দিদির বান্ধবী যখন বউ (সম্পুর্ণ) - অধ্যায় ১৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-22634-post-1708317.html#pid1708317

🕰️ Posted on March 12, 2020 by ✍️ Biddut Roy (Profile)

🏷️ Tags:
📖 2821 words / 13 min read

Parent
পর্ব-১৫ শূন্য ঘর, এতো দিন এই ফাঁকা ঘরে ছিল স্যামন্তক, এক দিনের জন্য মনে হয়নি ঘরটা কত খালি, আজ যেন বাড়ি ফিরে ঘরটা অতিরিক্ত খালি খালি মনে হয়। জানালা, দরজা, দেয়াল পর্দা সব যেন ওর থেকে দুরে মুখ করে বসে আছে। আজ আর ঘরের লাইটগুলো জ্বালাতে ইচ্ছে করল না। চুপ করে এক কাপ কফি বানিয়ে বারান্দায় বসে পড়লো। কত সময় কেটে গেলো মনে পড়েনা, ফোনের আওয়াজে নিজেকে ফিরে পায় স্যামন্তক। “কিরে এতো বার করে ফোনটা বেজে গেলো উঠাচ্ছিস না কেন?” পুবালির ফোন। বিষণ্ণ মন, ভারাক্রান্ত হৃদয় তাও নিজের ভাবটা লুকিয়ে রাখতে হবে। দিদিকে বললে কি মনে করবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন এখন সময় আসেনি দিদিকে বলার “না রে আমি একটু ছাদে ছিলাম।” গলার আওয়াজ চাপা, কিছু তো লুকচ্ছে ছেলেটা কিযে করে “তোর কিছু একটা হয়েছে, তুই আমাকে বলবি না?” এক বার ভাবে বলে দেবে, কিন্তু কি বলবে দিদিকে, তাও সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বলে “বন্দনা এসেছিলো বাড়ি থেকে পালিয়ে, নিরুপমের কাছে।” “কি” আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে পুবালি “কবে এসেছিলো?” —“গত পরশু রাতে, ঐ যেদিন খুব ঝড় হচ্ছিলো আর তুই ফোন করেছিলিস।” —“তারপরে কি হল?” “চলে গেলো আবার কি হবে।” ব্যাস এইটুকু জানিয়ে দেয় স্যামন্তক, একেবারে মিথ্যে নয় তবে শুধু সত্যটা লুকিয়েছে। বন্দনার বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। বাবা মা মেয়েকে ফিরে পেয়ে বেশ খুশী আর তার সাথে এটা জেনে খুশী যে নিরুপমের সাথে ওর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। বন্দনা খাওয়ার পড়ে নিজেকে নিজের ঘরের মধ্যে বন্দি করে নেয়, খুব ফাঁকা লাগে মনের ভেতরটা, এই দু’দিনে জীবনের স্রোতে অনেক ঝড় ঝঞ্ঝা পাড় করে এল। হটাৎ করে মনে হল, কত ভুল কত পাপ করেছে, সেই সব ভুল আর সেই সব পাপ আর কারুর ওপরে চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। ও ঠিক করে নেয় যে জীবনে আর কাউকে ভালবাসবে না, স্যামন্তক ও নয়। অনেক ভালো ছেলেটা, ঐ ঝড় মাথায় নিয়ে বোলপুর থেকে রাতে নিয়ে এসেছে, ফিরিয়ে দিয়েছে ওকে ওর বাবা মার কাছে। সব কিছু ঢেকে রেখে ওকে আবার করে জীবনে ফিরে যেতে বলেছে। কিন্তু কি করে ভুলবে সেই সুমধুর রস যেটা ওর আধর ওষ্ঠ তে লেগে রয়েছে। বারে বারে মনে পড়ে যায়, কত নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরেছিল, এত আলতো করে চুমু টা খেয়েছিল যেন মনে হয়েছিল যে ওটা ওর ঠোঁট নয়। চুপ করে শুয়ে পড়ে বিছানায়, ভাবতে থাকে, কত জোরে জড়িয়ে ধরেছিল মনে হচ্ছিল যেন একটু হলে ও গলে যাবে আর স্যামন্তকের বুকের ওপরে মিশে যাবে। কি করছে ছেলেটা একা একা, নিশ্চয় ওর কথা মনে করছে, একবার ফোন তো করতে পারে করলনা তো এখন। “এই জেগে আছিস নাকি” মা ডাক দেয় বন্দনা কে “স্যামন্তক ফোন করেছে?” এক লাফে হ্রিদস্পন্দনটা যেন শত গুন বেড়ে যায় গলা কেঁপে ওঠে উত্তেজনায় “না ঘুমোই নি।” তাড়াতাড়ি করে ফোনটা ধরে “কি করছিলে এতক্ষণ?” “নাথিং এজ সাচ, জেগে ছিলাম ঘুম আসছিল না তাই।” আওয়াজটা অনেক ফাঁকা ফাঁকা শোনায় “ঠিক করে পৌঁছে গেছ?” “হ্যাঁ” উত্তর দেয় বন্দনা, বুকের মাঝে একটা তোলপাড়, সত্যি কি ও স্যামন্তকের আওয়াজ শুনছে? “কেন ঘুম আসছিল না?” —“জানি না কেন, আজ ঘরটা অনেক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।” —“খেয়েছ?” —“হ্যাঁ খেয়ে নিয়েছি।” একটু মজা করে জিজ্ঞেস করে বন্দনা “সত্যি বলছ না কি ফাঁকা ঘরে না খেয়ে শুধু সিগারেট খেয়ে কাটাচ্ছ?” বন্দনার গলা শুনে চারদিকে শূন্য ভাবটা অনেকটা কেটে যায়। একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের বুকের ওপরে হাত বোলায় স্যামন্তক ঠিক যেখানে বন্দনাকে জড়িয়ে ধরেছিল। ঠোঁট দুটি যেন মধু দিয়ে ভরা আর ঠিক যেন গোলাপের পাপড়ির মতন নরম। প্রথম বার বেশি জোরে চুষতে চায়নি, যদি ঠোঁট দুটি ছিঁড়ে যায়? কি বোকা ছেলে নিজেই হেসে ফেলে “তুমি কেন ঘুময় নি? অনেক তো ঝড় ঝক্কি গেছে।” ফোনটা কানের সাথে চেপে ধরে চুপিচুপি বলে “জানিনা, এমনি এমনি ঘুম আসছিল না। পুবালি কি ফোন করেছিল?” —“হ্যাঁ দিদিকে বলেছি?” ভয় পেয়ে যায় বন্দনা, পুবালি কে বলে দিয়েছে? খুব রাগ হয় স্যামন্তকের ওপরে, ওযে কথা দিয়েছিল যে কাউকে কিছু বলবে না। একটু রাগত স্বরে বলে “সব বলে দিয়েছ? কথাটুকু রাখলে না আমার?” —“রেগ না, আমি সে রকম কিছু বলিনি।” “জানিনা কাকে কতটা বিশ্বাস করব আর।” একটু হতাশ সুরে বলে বন্দনা। সত্যি কাকে বিশ্বাস করবে আর কাকে নয়। চোখ বন্দ করে মনপ্রান সঁপে যাকে ভালবেসেছিল সে তো এতো বড় ধাক্কা দিল যে নিজের শিরদাঁড়া পর্যন্ত ভেঙ্গে গেছে। লোকের সামনে মুখ দেখানর শক্তি টুকু হারিয়ে ফেলেছে বন্দনা। —“এ রকম ভাবে কথা বল না। আমি তোমার এই আওয়াজ শুনতে এতো রাতে ফোন করিনি।” —“কিন্তু পুবালি কে এটা তো জানিয়েছ যে আমি বাড়ি থেকে পালিয়েছি।” একটা বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে উত্তর দেয় স্যামন্তক “হ্যাঁ, এটা আমাকে বলতে হত। দিদিকে আমি পুরো মিথ্যে কথা বলতে পারিনা। আমি সত্যিটা লুকিয়েছি, মিথ্যে কিছু বলিনি।” তাহলে বন্দনা এবারে পুবালির চোখে অনেক নিচু হয়ে যাবে, পুবালি জেনে গেছে যে ও বাড়ি থেকে পালিয়েছে “ফোন রাখ, তুমি তোমার দিদিকে নিয়ে থাকো।” এই বলে ফোন রেখে দেয় বন্দনা। মনটা বড় বিষিয়ে যায় স্যামন্তকের, দিদির কাছে আজ পর্যন্ত কিছু লুকায়নি। শ্যামলীর সাথে যখন ওর সম্পর্ক ছিল সেটা সব থেকে আগে দিদিকে জানায়, সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবার পড়ে দিদি ওকে বুঝিয়ে আবার পড়াশুনাতে মন বসায়। আজ এমন কি বলেছে বন্দনার নামে যে মেয়েটা তিতিবিরক্ত হয়ে ফোন ছেড়ে দিলো? পুরো কথাটা পর্যন্ত শুনল না, দিদিকে একদিন না একদিন তো জানাতে হত। বাড়ি ফিরে বন্দনা নিজেকে একটা শামুকের মধ্যে লুকিয়ে নেয়। একজন কে বিশ্বাস করে সব হারিয়েছে, আর একজন কে বিশ্বাস করতে চেয়েছিল কিন্তু সেটাও পারল না। মমতাশংকরের নাচের ট্রুপ ছেড়ে দেয় বন্দনা। বাবা মা কে একবার অনুরোধ করে যে ডিব্রুগড় ফিরে যাবে, সেখানে যে নাচের স্কুলটা খুলেছিল সেখানে নাচ শেখাবে। বন্দনার কথা শুনে ওর বাবা মা খুবই মর্মাহত হয়ে পড়েন। অনেকবার বলে বুঝিয়ে উঠতে পারলেন না ওকে। দুর্গাপুর থেকে চলে আসার পড়ে, স্যামন্তক বেশ কয়েক বার ফোন করেছিল। স্যামন্তকের গলার আওয়াজে কেমন যেন প্রতারণার ছায়া দেখতে পেত তাই আর নিজেকে খুঁজতে চেষ্টা করেনি। বাড়ি ছাড়া আর হল না বন্দনার বাবা মায়ের মুখ দেখে। এর মাঝে স্যামন্তকের কলেজের রেসাল্ট বের হয়,ও জানে যে রেসাল্ট ঠিকঠাক হবে, সে নিয়ে অত মাথা ঘামায় না। যেটা ওর সব থেকে বেশি ছিন্তার বিষয় সেটা হচ্ছে একটা চাকরি পাওয়া। দিল্লি এবং পুনের ইন্টারভিউর উত্তর এখনো কিছু আসেনি, দু’বাড়ির ফোন নাম্বার দেওয়া আছে সব জায়গায়। ফোন করে কলেজের বন্ধুদের কাছ থেকে জেনে নেয় যে রেসাল্ট ঠিকঠাক হয়েছে। আনন্দিত মনে পূবালীকে ফোন করে জানিয়ে দেয় রেসাল্টের কথা। বন্দনাকে ফোন করেনা স্যামন্তক, এমনিতে মেয়েটা ভালো ভাবে কথা বলছেনা, দেখা না করে কিছু জানানো ঠিক হবে না। একদিন বিকেল বেলা ফোন করে স্যামন্তক “হ্যালো, কেমন আছো?” ভারী গলায় উত্তর দেয় বন্দনা “কি হয়েছে বল।” “জেঠু জেঠিমা ফিরে এসেছেন, আমি কাল কোলকাতা ফিরে যাচ্ছি। বিকেলবেলা দেখা করতে পারি কি তোমার সাথে?” আওয়াজে বেশ উচ্ছাস ভরা, মনটা বেশ উৎফুল্ল স্যামন্তকের। কেমন যেন হয়ে যায় বন্দনা, ভাবে কেন দেখা করবে ওর সাথে “কেন দেখা করবে আমার সাথে?” আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করে স্যামন্তক “মানে? কি বলছ তুমি, কি হয়েছে তোমার? তুমি আমার সাথে দেখা করতে চাও না?” এক বার ভাবে বন্দনা, ঠিক আছে এক বার দেখা করা যাক “ঠিক আছে কাল বিকেলে আমি দাঁড়িয়ে থাকবো বিড়লা মন্দিরের সামনে।” আগস্টের প্রথম সপ্তাহ, কলকাতার আকাশে এখন কালো মেঘের ভিড়, কোন ঠিক নেই কখন নামে আর কখন ধরে। সকাল থেকে গুমোট মেরে আছে আকাশ, ধুসর মেঘে ঢাকা, সূর্য ঠিক ভাবে দেখা দিতে পারেনি। সকালবেলা উঠে জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখে বন্দনা, আকাশের গুমোট মেঘের মতন ভরে যায় মনটা। গত পনেরদিনে একবারের জন্য ঘর থেকে বের হয়নি। এমনিতে কলকাতায় নতুন, রাস্তা ঘাট বিশেষ চেনেনা। শপিং বলতে মাঝে মাঝে গরিয়াহাট যাওয়া হয় মায়ের সাথে না হলে ট্রায়ঙ্গুলার পার্কে পাশে বাজার করতে যাওয়া। নাচের স্কুলটা বাড়ির কাছেই ছিল * স্তান রোডের ওপরে। বন্দনার মনে সেই উৎফুল্ল আর নেই, হারিয়ে গেছে চিরদিনের মতন। বিকেল ঠিক তিনটের সময় স্যামন্তক ফোন করে “আমি বের হচ্ছি আর আধ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাবো, তুমি রেডি তো?” নিরস বন্দনা উত্তর দেয় “ঠিক আছে।” বন্দনার গলার আওয়াজে যেন দায় সারা ভাব। স্যামন্তক বেশ জোর দিয়ে বলে “তোমার ইচ্ছে নেই সেরকম তাই তো, কিন্তু আমি দেখা করতে চাই, সুতরাং তুমি আসবে।” একটু খানি রেগে ওঠে বন্দনা “তুমি আমার ওপরে জোর দেখাচ্ছ?” “তাই যদি তোমার মনে হয়ে থাকে, তাহলে তাই। আমি বের হচ্ছি, আমি ওয়েট করে থাকবো, আসতে হয় এস না ইচ্ছে হলে আসবে না। পুরটাই তোমার ওপরে।” কথা বলতে বলতে কান গরম হয়ে যায় স্যামন্তকের, মেয়েটা সত্যি অকৃতজ্ঞ। এতো করে মন পাওয়া গেলনা। হতে পারে বন্দনা প্রবল বিষন্নতায় ভুগছে কিন্তু সেখান থেকে টেনে বের করার জন্য স্যামন্তক তো আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। না, দেখা না করলে মেয়েটা কে বার করা যাবেনা ওর মানসিক হতোদ্যম অবস্থা থেকে। বন্দনা একটা সাধারন ঘিয়ে রঙের সালোয়ার কামিজ পড়ে বেড়িয়ে যায়। মাকে বলে যায় যে স্যামন্তক দেখা করতে আসছে। স্যামন্তক আসছে শুনে বন্দনার মা বলেন “একবার ছেলেটাকে বাড়ি নিয়ে আসিস।” শুনে বন্দনা একটু রেগে গিয়ে বলে “কেন তোমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়েছে বলে পুজো করবে?” বিড়লা মন্দিরের সামনে পৌঁছে দেখে স্যামন্তক বাইকে হেলান দিয়ে বসে আছে একটা সিগারেট ঠোঁটে নিয়ে। একটা সাদা সার্ট, হাতা গোটান আর গাড় নীল জিন্স পড়ে। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত চোখ বোলায় বন্দনা, প্রায় পনেরো দিন পড়ে দেখা। বেশ পুরুষালী গড়ন, ভালো লম্বা, চোখে চশমা। এই পনেরো দিনে একটা জোড়া গোঁফ গজিয়ে গেছে নাকের নিচে। দেখেই মনে মনে হেসে ফেলে, পাগল করার মতন চেহারা বটে স্যামন্তকের। এক মনে রাস্তার দিকে তাকিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছে আর আসে পাশের পথ যাত্রী গুলো কে বেশ মন দিয়ে দেখছে। বন্দনাকে এখন পর্যন্ত লক্ষ্য করেনি স্যামন্তক। নিজেকে ওর পাশে দাঁড় করিয়ে একবার ভাবতে চেষ্টা করে, বড় বেমানান লাগে ছবিটা। কেমন যেন ছন্ন ছাড়ার মতন সেজে এসেছে, মুখ টিপে হেসে ফেলে নিজের সাজ দেখে। এক দমকা বাতাসে বুকের ভেতর থেকে কালো গুমোট মেঘ উড়ে চলে যায় ঠিক তার সাথে এক গুচ্ছ চুল এসে ওর ডিম্বাক্রিত মুখমণ্ডল ঢেকে ফেলে। বাঁ হাত দিয়ে চুল সরাতে সরাতে এগিয়ে যায় স্যামন্তকের দিকে। পেছন থেকে এসে, মাথায় আলতো করে ছাতা দিয়ে মেরে বলে “কি দেখছিলে?” মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে পেছন ঘুরে তাকায় স্যামন্তক “ওঃ তুমি এসে গেছ। মেয়ে দেখছিলাম, এই মারোয়াড়ীদের যা পাছা কি যে বলব। যেন এক এক টা কলসি।” হাসি থামাতে পারে না বন্দনা “তুমি নাকি আমার জন্য এসেছ আর এসে কিনা মেয়েদের ওইসব দেখছ?” স্যামন্তক মুখটা বন্দনার মুখের খুব কাছে নিয়ে এসে হেসে বলে “দেখলে তো, ঐ মুখে হাসি ফোটানর জন্য কত কি করতে হচ্ছে।” চোখ দুটি ছলছল করে ওঠে, কত ভুল বুঝেছে স্যামন্তককে, কত উল্টোপাল্টা কথা শুনিয়েছে, একবারও ফোনে ঠিক করে কথা বলেনি, সব সময় রাগ আর অভিমান করে কথা বলেছে তাও ছেলেটা দেখা করতে এসেছে, শুধু ওর মুখের হাসি দেখার জন্য। নাকের ডগা লাল হয়ে যায় বন্দনার, চোখ দুটি জ্বালা করতে থাকে। নিচের ঠোঁটটা ওপরের দাঁতের নিচে কামড়ে ধরে, জল টিকে গালের ওপরে গড়াতে দেয় না। স্যামন্তকের গভীর চাহনি ওর দু’চোখ ভেদ করে যেন ওর মাথার পেছনের খোঁপা দেখতে পাবে। ঐ দু’চোখের সামনে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে বন্দনা, আপনা থেকে মুখ নিচু হয়ে যায়। “চল আগে বাড়ি যাই, তোমার মুড মনে হয় না আজ ঠিক আছে।” স্যামন্তক বলে বন্দনাকে। “না পড়ে বাড়ি যাবে, মা এমনিতে তোমাকে নিয়ে একবার যেতে বলেছে।” বন্দনা বাইকের পেছনে উঠে বসে “চল কোথায় নিয়ে যেতে এসেছ।” হেলমেটটা মাথায় চাপিয়ে এক কিকে বাইক স্টার্ট করে স্যামন্তক। বাঁ পাশে পা ঝুলিয়ে সামনের দিকে বেকে বসে বন্দনা। দু’হাতের নিচ দিয়ে নিজের দু’হাত গলিয়ে কাঁধটা জাপটে ধরে, সামনে ঝুঁকে নিজেকে স্যামন্তকের চওড়া পিঠের সাথে একত্রীত করে দেয়। স্যামন্তক পিঠের ওপরে বন্দনার নরম বুকের স্পর্শ অনুভব করে, তার সাথে অনুভব করে বাঁ কাঁধে থুতনি। কানের কাছে মুখ নিয়ে বন্দনা নিচু স্বরে বলে “কি হল স্টার্ট করে কি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে না কোথাও নিয়ে যাবে?” বুক ভরে একটা বড় নিঃশ্বাস নেয় স্যামন্তক, বন্দনাকে তাহলে শেষ পর্যন্ত খুশী করতে পেরেছে। জিজ্ঞেস করে “কোথায় যেতে চাও?” বাইকটা ধিরে ধিরে হাজরা রোডের ওপরে চালাতে থাকে। থুতনি দিয়ে আলতো চাপ দেয় বন্দনা স্যামন্তকের কাঁধের ওপরে “আমি কি জানি কলকাতার, তুমি যেখানে নিয়ে যাবে সেখানে যাবো।” —“এক কাজ করি, আকাশের অবস্থা তো ভালো নয়, চল আউট্রাম ঘাটে একটা স্কুপ আছে সেখানে।” স্যামন্তকের ঘাড়ের পেছনে নিজের গাল চেপে ধরে বসে থাকে, শরীরের উষ্ণতাটুকু নিজের গালের মধ্যে শুষে নিতে চায়। ঘাড়ের ওপরে বন্দনার গরম নিঃশ্বাস আর নরম গালের স্পর্শানুভব, স্যামন্তক শরীরে এক শিহরণ ছড়িয়ে দেয়। কেউ যেন জ্বলন্ত লাভা ঢেলে দিয়েছে ওর ঘাড়ে পিঠে বুকে। চোয়াল শক্ত করে নিজেকে শাসন করে স্যামন্তক, বাছাধন বাইক চালাচ্ছ সাবধানে চালাও। বন্দনার মাথার চুল এলোমেলো হয়ে মুখের ওপরে এসে পড়ে, কিছু উড়ে স্যামন্তকের ঘাড়ের ওপরে চলে আসে। বুকের মাঝে এই বিকেল পর্যন্ত যে কালো মেঘ জমে ছিল সেটা আর নেই, কোথায় উড়ে গেছে কে জানে। বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয় বন্দনা, খুব ইচ্ছে হয় দুই হাত দিয়ে পিষে ফেলতে। শার্ট ভেদ করে শরীরের উষ্ণতা যেন সারা বক্ষের ওপরে উপচে পড়ছে। ইচ্ছে করে একটু দুষ্টুমি করতে, সুগোল বক্ষ দুটি চেপে ধরে পিঠের ওপরে, দেখা যাক না ছেলেটার কত নিয়ন্ত্রণ আছে নিজের ওপরে। মাঝে মাঝেই ঘাড়ের পেছনে গাল ঘষে দেয়। চারদিকের ঠাণ্ডা হাওয়া আর যেন ঠাণ্ডা নেই, দুজনার শরীরের ঘর্ষণে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে চারদিক। ঠিক রেস কোর্সের পাশে বাইকটা একটু ধিমে করে স্যামন্তক, মাথা ঘুরিয়ে পেছনে দেখে বলে “তখন থেকে শুধু বদমাইশি করা হচ্ছে, হ্যাঁ। একবার হাতে পাই সব দুষ্টুমি দেখিয়ে দেব।” স্কুপের সামনে বাইক পার্ক করার সময় আকাশের দিকে তাকায় বন্দনা, ধূসর মেঘ একটু জমাট বেঁধে আসছে। একটু আগে পর্যন্ত জলীয় হাওয়া বয়ে আসছিল গঙ্গাবক্ষ থেকে, সেটা যেন থমকে গেছে। স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে বন্দনা “এই, বৃষ্টি আসবে না তো?” মজা ছলে উত্তর দেয় স্যামন্তক “আচ্ছা মেয়ে তো তুমি, আমাকে কি বৃষ্টি জানিয়ে আসবে নাকি, যে আমি জানবো।” ছাতা দিয়ে হাতের ওপরে মারে বন্দনা “ধুর, আমি তো আকাশ দেখে জিজ্ঞেস করলাম।” ছাতার মার থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে হেসে বলে “আগে ঠিক কর কাকে জিজ্ঞেস করছ, আকাশকে না আমাকে?” —“তোমার সাথে না, একদম কথা বলতে নেই।” —“ও কে ম্যাডাম, কথা বলতে হবে না, ওপরে চলুন।” স্যামন্তকের বাঁ হাতটাকে দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে হাঁটতে থাকে বন্দনা। পশ্চিম দিকের কালো মেঘটা বড় সুন্দর দেখায়। দ্বিতীয় হুগলী সেতুর পেছনে আকাশটা যেন দু’ভাগ হয়ে গেছে। নিচে কালো জল, ওপরে কালো মেঘ, মাঝখানে সাদা দিগন্ত রেখা। আজ অনেক দিন পড়ে বন্দনা যেন প্রান ভরে খোলা হাওয়ায় শ্বাস নিচ্ছে। মনের অলিগলিতে যেন রক্ত কণা গঙ্গার ক্ষুদ্র তরঙ্গের ন্যায় ঢেউ খেলছে। ইস, বিকেলটা এক সময় শেষ হয়ে যাবে, যদি আর কিছুক্ষণ আগে আসতে বলত স্যামন্তককে, তাহলে আর একটু বেশি সময় বসতে পারত ওর সাথে। এর পড়ে তো আবার মা বলেছেন বাড়ি নিয়ে যেতে। দু’তলায় উঠে বিশাল কাঁচের জানালার পাশে চেয়ার নিয়ে বসে পড়ে। স্যামন্তক নিচে আইস্ক্রিমের অর্ডার দিয়ে উপরে আসে। বন্দনা নিজেকে একবার দেখে আর স্যামন্তকেকে এক বার দেখে, ধুর কত বেমানান লাগছে ওর পাশে, কেন মরতে এতো রাগ পুষে রেখেছিলো কে জানে। সাদা শার্টে যা দারুন দেখতে লাগছে ছেলেটাকে, বন্দনা আর চোখে শুধু দেখে যাচ্ছে আর ভেবে যাচ্ছে, বৃষ্টিটা যেন বাড়ি ফেরার পড়ে আসে, তাহলে রাতে দেরি করে বাড়ি ফিরবে স্যামন্তক। চোয়াল, চিবুক যেন কেউ ছেনি দিয়ে ক্ষুদে তৈরি করেছে, ইস লোকজন আছে পাশে নাহলে জড়িয়ে ধরে এখুনি একটা চুমু খেয়ে নিত। আবার কেমন গোঁফ রেখেছে, ওটাকে কামিয়ে দিতে বলতে হবে নাহলে মুখের মধ্যে ঢুকে যাবে, নাঃ বেশ পুরুষালী দেখাচ্ছে ঐ ঘন কালো গোঁফ জোড়ায়। স্যামন্তকের বাম বাজুটা দু’হাতে জড়িয়ে বাঁ কাঁধে মাথা রাখে বন্দনা। স্যামন্তক বাঁ দিকে মাথা হেলিয়ে ওর মাথার ওপরে গাল রাখে। মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করে “কি হল, কিছু বলবে না। কত তো রাগ অভিমান করে বসেছিল আমার সাধের নর্তকী।” —“বাহ্: রে, তুমি সব কিছু পুবালিকে বলে দিলে তো আমি রাগ করবো না।” —“তুমি তো কিছু ঠিক করে শুনবে না তার আগেই ফোনটা কেটে দেবে, তো আমি কি করি।” —“কি বলেছ ওকে বল।” —“আর সে নিয়ে কথা বলে কি বিকেলটা মাটি করবে?” কাঁধের গোলায় ঠোঁট, নাক ঘষে মৃদু স্বরে বলে “না আজ আর রাগ করার মতন মুড নেই।” —“উফফফ্* রাখি কোথায় এ মেয়েকে।” —“যেখানে খুশী। এখন বলত পুবালিকে কি বলেছ?” —“আমি শুধু বলেছি যে তুমি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছিলে, ব্যাস বাকি আর কিছু জানাইনি। যেটা তোমার বাবা মা জানেন সেটাই দিদি জানে তার বেশি কিছু নয়। আমার মনে হয় না যে দিদি কোনদিন দুর্গাপুর এসে শান্তিনিকেতন গিয়ে খোঁজ নেবে। এবারে শান্তি?” আইস্ক্রিম খেতে খেতে আর গল্প করতে করতে অনেকটা সময় কেটে যায়, দু’জনের কারুর আর হুঁশ থাকেনা। ঠিক যখন বাইরে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে তখন দু’জনার মনে হয় যে বাড়ি ফিরতে হবে। বন্দনা, ছোটো ছোটো কাজল আঁকা ভীতি মাখা চোখে স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে “বাড়ি কি করে ফিরব?” নিচে নেমে দেখে বাইরে ঝড় শুরু হয়ে গেছে তবে বৃষ্টি শুরু হয়নি। বন্দনাকে বাঁ’হাতে জড়িয়ে ধরে স্যামন্তক “ভিজে ভিজে ফিরব। যাচ্ছি তো তোমার বাড়িতে, সেটা অবশ্য বাবা মা জানেনা।” একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে বন্দনা “মানে? তুমি বলে আসনি যে তুমি আমার বাড়ি আসছ?” হেসে বলে স্যামন্তক “তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? আমি যদি বলি যে আমি দিদির বান্ধবীর বাড়ি যাচ্ছি, তো সহজেই প্রশ্ন উঠবে যে বান্ধবীটি কে। যখন জানবে যে তার নাম বন্দনা, আমার বোন দুয়ে দুয়ে চার করে খবর দিয়ে দেবে বম্বে, ব্যাস।” হেসে ফেলে বন্দনা “বাঃহ বা দিদিকে এতো ভয়।” মৃদু হেসে উত্তর দেয় স্যামন্তক “ভয় নয় ঠিক, ও হচ্ছে আমার মা দুর্গা, আমার রক্ষাকবচ।” হাজরা ছাড়াতেই বৃষ্টি নেমে আসে, বালিগঞ্জ ফাঁড়ি বেশি দুরে নয় তাই দাঁড়াতে বারন করে বন্দনা। খুব ইচ্ছে হয় ওর এই রকম ভাবে বৃষ্টিতে ভিজতে। সারা মুখে ঝাপটা মারে বিন্দু বিন্দু জলের ছাট, মাথার চুল কিছু ভিজে, কিছু গালের সাথে লেগে, কামিজটা ভিজে গেছে, জড়িয়ে ধরে থাকে স্যামন্তকের বুক পিঠ। ঠাণ্ডা বৃষ্টিতে যেটুকু উষ্ণতা শুষে নেওয়া যায় এই সময়ে। বন্দনাকে বাড়ি নামিয়ে দিয়ে বেশিক্ষণ বসে না স্যামন্তক। একটু খানি গল্প করে উঠে পড়ে। দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসে বন্দনা, চৌকাঠ ধরে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে। দু’চোখ একটু খানির জন্য ছলছল করে ওঠে, এতো দিন পড়ে এলো, ধরে ঠিক রাখতে পারল না। মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করে “কাল আসবে?” কপালে কপাল ঠেকিয়ে নিচু গলায় উত্তর দেয় স্যামন্তক “ফোনে জানিয়ে দেব, এখন ঠিক করে বলতে পারছিনা।” সিঁড়ি দিয়ে ল্যান্ডিংয়ের আড়াল হয়ে যাওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকে বন্দনা, তারপড়ে দরজা বন্দ করে দেয়। আজ মনটা বড় উৎফুল্ল, যেন হাতে আকাশ ধরতে পেরেছে বন্দনা। ধিরে ধিরে দেখা করাটা নিয়মিত হয়ে গেছে, একদিন যদি না দেখা করতে আসে স্যামন্তক তাহলে যেন রাতে ঘুম ঠিক ভাবে আসে না। বাইকের পেছনে চেপে এস্প্লানেড, কলেজ স্ট্রিট থেকে শ্যামবাজার, হাতিবাগান পর্যন্ত চষে বের হয়। চলবে.....
Parent