কাজল নদী Written By Tumi_je_amar - অধ্যায় ১৭

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-28266-post-2123379.html#pid2123379

🕰️ Posted on July 2, 2020 by ✍️ Kolir kesto (Profile)

🏷️ Tags:
📖 902 words / 4 min read

Parent
(#০২) এর দুদিন পরেই সকাল বেলা সুলগ্নার খুব জ্বর। বড়দা প্যারাসিটামল খাইয়ে দেন।  মানসী – দাদা একবার ডাক্তার দেখালে হত না ? বড়দা – কিচ্ছু হয়নি। এক ঘণ্টা পরেই ঠিক হয়ে যাবে। বড়দা অফিসে চলে যান। শ্রেয়সীর এইসব নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। ও সকালে পুজা করে গান শিখতে চলে যায়। মানসী বলে ও স্কুলে যাবে না, বৌদির পাশে থাকবে। সুলগ্না – না না, আমার কিচ্ছু হবে না। তোমার নতুন চাকরি, এই সময় কামাই করো না। মানসী আরও এক ঘণ্টা সুলগ্নার পাশে থাকে। ওর জ্বর একটু কমলে মানসী স্কুলে যায়। স্কুলে যাবার আগে ও নিহারিকাকে ফোন করে দেয়। সেদিন নিহারিকা ফ্রী ছিল, তাই ও চলে আসে। সারাদিন সুলগ্নার জ্বর একবার কমে আবার বেড়ে যায়। নিহারিকা বোঝে কিছু একটা গুরুতর সমস্যা হয়েছে। ও রাঁচিতে স্বপনের সাথে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করে, কিন্তু তখনকার দিনের আমাদের দেশের টেলিফোন ব্যবস্থা সেই চেষ্টাকে সফল হতে দেয় না। ও সুলগ্না কে একবার প্যারাসিটামল দেয়। কিন্তু পাঁচ ঘণ্টার কম সময়ে সেটাও দেওয়া যায় না। ও সুলগ্নার কপালে জলপট্টি দেয়, মাথা ধুইয়ে দেয়। কিন্তু বাড়ীতে আর কেউ ছিল না যাকে নিয়ে ডাক্তার ডাকতে পারে। বিকালে মানসী ফেরে। ও ফিরেই সুলগ্নার অবস্থা দেখে বড়দার অফিসে খবর দেয়। বড়দা যখন বাড়ি পৌঁছায় সুলগ্না তখন পুরো পুরি অজ্ঞান হয়ে শুয়ে আছে। বড়দা এসেই হৈচৈ চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। কেন ওনাকে খবর দেওয়া হয়নি। কে খবর দেবে সেটা চিন্তা করেন না। উনি সুলগ্না বৌদিকে সামনের একটা নারসিং হোমে নিয়ে যান। সেই নারসিং হমের ডাক্তার বলেন কিছু পরীক্ষা করতে হবে কিনবে ওই নারসিং হোমে সেই পরিক্ষার ব্যবস্থা নেই। ডাক্তার বলেন কোন বড় নারসিং হোমে নিয়ে যেতে, কারন প্রাথমিক ভাবে ওনার খুব একটা সুবিধা জনক লাগছে না।  বড়দা বাইরে এসে একটু খবর নেন কোন নারসিং হোম ভাল কিন্তু কম খরচের। অনেক চিন্তা ভাবনা করে মানিকতলার একটা নারসিং হোমে নিয়ে যান। খুব একটা সস্তা নারসিং হোম নয় কিন্তু ওনার কাছে আর কোন উপায় ছিল না। ওখানে সুলগ্না বৌদিকে সাথে সাথে ভর্তি করে আর রক্ত আর আনুসঙ্গিক পরীক্ষা করতে দিয়ে দেয়। চিকিৎসাও শুরু করে। সুলগ্না বৌদির জ্ঞ্যান ফিরে আসে। সুলগ্না বৌদি জ্ঞান ফিরতেই চারদিকে তাকিয়ে দেখে কে কে আছে। তখন মানসী আর নিহারিকা বৌদির কাছে ছিল। বড়দা ডাক্তারদের সাথে কথা বলছিলেন। সুলগ্না – রাঙা দিদি আমি না থাকলে আমার মেয়েকে দেখো মানসী – তুমি থাকবে না মানে ? এমনি জ্বর হয়েছে, কিছু একটা ইনফেকশন হয়েছে। দুদিন অ্যান্টিবায়োটিক খেলে আর বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে। নিহারিকা – বৌদি তোমার কি শরীর খুব খারাপ লাগছে ? সুলগ্না – না এখন ভালই লাগছে। কিন্তু আমার মন বলছে আমি আর বাঁচব না। নিহারিকা – তোমার কিচ্ছু হয়নি। খাটা খাটুনি বেশী করো, কোন বিশ্রাম নাও না, তাই এইরকম শরীর খারাপ লাগছে। সুলগ্না – তা হলেই ভাল। মানসী – বড়দাকে ডাকি ? সুলগ্না – তোমাকে যে টাকা দিয়েছি, সেটা ঠিক করে রাখবে। এই নিহারিকা জানল, আর কেউ যেন না জানে। মানসী – এমন করো না, তোমার কিচ্ছু হয়নি। সুলগ্না – নেহা আমি না থাকলে তুমি তোমার দাদাকে আর একটা বিয়ে করতে বল। না হলে আমার মেয়েকে কে দেখবে ? নিহারিকা – আচ্ছা সে দেখা যাবে। সুলগ্না – তোমার বড়দাকে ডাকো।  মানসী গিয়ে বড়দাকে ডেকে আনে। বড়দা এসে মুখ কালো করে সুলগ্না বৌদির মাথার কাছে বসেন। বৌদির হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে চুপ করে বসে থাকেন। চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল গরিয়ে পড়ে।  সুলগ্না – কাঁদছ কেন ? বড়দা – কিছু না, এমনি সুলগ্না – তোমাকে কোনদিন কাঁদতে দেখিনি, তাই অবাক লাগছে বড়দা – তোমার যে কোনদিন এই রকম শরীর খারাপ হতে পারে সে কথাটাই কোনদিন ভাবিনি। সুলগ্না – ডাক্তার কি বললেন বড়দা – কিছু বলেনি এখনও, মনে হয় সব ঠিক আছে বড়দা কথা বলতে বলতে কেঁদে ফ্যালেন। মানসী, নিহারিকা বা সুলগ্না সবাই বোঝে যে বড়দা সত্যি কথা বলছেন না।  সুলগ্না – আমার অসুখের সময় তুমি যদি এভাবে ভেঙ্গে পড় তবে বাকি সবাইকে কে দেখবেদেখবে মানসী আর নিহারিকা ওদের দুজনকে একা রেখে বাইরে যায়। বাইরে মানসীর এক জামাইবাবু ছিলেন। উনি বলেন যে বৌদিকে আর ফেরানো যাবে না।  মানসী – কি হয়েছে বৌদির ? জামাইবাবু – খুবই খারাপ খবর নিহারিকা – কি ? জামাইবাবু – কাউকে বলবি না আর একটুও কাঁদবি না মানসী – ঠিক আছে, কিন্তু তুমি বল বৌদির কি হয়েছে ? জামাইবাবু – লিউকিমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার। একদম শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। মানসী আর নিহারিকা চেঁচিয়ে ওঠে আর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। জামাইবাবু বা আর যারা ছিল তারা এসে ওদের শান্ত করে। জামাইবাবু ওদের বোঝায় যে বৌদি যেন না জানে। তবে যে কদিন বেঁচে আছেন সে কটা দিনও শান্তিতে থাকবে না। ওরা দুজন বাইরে এক কোনায় চুপ করে বসে থাকে। বড়দা এসে ওদের আবার ডেকে নিয়ে যায়, সুলগ্না বৌদি ওদের ডাকছে তাই। সুলগ্না – তোমাদের দেখে বুঝতে পাড়ছি ভয়ানক কিছু একটা হয়েছে নিহারিকা – না না বৌদি বাইরে একজন রুগি কে দেখে খুব খারাপ লাগছিলো, রাঙা দিদি তো সেই রুগি কে দেখে কেঁদেই ফেলেছে। সুলগ্না – আমি তোদের বৌদি। আমি তোদের কে অনেক বেশী জানি। মানসী – হ্যাঁ বৌদি নেহা সত্যি বলছে। সুলগ্না – আছা ঠিক আছে। স্বপনের সাথে দেখা হল না। নেহা স্বপনকে দেখে রাখবে। খুব ভাল ছেলে আর তোমাকে খুব ভালবাসে। নিহারিকা – সে নিয়ে তুমি চিন্তা করো না। সুলগ্না – মানসী আমার মেয়েকে দেখো। বড়দা – বেশী কথা বল না সুলগ্না – হ্যাঁ গো আমার খুম পাচ্ছে। একটু ঘুমাবো। জামাইবাবু গিয়ে ডাক্তারকে ডেকে আনেন। ডাক্তার সবাইকে বাইরে যেতে বলে। ডাক্তার বাবু একটু পড়ে বেড়িয়ে এসে বলেন যে যে কাছা কাছি আছে সবাইকে ডেকে একবার সুলগ্না বৌদির সাথে দেখা করিয়ে দিতে। তখন প্রায় রাত দশ টা বাজে। মানসীর বাকি দাদা দিদিরা কাছেই ছিল। যারা ছিল সবাই গিয়ে বৌদির সাথে কথা বলে আসে। রাত্রি সাড়ে দশটায় বৌদি ঘুমিয়ে পড়ে। সেই ঘুম আর ভাঙ্গেনি। ভোর চারটে নাগাদ ঘুমের মধ্যেই সবাইকে ছেড়ে চলে যান।
Parent