কাজল নদী Written By Tumi_je_amar - অধ্যায় ৪২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-28266-post-2146008.html#pid2146008

🕰️ Posted on July 6, 2020 by ✍️ Kolir kesto (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1119 words / 5 min read

Parent
ষষ্ঠ পরিচ্ছদ – সবাইতো সুখী হতে চায় (# ৮) প্রায় ছয় মাস কেটে যায়। সংসার যেমন চলছিল সেইরকমই চলে। মানসীর এখন বাড়িতে প্রায় কোন কাজই নেই। ব্রততী অনেক প্রতিকুল অবস্থাতেও মানিয়ে নেবার চেষ্টা করে। দীপ্তি আর লেখা দাদার নতুন বৌকে কিছুতেই কাছে টানতে পারে না। যদিও ওরা ব্রততীর থেকে ছোট, তবু এই সংসারে এতদিন ওরাই সব কিছু দেখত। সেখানে ব্রততী কিছু করতে গেলে ওরা সব সময় কিছু না কিছু ভুল ধরে। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছে সপ্তাহে একদিন ব্রততী সব রান্না করবে। সেদিন দীপ্তি আর লেখার ছুটি। বাকি দিন গুলো ব্রততী ঘর পরিস্কার করার তদারকি করবে। মানসী খুব শান্তিতে আছে। সারাদিন স্কুল আর পার্লার নিয়ে কেটে যায়। এখন সপ্তাহে তিনদিন ভাস্করের সাথে দেখা হয়। রাত্রে মাঝে মাঝে ব্রততীর সাথে গল্প করে। এই ছয় মাসে ব্রততী বড়দার আগের বৌ বা সবার সুলগ্না বৌদিকে নিয়ে প্রায় সব কিছুই জেনে নিয়েছে। এই পরিবারে সবাই যাতে মেনে নেয় তাই নিজেকে সুলগ্নার মত করার চেষ্টা করেছে। আস্তে আস্তে ব্রততী বড়দার সব টাকা পয়সার খবর জেনে নেয়। একদিন রাতে ব্রততী বড়দাকে জিজ্ঞাসা করে মানসীর আয় নিয়ে। (এখানে বড়দা যদিও ব্রততীর বড়দা নয়, ব্রততী ওনাকে অন্য নামে ডাকতো। আমি বড়দার নাম লিখতে চাই না বা অন্য নামও দিতে চাই না। তাও বড়দা বলেই লিখছি)।  ব্রততী – রাঙ্গাদির পার্লার থেকে কত আয় হয় ? বড়দা – সে তুমি জেনে কি করবে ? ব্রততী – কিছু করবো না। তবু জানা দরকার। বড়দা – কেন ? ব্রততী – আমার মনে হয় তোমার জীবনের সব কিছু জানারই অধিকার আমার আছে বড়দা – সে তো আছেই। আমি তোমার কাছে কেন লুকাবো বল ! ব্রততী – তবে বল রাঙ্গাদির পার্লার থেকে মাসে কত আয় হয় ? বড়দা – এখন মাসে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা আয় হয়। পুজোর সময়ে বা বিয়ের মরশুমে ২০ হাজারও হয়। ব্রততী – সে টাকা দিয়ে তুমি কি করো ? বড়দা – আলাদা করে কিছুই করি না। ওকে মাসে ১৫০০ টাকা দেই ওর হাত খরচের, বাকিটা সংসারেই খরচ হয়। ব্রততী – তোমাদের এই তিন ভায়ের সংসার চালানোর দায়িত্ব কি রাঙ্গাদির ? বড়দা – তা কেন, আমার বাকি দুই ভাইও টাকা দেয়। ব্রততী – ১০ হাজার করে দেয় কি ? বড়দা – না না ওত দেয় না। ব্রততী – আর তোমার কোন খরচই নেই বড়দা – না মানে ঠিক তা না। ব্রততী – আমি বুঝতে পারছি। সবই বুঝতে পারছি। বড়দা – কি ? কি বুঝতে পারছ ? ব্রততী – এই যে রাঙ্গাদি সাদাসিধে ভাল মেয়ে বলে তোমরা যা ইচ্ছা তাই করছ। বড়দা – ওর খাওয়া পড়া সব কিছুরই দায়িত্ব আমার। ব্রততী – সব কিছুর দায়িত্ব তো নাও নি বড়দা – কোন দায়িত্ব নেই নি ? ব্রততী – বিয়ে দিয়েছ ? বড়দা – সেটা করতে পারিনি ব্রততী – নিজে দুবার বিয়ে করতে পারলে আর বোনের একবার বিয়ে দিতে পারলে না ! বড়দা – এখন তুমি কি চাও ? ব্রততী – রাঙ্গাদির পার্লার কত দিন ধরে চলছে ? বড়দা – প্রায় ১২ বছর। ব্রততী – তুমি পার্লারের সব কিছু রাঙ্গাদির নামে করে দেবে।  বড়দা – ঠিক আছে করে দেবো। ব্রততী – রাঙ্গাদির নামে ব্যাঙ্কে একটা আকাউন্ট খুলে দেবে। পার্লারের সব আয় ওইখানে রাখবে। বড়দা – সে কি করে হবে ? ব্রততী – কি করে হবে জানিনা। আমি যা বলছি তাই করবে। আর সংসারে তোমরা তিন ভাই যত করে দাও রাঙ্গাদি তার অর্ধেক দেবে। বড়দা – কেন অর্ধেক কেন ? ব্রততী – তোমাদের সবার বৌ ছেলে মেয়ে আছে। রাঙ্গাদি একা, তাই। বড়দা – ঠিক আছে সে সব হয়ে যাবে। ব্রততী – হয়ে যাবে না, সামনের রবিবার সব ভাই, বৌ, মাআর রাঙ্গাদির সামনে এই সব বলে বুঝিয়ে দেবে। বড়দা – ঠিক আছে তোমার সব কথা মেনে নিলাম। এবার খুশী ? ব্রততী – এখনও সব শেষ হয় নি বড়দা – আবার কি বাকি আছে ? এইবার ব্রততী যা বলল বাড়ির ওপর অ্যাটম ব্যোম পড়লেও বড়দা এতো চমকাতেন না। ব্রততী – গত বার বছরের পার্লারের আয় বাবদ তুমি রাঙ্গাদিকে ১২ লক্ষ টাকা দেবে।  বড়দা – মানে ? ব্রততী – আমি কি বলছি তুমি ঠিকই বুঝে পারছ ? বড়দা – আমি এতো টাকা কোথায় পাবো ?  ব্রততী – আমি জানি তোমার কোথায় কত টাকা আছে। বড়দা – এতো টাকা মানসীকে দিয়ে দিলে আমরা খাবো কি ? ব্রততী – সে আমি কি জানি ! তুমি কি আমাকে রাঙ্গাদির আয়ের ভরসায় বিয়ে করেছো ? বড়দা – না তা নয়, কিন্তু... ব্রততী – দেখো আমি যে কোন অযৌক্তিক কথা বলিনি সেটা তুমি ভাল করেই জান।  বড়দা – না না তুমি যা বলেছ তা ঠিকই বলেছ ব্রততী – তবে রাঙ্গাদিকে কবে দিচ্ছ ১২ লক্ষ টাকা ? বড়দা – ও কি করবে এতো টাকা দিয়ে ? ব্রততী – তোমার কি যায় আসে তাতে ? ওকে ওর মত চিন্তা করতে দাও।  বড়দা – আমি একা দেবো এতো টাকা ? ব্রততী – সে তুমি দেখো, তুমি একা দেবে না ভাইদের কেও বলবে সেটা তোমার ওপর নির্ভর করছে। বড়দা – মানে ? ব্রততী – তোমার মুখে এতো মানে মানে ভাল শোনায় না। তুমি সব বুঝতে পারছ। ভাইদেরকে কিভাবে বোঝাবে টাকা দেওয়ার কথা সে তুমি জান। আমি ওর মধ্যে নেই। বড়দা – বেশ সুবিধাবাদী তো তুমি ব্রততী – কে কতটা সুবিধাবাদী সে তুমি ভাল করেই জানো। তুমি আমার স্বামী তাই আমার যা বলার তোমাকেই বলবো। এই বাড়ির যে দোতলার ঘর গুলো বানিয়েছ তার বেশীর ভাগ খরচ ওই রাঙ্গাদির টাকা থেকেই এসেছে। আমি তোমাকে ওই ওপর তলাটা রাঙ্গাদির নামে করে দিতে বলছি না। এই ওপর তলায় তোমরা তিন ভাইই থাকো। তাই তোমার ভাইরা এই টাকা শেয়ার করবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একথা তুমি তোমার ভাইদের বোঝাবে।  বড়দা – আর কিছু ? ব্রততী – না গো, আর কিছু চাই না তোমার কাছে। বড়দা – একটা কথা বল, তুমি মানসীর জন্যে এতো কেন ভাবছ ? ব্রততী – আমি মানসীর জন্যে ভাবছি না। আমি আমার নিজের সুখের জন্যে ভাবছি। বড়দা – মানসীকে টাকা দিলে তোমার সুখ কি ভাবে আসবে ? ব্রততী – দেখো আমরা সবাই স্বার্থপর। আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি চাই তুমি সবার ওপরে থাকো। এই পরিবারে যে ভাবেই হোক তুমি তোমার সব দায়িত্ব পালন করেছো। শুধু রাঙ্গাদিকে ছাড়া।  বড়দা – তার কিছু কারন আছে। ব্রততী – যাই কারন থাক, সেটা তোমার দরকার ছিল। রাঙ্গাদির নয়। বড়দা – হয়ত তাই ব্রততী – আমি যা যা করতে বললাম, তাতে তোমার সন্মান অনেক অনেক বাড়বে। আর বাড়িতে সবার মনে তুমি আরও বড় আসন পাবে। আর আমার স্বামীকে সবাই ভাল বললে সেটা আমারি সুখ। বড়দা – বড়ই জটিল চিন্তা তোমার। ব্রততী – এটাই সব থেকে সাধারন চিন্তা। তুমি যদি রাঙ্গাদিকে ১২ লক্ষ টাকা দিতে না পারো, আমি আমার সব গয়না বিক্রি করে দেবো। কিন্তু রাঙ্গাদিকে বঞ্চিত করে নিজে সুখে থাকতে পারবো না। বড়দা – তুমি এতো চিন্তা করো আমার বোন, আমার সন্মান, আমার মা ভাইদের নিয়ে ? ব্রততী – যেদিন তোমায় বিয়ে করেছি, সেদিন থেকেই তোমার সব কিছু তো শুধু তোমার বা আমার নয়। সবই আমাদের, তাই এই চিন্তা।  এরপর আরও অনেকক্ষণ ওদের দুজনের কথা চলে। তারপর একসময় দুজনেই ঘুমিয়ে যায়। বড়দার একটু দেরি হয়, কারন এতগুলো টাকার দুঃখ সহজে হজম করতে পারছিলেন না। ব্রততী ওর যুক্তি দিয়ে এমন ভাবে বুঝিয়েছে বড়দা কিছুই বলতে পারেন নি। মেনে নিয়েছেন কিন্তু মনে ঠিক নিতে পারেন নি।
Parent