জীবন যে রকম by লেখক (collected and incomplete) - অধ্যায় ৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-26707-post-1978713.html#pid1978713

🕰️ Posted on May 22, 2020 by ✍️ Buro_Modon (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 2785 words / 13 min read

Parent
শুভেন্দুদের বাড়ীর সামনের রাস্তাটা বেশ সরু। ওখানে ট্যাক্সি ঢোকে না। এর আগে যেকবারই ট্যাক্সি চড়ে আমি এসেছি, গলির মুখটায় ট্যাক্সিটা আমাকে ছেড়ে দিতে হত। কিছুটা হেঁটে এগিয়ে গেলে তারপরেই শুভেন্দুদের বিশাল বাড়ী। পিকনিক গার্ডেনে শুভেন্দুরা খুব বড়লোক। নতুন লোক এলে বাড়ী খুঁজে নিতে তার অসুবিধে হবে না। শুভেন্দুদের নাম বললেই সবাই ওই বাড়ী দেখিয়ে দেবে। দুর থেকে ওদের বাড়ীর একতলার বারান্দাটা দেখা যায়। বারান্দায় কেউ দাঁড়িয়ে থাকলে দূর থেকেই সেটা চোখে পড়ে। রাস্তাটায় ঢুকেই আমার মনে হল, শুভেন্দুর বোন মাধুরী দাঁড়িয়ে আছে ওখানে। দূর থেকে ও আমাকে দেখছে। মাধুরীর স্বভাবটা খুব মিষ্টি। একে তো বড়লোকের একমাত্র মেয়ে। শুভেন্দুরা চারভাই। আর ওদের এই একটিই মাত্র আদরের বোন মাধুরী। খুব প্রানখোলা স্বভাবের মেয়ে মাধুরীর সাথে আমারও গল্প করতে খুব ভালো লাগতো। কলেজে পড়ার সময় শুভেন্দুদের বাড়ীতে যতবারই এসেছি, মাধুরীর সঙ্গেও একটা দাদা বোনের মত সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। মাধুরী, রনির সঙ্গে তখন থেকেই প্রেম করতো, কিন্তু শুভেন্দুর সাথে যেহেতু আমার একটা আলাদা খাতির ছিল, আমি এলে মাধুরী জমিয়ে আড্ডা দিত আমার সঙ্গে। ওর ডাক নাম ছিল ছুড়ী। ওকেও আমি ছুড়ী বলে ডাকতাম। বয়সে শুভেন্দুর থেকে দু’বছরের ছোটো মাধুরী উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর আর পড়াশুনা করেনি। রনির সঙ্গে কয়েকবছর পরেই ওর বিয়ে হয়ে গেল। মাধুরী আর রনির সুন্দর একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে। নাম রেখেছে ‘দেবমাল্য’। ওর বাচ্চা হবার পর শুভেন্দু আমাকে বললো, এই ‘দেব’ নামটা আমার খুব পছন্দ। তোকেও যার জন্য আমার খুব পছন্দ। মাধুরীর যেহেতু তোকে খুব ভালো লাগে, আমাকে বললো, ‘ছোড়দা, আমার ছেলের নাম, আমি দেব দিয়ে রাখবো। দেবদার মতন। পরে রনিও রাজী হয়ে গেল। তাই ওর নাম রাখা হলো, ‘দেবমাল্য।’ দূর থেকে মাধুরী আমাকে দেখতে পেয়ে চেঁচিয়ে উঠে বললো, ‘এই যে দেবদা, ছোট্টবোনটাকে ভুলে গেছো বুঝি? ওফ কতদিন তোমায় দেখি না। সেই দুবছর আগে একবার তুমি এসেছিলে। আবার এতদিন পর।’ শুভেন্দুর বাড়ীর গেটের সামনে যেতেই মাধুরী হাসতে হাসতে বারান্দা থেকে বেরিয়ে এলো। ওর গালটা টিপে দিয়ে বললাম, ‘ও আমার ছুড়ী রে। দাদাটার কথা বুঝি এতদিন বাদে মনে পড়লো?’ মাধুরী বললো, ‘তুমি না কেমন জানি হয়ে গেছো দেবদা। আগে কত আসতে আমাদের বাড়ীতে। এখানে আড্ডা হতো। গান বাজনা হতো। মজা হতো। তা না, সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে, তোমরা সব নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে। আর আমাকেও তুমি ভুলে গেলে। মাধুরীকে বললাম, ‘তোকে আমি ভুলিনিরে ছুড়ী। শুভেন্দু যতবারই ফোন করেছে, তোর কথা জিজ্ঞাসা করেছি। রনিকে জিজ্ঞাসা করে দেখিস, ওকেও জিজ্ঞাসা করেছি তোর কথা। তোদের যখন ছেলে হল, শুভেন্দু আমাকে বললো, মাধুরী ওর ছেলের নাম রেখেছে দেবমাল্য। দেব নামটা ওর খুব পছন্দ। তোকে তো আমাদের বাড়ীর সবাই খুব পছন্দ করতো, তাই না? মাধুরীও বললো, আমি দেব নামটাই রাখবো। রনিও রাজী হয়ে গেল। তাই- মাধুরী বললো, তুমি খুশি হয়েছো, ‘আমার ছেলের নাম দেবমাল্য রেখেছি বলে?’ আমি বললাম, বারে? খুশি হবো না? আমি তো তখনই খুশি হয়েছি। খুব খুশি হয়েছি। মাধুরী বললো, ‘তোমার প্রতি আমার কিন্তু একটা ক্ষোভ আছে দেবদা। আমি খুব রেগে আছি তোমার ওপরে।’ ওর গালটা টিপে দিয়ে বললাম, ‘কেন রে ছুড়ী? রাগ কেন?’ মাধুরী বললো, ‘তুমি তখন আমার ছেলেকে দেখতে আসো নি কেন? জানো তোমায় কত এসপেক্ট করেছিলাম। তুমি এলে না। আর আমিও ছোড়দাকে বললাম, কি রে ছোড়দা? দেবদা তো এলো না? তুই কি কিছু জানাসনি নাকি দেবদাকে? ছোড়দা বললো, সব বলেছি। দেব এখন কাজবাজ নিয়ে ব্যস্ত। ওর এখন তোর ছেলেকে দেখতে আসার টাইম নেই।’ মাধুরীকে বললাম, শুভেন্দু এই কথা বলেছে তোকে? দাঁড়া ওকে আসতে দে। তারপর ওর মজা দেখাচ্ছি। মিথ্যে কথা বলা বের করছি। মাধুরী মুখটা একটু করুন মত করে, ছেলেমানুষির মত করছিল। বার বার ঘাড় নেড়ে বলতে লাগল, ‘না, না, বলো, তুমি আসোনি কেন?’ মাধুরীকে বললাম, ‘দূর বোকা। আমি তখন ছিলাম না কি কলকাতায়? কোম্পানীর কাজে আমি তখন হায়দ্রাবাদে। একমাস মত ওখানে ছিলাম। কলকাতায় ফিরেই চলে গেলাম, সিঙ্গাপুরে। কোম্পানীর তরফ থেকে ট্রিপ। ফিরে এসেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়লাম। একমাস মত বিছানায় শয্যাশায়ী। কাজকর্ম সব ডকে। এমন একটা রোগ বাঁধিয়ে ফেলেছি, ডাক্তার বললো, সাবধানে থাকুন। বাইরের খাবার একদম খাবেন না। আর মিষ্টি খাওয়া তো একদম বন্ধ।’ মাধুরী বললো, ‘কি যেন রোগটা হয়েছিল তোমার?’ আমি বললাম, ‘আলসার কোলাইটিস।’ মাধুরী শুনে বললো, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ শুনেছি। ও তো খুব কঠিন রোগ। ভীষন কষ্ট দেয়। পেটে ব্যাথা করে। রক্ত পড়ে। আমাশার মতন।’ মাধুরীকে বললাম, ‘হ্যাঁ, তারপর থেকেই মিষ্টি খাওয়া একেবারে বন্ধ। মিল্ক প্রোডাক্ট থেকেই না কি রোগটা হয়।’ মাধুরী বললো,তুমি তো আগে খুব মিষ্টি খেতে ভালবাসতে দেবদা। সব বন্ধ হয়ে গেল। তাই না? আমি বললাম, হ্যাঁ। মাধুরী বললো, ‘এ তোমার ভারী অন্যায় দেবদা। মাসীমাকে শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছো। বিয়ে থা তো এবার করো। আর কতদিন একা একা থাকবে? তোমাকে দেখার জন্যও তো কাউকে দরকার? তরপর নিজেই বললো, অবশ্য এখনকার মেয়েদের মধ্যে ভালো মেয়ে খুঁজে পাওয়া খুব দুষ্কর। মেয়েরা এখন স্বামীদের কেউ দেখে না। ওকে বললাম, ‘কেন? তুই মেয়ে দেখেছিস আমার জন্য?’ মাধুরী হেসে ফেললো, আমাকে বললো, ‘আমি যদি মেয়ে দেখি। সে মেয়ে তোমার পছন্দ হবে? সবাই তো আর বিদিশার মত সুন্দরী নয়।’ এই বিদিশা নামটা আমার জীবনের সাথে এমন ভাবে জড়িত। শুধু আমি কেন? অনেকেই ওকে ভুলতে পারেনি। মাধুরীর মুখ দিয়ে বিদিশা নামটা শুনেই আমার বুকের ভেতরটা কেমন ছটফটানি শুরু হয়ে গেল। ওকে বললাম, ‘হ্যাঁ রে ছুড়ী, তুই কি কিছু জানিস?আমাকে সত্যি করে বলতো? মাধুরী বললো, ‘কি জানবো? কি বলবো? ওকে বললাম, ‘আজ এখানে নাকি কারুর আসার কথা আছে। কোনো একটা মেয়ে। শুভেন্দু আর রনি তো সেই কথাটাই বলেছে আমাকে।’ মাধুরী শুনে এমন ভাব করলো, যেন ও কিছুই জানে না। আমাকে বললো, ‘কই সেরকম তো আমি কিছু শুনিনি।’ আমি অবাক হলাম। মনে মনে ভাবলাম, তাহলে কি শুভেন্দু আর রনি, মাধুরীকেও ব্যাপারটা বলেনি? না ও সব জানে, রনি আর শুভেন্দুর মত মাধুরীও আমাকে গোপণ করছে। মাধুরীকে বললাম, ‘কই তোর কত্তা কোথায়? ওকে ডাক দেখি একবার। দেখি জিজ্ঞাসা করে।’ মাধুরী বললো, ‘সে তো একটু আগেই বেরুলো তোমার জন্য।’ রনি আমার জন্য কোথায় গেছে? একটু অবাকই হলাম, ওকে বললাম, ‘কেন রে? আমার জন্য তোর কত্তা বেরিয়েছে? কোথায় গেছে?’ মাধুরী বললো, ‘গেছে হয়তো কিছু কিনতে টিনতে। দুপুর বেলা তো এক পেট ভাত খেয়ে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোচ্ছিল। তুমি ফোনটা করলে। অমনি বাবু তড়াক করে জেগে উঠলেন। আমাকে বললো, তুমি বারান্দাতে দাঁড়িয়ে থাকো। ‘দেব’ আসছে। আমি ততক্ষণ দোকানটা থেকে চট করে ঘুরে আসছি। বুঝে নিলাম, রনি কোথায় গেছে। মাল খাওয়ার নেশাটা রনির প্রচুর। তারপরেই আবার ভাবলাম, বিদিশা যদি সত্যি আসে, ওর সামনে এসব খাওয়াটা কি ঠিক হবে? মাধুরী ভেতরে গিয়ে ওর বাচ্চাটাকে কোলে করে নিয়ে এলো। আমার সামনে আসতেই খেয়াল হল। ইস তাড়াহুড়োতে ওর জন্য কিছু কিনে আনা হয় নি। পকেট থেকে টাকা বার করতে যাচ্ছিলাম। মাধুরী বললো, ‘তুমি ওর মাথায় হাতটা রেখে আশীর্ব্বাদ করোতো। তাহলেই হবে। টাকা হাতে পেলে এক্ষুনি ওটাকে ছিঁড়ে দেবে। যা দুষ্টু।’ বাচ্চাটাকে দুহাত বাড়িয়ে কাছে ডাকছিলাম। ও ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে দেখছিল, কিন্তু কিছুতেই আসছিল না। মাধুরী ওকে বললো, ‘এটা কে বলোতো? এটা হলো তোমার কাকু।’ যাও কাকু ডাকছে যাও।’ আমি দুহাত বাড়িয়ে মাধুরীকে বললাম, ‘কাকু কি রে? বল, আমি ওর মামা হই। মাধুরী বললো, হ্যাঁ এটা হলো তোমার দেব মামা। যাও মামার কাছে যাও।’ বাচ্চাটা এবার আমার কাছে চলে এলো। মাধুরী ওকে বললো, ‘মামা কিন্তু খুব ভালো গান জানে। তুমি মামার কাছে গান শিখবে? বাচ্চাটা ঘাড় নাড়লো। দাঁত বার করে হেসে বললো, হাঁ। মাধুরী বললো, দেবদা, তুমি বসো, আমি তোমার জন্য চা করে নিয়ে আসছি। ততক্ষনে রনিও এসে পড়বে। আমি মাধুরীকে বললাম, শুভেন্দু কখন আসবে? আমাকে তো বললো, আধ ঘন্টার মধ্যে ঢুকছে। মাধুরী বললো, ‘ছোড়দা যদি তোমাকে আধঘন্টা বলে থাকে, তাহলে ধরে নাও ওটা একঘন্টা। ওর সব কিছুতেই লেট। আজও অবধি কোনদিন টাইম মত কিছু করেনি। তারপর হেসে বললো, দেখছো না বিয়েটাও করছে না এখনো। এখনো নাকি ওর বিয়ে করার টাইম হয় নি।’ আমি বললাম, শুভেন্দু তো বলেছে, ‘বিয়ে আর করবে না এ জীবনে।’ মাধুরী হেসে বললো, ‘ওর মত তুমিও সেই ভুলটা আর কোরো না।। বিয়ে যদি না করো। সারাজীবনের মত পস্তাতে হবে, এই আমি বলে দিচ্ছি।’ বলেই ও ভেতরে চলে গেল। আমি বসার ঘরটায় বসে একটা ম্যাগাজিন উল্টে পাল্টে দেখতে লাগলাম। মনে হল, সকালে ডায়েরীতে শুভেন্দুর ব্যাপারে অনেক কথাই লিখেছি, কিন্তু এই কথাটা একবারও লেখা হয় নি। শুভেন্দুর সব কিছুতেই লেট।’ বিদিশা কদিন ধরেই আমাকে বলছে, ‘জানো তো দারুন একটা ছবি রিলিজ করছে আগামী শুক্রবার। ছবির নাম ‘তেজাব।’ ওতে অনিল কাপুর আর মাধুরী দিক্ষিত আছে।’ আমি বললাম, তো? বিদিশা বললো, তো মানে? দেখতে যাবো না? ওদিন পুরো একটা গ্রুপ যাবে। আমি বললাম, কে কে? বিদিশা বললো, তুমি আর আমি। সাথে শুক্লা আর সৌগত। আর রনি আর মাধুরীও থাকবে আমাদের সঙ্গে। আমি বললাম, আর শুভেন্দু? ও তো না গেলে খেয়ে ফেলবে আমাদের। বিদিশা বললো, ‘শুভেন্দুই তো দায়িত্ব নিয়েছে সবার টিকিট কাটার। লাইন দিয়ে ও আগে টিকিটটা কাটবে। ও থাকবে না মানে? ও তো থাকছেই।’ বিদিশার কথা শুনে আমিও খুশি হলাম। বললাম, ‘তাহলে ঠিক আছে। সবাই মিলে যাবো। বেশ আনন্দ হবে।’ শুভেন্দু লাইন দিয়ে আমাদের জন্য আগে থেকে টিকিট কাটলো কষ্ট করে। কলেজে এসে বললো, ‘উফ কি মারপিট হচ্ছে রে লাইনে। বই একেবারে সুপারহিট।’ মোট সাতখানা টিকিট যথারীতি ওর কাছেই রেখে দিল। যেদিন আমরা সিনেমাটা দেখতে যাব। শুভেন্দুর আর পাত্তা নেই। এদিকে মাধুরীও চলে এসেছে বাড়ী থেকে। রনি এসে বললো, ও আমাকে বললো, তোরা হলের কাছে গিয়ে দাঁড়া। আমি দশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছোচ্ছি। আমরা ছজনে ধর্মতলায় প্যারাডাইস সিনেমা হলে পৌঁছে গেলাম । দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবাই ঘড়ি দেখছি। এদিকে শুভেন্দুর আর পাত্তা নেই। তিনটের ম্যাটিনির শো চালু হয়ে গেল। সৌগত, রনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত কামড়াচ্ছে। আমিও তাই। বাবু এলেন ঠিক তার আধঘন্টা পরে। তখন বইটার অনেকগুলো সীন হয়ে গেছে। সৌগত শুভেন্দুকে বললো, হ্যাঁ রে তুই কি? এতো দেরী করে এলি? এই তোর দশ মিনিট? শুভেন্দু হেসে বললো, ‘আমি টাইমলিই আসছিলাম। বাড়ী থেকে কিছুটা রাস্তা চলে আসার পর দেখি। টিকিটগুলোই সব ঘরের ড্রয়ারে ফেলে রেখে চলে এসেছি। আবার বাড়ী যেতে হলো। তাই দেরী হয়ে গেল।’ বলেই দাঁত বার করে আবার কেলাতে লাগলো। হি হি। মাধুরী চা নিয়ে এসে ঢুকেছে ঘরে, ঠিক তখুনি রনিও এসে হাজির। দেখলাম, ওর দুহাতে দুদুটো প্যাকেট। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এসে গেছিস বস? বোস তাহলে, আমি একটু ভেতর থেকে আসছি।’ রনি মাধুরীকে সামনে পেয়ে কি মনে করে মাধুরীর হাতেই প্যাকেট দুটো দিয়ে দিলো। বললো, ‘তুমি এই প্যাকেট দুটো ভেতরে রেখে আসো তো। আমি আর যাবো না ভেতরে।’ মাধুরী বললো, কি এগুলো? রনি বললো, ‘আছে কিছু। তবে এটা আমাকে নয়। তোমার ছোড়দাকে জিজ্ঞেস কোরো।’ মাধুরী একটু মুখ ভেংচি কাটলো। রনিকে বললো, ‘আহা। আমার কর্তাটিও যেন কম যান না। খালি ছোড়দাকে দোষ দিলে হবে? কমপিটিশন করতে আপনিও তো মাষ্টার।’ মাধুরী ভেতরে চলে গেল। রনি আমার সামনের সোফাটায় বসলো। আমাকে হেসে বললো, ‘বউটা আমার খুব ভালো। জানিস তো দেব। নইলে আমার মত ছাগলটাকে ভালোবেসে ফেললো। মাধুরীর অনেক গুন আছে। ঠিক কিনা বল?’ আমি রনিকে বললাম, তুই এখনো মাল খাওয়া চালিয়ে যাচ্ছিস? রনি বললো, ‘শোন, তোর কথা ভেবে আমি একটা শায়েরী লিখেছি। বলেই শায়েরীটা শোনাতে লাগলো, পি হ্যায় শরাব, হর গলি কি দুকান সে, দোস্তি সি হো গয়ী হর শরাব কে জাম সে। গুজরে হ্যায় হাম কুছ অ্যায়সী মুকাম সে, কি আঁখে ভর আতী হ্যায় মহব্বত কে নাম সে। রনির চোখের দিকে তাকালাম, হেসে বললাম, ‘তোর কি শালা আমার মত এত দূঃখ নাকি। যে দূঃখে তুই মদ খাবি।?’ রনি বললো, আমি তো দূঃখে মদ খাই না। আনন্দ করেই খাই। তবে তোর জন্য কি আমাদের দূঃখ হয় না। এই তো শুভেন্দু। তোকে এত জ্ঞান মারে, উপদেশ দেয়, শালা তোর দূঃখে একদিন কেঁদেই ফেললো। আমি বললাম, সেকীরে তাই নাকি? রনি বললো, হ্যাঁ সেকী কান্না। তুই যদি একবার দেখতিস। আমি বললাম, তাহলে মনে হয় একটু বেশী নেশা হয়ে গেছিলো। রনি বললো, ‘তা ঠিক। তবে ও তোকে খুব ভালোবাসে, জানিস তো দেব? এখনো বলে, বন্ধুদের মধ্যে তোর পরে দেবই আমার খুব কাছের ছিলো। সেই যে কলেজের পর ঘটনা ঘটে গেল। তারপর ও নিজেকে কেমন গুটিয়ে নিল। শালা হারামী মিনু। শয়তান, মাগীর বাচ্চা। ঢ্যামনা মাগী। বিদিশাকে পুরো চটিয়ে দিলো।’ রনি এমন গালাগাল দিতে শুরু করেছে। মাধুরী ভেতরের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। ওকে বললো, কি হচ্ছেটা কি? কাকে গালাগাল দিচ্ছো এভাবে? রনি বললো, ‘জানো না? ওই শয়তান মিনু ঢেমনিটাকে। ওই তো দেব আর বিদিশার প্রেমটাকে বরবাদ করে ছাড়লো। ইস কি সুন্দর ছিলো সেই সময়টা। আমরা সবাই মিলে ঘুরতাম, ফিরতাম। তা না আপদটা এসে জুটে বসলো। আর দেবের জীবনটাকে নষ্ট করে দিলো।’ মাধুরী সবই জানে। বললো, ‘ছাড়ো না ওসব পুরোনো কথা। এখন দেবদার কি করা যায় সেটা আগে বলো। আমি কি মেয়ে দেখবো নাকি একটা দেবদার জন্য?’ রনি জোর করে পাশে বসালো মাধুরীকে। ওর গাল টিপে দিয়ে বললো, ‘তাই? তুমিও দেখবে? কিন্তু আজ যে আসছে, তাকে দেখলে, দেবের তো কাউকে আর পছন্দ হবে না।’ মাধুরী কিছুই জানে না। রনি কে বললো, ‘কে আসছে গো?’ রনি বললো, ‘ওটা এখন বলা যাবে না। ক্রমশ প্রকাশ্য।’ মাধুরী বললো, ঢং রাখো দেখি। কি হবে বললে? রনি বললো, ‘শুভেন্দু আমাকে মানা করেছে। বললে আস্তো রাখবে না। দেবকে তো বলা যাবে না। তোমাকেও নয়।’ মাধুরী বললো, ‘আহা ন্যাকা। কি হবে বললে? আমার ছোড়দাটাও যেমন, আর তুমিও তেমন।’ কানটা রনির মুখের দিকে বাড়িয়ে মাধুরী বললো, ঠিক আছে আমার কানে কানে বলো। দেবদা শুনতে পাবে না। রনি বললো, ‘না তোমার পেট খুব পাতলা। তুমি ঠিক বলে দেবে দেব কে । আর সব মাটি হয়ে যাবে আজকে।’ মাধুরী রেগে মেগে বললো, ‘ঠিক আছে যাও। বলতে হবে না। কে না কে খেদী পেঁচী আসবে। তারজন্য সব নখরা হচ্ছে।’ আমি ওদের দুজনের রকমটা দেখছিলাম। রনিকে বললাম, আমি সব জানি। কে আসবে তাও জানি। শুধু মজাটা দেখছি। শেষ পর্যন্ত কি হয়। বলতে বলতে শুভেন্দুও ঠিক তখন এসে ঢুকলো। ঘরে ঢুকে বললো, ‘দেখলি তো। ঠিক টাইম মত এসেছি। আজ আর দেরী করিনি।’ মাধুরীকে বললো, ‘এই ছুড়ী, এই প্যাকেটটা ভেতরে রেখে দিয়ে আয়।’ দেখলাম শুভেন্দুর হাতেও একটা প্যাকেট। রনির মত ও কিছু কিনে নিয়ে এসেছে। মাধুরী বললো, ‘এটা কি আছে রে ছোড়দা?’ শুভেন্দু বললো, ‘ওর মধ্যে একটা গিফ্ট আছে। একজনকে দেবো। সে আসছে।’ মাধুরী অবাক হয়ে তাকালো শুভেন্দুর দিকে। ওকে বললো, ‘কে আসছে? কাকে গিফ্ট দিবি?’ শুভেন্দু বললো, ‘আমাদের সবার তরফ থেকে এই গিফ্ট। আর কে আসছে? এখুনি তাকে দেখতে পাবি। একটু অপেক্ষা কর।’ মাধুরী যথারীতি ওই প্যাকেটটা নিয়েও ভেতরে চলে গেল। আমি বুঝলাম, বিদিশার জন্য আজ অনেক কিছু অপেক্ষা করছে এখানে। কলেজে দিনগুলো তো আর ভোলার নয়। আমার বন্ধুরা সব, আমার মতন। বিদিশাকে কেউ ওরা ভোলেনি। সামান্য একটা ভুলের খেসারতে বিদিশা সেদিন আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। বিদিশার সেদিনের সেই আচরণে সবাই একটু দূঃখ পেয়েছিল ঠিকই। কিন্তু আজ এতদিন পরে সবাই যেন একটু নড়ে চড়ে বসেছে। বিদিশা, আসবে বলে শুভেন্দু আর রনি বেশ এক্সসাইটেড হয়ে গেছে । ঠিক যেনো আমারই মতন। আমার সামনে বসেই শুভেন্দু আমাকে বললো, কি ভাবছিস? আমি বললাম, কই কিছু না তো? কলেজে যেভাবে আমার দিকে তাকিয়ে শুভেন্দু হাসতো, ওর চেনা হাসিটাকে দেখে বুঝতে পারলাম, আমার মনের ভাবটা বোঝার চেষ্টা করছে। বিদিশাকে দেখলে, আমি হয়তো আত্মহারার মতন হয়ে উঠবো। মনের মধ্যে যে আলোড়নের সৃষ্টি হচ্ছে। সেটা সেভাবে প্রকাশ করতে পারছি না। আনন্দটা চেপে রেখেই বললাম, তোর সারপ্রাইজের জন্যই তো আমি এসেছি। এবার বল, কি তোর সারপ্রাইজ? শুভেন্দু বললো, আমি যে সারপ্রাইজটা তোকে দেবো, নিতে পারবি তো? পাগল হয়ে যাবি না? রনি শুভেন্দুর মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছিল। আমি বললাম, আগে তো শুনি, দেখি। তারপরে দেখা যাবে, পাগল হই কিনা? একটু রসিকতা করে শুভেন্দু রনিকে বললো, ‘দেব মনে হচ্ছে, আজ আর বাড়ী ফিরতে পারবে না। ওকে সারারাত এখানেই থাকতে হবে।’ আমাকে বললো, ‘তুই এক কাজ কর। মাসীমাকে ফোন করে বলেদে, আজ আমি শুভেন্দুদের বাড়ীতেই থেকে যাচ্ছি। সুতরাং তুমি শুধু শুধু আমাকে নিয়ে চিন্তা কোরো না।’ আমি বললাম, আগে সারপ্রাইজটা তো বল। তারপরে মা’কে ফোন করছি। শুভেন্দু, রনি দুজনেই হাসতে লাগলো। আমাকে রনি বললো, ‘ভাবছিস কি সারপ্রাইজ তোর জন্য ওয়েট করছে। তাই না?’ আমি ওদের দুজনকেই হেসে বললাম, সেটা তোরা দুজনেই জানিস। তবে আমিও জানি কিছুটা। তবে এখন সেটা বলবো না। শুভেন্দু বললো, কি জানিস? কে বলেছে তোকে? পাছে ওরা কিছু জেনে যায় আমি বললাম, কেউ বলেনি আমাকে। আমি এমনি বলছি। পকেটে মোবাইলটা ছিল, হঠাৎই দেখি শুক্লা ফোন করেছে আমাকে। খেয়াল হল, শুক্লাকে বলেছিলাম, ফোন করে ওকে জানাবো। ঘর থেকে যখন বেরিয়ে এসেছি, ওকে আর জানানো হয় নি। শুভেন্দুর আর রনির সামনেই শুক্লার ফোনটা রিসিভ করলাম। ওরা দুজনে বলে উঠলো, কে রে? আমি বললাম, শুক্লা। শুক্লা বেশ রেগে রয়েছে আমার ওপরে। আমাকে বললো, কি রে দেব? তুই ফোন করলি না তো? আসছিস তো তাহলে? শুভেন্দু আর রনি দুজনেই বেশ কৌতূহল চোখে তাকাচ্ছে আমার দিকে। আমি শুক্লাকে বললাম, ‘এই তো শুভেন্দুর বাড়ী এসেছি। তোকেও ফোন করতে ভুলে গেছি। শুক্লা, সরি। শুক্লা একটু আপসেট হল, আমাকে বললো, এ মা, তুই শুভেন্দুর বাড়ীতে চলে গেছিস? তা আমাকে বলবি তো? বুঝতেই পারছিলাম, যেন খুব আশা করেছিল ব্যাচারা। ওকে বললাম, ‘শুভেন্দু আমার সামনেই আছে। কথা বলবি?রনিও আছে। নে কথা বল।’ শুভেন্দু এগিয়ে এসে, নিজে থেকেই আমার হাত থেকে ফোনটা নিলো। শুক্লাকে বললো, হায়, সুইট হার্ট! কেমন আছো তুমি? আমি শুনতে পাচ্ছিনা শুক্লার কথা। বোধহয় ওকে বলেছে, আমার কথা তাহলে তোর মনে পড়লো? শুভেন্দু বললো, ‘কি করবো বলো? আমি তো তোমার গলায় তখনি মালা দিতে চেয়েছিলাম। দেব বারণ না করলে কি আর শুনতাম? সবই রেডী ছিল, মালা, ফুল, তোমার জন্য আমার উপহার। তুমি আমার দিকে ফিরেও তাকালে না। সৌগতর দিকেই ভীড়ে গেলে। ভগবান আমাকে সারাজীবন নিঃসঙ্গ করে রাখলো। শুক্লা ওকে কিছু বলতে চাইছিল, শুভেন্দু ওকে বাঁধা দিয়ে বললো, আরে রাখ, রাখ, ও তো আমি এমনি রসিকতা করছি। জানিস তো ভালো একটা খবর আছে। শুক্লা বললো, কি খবর? দেব একটা বড়সড় পার্টী দিচ্ছে আমাদের জন্য। সেই কলেজে মাঝে মাঝে যেমন দিতো। শুক্লা বললো, পার্টী? কি খুশিতে? শুভেন্দু বললো, ওটা এখুনি বলা যাবে না। তাহলে দেবকে সারপ্রাইজটা আর দেওয়া যাবে না। শুক্লা কি একটা বলতে গেলো। শুভেন্দুর মুখটা শুকনো মতন হয়ে গেল। আমাকে বললো, ‘এ আবার কি হল রে? এ যে দেখি উল্টো কথা বলছে।’ সকালে শুক্লা এসেছিল, আমার বাড়ীতে। বিদিশার কথা ওই আমাকে বলেছে। শুক্লা চায় না আমি বিদিশার সাথে আবার দেখা করি। মুখ খানা ফ্যাকাসে মতন হয়ে গেলে মানুষ যেমন কোনো তালগোল খুঁজে পায় না। শুভেন্দু সেভাবেই বললো, ‘আমি তো শুক্লার কিছু তাল খুঁজে পাচ্ছি না। তবে কী?-
Parent