগে এগোতেও পারছে না বা পিছিয়েও আসতে পারছে না। কতক্ষন বাবা মায়ের পাসে বসেছিল কে জানে। এক সময় ওর এক জ্যাঠা বলেন যে রাত অনেক হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি মুখাগ্নি করতে। কোন রকমে জোর করে সুধীর ওর শরীরটাকে দাঁড় করায়। টলতে টলতে এক এক করে দুজনেরই মুখাগ্নি করে। ধীরে ধীরে দুজনের দেহই অগ্নি দেবতা গ্রাস করে নেয়। রাত তখন প্রায় ১১ টা হবে। সুধীর এক দৃষ্টে আগুনের লেলিহান শিখার দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর মনে হতে থাকে যেন ওর নিজের শরীরই ওই আগুনে পুড়ছে। বুকের ভেতর হৃদপিণ্ড জ্বলে যাচ্ছে কিন্তু সে আগুন নেভাতে পারছে না। ওর বাবা মায়ের শরীর একটু একটু করে পুড়ছিল আর সাথে সাথে সুধীরের হৃদপিণ্ড কেউ হাতুড়ির বাড়ি দিয়ে থেঁতো করে দিচ্ছিল। হাতুড়ির শব্দ শোনা যাচ্ছিলো না কিন্তু হৃদপিণ্ড থেঁতো হবার ব্যাথা দেখা যাচ্ছিলো সুধীরের মুখে। চিতার আগুন সুধীরের মনের মধ্যেও জ্বলতে শুরু করে। আস্তে আস্তে এক সময় চিতা নিভে যায়। সবাই সুধীরকে ধরে বাড়ির পথে রওনা দেয়। সুধীর হাঁটছিল কিন্তু কোথায় যাচ্ছিলো বুঝতে পারছিলো না। ওর মনের আগুন তখনও জ্বলছিলো। ওরা বাড়ি পৌঁছায় রাত্রি প্রায় আড়াইটার সময়। ঘরের সব দরজা জানালা খোলা। আসে পাশের সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছে। মায়িল বসে থাকতে থাকতে এক দিকে কাত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ওর কাপড় আলুথালু, চুল এলোমেলো, দুই গালে অজস্র শুকনো চোখের জলের দাগ। মুখে ক্লান্তি আর দুঃখের ছাপ। ওর দুই পাসে সানি আর মানি দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে ঘুমিয়ে পড়েছে, কিন্তু দুজনেই মায়িলের দুই হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। শুধু কিন্নরী এক পাসে চুপ চাপ বসেছিল। সুধীররা ফিরতেই ও উঠে ওদের যা যা নিয়ম সেটা পালন করে। প্রায় কুড়ি দিন পরে গণেশ রাও আর কঞ্জরি দেবীর পারলৌকিক কাজ শেষ হয়। তারপর একদিন সুধীর কলেজে গিয়ে ওর ডাক্তারি পাশের সার্টিফিকেট নিয়ে আসে। সুধীর আর মায়িল দুজনেই রোবটের মত দিন কাটায়। মায়িলের বাবা ডাঃ ভাস্করও এসেছিলেন। সুধীরের বাবা মায়ের শেষ কাজের সময় ছিলেন। ছাদে যেখানে গণেশ রাও আর কঞ্জরি দেবী মারা গিয়েছিলেন সুধীর সেখানে দুটো ছোট ছোট সমাধির মত বানিয়েছে। রোজ সকালে সুধীর আর মায়িল সেই সমাধিতে গিয়ে প্রনাম করে আসে তার পর দিনের কাজ শুরু করে। দিনের কাজই বা আর কি ছিল। মায়িল সাধারন কিছু জলখাবার বানায়। দুজনেই ওদের চেম্বারে বসে। সকালে ৯টা থেকে দুপুর ১২টা আবার বিকালে ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দুজনেই রুগী দেখে।
Parent