কাজলদীঘি, শ্মশান ও পীরসাহেবের থান by Mamun Jafran - অধ্যায় ১৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-11060-post-627062.html#pid627062

🕰️ Posted on July 8, 2019 by ✍️ sagor69 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1953 words / 9 min read

Parent
পার্টঃঃ১৪ পূব দিকের আকাশটা সবে ফর্সা হয়ে এসেছে। মাঝে মাঝে কালো কালো ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ ভেসে যাচ্ছে। আমি পাজামা পাঞ্জাবী পরে সিগারেটের প্যাকেট মোবাইলটা পকেটে ঢোকালাম। নীপা আমার দিকে তাকালো। ওর আয়ত চোখ দুটি ভিজে কাদা হয়েগেছে। আমি কিছু বললাম না, বেরিয়ে এলাম। নীচে নেমে দরজাটা ভেতর থেকে টেনে বন্ধ করলাম। খামারে এসে দাঁড়ালাম, পেছন ফিরে তাকালাম, নীপা জানলা থেকে মুখ সরিয়ে নিল, আমি মাঠের পথ ধরলাম। প্রথমে পড়বে চন্দ্রপাড়া, তারপর তাঁতীপাড়া, তারপর কামারপাড়া, একেবারে শেষে হাঁড়িপাড়া, হাঁড়িপাড়া পেরিয়ে আমার গন্তব্য স্থল দীঘাআড়ি। আমার এক সময়ের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। আমি ওখানে গেলে কেমন যেন নিজের মধ্যে নিজে হারিয়ে যাই। সোনাঝড়া রোদ কচি ধান গাছের গায়ে আবির লেপে দিয়েছে। এরি মধ্যে কেউ কেউ মাঠে নেমে পরেছে। এখন বাছার (আগাছা পরিষ্কার করা) সময়। কয়েকদিন পর ধানের বুকে শীষ আসবে দুধ জমবে। এই সময় একটু যত্ন আত্তি করতে হয়। আমি একা পথের পথিক। কেউ আমার দিকে তাকালো। কেউ তাকালো না। সাঁওতাল মেয়ে গুলো নীচু হয়ে অলচিকি ভাষায় মিহি সুরে গান করছে। ওদের শরীর গুলো সত্যি দেখার মতো। কালো কষ্টি পাথরে কোন শিল্পী যেন কুঁদে কুঁদে ওদের সৃষ্টি করেছে। খালি গায়ে বুকের ওপর কাপরটাকে পেঁচিয়ে পরেছে। নীচু হয়ে কাজ করায় ওদের অনাবৃত বুকের কিছুটা দেখা যাচ্ছে। আমি আড় চোখে মাঝে মাঝে ওদের দেখতে দেখতে এগিয়ে চলেছি। হাঁড়িপাড়া পেরিয়ে চলে এলাম দীঘাআড়ি। আঃ যেমন দেখেছিলাম আজ থেকে দশ বছর আগে ঠিক তেমনি আছে। প্রকৃতির কোনো পরিবর্তন নেই, বরং দিনে দিনে সে লাস্যময়ী হয়ে উঠেছে। বর্ষার সময় দুকুল ছাপিয়ে জলের ঢল নামে। এখন জল অনেকটা মরে গেছে, তবু যে টুকু আছে তা নয়নাভিরাম। মাঝখানে পানকৌড়ি আর সরাল পখির হুটোপুটি। আকাশ থেকে ডানা মেলে ঝুপ করে জলে আছড়ে পরছে বক। কোকিলের কুহু কুহু স্বর চারিদিক ম ম করছে। এত প্রচন্ড নিস্তব্ধতা যে নিজের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ নিজে শুনতে পাচ্ছি। কালীচরণের ঝিকে নিয়ে ভানুর সেই কীর্তি কলাপের জায়গায়টায় একটু থমকে দাঁড়ালাম। চোখ বন্ধ করলে এখনো সেই দৃশ্য আমি দেখতে পাই। পায়ে পায়ে আমার সেই চেনা ঝোপের ধারে এসে বসলাম। এখন অনেকটা নোংরা হয়ে গেছে। কেউ হয়তো আসে না। আমার মতো পাগল কজন আছে। আমি একটু পরিষ্কার করে বসলাম। পেছনটা ভিজে গেল। বুঝলাম, সারারাতের শিশির স্নাত ঘস গুলি আমাকে স্নান করিয়ে তার কোলে জায়গা দিল। দীঘির জল কাঁচের মত ঝকঝকে, স্থির। মাঝে মাঝে একটা দুটো মাছ লেজ নেরে দীঘির জলে কাঁপন তুলছে। কাঁপা কাঁপা ঢেউ গুলি কিছু দূরে গিয়ে আবার মিলিয়েও যাচ্ছে। সূর্যের আলো এসে পরেছে দীঘির জলে। তার আলো ছায়ার স্পর্শ গাছের ডালে, তার পাতায়। ঝন ঝন করে ফোনটা বেজে উঠলো, মনেই ছিলো না, পকেট থেকে ফোনটা বের করলাম। মিত্রার ফোন। কখন ঘুম থেকে উঠলি। চারটে। যাঃ। হ্যাঁরে। এখন কোথায়। আমার স্বপ্নের সেই জায়গায়। কোথায় বসে আছিস বলতো পাখির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। সে অনেক কথা। ফোনটা অফ করিস না কথা না বলে শুধু শুনে যা। আমি ভয়েজ অন করলাম। মিত্রা মনে হয় গাড়ি করে কোথাও যাচ্ছে, গাড়ির হর্নের আওয়াজ পাচ্ছি। কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি। হারিয়ে যাই নি, হারায়ে খুঁজি। বাবাঃ কবি কবি ভাব, ছন্দের অভাব। শুনলি। হ্যাঁ। লাইভ। সত্যি তাই। আমি সেই ঝিলের ধারে একা। একা একা কেন, দোকা করে নে। কে আসবে বল। চাইলেই পাবি। সব চাওয়া পাওয়া হয়ে ওঠে না। ঠিক বলেছিস বুবুন। জানিস মিত্রা এখানে এই সকালটা এতো ভালো লাগে তোকে বোঝাতে পারব না। পৃথিবীতে অনেক কিছু আছে যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তাকে অনুভব করতে হয়। কবে আসছিস। ঠিক নেই। তারমানে। মিত্রাকে এখানকার সমস্ত ব্যাপারটা পঙ্খানুপুঙ্খ রূপে বললাম। বুঝেছি তুই অনেক সমস্যায় পরে গেছিস। দাদাকে বলেছিস। এখন বলি নি। হ্যাঁরে তুই বড়মাক ফোন করিস নি। কেনো। গতকাল বড়মা আমায় প্রায় পনেরবার ফোন করেছে তোর খবর নেওয়ার জন্য। ভেবেছে আর কাউকে তুই ফোন করিস আর না করিস আমাকে অবশ্যই করবি। বড়মার ধারনাটা অন্যায় না। সবাইকে ফাঁকি দিতে পারি, বড়মা ছোটমাকে ফাঁকি দিতে পারব না। কাকার ব্যাপারে কি ডিসিসন নিলি। আজ বারোটার পর জানতে পারবো। আমাকে জানাস। জানবো। ভুলে যাবি। নারে বিশ্বাস কর এখানে মাঝে মাঝে টাওয়ার থাকে আবার চলে যায়। তোরা বরং ফোন করিস না। আমিই তোদের ফোন করব। ওদিককার খবর কি। হিমাংশু সমস্ত এ্যারেঞ্জ করে দিয়েছে। তুই এলে ফাইন্যাল হবে। তুই এখন কোথায়। সকালে কি মনে হলো একটু গঙ্গার ধারে গেছিলাম। স্নান করলাম, অনেক পাপ করেছি। এখন ফিরছি। একা না কেউ সঙ্গে আছে। আমি তোরই মতো। তুই ঝিলের ধারে একা, আমি গঙ্গার থেকে একা ড্রাইভ করে ফিরছি। অফিসে গেছিলি। না। তুই বারন করেছিস। অমান্য করতে পারি না। আমি কে। শুনতে ইচ্ছে করছে। বাঁদর। হাসলাম। হাসছিস। তোর লজ্জা করে না। না। হ্যাঁরে টাকা পয়সা সঙ্গে আছে। খুব বেশি নেই। তোর ঠিকানা বল। তুই বাড়ি ফিরে যা। প্রয়োজন হলে বলবো। উঃ তুই মচকাবি তবু ভাঙবি না। এই টুকু নিয়েই বেঁচে আছি। এই পৃথিবীতে আমার বলে কে আছে বল। চোখ মেলে তাকা, বুঝতে পারবি। হাসলাম। আবার বোকার মতো হাসছিস। আসবি এখানে। তুই বললেই ছুটে চলে যাব। থাক। থাক কেন। উঃ তুই বরো জালাতন করিস। মিত্রা কোন কথা বলছে না। খালি গাড়ির হর্নের আওয়াজ, ক্যাঁচ করে ব্রেক চাপার শব্দ, বুকটা ধরাস করে উঠলো। কিরে কথা বলছিস না কেনো, মিত্রা মিত্রা। এখন রাখি। গলাটা ধরা ধরা। কি হয়েছে বলবি তো। তোর এই সময়......। কি পাগলামো করছিস। আমি কি তোর পাশে থাকতে পারি না। কাঁদছিস কেনো। কই কাঁদলাম। আমি দেখতে পাচ্ছি। ধ্যুস। ঠিক আছে এখানে ডেটটা ফাইন্যাল করে তোকে জানাবো। জানাবি ঠিক। বললামতো জানাবো। বিকেলে একবার ফোন করিস। বড়ো একারে। আচ্ছা। মিত্রা ফোনটা রেখে দিল। কয়েকজন লোক দীঘির পারে এসেছে। ওরা মনে হয় মাছ ধরবে। ওদের কাঁধে জাল দেখছি। কলকাতার ভেঁড়িতে মাছ ধরা দেখেছি। আর এখানকার দীঘিতে মাছ ধরা দেখেছি দুয়ের মধ্যে কত তফাত। না আর বসে থাকা যাবে না। সূর্যের রং বলছে অনেক বেলা হয়েছে। মোবাইলটা পকেট থেকে বার করে সময় দেখলাম নটা বাজতে যায়। ফেরার পথে অনেকের সঙ্গে দেখা হল। কাউকে চিনতে পারলাম কাউকে পারলাম না। স্মৃতি থেকে মুছে গেছে। চন্দ্র পাড়ায় অনাদির বাড়ির কাছে এলাম। দুটো বাচ্চা ওদের খামারে খেলা করছে। ধুলোয় ঢাকা শরীর। হাসলাম, আমিও একসময় এরকম ছিলাম, গ্রামের ছেলেরা ধুলো ঘাঁটতে খুব ভালবাসে। মেয়েটা মনে হচ্ছে বড়। কত বয়স হবে চার কি পাঁচ, ছেলেটা দুই কিংবা তিন। একজন আর একজনের মাথায় ধুলো দিচ্ছে। আমি খানিকক্ষণ দাঁড়িয় দাঁড়িয়ে ওদের খালা দেখলাম। ওরা মাঝে মাঝে আমার দিকে জুল জুল করে তাকাচ্ছে। অনাদি বাড়ি আছিস। একজন বছর চব্বিশের অটপৌরে ভদ্রমহিলা উঁকি দিয়েই আবার ভেতরে চলে গেলো। গরুগুলো খামারের একপাশে বাঁধা। খড় চিবোচ্ছে। চোখ বন্ধ করে মুখ দিয়ে লালা গড়িয়ে গড়িয়ে পরছে। একটা বোকনা বাছুর গুতিয়ে গুতিয়ে তার মায়ের বাঁট থেকে দুধ খাচ্ছে। লেজ দুলছে তার খেয়ালে। অনাদিরা এই গাঁয়ের সম্ভ্রান্ত কৃষক। ভালো পয়সা আছে। তাছাড়া এখন গ্রামপঞ্চায়েত হয়েছে। নিশ্চই কিছু পয়সাগড়ি করেছে। একজন বয়স্ক ভদ্রলোক বেরিয়ে এলেন। প্রথমে ঠাহর করতে পারি নি। পরে বুঝলাম কাকাবাবু, অনাদির বাবা। আমি এগিয়ে গেলাম, পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম। কাকাবাবু থাক থাক করলেন। কে বাবা। আমি অনি। আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। একি করলি অনি এই সাত সকালে। কি করলাম। তুই আমাকে প্রণাম করলি। কেনো! তোরা ব্রাহ্মণ, আমরা নমশুদ্র। কায়েতের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে নেই। তোমরা আমার গুরুজন। কাকু আমার গায়ে মাথায় হাত বোলালেন। চেঁচিয়ে উঠলেন সৌদামিনি ও সৌদামিনি দেখবে এসো কে এসেছে। জানিস বাবা কাল তোর ঘরে গেছিলাম। তোকে একবার দুচোখ ভরে দেখতে। কেনো। তুই কত বড় হেয়েছিস। চারিদিকে তোর কত নামডাক। এইতো আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কোথায় বড় হয়েছি। কাকীমা ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন। কে এসেছে গো, কে এসেছে। আমাদের অনি এসেছে গো দেখো দেখো। তাকিয়ে দেখলাম, বারান্দা থেকে সেই ভদ্রমহিলা উঁকি দিয়ে আমাকে দেখছেন। বাচ্চা গুলো পায়ে পায়ে আমার কাছে এসে হাজির। কাকীমা কাছে এলেন। আমি নীচু হয়ে প্রণাম করতে গেলাম। কাকীমা হাত ধরে ফেলেছেন, না বাবা তুই প্রণাম করিস না, তোর বাপ-মাকে আমরা প্রণাম করতাম। আজ বেঁচে থাকলে তারা দেখতো তাদের অনি কত বর হয়েছে। মাথা নীচু করলাম, ও কাঞ্চন আয় এদিকে আয় দেখা যা অনিকে। কেনো আমি কি কোনো দ্রষ্টব্য বস্তু। নারে তোর কথা প্রায় আলোচনা হয়। ওরা তোকে দেখে নি। ভাবে লোকটা কে। মেয়েটি কাছে এলো, বেশ দেখতে। অযত্নে মরচে পরে গেছে। ঘোমট দেওয়া। আমায় প্রণাম করতে চাইলো। আমি বললাম থাক থাক, প্রণাম করতে হবে না। কাকীমা বললেন, অনাদির বউ। তাই নাকি। ওই দেখ দুটিতে কেমন খেলা করছে, একটা ছেলে একটা মেয়ে। মাথা নীচু করে হাসলাম। একটু চা করি বসুন। কাঞ্চন বললো। থাক আর একদিন এসে খাবো। অনেক সকালে বেরিয়েছিলাম। কেউ জানে না। কোথায় গেছিলি। কাকা জিজ্ঞাসা করলেন। দীঘাআড়ি। কাঞ্চন আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। ওর আয়তো চোখে কত বিস্ময়। এই লোকটা ওই বনে কি করতে গেছিলো ? ঘোমটা সরে গেছে, মাথার সিঁদুর ফিকে। এলোমেলো চুল মুখের ওপর এসে পরেছে। কাকা। অনাদি কোথায় ? ও আর দিবাকর রাত থাকতে বেরিয়েছে, বললো একটু টাউনে যাবে কি কাজ আছে। ঠিক আছে আমি আসি। অনাদির বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিসই পাড়ার গা দিয়ে কলাবাগানের ভেতর দিয়ে বড়মতলায় এসে পরলাম। বড়মতলার পুকুর ঘাটে সেই পেয়ারাগাছটা এখনো অটুট। কয়েকটা বাচ্চা গাছটার ডাল ধরে দাপা দাপি করছে। পেয়ারা ছিঁড়ে খাচ্ছে। গ্রামের ভাষায় এজমালি গাছ। সবার অধিকার। এক সময় এর ডালে কত নাচানাচি করেছি, গ্রীষ্মের দুপুরে ওর ডাল থেকে, পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছি। মনটা কেমন আনচান করে উঠলো। আরে দাঁত মাজা হয় নি। আমি পেয়ারা গাছের কাছে যেতেই বাচ্চা গুলো ছুটে একটু দূরে চলে গেলো। আমি একটা শরু পেয়ারা ডাল ভেঙে নিয়ে দাঁতনের মতো করে নিলাম। কিছুক্ষণ গাছটার তলায় দাঁড়ালাম, মগডালে কয়েকটা পেয়ারা হয়েছে। কিছুতেই লোভ সামলাতে পারলাম না, বাচ্চা গুলোকে ইশারায় কাছে ডেকে নিলাম। ওরা প্রথমে কিছুতেই আসতে চায় না, তারপর আমার ওপর বিশ্বাস জন্মালো। কাছে এগিয়ে এলো। আমি গাছে উঠলাম, মগডাল থেকে পেয়ারা ছিঁড়ে ছিঁড়ে ওদের দিকে ছুঁড়ে ফেললাম। ওদের সে কি আনন্দ কি চেঁচামিচি, আমি দুটো পেয়ারা ওদের কাছ থেকে পারিশ্রমিক হিসাবে চেয়ে নিলাম। কে আমাকে পেয়ারা দেবে তার কমপিটিসন লেগে গেলো। আমি এদের কাউকে চিনি না জানি না। সবাই কাকু আমারটা নাও, কাকু আমারটা নাও, আমি দুজনের কাছ থেকে দুটো পেয়ারা নিলাম। বড়মতলার পুকুর ঘাটে মুখ ধুলাম। বাড়ির পথ ধরলাম। খামারে উঠতেই নীপার গলা শুনতে পেলাম, ওই উনি আসছেন। মূর্তিমান বিভীষিকা। যাও ভাইপোর কাছে হিসাব চাও। তিনি কখন কোথায় গেছিলেন। কাকা আমতা আমতা করছে নীপার কথায়। আমি দাওয়ায় পা রাখলাম। দীঘাআড়ি ছাড়া তোমার আর কি যাবার জায়গা নেই। নীপা বললো। মুখ নীচু করে হাসলাম। চারিদিকে চোখ বোলালাম, আরো অনেকে বসে আছেন, কাউকে চিনি না। কাকীমা বললেন, ওঃ গিন্নী হয়ে গেছেন ধমক্কাচ্ছে দেখ ছেলেটাকে কেমন। আমার কাচে এসে বললেন, হ্যাঁরে বাবা চাটা কিছু না খেয়ে কোথায় গেছিলি। বললাম। সে তো আমি এখুনি শুনলাম, কালিচরণের ঝির কাছ থেকে। একটু চমকে গেলাম। কালিচরণের ঝি। হ্যাঁ। ওতো বাইশটিকীর কাছে মাঠে কাজ করছিল তোকে দেখেছে। ও। কি খাবি। কিচ্ছু না। তার মানে। কলকাতায় এত সকালে খাওয়া জোটে না। তুইতো তোর সাহেবের বাড়িতে থাকিস। থাকতাম। এখন থাকি না। কাকীমা একটু অবাক হলেন। নীপা তোর জন্য আলুভেজে রেখেছে মুড়ি দিয়ে মেখে দেবে বলে। নীপার দিকে তাকালাম। ভেঙচি কেটে মুখটা ঘুরিয়ে নিল। দাও একটুখানি, বেশি না। নীপা ছুটে চলে গেলো। তুই চিন্তে পারিস এদের। কাকা বললেন। না। এরা রামপুরা থেকে এসেছে। আমি কাকাপ পায়ের কাচে বসে থাকা সারিবদ্ধ মুখ গুলির দিকে তাকিয়ে হাঁ করে থাকলাম। নমস্কার করতে আর পারছিনা। কালকে থেকে নমস্কার করতে করতে কোমড় ব্যাথা হয়েগেছে। কেবলা কেবলা চোখে সবার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম। তোমার কথা অনেক শুনিগো ছোটবাবু। বুঝলাম কাকা বড়বাবু, আমি ছোটবাবু। তা বউমাকে সঙ্গে আনলে না কেনো। কাকা ধমকে উঠলেন, ছুঁচ্চা কাই করার ও এখনো বিয়েই করে নি, বউমা। তা কি করে জানব বলতো বড়বাবু। নীপা মুড়ির বাটি দিতে এসে ফিস ফিস করে বললো, ওপরের ঘরে এসো কথা আছে। আমি ওর দিকে তাকালাম। মুড়ি খেলাম। চা খেলাম। অনাদি আর বাসু বাইক নিয়ে খামারে এলো। খামার থেকেই আমাকে দেখতে পেয়েছে। পায়ে পায়ে দাওয়ায় এলো। কে এলো। অনাদি বললো স্যার আমি অনাদি। দিবাকর কাকার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। কে। স্যার আমি দিবাকর। বাবাঃ অনি এসেছে, তাই তোদের দেখা পাই। দিবাকর মাথা চুলকাচ্ছে। নীপা ছুটে চলেগেলো। ব্যাপরটা বুঝলাম না। অনাদি বললো, চল একটু কথা আছে। আমি কাকাকে বললাম, কাকা আমি যাই ওরা এসেছে, ওদের সঙ্গে কথা বলি। যাও। ওবাড়িতে গেলাম, ঘরে ঢুকতেই নীপা কট কট করে আমার দিকে তাকালো। ঘর গোছাচ্ছিলো। আমার পেছন পেছন অনাদি, দিবাকর ঢুকলো। এই নীপা একটু কড়া করে চা বানা। সে আর বলতে, সব চা খোর এক সঙ্গে জড়ো হয়েছো। ঠিক বলেছিস। মুড়ি খাবে। সকাল থেকে পেটে কিছু পরে নি। কি রাজকাজে গেছিলে। সে অনেক কাজ তুই বরং আগে একটু চা নিয়ে আয় পরে মুরি আনবি। নীপা চলে গেলো। অনাদি প্যাকেট থেকে সিগারেট বার করলো, আমি বললাম রাখ, আমি এক প্যাকেট সখ করে কিনে এনেছি, কটা আর খাব তোরা খা। প্যাকেটটা বার করলাম। আরি বাব, এত দামি সিগারেট খাবো না। এটা কি দামি সিগারেট।
Parent