কাজল নদী Written By Tumi_je_amar - অধ্যায় ৩৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-28266-post-2143008.html#pid2143008

🕰️ Posted on July 6, 2020 by ✍️ Kolir kesto (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1020 words / 5 min read

Parent
ষষ্ঠ পরিচ্ছদ – সবাইতো সুখী হতে চায় (#০১) আমরা সবাই সুখী হতে চাই। তবে সবার সুখের মাপকাঠি এক নয়। কেউ ভালবাসায় সুখ পায়। কেউ রাজা হয়ে সুখ পায়। কেউ ভালবাসার জন্যে ত্যাগ করে সুখ পায় আবার কেউ ভালবাসা ছিনিয়ে নিয়ে সুখ পায়। কেউ চুরি করে সুখ পায় আবার কেউ অন্যের জন্য জীবন দিয়ে সুখ পায়। যে যাই বলুক আসলে আমরা সবাই স্বার্থপর। আমরা যা করি নিজের সুখের জন্যেই করি।  যে ভালবাসা ছিনিয়ে নেয় সে শুধু নিজেই সুখ পায়। আর যে ভালবাসার জন্যে ত্যাগ করে সে পৃথিবীর চোখে হয়ত দুঃখ পায়, কিন্তু আসলে সেও ত্যাগ করে সুখ পায়। তবে তার নিজের সুখের সাথে সাথে অন্যরাও সুখী হয়। এই গল্পের মানসী ত্যাগ করে সুখ পায়। নিজের আসল সুখ বা স্বাচ্ছন্দের কথা একটুও ভাবে না। অন্য সবাই সুখী হলেই মানসী খুশী। স্বপন নিজে সুখে থাকতে চায়। অন্যকেও সুখে থাকতে দিতে চায়। কিন্তু অন্যের সুখের জন্যে কোন ত্যাগ করতে রাজী নয়। ও সবাইকে সাহায্য করে বা করতে চায় কিন্তু নিজের প্রয়োজন বাঁচিয়ে। বড়দার সুখ শুধু টাকায়। সে নিজের উপার্জনের টাকা হোক বা অন্যের থেকে ম্যানেজ করে নেওয়া টাকাই হোক। ওনার লক্ষ্য টাকা ওনার ব্যাঙ্ক আকাউন্টে থাকবে আর তার জন্যে যা করার দরকার উনি করবেন।  ভাস্কর এখনও সুখ নিয়ে সেইরকম ভাবে চিন্তাই করেনি। মানসীর সাথে ভালবাসা বা চেনাশোনা হবার আগে ওর জীবন কালীপূজার ছুঁচো বাজির মত ছিল। ছুঁচো বাজিতে আগুন দিলে সেটা যেদিকে খুশী ধাওয়া করে। রকেট বাজির মত একটা নির্দিষ্ট দিকে যায় না। এতদিন ভাস্করের জীবনও তাই ছিল।  মানসী আবার আগের জীবনে ফিরে যায়। সকালে স্কুল, দুপুরের পর থেকে বিউটি পার্লার। একই গতানুগতিক জীবন। পার্লার এখন বেশ ভাল ভাবেই চলে। অনেক রেগুলার কাস্টমার আছে। বিয়ের মরশুমে বেশ কিছু বউ সাজানোর কাজও পায়। পার্লারের সেই প্রথম চারটে মেয়ের দু জন ছেড়ে চলে গেছে। তাদের জায়গায় নতুন মেয়ে যোগ দিয়েছে। পার্লারে মেয়েদের নাম সেই অলকা, নয়নিকা, বর্ণিকা আর লতিকাই আছে। গ্রাহকের কাছে সেগুলো শুধুই নাম। কিন্তু পারলারে সেই নামগুলো প্রকৃতপক্ষে ওদের ডেসিগনেশন হয়ে গেছে।  কিছুদিন হল দীপ্তি মাঝে মাঝে পার্লারে আসে। ও এখানে হিসাব রাখতে শুরু করেছে। প্রতিদিন কত আয় হচ্ছে আর খরচ হচ্ছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রাখে। দীপ্তি আসার পরে প্রথম মাসে দেখে সবার মাইনে আর পার্লার চালানর খরচ করার পরে প্রায় ১১ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। মানসী বড়দার কাছ থেকে মাসে মাত্র এক হাজার টাকা নেয়। বাকি টাকা তবে বড়দার কাছেই জমে। মানসী এবার বুঝতে পারে ওর বড়দাকে। তবু ওর সাহস হয়না বড়দাকে কিছু বলার। দীপ্তি আর লেখা দুজনেই ওদের রাঙ্গাদিকে বার বার বলে পার্লারের আয়ের টাকা ওর নিজের আকাউন্টে রাখতে। বলি বলি করে মানসী কোনদিনই সেই কথা বড়দাকে বলতে পারে না। মানসী একদিন দুপুরে পার্লারে ঢুকতে যাবে, দেখে বাইরে ভাস্কর দাঁড়িয়ে। মানসী ওকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। ও পার্লারে না ঢুকে অন্য দিকে হাঁটতে থাকে। ভাস্কর একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে যায়। একটু দাঁড়িয়ে ভাবে কি করা উচিত। তারপর মানসীকে ফলো করতে শুরু করে। মানসী বেশ কিছুটা গিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে ভাস্কর ওর পেছন পেছন আসছে। বেলঘরিয়া ফিডার রোডের একদিকে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা আছে। সেখানে গিয়ে মানসী দাঁড়ায়। ভাস্করও একটু পরে ওখানে পৌঁছে যায়। মানসী – তুমি এখানে কেন এসেছ ? ভাস্কর – এখানে না আসলে তোমার সাথে দেখা করবো কি করে ? মানসী – স্বপনের বাড়িতে পড়াতে যাও না ? ভাস্কর – না পড়ানো ছেড়ে দিয়েছি। মানসী – কেন ছাড়লে ? ভাস্কর – ওখানে গেলেই তোমার কথা মনে পড়ে। আর তোমাকে না দেখে আমার মদ খেতে ইচ্ছা হয়। তাই স্বপন দাকে বুঝিয়েই পড়ানো ছেড়েছি। মানসী – তবে এখন কি করছ ? ভাস্কর – একটু কোন বসার জায়গা নেই এখানে ? এইভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কত কথা বলবো ? মানসী – চলো আজ ওই চায়ের দোকানটাতে বসি।  একটা রাস্তার ধারের সাধারন চায়ের দোকানে গিয়ে বসে। দোকানে এক বুড়ি মাসি বসেছিল। সে ওদের যতক্ষন খুশী বসতে বলে, কিন্তু বিকাল চারটের মধ্যে উঠেও যেতে বলে। কারন সেই সময় ওখানের একটা কারখানার শিফট বদল হয় আর অনেক লোক চা খেতে আসে।  ভাস্কর মানসীর হাত ধরে বসে। মানসী মাসীকে বিস্কুট আর চা দিতে বলে। দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে চুপ চাপ বসে থাকে। মিনিট দশেক পরে মাসী চা এনে ওদের পাশে রাখে। মাসী – ও বাবারা চা খেয়ে নাও। এই রকম শুধু দেখলে কি হবে ? ভাস্কর – হ্যাঁ মাসী চা খাচ্ছি। মাসী – তা বাবা বয়েস তো হল, বিয়ে করে নিলেই পারো। ভাস্কর – মাসী অনেক সমস্যা আছে। মাসী – সে তোমরা জান তোমাদের সমস্যা মানসী – কি করলে এই কিছু দিন ? কিভাবে দৌড়ানোর প্ল্যান করছ ? ভাস্কর – যত চেনাশোনা লোক ছিল সবার সাথেই দেখা করেছি। আর তাতে একটা জিনিস বুঝেছি বয়েস চল্লিশ পেড়িয়ে গেলে তোমার যাই যোগ্যতা আর অভিজ্ঞতা থাকনা কেন চাকরি পাবে না। মানসী – তবে কি করবে ? ভাস্কর – ব্যবসা করতে গেলেও যে পুঁজি চাই সেটা আমার নেই। মানসী – কেউ লোণ দেবে না ? ভাস্কর – সে চেষ্টাও করেছি। ব্যাঙ্ক আমাকে লোণ দেবে না। বন্ধুরাও দেবে না। আসলে জান একটা ছেলে যখন বিপদে পরে তার কোন বন্ধু থাকে না। মানসী – আমি তো আছি তোমার সাথে ভাস্কর – সেই জন্যেই তো আবার দৌড়ানোর চেষ্টা করছি। মানসী – কিসের ব্যবসা করার কথা ভাবছিলে ? ভাস্কর – ক্যাটারিং – এর ব্যবসা করার কথা ভেবেছিলাম। মানসী – হটাত এই ব্যবসার কথা মাথায় এল কেন ? ভাস্কর – আমার জীবনে এখন তুমি ছাড়া আর একজনই আছে যে কিছু ভাল বুদ্ধি দিতে পারে। মানসী – কে সে ? ভাস্কর – কেন স্বপনদা মানসী – ও তাই বলো। ভাস্কর – একদিন স্বপনদার সাথে অনেকক্ষণ আলোচনা করলাম। তারপর ঠিক করলাম যদি পারি তবে নিজের ক্যটারিং চালু করবো। মানসী – কিন্তু এখন কি ভাবে চালাবে ? ভাস্কর – সেটাও একটা সমস্যা মানসী – তুমি ভাব কি করা যায়। আমিও ভাবি আমি কি করতে পারি। ভাস্কর – আমরা রোজ এখানে আড়াইটার সময় দেখা করবো। মানসী – রোজ আসলে আমার পার্লারের ক্ষতি হবে। আমরা সপ্তাহে দুদিন এখানে দেখা করবো। ভাস্কর – ঠিক আছে, আমি আবার পরশু দিন আসবো আর তার পরে প্রতি সোম আর শুক্রবার আমরা দেখা করবো। মানসী – একটা শর্ত আছে ভাস্কর – কি ? মানসী – একদম মদ খাবে না ভাস্কর – আমাকে চুমু খেতে দাও, তবে মদ খাবো না মানসী – এখানে এই খোলা রাস্তায় ? ভাস্কর – কেউ তো নেই এখানে মানসী – মাসী আছে যে মাসী – আমি দেখছি না। তোমরা তাড়াতাড়ি চুমু খেয়ে নাও। ভাস্কর মানসীকে চুমু খেয়ে দু মিনিট জড়িয়ে ধরে থাকে। তারপর চলে যায়। মানসীও পার্লারে ফিরে যায়। ওর মনে খুশী, আনন্দ, চিন্তা, দুঃখ, টেনশন সব কটা অনুভুতি এক সাথে এসে হাজির হয়।
Parent