কাজলদীঘি, শ্মশান ও পীরসাহেবের থান by Mamun Jafran - অধ্যায় ২২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-11060-post-681932.html#pid681932

🕰️ Posted on July 23, 2019 by ✍️ sagor69 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 2110 words / 10 min read

Parent
পার্টঃঃ ২১ তারপর তোর যা ফর্মা, বেশিক্ষণ বসতেও হবে না। হাসলাম। সত্যি অনি তুই কিছু খেল দেখাচ্ছিস। কি বলেছিলাম, এবার বিশ্বাস হচ্ছে। চিকনা বললো। নীপা মুখটা বারিয়ে বললো, সঞ্জুদা একটু ধরোতো। সঞ্জু পরি কি মরি করে ছুটে গেলো। নীপার পেছনে একটা মেয়েকে দেখলাম। অনাদি বললো, কে এসেছে তোর সঙ্গে ? শেলিদি। আমি অনাদির মুখের দিকে চাইলাম। চিনতে পারলি না। অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে বললো। শেলি ভেতরে এসো। মেয়েটি ভেতরে এলো। চোখমুখ বেশ টানা টানা। চকচকে। ফর্সা মুখটা লজ্জায় বুকের কাছে নেমে এসেছে। তুমি অনিকে আগে দেখেছো। শেলি মাথা দুলিয়ে বললো হ্যাঁ। কোথায় দেখলে। সেদিন বাজারে। নীপা পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। আমি খুব লজ্জা পেয়ে গেলাম। চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো দেখেরাখ পরে সমস্ত ডিটিলসে তোকে বলবো। মেয়েটি ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। তোমরা সত্যি না এক এক পিস। নীপা বললো। দিদিমনি এই ভাবে বলবি না। তুমি আগে এটা খেয়ে নাও। কি। নুন চিনির জল। কেনো। জানিনা, মাকে গিয়ে বলো। যা বলছে করনা বাবা। অনাদি বললো। আমি নিঃশব্দে জলটা খেয়ে নিলাম। বেশ ভাল লাগলো। মুরি বেশি খাবে না। তুই বললে, ওকে এক মুঠাও দেবো না। চিকনা বললো। গেলোনা প্রাণ ভরে কে বারন করেছে। চিকনাটা বর বাড়াবাড়ি করছে নারে নীপা। হ্যাঁরে সে....। বলোনা বলো, অনিদার মুখ থেকে ওই রকম ভাষা শুনেছো কোনদিন। তোর পায়ে পরছি, এই কান মুলছি, আর হবে না। নীপা হো হো করে হেসে ফেললো। এই নিয়ে কবার হলো। নিরানব্বই বার, একশো হলেই তুই গলাটা ঘেঁচ করে দিস। চা ঢাল। তুমি ঢেলে নাও। নীপা ওকে ঢালতে দিওনা, তাহলে আমরা কেউ পাবোনা। বাসু বললো। নীপা একবার কট কট করে চিকনার দিকে তাকালো। ঠিক আছে ঠিক আছে বাসু যা বললো তাই হবে। নীপা চা ঢাললো, চিকনা সকলকে এগিয়ে দিলো। অনিদাকে আমাদের ব্যাপারটা বলেছো ? অনাদি নীপার দিকে তাকিয়ে বললো না। কালকের দিনটা যাক বলবো। কাজের মানুষ বলে কথা। আবার কালকেই বলে বসবে বুঝলি তোরা একটু সামলা আমার কাজ পরে গেছে। নীপা বললো। আমি মুচকি হাসলাম। তুই সব কথায় গেরো দিস কেনো। নীপা এলো চুল দুলিয়ে চলে গেলো। আমরা চা খেলাম। কালকে কারা কারা যাব ঠিক হলো। চিকনা আমি বাসু অনাদি যাবো। কোন বাইক নিয়ে যাব না। আর সবাইকে অনাদি বললো তোরা ওই দিকটা সামলে নে। তারপর আমরা ফিরে আসছি। ওরা বললো ঠিক আছে। আমি অনাদিকে বললাম, তোদের কি আছে ? আরে রাস আছে। রথ শহরের মাঠে! হ্যাঁ। যাক প্রাণভরে জিলিপি খাওয়া যাবে। আচ্ছা কলকাতায় গিয়ে কি তোর কোন উন্নতি হয়নি! কেনো। তুই কি সেই অনি, যে মেলায় ঘুরে ঘুরে জিলিপি ছোলাসেদ্ধ খাবি। হ্যাঁ। আমি সেই অনি, ঠিকআছে তোদের জন্য একটা সারপ্রাইজ তোলা রইলো। কি বলনা। সেদিন বলবো। ঠিক আছে। সবাই চলে গেলো। আমি পুকুর ঘাটে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে কাপর জামা ছাড়লাম। আমার পেটেন্ট ড্রেস পরে খেতে বসলাম। কাকাকে জিজ্ঞাসা করলাম চোখের কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা। কাকা বললেন আগের থেকে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছেন। মিত্রার চিঠিটা উনি নিজে পরেছেন। ওনার মুখ থেকেও মিত্রার স্তুতি শুনলাম। কাকীমা সুরমাসিও মিত্রার সম্বন্ধে একেবারে গদ গদ। সত্যি মেয়েটার কি ভাগ্য। সব থেকেও কিছু নেই। আমি বেশি কথা বারালাম না। তাড়াতারি খেয়ে নিলাম। কালকের যাওয়ার ব্যপারটা কাকাকে বললাম। কখন যাব, তাও বললাম। কাকা আমার প্রত্যেকটা কথায় খালি মাথা নেড়ে গেলেন। কিছু বললেন না। আমি মুখ ধুয়ে ঘরে চলে গেলাম। অন্ধকার দেখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। জানলার পাল্লাটা খুলে ঘরটা অন্ধকার করে দিলাম। বাইরের রং আরো পরিষ্কার হলো। সত্যি দু’দিন পর পূর্ণিমা। চাঁদের রূপ তাই বলছে। গাছের পাতা গলানো রূপোর অলংকারে সজ্জিত। সেই ঝিঁ ঝিঁ পোকার ঝিঁ ঝিঁ। জোনাকীর আলো। যত দেখছি তত যেন আমার কাছে নতুন। কিছুতেই পুরনো হতে চায় না। প্রত্যেকটা রাতের একটা আলাদা আলাদা রূপ আছে। আমি যেন সেই রূপ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছি। একটা সিগারেট ধরালাম দূরে কেউ যেন হেঁটে যাচ্ছে। বাঁশঝারের ভেতর দিয়ে। হাতের টর্চলাইটটা একবার জলছে। একবার নিভছে। মাঝে মাঝে গাছের পাতা গুলো নড়ে চড়ে উঠছে। বুঝতে পারছি। রাত পাখিরা শিকারের লোভে হানা দিচ্ছে এডালে ওডালে। এই আলো আঁধারিতে তাদের দেখা যায় না। চেনা যায় না। বোঝা যায় না। শুধু অনুভব করা যায়। ভাবতে ভাবতে নিজে কোথায় হারিয়ে গেলাম। নীপা কখন এসেছে জানি না। পাশ ফিরতে গিয়ে ওর শরীর স্পর্শ করলাম। সংকোচে উঠে বসলাম। নীপা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কখন এসেছি জানো। না। আমার সব কাজ শেষ। তাই। হ্যাঁ। তাহলে আধঘন্টার ওপর হয়ে গেছে। তুমি কি ভাবছিলে বললে নাতো। কিচ্ছু না। ভাবছো এই আপদগুলো আমার সব কিছু নষ্ট করে দিতে বসেছে। ওকথা বলতেনেই। তাহলে বলো। কি বলবো। কি ভাবছিলে। সত্যি বলবো। হুঁ। আমি অন্ধকার দেখতে খুব ভালবাসি। কতরাত আমি একা একা রাতের অন্ধকারে এদিক সেদিক ঘুরে বেরিয়েছি। তোমার ভূতের ভয় করে না। না। তবে মানুষকে ভয় পাই। আর সাপ। মিত্রাদি সত্যি খুব বড়মনের মানুষ। নীপার দিকে তাকালাম। নীপা মাথা নীচু করে রয়েছে। আমি নতুন করে কি বলবো। তুমিতো সব শুনেছো। কালকে থেকে খালি মিত্রাদিকে নিয়েই আধবেলা কেটে গেছে। তোমার ব্যক্তিগত ভাবে কি মনেহলো বললে না। বললে তুমি বিশ্বাস করবে। হুঁ। মিত্রাদি তোমায় ভীষণ ভালবাসে। তুমি মিত্রাদির প্রথম প্রেমিক। তাই তুমি আমার কোন খতি করতে চাও নি। কে বললো তোমায়। মিত্রাদি নিজে। মিত্রাদির কথায় তোমার কিছু মনে হয়নি। প্রথমে ভীষণ মন খারাপ হয়েগেছিলো। তারপর ভাবলাম, ওই জায়গায় আমি থাকলেও ওই একি অবস্থা হতো। তোমার হিংসে হয় না। কিবলছো অনিদা! মিত্রাদিকে আমি হিংসে করবো। কেনো নয়। আমি যদি মসাই-এর কাছে না আসতাম তাহলে কোনদিন চেষ্টা করলেও তোমার আর মিত্রাদির কাছে পৌঁছতে পারতাম! এইযে তোমার পাশে বসে আছি এই গ্রামের কতো মেয়ে স্বপ্নে দেখে তা তুমি জানো! হাসলাম। জানো অনিদা তোমরা দুজন আমার কাছে আদর্শ। আর শরীরের কথা বলছো, আমি তোমার কাছে ধরা দিয়েছিলাম। তোমার আদর খাব বলে। তোমার অনেক কথা শুনেছিলাম। তোমার বন্ধুদের কাছ থেকে। সব যেনো আমার কাছে মিথ মনে হতো। যখন তোমায় দেখলাম, মনেহলো আমার সেই স্বপ্নের রাজপুত্রকে দেখছি। আমি লোভ সামলাতে পারিনি। বিশ্বাস করো। এই গ্রামের অনেকে আমাকে চেয়েছে। কেউ সহসা হাত বারাতে পারে নি। কিন্তু সেখানেও তোমাকে দেখলাম। তুমি মনের দিক থেকে কতো পবিত্র। তুমি মিত্রাদিকে ভালবাস। তোমার ভালবাসা নিখাদ সোনা। কত ভাগ্য করে জন্মালে একটা মেয়ে এইরকম মনের সংস্পর্শে আসে তা তুমি জানোনা। আমি জানি সেখানে তুমি কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না। যদি আমি না আসতাম। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো তুমি আসবে। তোমাকে আসতে হবেই। তুমি এতটা মনের জোড় পেলে কোথা থেকে। মসাই-এর কাছ থেকে। তোমার কথা শুনে শুনে। আমি নীপার দিকে তাকিয়ে আছি। মিত্রাদি আজ যে কাপড় জামা পাঠিয়েছে তা দেখে মসাই কেঁদে ফেলেছিলেন। আমি বললাম তুমি একি করছো। তারপর আমি অকপটে মিত্রাদির সমস্ত কথা মসাইকে বলেছি। কাকা শুনে কি বললো। মসাই বললো ও দাতাকর্ণ। হাসলাম। তোমার বাবাকে মনে পরে না । না। আবঝা আবঝা। মসাই-এর কাছে থেকে ওনার অনেক কথা শুনেছি। ভাল না খারাপ। ভাল না হলে তোমার মতো সন্তান পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় কি করে। আমায় একটা কথা দেবে। বলো। জানি আমি তোমাকে কোনদিন পাব না। তবে আমায় একটা সন্তান উপহার দেবে। আমি তাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবো। তাকে নিয়ে আমি আমার স্বপ্নের তরী রচনা করবো। কি পাগলামো করছো। নাগো সত্যি বলছি। তোমাকে পাবো না ঠিক। কিন্তু তোমার সন্তান আমার কাছে গচ্ছিত থাকবে। আমার সন্তানের প্রতি আমার কোন দায়িত্ব থাকবে না। তোমার দ্বারা তা হবে না, তুমি যাযাবর। হাসলাম। লোকে আমাকে চরিত্রহীন বলবে। তুমি চরিত্রহীন নও। মেয়েরা তোমার চরিত্র হনন করবে। তুমি নিজে থেকে তো চাওনা। অন্ধকারেও নীপার মুখটা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। পরদিন ঠিক সময়ে আমরা বেরিয়ে গেলাম। আজ নীপা মিত্রার দেওয়া লংস্কার্ট আর গেঞ্জিটা পরেছে। সামনে একটা ওর্না জড়িয়ে নিয়েছে। নীপাকে আজ একেবারে অন্যরকম লাগছে। চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো, হ্যাঁরে দিদিমনি, তুই করেছিস কি। আলো ঝড়ে পরেছে। আজ তুই অবশ্যই আওয়াজ খাবি। নীপা চিকনার দিকে কট কট করে তাকিয়ে বললো, তুমি বউনি করলে। কালকে এটাই তুমি বয়ে এনেছিলে। সরি ম্যাডাম, অন্যায় হয়েছে। আর একখানা বাকি আছে। কাল রাসপূর্ণিমার মেলা আপনার মনস্কামনা পূর্ণ হবে। সকলে হো হো করে হেসে ফেললো। সত্যি চিকনা তুইও পারিস। আমি বললাম। এই অজ গাঁয়ে কি নিয়ে থাকি বলতো অনি এই ভাবেই কেটে যাচ্ছে। নার্সিংহোমে পৌঁছলাম সাড়েনটা নাগাদ। রিসেপসন কাউন্টারের ভদ্রমহিলা আমাকে চিনতে পেরেছেন। আমাকে দেখেই বললেন, বসুন স্যার। আমরা সবাই বসলাম। উনি ইন্টারকমে কার সঙ্গে কথা বললেন। একজন ভদ্রলোক ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন। পরিচয় দিলেন ডঃ দেবাশীষ বসু। এও জানালেন মিঃ শ্রীধরণ থাকতে না পারার জন্য উনি ক্ষমাপ্রার্থী। তবে মিঃ শ্রীধরণ ওনাকে সমস্ত দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। আমার কি কি করণীয় ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম। উনি বললেন সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা কাকাকে ভেতরে নিয়ে গেলো। আমি নীপাকে সঙ্গে যেতে বললাম। নীপা প্রথমে যেতে চাইছিলোনা। আমি অনাদি আর বাসুকে পাঠালাম। নীপার সঙ্গে মিনিট পনেরো পর ওরা বেরিয়ে এলো। কাকার চোখে একটা চশমা দেখলাম। চোখটা একটু লাল লাল। কি হলো। ঠিক হয়ে গেছে। কাকা বললেন। তুমি দেখতে পাচ্ছ। হ্যাঁরে তোকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। কাল আর একটা চশমা দেবে বলেছে। ঠিক আছে তুমি বোসো। ওরা সবাই বসলো। অনাদি বাসুর সঙ্গে কথা বললাম। ওরা বললো একটা চোখের রেটিনাটা একটু কমজোরি হয়ে পরেছে। বছর তিনেক পরে অকেজো হতেপারে। তবে কাকা চোখে বেশি স্টেইন দিতে পারবে না। আচ্ছা। আমি রিসেপসনে গেলাম। ভদ্রমহিলাকে বললাম, ডঃ বাসুর সঙ্গে একটু কথা বলবো। উনি কাউন্টার থেকে বেরিয়ে এসে, আমাকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। ডঃ বাসু আমাকে বসতে বললেন, তারপর কাকার বিষয়ে সব জানালেন। অনাদি যা বললো, তাইই। চশমাটা কালকে একটা সময় এসে নিয়ে যেতে হবে। আমি বললাম, দুপুরের দিকে যদি আসি আপত্তি আছে কিনা। উনি বললেন না। আমি রেডি করে রেখে দেবো। কাকাকে সঙ্গে আনতে হবে কিনা। উনি বললেন না আনতে হবে না। যাকে হোক একজনকে পাঠিয়ে দিন দিয়ে দেবো। আমি এবার পয়সার কথায় এলাম। টোটাল ব্যালেন্স কতো বাকি আছে। আমায় কতো দিতে হবে। উনি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালেন, কেনো মিঃ শ্রীধরণ আপনাকে কিছু বলেননি। না। আপনার কোন ডিউ নেই, বরং আপনি যে টাকাটা জমা দিয়েছেন, সেটা রিফান্ড হবে। কেনো ? সেতো জানি না স্যার, ওটা মিঃ ব্যানার্জী জানেন। উনি টেবিলে রাখা বেলটা বাজালেন। একজন বেয়ারা এলো। তাকে উনি আমার ব্যাপরটা বলতেই উনি বেরিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর একজন ভদ্রলোক এসে একটা খাম দিয়ে গেলেন। উনি খামটা আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, মনে কিছু করবেন না, এটা আমার ডিউটি। ওনাকে বললাম, কাল আমি আসবো। আপনি থাকবেন ? উনি বললেন অবশ্যই। ওখানে কিছু মিষ্টি চা খেয়ে আমরা সকলে ফিরে এলাম। ফিরতে ফিরতে বেলা গড়িয়ে গেলো। বাসুকে বললাম, তুই দোকানে থাকছিস ? হ্যাঁ। তুই থাকবি কি করে ? অনাদি বললো। ওদিককার কাজ কে সামলাবে ? ঠিক বলেছিস। মনেই ছিলো না। তুই ওখানে চলে আয়। না। একেবারে কাল যাব। তুই তাহলে একটু রাতের দিকে আয়। এই সাতটা। ঠিক আছে তোকে যেতে হবে না, আমরাই আসবো। অনাদি বললো। ঘরে ফিরে এলাম। নীপা ওবাড়িতে গেছে। কিছুক্ষণ পর এসে বললো, ভাত খাবে না। না। এখন খেতে ভাল লাগছে না। তুমি আমাকে একটু চা দাও। আমি কিন্তু এখন তোমাকে সময় দিতে পারবোনা বাপু। আমার নাচের রিহার্শাল আছে। তাই। হ্যাঁ। কি নাচ করবে। চিত্রাঙ্গদা। ওরে বাপরে। সেতো বিরাট ব্যাপার। চাত্রাঙ্গদা কে হয়েছে ? আমি মশাই আমি। তারপর আমার কাছে ছুটে এসে জাপ্টে ধরে বললো, তুমি কাল যাবেতো ? নিশ্চই যাবো। আবার জরুরি কাজ পরে যাবেনা। হাসলাম। কখন শুরু তোমাদের অনুষ্ঠান ? এখন তাড়াতাড়ি রাত হয়ে যায়। এই ছটা ধরো। তার মানে কাল তোমার নাগাল পাওয়া যাবে না। ঠিক তা নয়, একটার পর থেকে মাঠে চলে যাবো। একটু স্টেজ রিহার্শাল করতে হবেনা। ঠিক ঠিক। নীপা এক দৌড়ে চলে গেলো। চা খেয়ে এই বাড়িতে কাকার কাছে এলাম। বললাম আমি একটু আসছি। কাকা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, সন্ধ্যে হয়ে আসছে। এই সময় কোথায় যাবি। দেখি। টর্চটা নিয়ে যা। দাও। কাকা কাকীমাকে ডাকলেন। কাকীমা টর্চটা দিয়ে গেলেন। বললেন তাড়াতাড়ি চলে আসিস। আচ্ছা। নীপাকে আশেপাশে কোথাও দেখতে পেলাম না। আমি বেরিয়ে এলাম। আমাদের পুকুর পারের পেছনের রাস্তা ধরে বাঁশ বাগানের ভেতর দিয়ে একবারে খাল পারে চলে এলাম। নিঃঝুম রাস্তাটা পাগল অনির সঙ্গে কথা বলার জন্য যেনো ওঁত পেতে বসে আছে। চারিদিকে শুকনো গাছের পাতায় ঢাকা পঢ়ে গেছে। মাঝখানদিয়ে শরু দড়ির মত রাস্তাটা এঁকে বেঁকে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। আমি একটু নদীর পারে বসলাম। বর্ষাকালে গ্রামের মানুষ একে নদী বলে। তখন নদীর দু’কুল ছাপিয়ে জল গ্রামের মধ্যে ঢোকে। বাঁধ বাঁচাবার জন্য তখন গ্রামের সবাই হামলে পরে বাঁধের ওপর। বর্ষা চলে গেলেই গ্রামের লোকেরা বলে খাল। তখন তার রূপ শীর্ণকায়। এই খালে কতো নৌকা চালিয়েছি আমি আর ভানু। সামন্তদের নৌকা। বিমল সামন্ত। গ্রামের লোকেরা অপভ্রংশ করে বলতো বিমল সাঁতের লৌকো। সেইদিন গুলোর কথা মনে পরে গেলো। অনাদিরা তখনো এতো ক্লোজ হয় নি। টেনে পরার সময় আমরা সবাই দলবদ্ধ হলাম। ভানু ভানুর জায়গায় রইলো। ও আমাদের থেকে বয়সে বরো। কিন্তু ওই যে সিং ভেঙে বাছুরের দলে ঢুকলো আর বেরোতে পারলো না। গোধুলি শেষে। ঘন কুয়াশার মতো সন্ধ্যা নেমে আসছে একটু একটু করে। আকাশের দিকে তাকাতে তারা গুলো মিট মিট করে জলছে। আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বললো, কি অনিবাবু অনেকদিন পর এই রাস্তায়। কেমন আছ। নিজে নিজেই হেসেফেললাম। পায়ে পায়ে হারু জানার কালায় এসে পরলাম। এই কালাটা এই গ্রামের বিখ্যাত জায়গা। কালা বলতে একটা ছোট পুকুর তার চারধারে ঘন জঙ্গল। দিনের বেলা এখানে সাধারণ গৃহস্থ কেউ আসে না। রাতের বেলা একবারেই না। নিষিদ্ধ জায়গা। ছোটো থেকেই নিষিদ্ধ জায়গার প্রতি আমার টান বেশি। ক্লাস টেন থেকে আমি উড়চন্ডী। ছোট সময় জানতাম। হারু জানার কালায় ভূত আছে। ওকানে গেলে কেউ জীবন্ত ফিরে আসে না। একদিন পায়ে পায়ে রাতের অন্ধকারে চলে এসেছিলাম। লুকিয়ে দেখলাম। সেখানে যেন মোচ্ছব বসেছে। কতমেয়ে পুরুষ গায়া গা লাগিয়ে বসে আছে। ঠিক যেন ভানু-কালুচরণের ঝি। সবাই যে এই গ্রামের তা নয় আশেপাশের গ্রামেরও বেশ কয়েকজনকে দেখলাম। গ্রামের ঘরে বলে ভাকু। একচুয়েলি দেশি মদের কারখানা। খোলা আকাশের নিচে গরম গরম ভাকু খেয়ে ফুর্তির জায়গা। হাঁড়িপাড়া ডোমপাড় তাঁতীপাড় কামারপাড়ার অনেক মেয়ে পুরুষকে দেখলাম। সে কি ঢলানি। অনেকক্ষণ লুকিয়ে লুকিয়ে দেখলাম। কলকাতা এসে আবিষ্কার করলাম আমাদের গ্রামের হারু জানার কালা একটা বার।
Parent