হাজার রাতের গল্প (আরব্য-রজনী / আলিফ-লায়লা) - অধ্যায় ১১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-25369-post-1887839.html#pid1887839

🕰️ Posted on April 27, 2020 by ✍️ Abirkkz (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 557 words / 3 min read

Parent
 ১.৯  দেখতে দেখতে তিনটি বছর কেটে গেল। এই তিন বছরে প্রতিদিন মন্ত্রী খুঁজে খুঁজে দেশ থেকে একটি কুমারী মেয়ে তুলে নিয়ে আসে। আর বাদশা শাহরিয়ার প্রতি রাতে সেই মেয়েকে ভোগ করে এবং ভোরের আগে তাকে খুন করে।  বাদশার এরূপ কর্মে সারা দেশজুড়ে আতঙ্ক। যাদের ঘরে কুমারী মেয়ে ছিলো তারা প্রাণের ভয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। যারা পালাতে পারল, তারা তো বেঁচে গেল। আর যারা পালাতে পারলো না, তাদের পরিবারের কুমারী মেয়েকে তো বাদশা ভোগ করেই। পাশাপাশি তাদের পুরো পরিবারকেও মৃত্যুদণ্ড দেয়। প্রজারা একদিন যেই রাজাকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করত, এখন তার নাম শুনলেই ভয়ে অন্তর ভয় কেঁপে উঠে। ঘৃণায় শরীর রি রি করে ওঠে। মেয়ে হারানো বাবা-মাদের, একমাত্র খোদার কাছে বিচার জানানো ছাড়া আর কোনো পথ নেই।  এভাবে প্রতিদিন একটি করে কুমারী মেয়ে হত্যা করতে থাকলে দেশে কুমারী মেয়ের সংকট পড়ে যাবে। বাদশাকে মন্ত্রী,এবিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু বাদশা নাছোড়বান্দা। মন্ত্রীর কোন কথায় কান দিলো না। তার নিত্য-নতুন কুমারী মেয়ে লাগবেই লাগবে। তারপর একসময় মন্ত্রী যেই দিনের আশংকা করেছিল সেই দিনটি আসলো। সারাদিন খোঁজাখুঁজি করেও একটি কুমারী মেয়ে পেল না। মন্ত্রী ভাবল, কোন মেয়ে তো পেলাম না। তবে কি আজকেই আমার জীবনের শেষ দিন। যা ভাগ্যে আছে তাই হবে। মন্ত্রী ভয় বাদ দিয়ে বাদশার কাছে গিয়ে বলল: গোস্তাকি মাফ করবেন জাহাঁপনা, সারাদিন খুঁজেও আজকে একটি কুমারী মেয়ে পাইনি। মন্ত্রীর কথা শুনে বাদশা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল। মন্ত্রীকে বকাবকি করতে লাগলো। তারপর তাকে সামনে থেকে চলে যেতে বলল তারপর বাদশা একা একা বসে ভাবতে লাগলো, মন্ত্রী কোন মেয়ে খুঁজে পেল না। আসলেই কি আমার রাজ্যে আর কোন কুমারী মেয়ে নেই? এই তিন বছরে কম মেয়েকে তো আর হত্যা করিনি। সবগুলাকেই কি মেরে ফেললাম! অন্যদিকে শাহজামান তিন বছর আগেই তার দেশে ফিরে যায়। প্রতি রাতে মেয়ে ভোগের নেশায় ভাইয়ের সাথে তার আর দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। সে ভাবল, মন্ত্রীকে সময় দিয়ে কিছুদিনের জন্য তার ভাইয়ের দেশ থেকে ঘুরে আসবে। যেই ভাবা সেই কাজ। বাদশা তখনই মন্ত্রীকে ডেকে বলল: আমি ভাই শাহজামানের কাছে মাসখানেকের জন্য বেড়াতে যাচ্ছি।  তোমাকে কিছুদিন সময় দিলাম। আমি চাই তুমি এর মধ্যে একটি কুমারী মেয়ে জোগাড় রাখবে। প্রাসাদে ফিরে এসে যেন আমি মেয়ে উপস্থিত দেখি। তারপর বাদশা শাহরিয়ার লোক-লস্কর নিয়ে তার ভাইয়ের দেশের উদ্দেশ্য রওনা দিলো। ওইদিকে মন্ত্রী একটু হাফ ছেড়ে বাঁচল মনে মনে ভাবল: যাক, অন্তত মাস খানেক সময় পাওয়া গেল। এর মধ্যে অবশ্যই কুমারী মেয়ে জোগাড় হয়ে যাবে।  মন্ত্রী সেদিনের মত বাসায় চলে আসলো। সুদীর্ঘ তিন বছর পর আজকে শান্তির ঘুম ঘুমালো। রাজার লালসা পূরণের জন্য আজকে আর কোন বাবা-মার বুক খালি করে, তাদের কুমারী মেয়েকে ছিনিয়ে আনলো না। তাদের অভিশাপ শুনতে হলো না।  নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে মন্ত্রী পরদিন সকালে আবার কুমারী কন্যার খুঁজে বেরিয়ে গেল। কিন্তু তার ভাগ্য খারাপ। টানা দুই সপ্তাহ খুঁজেও একটি কুমারী মেয়ের সন্ধান পেল না।  মন্ত্রী বাসায় চলে আসলো। নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে গভীর দুশ্চিন্তা করতে লাগলো: এত খুঁজেও মেয়ে পেলাম না। বাদশা কি সত্যি সত্যি আমাদের রাজ্যের সকল কুমারী মেয়েকে মেরে ফেলল! দেশে কি আর একটি কুমারী মেয়েও বাকি নেই!  মন্ত্রী প্ৰায় সারাদিন খাওয়া-দাওয়া সব বন্ধ করে দরজা আটকে বসে রইল। তার প্রচন্ড ভয় হতে লাগলো।  মন্ত্রী ভয় আর গভীর চিন্তায় মগ্ন। এমন সময় হঠাৎ দরজা কড়া নাড়ার শব্দ হলো। মন্ত্রী গিয়ে দরজা খুলে দিল। আর তখনই তার মনে একটা কথা উদয় হলো: দেশ এখনো কুমারী মেয়ে শুন্য হয়ে যায়নি! দেশে যে একটিও কুমারী মেয়ে নেই সেটা ভূল।  দেশে একটা নয়, বরং দু-দুটো কুমারী মেয়ে এখনো জীবিত আছে। আর তারা মন্ত্রীর সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।  তারা আর কেউ না, স্বয়ং মন্ত্রীর আপন দুই কন্যা শাহরাজাদ ও  দুনিয়াজাদ।
Parent