কাজলদীঘি, শ্মশান ও পীরসাহেবের থান by Mamun Jafran - অধ্যায় ৩১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-11060-post-747381.html#pid747381

🕰️ Posted on August 11, 2019 by ✍️ sagor69 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 2104 words / 10 min read

Parent
পার্টঃঃ২৯ বাঁধ থেকে নেমে এসে ধানখেতের মাঝখান দিয়ে শরু আইলপথ ধরলাম। ধানের শিষের বুকে সকালে যে বিন্দু বিন্দু শিশিরের ছোঁয়া দেখেছিলাম, নরম রোদের স্পর্শে এখন উধাও। দুজনে হেঁটে চলেছি। সামনের দিকে। টেস্টে রিলিফের ছোট্ট বাঁধটা পেরিয়ে, মেঠো রাস্তা ধরে অনাদির বাড়ির কাছে এলাম। সেই এক দৃশ্য আনাদির বাচ্চা দুটো খামারে ধুলো মেখে খেলা করছে। আজকেও ও দুটোকে দেখতে ভালো লাগছে। মিত্রা আমার হাত দুটো চেপে ধরে বললো, দেখ বাচ্চা দুটো কি কিউট। আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম। আজ অনাদিকে ডাকতে হলো না। কাঞ্চন বেরিয়ে এসে এক মাথা ঘোমটা দিয়ে আমাকে আর মিত্রাকে একটা ঢিপ করে প্রণাম করলো। ভেতরে চলো ওকে ডেকে দিচ্ছি। এইতো ভোরে ঘুমলো কোথায় কি ঝামেলা হয়েছে। মিত্রা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। ওর চোখের ভাষা বুঝতে পারলাম। কাঞ্চন, অনাদির স্ত্রী। আমার হাত ছেড়ে ও কাঞ্চনকে জড়িয়ে ধরলো। ওই দুটো অনাদির বাচ্চা। এইবার ওকে ধরে রাখা মুস্কিল হলো ও ছুটে গিয়ে বাচ্চা দুটোকে কোলে তুলে চটকাতে লাগলো। বাচ্চা দুটো প্রথমে একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছে। তারপর ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠলো। মিত্রা ওদের ছেড়ে দিলো। ভেতর থেকে কাকার গলা পেলাম, কেগো বৌমা। অনিদা। কাকা চেঁচামিচি শুরু করে দিলেন। আমি খামর থেকেই চেঁচিয়ে উঠলাম, তোমায় ব্যস্ত হতে হবে না। ভেতরে আয়। যাচ্ছি। কাকা পায়ে পায়ে খামারে বেরিয়ে এলো। এই মেয়েটা কে ? চিনতে পারলাম না। এ হচ্ছে সেই। কাকা এগিয়ে এসে মিত্রার গালে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বেশ মিষ্টিরে অনি। তোমার পছন্দ ? খুব ভালো। মিত্রা এবার ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে। আমাকে ইশারায় জিজ্ঞাসা করল প্রণাম করবো, আমি বললাম না। কাঞ্চনের দিকে তাকিয়ে বললাম একটু চা বসাও, আর কত্তাকে ডাকো। কাঞ্চন ভেতরে চলে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে অনাদি বেরিয়ে এলো চোখ মুছতে মুছতে। কিরে। নিশ্চই ম্যাডামকে তোর পাগলামোর সঙ্গী করেছিস। মিত্রা হাসছে। মাথা নীচু করে ওদের বাড়ির বারান্দায় এলাম। মিত্রা দড়ির দোলনা দেখে অবাক। আমাকে বললো, একবার বসিয়েদে একটু দুলি। আচ্ছা চল। ওকে বসিয়ে দিলাম। ও বাচ্চা মেয়ের মতো দুলছে। না দেখা জিনিষগুলো প্রাণ ভরে লুটে নিতে চাইছে। বাইকের আওয়াজ পেলাম। বাইরে তাকালাম। চিকনা আর বাসু। আমি পায়ে পায়ে খামারে বেরিয়ে এলাম। কিরে এতো সকালে! চিকনা খিস্তি দিতে যাচ্ছিল, কিন্তু মিত্রার দিকে চোখ পরতে থেমে গেলো। সারারাত নিজেও ঘুমোবি না, কাউকে ঘুমোতেও দিবি না। ওর দিকে তাকালাম। বোঝার চেষ্টা করলাম। সকাল বেলা শ্মশানের হাওয়াও খাওয়ালি। মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছি। বাসু হাসছে। অনাদি বেরিয়ে এলো। ওদের দুজনকে দেখে একটু অবাক হলো। কিরে ? কি আবার। সারা মহল্লা খুঁজে শেষে এখানে এসে পেলাম। তাও মেডামের শাড়িটা দীঘাআড়ি থেকে চোখে পরলো বলে। শালা সকালের শ্মশানটাও দেখা হয়ে গেলো ওর জন্য। শ্মশানে গেছিলি কেনো ? আবার কে মারা গেলো ? কেউ মরে নি নিজেই মরে গেছিলাম, সঙ্গে বাসুকেও প্রায় মেরে দিয়েছিলাম। কেনো। অনিকে জিজ্ঞাসা কর। অনাদি আমার মুখের দিকে তাকলো। আমি মাথা নীচু করে আছি। বাসু অনাদিকে বললো, কাল সারারাত ওরা দুজনে ঘুমোয় নি। মিত্রা ভীষণ চেঁচামিচি করেছে। নীপাও ঘুমোওনি। ওদের সব কথা শুনেছে। ও ভীষণ ভয় পেয়ে গেছে। ওরা বেরিয়ে আসতে, নীপা চিকনাকে ফোন করেছিলো। ভীষণ কান্নাকাটি করেছে। বাধ্য হয়ে চিকনা ওই রাতে আমার কাছে আসে। আমি প্রথমে গাড়িটা লক্ষ্য করি। না গাড়িটা ঠিক আছে। তখনি বুঝলাম ওরা চলে যায় নি। এখানেই কোথাও আছে। প্রথমে দুজনে মিলে হারুর কালায় যাই, ওখান থেকে শ্মশানে, তারপর দীঘাআড়ি। ওখানে এসে মিত্রার শাড়িটা লক্ষ্য করে চিকনা। আমায় দেখায়। আমি বলি হ্যাঁ। ওখান থেকে তোর বাড়িতে এলাম। মিত্রা দোলায় দুলছে, বাচ্চাদুটোর সঙ্গে মনে হয় ভাব জমিয়ে নিয়েছে। দুটোই দেখছি ওর কোলে। চল ভেতরে চল। দাঁড়া নীপাকে একবার ফোন করি। যে মেয়েকে কোনদিন কাঁদতে দেখি নি, তাকে কাল কাঁদতে শুনে মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো। চিকনা বললো। মিত্রাকে কিছু বলিস না। ও খুব আপসেট আছে। তোকে আর জ্ঞান দিতে হবে না। ওগুলো বুঝতে ঘটে বুদ্ধি লাগে না। হেসেফেললাম। হাসিস না। চিকনা নীপাকে ফোন করে সব জনালো। আমরা অনাদির বাড়ির দাওয়ায় বসলাম। চা এলো। সঙ্গে নারকেলকোড়া ঘি দিয়ে মুড়ি মাখা। মিত্রা দোলনা ছেড়ে আমাদের পাশে এসে বসলো। চিকনা একবার তাকালো মিত্রার দিকে। কাল খুব ভালো ঘুম হয়েছে মনে হচ্ছে, চোখের কোল দুটো ফোলা ফোলা। মিত্রা মাথা নীচু করলো। আপনাদের খুব কষ্ট দিলাম। আপনি নয়, তোমাদের খুব কষ্ট দিলাম। চিকনা বললো। মিত্রা হেসে ফেললো, ফ্যাকাসে হাসি। হাসলেন বটে কিন্তু কালকে পুকুর ঘাটে যখন পরে যাচ্ছিলেন, তারপর অনির দিকে তাকিয়ে যে হাসিটা ঝেড়েছিলেন সেরকম নয়। চিকনা এমন ভাবে কথা বললো মিত্রা খিল খিল করে হেসে ফেললো। এইবার মিললো। আমরা মরে যাই নি ম্যাডাম। অনি যেমন আপনার। আমাদেরও। জানি। আমি কালকের সব ঘটনা শুনলাম ওর মুখ থেকে। আমাদের খপ্পরে পরা খুব সহজ, বেরোনো খুব কঠিন। আপনি কিচ্ছু চিন্তা করবেন না। অনাদির দিকে ঘুরে তাকিয়ে, হ্যাঁরে মুড়ি কি বারন্ত। অনাদি এমন ভাবে তাকালো, চিকনা হেসে ফেললো। খিদে লেগেছে। খা না, টিনটা বসিয়ে দেবো। ম্যাডাম লজ্জা পাবে। গাঁয়ের ছেলে, খাওয়া তো দেখে নি, বিড়াল ডিঙোতে পারবে না। মিত্রা হাসলো। ওদিকের খবর। রাতে সঞ্জয়ের জিম্মায় চলে গেছে। সব ঠিক আছে। ম্যাডাম যখন বলবে হাজির করে দেবো। সঞ্জয়ের জিম্মায় মানে! অনাদি বললো। কাল রাতে কিছু একটা হয়েছিল। সঞ্জু আমায় ফোন করলো। আমি বললাম চেলাকাঠ দিয়ে পিঠ গরম করে দে, তারপর তোর ওখানে নিয়ে গিয়ে রাখ। মিত্রা চিকনার কথায় হেসে ফেললো। হাসবেন না ম্যাডাম ওই শা...। চিকনা একহাত জিভ বারকরে ফেললো। সরি। কালকে মেলার মজাটাই নষ্ট হয়ে গেছে। ওকে এতো সহজে ছেড়ে দেবো না। এখন কোথায়। অনাদি জিজ্ঞাসা করলো। সঞ্জয়ের বাড়িতে। ঠিক আছে। তোরা কি চিন্তা করলি। অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে বললো। আমি ভেবে রেখেছি। মিত্রাকে বলিনি। বাড়িতে গিয়ে বলবো। মোবাইলটায় ফোন এসেছিলো ? বহু। এইতো ভোর বেলা পর্যন্ত। কানের কাছে খালি টেঁ টেঁ। নিয়ে আয়। ওইটা দেখেছিস। চিকনা বললো। হারামী। কথাটা বলেই অনাদি জিভ কাটলো। মিত্রা মাথা নীচু করে হাসছে। হটকেক। চিকনা বললো। অনাদি ভেতরে চলে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে ফোনটা নিয়ে এলো। আমার হাতে ফোনটা দিলো। মিত্রা বাসুকে কি যেনো ইশারা করলো। বাসু উঠে পরলো। মিত্রাও উঠে পরলো। ওরা একটু দূরে চলে গেলো। আমি ফোনটা অন করে কল লিস্ট দেখলাম। চম্পকদা সুনীতদা অতীশবাবুর ফোন। এই তিনটে নাম দেখলাম সেভ করা আছে। বাকিগুলো বুঝতে পারলাম না। অনাদিকে বললাম, একটু কাগজ কলম নিয়ে আয়। অনাদি নিয়ে এলো আমি নাম্বার গুলো নোট করলাম টাইমগুলো নোট করলাম। আনাদিকে বললাম, ওকে সাড়েনটায় নিয়ে আয়। আমি দশটায় মিটিং কল করছি অফিসে। কোন অফিসে ? কলকাতায়। আমার অফিসে। যাবি কি করে ? যাব না এখান থেকেই টেলি-কনফারেন্সে করবো। ইচ্ছে ছিল সকলের সামনে ওর মুখোশ খুলবো। তা হবে না। সে তোকে চিন্তা করতে হবে না। আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। ওকে এবার গ্রাম ছাড়া করবো। অনাদি বললো। আমি ওকে না বলতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু বললাম না। মিত্রা ওখানে কি করছে বলতো বাসুর সঙ্গে। তোর কি। চিকনা বললো। কি করছে জানিস ? কি। নিশ্চই কোনো খেলনার দোকান খুঁজছে এই সাতসকালে। অথবা ক্যাটবেরি কিংবা চকলেট। মনগড়া কথা বলিস না। তুই ওদের কথা শুনে এসে আমায় বল। যদি না হয় কি দিবি। তোকে অনেক কিছু দেবো। ধরে রাখতে পারলে জীবনে আর কিছু করতে হবে না। চিকনার চোখ চক চক করে উঠলো, ঠিক। হ্যাঁ। চিকনা উঠে গেলো, আমি অনাদিকে কাল রাতের সমস্ত ঘটনা সংক্ষেপে বললাম। অনাদির চোখ কঠিন হয়ে গেলো। তোর ধৈর্য আছে অনি। তোর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। শালাকে এমন শাস্তি দেবোনা, এবার তুই দেখবি। না অনাদি। ছোট থেকে আমরা একসঙ্গে বড় হয়ে উঠেছি। আমরা একে অপরের বন্ধু। ওকে শোধরাবার ব্যবস্থা করতে হবে। চেষ্টা করে দেখি না। তুই মহান হতে চাইছিস। না। জীবনে কিছু পায় নি। আমার থেকে তুই এটা ভাল জানিস। তোর বাড়িতে এসে পান্তা খেয়ে অনেক দিন দুজনে মিলে এক সঙ্গে স্কুলে গেছি। কেনো ? কাকার পয়সা ছিল না! না আমার বাবার কিছু কম ছিলো! আজ আমার কাছে সবাই ভালো। আরে দিবাকরতো পরের ছেলে। কাকাকে আমিতো কোনদিন পর ভাবি নি। থাক ওসব কথা, চলে আয় ঠিক ওই সময়। আমি দিবাকরের সঙ্গে আগে একটু কথা বলে নেবো। অনাদি মাথা নীচু করে আছে। আমায় ক্ষমা করিস। আমি না জেনে তোকে.....। ছার ওসব কথা, একটা সিগারেট দে। অনাদি উঠতে যাচ্ছিলো, চিকনা এলো। গুরু তুমি অন্তর্যামী। সিগারেটের প্যাকেটটা আগে বার কর। অনাদি বললো। দিলিতো মাঝখানে টুকে। প্যাকেটটা আগে বার কর, অনি চাইছে। অনি। আগে বললি না কেনো। চিকনা সিগারেটের প্যাকেটটা বার করলো। একটা সিগারেট নিয়ে ধরালাম, বল। তোমার কথাই ঠিক। তুমি কি করে জানলে একটু শেখাও। মানুষকে ভালবাসতে হবে। নিঃস্বার্থ ভাবে। বিদ্যেটা শিখতে হবে। বাসু কি বলছে। বেলায় ব্যবস্থা করে দেবে। ম্যাডাম বলছে এখুনি। এই নিয়ে ক্যাচাল। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, ওকে ডাকলাম, মিত্রা কাছে এলো। বাসু যা বলছে, ঠিক বলছে। চল অনেক কাজ। ও যখন সাড়ে নটার সময় আসবে, তখন নিয়ে আসবে। ঠিক। আমিতো বলছি। বাসু হাসছে। আমরা ফিরে এলাম। আমাদের দূর থেকে আসতে দেখে নীপা এগিয়ে এলো। খামারে এসে দাঁড়িয়েছে। চোখের কোলে কে যেন একপোঁচ কালি লেপে দিয়েছে। কয়েকঘন্টার ব্যবধানে মেয়েটার বয়স দশ বছর বেরে গেছে। মিত্রার বুকে মুখ গুঁজে ফুলে ফুলে কেঁদে উঠলো। আমি পাশে নীরবে দাঁড়িয়ে আছি। মেবাইলের ঘড়িটা দেখলাম, সকাল ৭.৩০ বাজে। নীপা কিছু একটা ঘটনা ঘটেছে বুঝতে পেরেছে। কি ঘটেছে বুঝে উঠতে পারছে না। মিত্রা নীপার মুখটা তুলে বললো, আমার একটুতে মাথা গরম হয়ে যায়। তোর অনিদার মাথাটা বরফের মতো ঠান্ডা। তাইতো ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছি। তোর কোন চিন্তা নেই। দেখিস আর কয়েকঘন্টার মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। মিত্রা নীপার চোখ মুছিয়ে দিলো। এখন আর ওবাড়িতে যাবো না। কাকারা কিছু জানে নাতো। নীপা মাথা দুলিয়ে বললো না। তুই একটু চা নিয়ে আয়। আর কিছু খাবে না। কি করেছিস। আলু ভেজেছি। একটু মুড়ির সঙ্গে মেখে দেবো। যা নিয়ে আয়। ওপরে এলাম। মিত্রাকে আমার প্ল্যানের সমস্ত ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললাম। ওর চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তুই কি বলছিস। আমি যা বলছি তাই কর। মিত্রা ফোন তুলে নিলো, ভয়েস অন করে রেকর্ডিং চালু করে দিলাম। সনাতনবাবু হ্যালো করে উঠলেন। অফিসের খবর কি। ম্যাডাম আর বলবেন না। এই কদিনে আমার দফারফা করে দিচ্ছে এরা। কারা। চম্পকবাবু, সুনিতবাবু। আর্ট ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন। কাকে বাদ দিয়ে কাকে বলি বলুনতো। আপনি কি করছেন। আমি কি করবো। কথা শুনলেতো। এরা কিছুই মানছে না। বিশেষকরে সুনিতবাবু। আমি কিছু বলতে পারছি না। উনি আপনার আত্মীয়। ঠিক আছে। আমি টেলি কনফারেন্সে আজ এগারোটার সময় মিটিং করবো। সব ডিপার্টমেন্টের ম্যানেজারদের থাকতে বলবেন। সবাইকে সাড়ে দশটার মধ্যে অফিসে হাজির হতে বলুন। আমার ঘরে বসাবেন। আর শুনুন, সব রেকর্ডিং করবেন। ঠিক আছে ম্যাডাম। আমি ঠিক এগারোটার সময় ফোন করবো। আপনার মোবাইলে। আচ্ছা ম্যাডাম। নীপা আলুভাজা মেখে মুড়ি চা নিয়ে এলো। আমার দিকে কিছুতেই তাকাচ্ছে না। আমি খাটে পা ঝুলিয়ে হাতের ওপর হেলান দিয়ে একটু পেছনে হেলে বসে আছি। মিত্রা আমার পাশে খাটের ওপর। নীপা মুড়ির বাটিটা খাটের ওপর রেখে আমার পায়ের কাছে বসে। আমার কোলে মাথা রেখে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো। প্রথমটায় ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পরেছিলাম। আমায় ক্ষমা করো অনিদা। আমি ওর মাথায় হাত রাখলাম। কেনো। আমি তোমাকে না জানিয়ে চিকনাদাকে ফোন করেছিলাম। তুমি বিশ্বাস করো আমার মাথাটা তখন কোনো কাজ করছিল না। দূর এসব নিয়ে এতো কেউ ভাবে। নাগো মিত্রাদি ওই রকম রেগে যেতে পারে, আমি ভাবতেই পারিনি। রাগটাও মানুষের একটা ধর্ম। কই তুমিতে কোনো দিন রেগে যাও নি। আমিতো বোকা। বোকারা কখনো রাগতে পারে। এমন ভাবো কথাটা বলে ফেললাম, এই সিচুয়েসনেও নীপা কাঁদতে কাঁদতে হেসে ফেললো। মিত্রা হো হো করে হেসে বিছানায় গড়িয়ে পরলো। তুই হাসছিস না কাঁদছিস। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম। কেনো হাসছি। আমি ভাবলাম তুইও কাঁদছিস। নীপা উঠে গিয়ে মিত্রার ওপর ঝাঁপিয়ে পরলো। হ্যাঁরে তোর বাথরুম পায় নি ? পেয়েছে। তুই মুখ পাত। উঃ মিত্রাদি তুমি না। তোর অনিদা যেরকম, সেরকম উত্তর না দিলে বিপদ আছে। না কালকের পর তোকে....। বুবুন খারাপ হয়ে যাবে। নীপা চোখ পিট পিট করছে, তার মানে। কি, বলবো ? প্লিজ বুবুন। ঠিক আছে। তাহলে ওটা করবি। হ্যাঁ। না না না...। ওরা দুজনেই হো হো করে হেসে উঠলো। ওরা সবাই ঠিক সময়ে এসেছে। দিবাকরও এসেছে। আমার মুখে কোনো বিকার নেই। আমার এই ঘরে এখন লোক দাঁড়াবার জায়গা নেই। আরো দু’চারজন নতুন মুখ দেখতে পেলাম। আমি চিনতে পারলাম না। বুঝলাম অনাদির চাল। অনাদি কারুর সঙ্গেই আলাপ করালোনা। দিবাকর এসেই কাঁদুনি গাইতে আরম্ভ করেছে। আমি ওকে ভাল মুখে সবকথা স্বীকার করে নিতে বললাম, ও কিছুতেই স্বীকার করবে না। বার বার একি কথা অনাদি ওকে প্ল্যান করে ফাঁসিয়েছে। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে। কিছু বুঝছিস। হ্যাঁ। ও কালকে তোর পাশেবসে তোর সঙ্গে রসিয়ে রসিয়ে সঙ্গে করেছে। কলকাতায় ওটা রেকর্ডিং হয়েছে। তাও বলছে ওকে ফাঁসানো হচ্ছে। তুই বিশ্বাসকর অনি। তুই কাল মিত্রার সঙ্গে কি কথা বলেছিস তার রেকর্ডিং শুনবি। দিবাকর মাথা নীচু করলো। এরপরও তুই বলবি তোকে ফাঁসানো হয়েছে। তুই কাল আরো অনেক কিছু বলেছিস। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাতটা আমি তোর কাছথেকে পেয়েছি। তুই একবার পারমিশন দে অনি, দেখ পাঁচমিনিটের মধ্যে কিমা করে দেবো। চিকনার চোখে মুখের চেহারা বদলে গেছে। সঞ্জু চিকনার পাশে দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসছে। আমি তোর পায়ে ধরছি তুই আমাকে বাঁচা। দিবাকর আমার পা ধরে ফেললো। দিবাকরের ফোনটা বেজে উঠলো। আমি চিকনার হাত থেকে মোবাইলটা নিলাম। দেখলাম সুনিতদার নম্বর। ভয়েস অন করে দিবাকরের হাতে দিলাম। তোর হবু বস ফোন করেছে। রেসপন্স কর। নাহলে চিকনার কথাটা মনে রাখিস। একবারে বেগড় বাই করবি না। খুব সাধারণ ভাবে। যেভাবে গত চারদিন কথা বলেছিস সেইভাবে বলবি। চিকনা রেকর্ডিংটা টিপে দে। চিকনা রেকর্ডিংটা অন করে দিলো। হ্যালো হ্যালো। বলুন। তোমার খবর কি ? কালকে সেই রাত দশটায় লাস্ট নিউজদিলে তারপরে কিহলো বলো। কোনো খবর নেই তাই দিই নি। গলাটা এত ভারী কেনো। কেউ জানতে পেরেছে নাকি। আমি দিবাকরের দিকে তাকালাম, হাতের ইশারা করলাম। না। কালকে থেকে কতবার তোমায় ফোন করেছি, চম্পকবাবু করেছে অতীশবাবু করেছে। কি বলবো। ফোনটা প্রবলেম করছিলো। লেটেস্ট খবর কি বলো ? ভালো নয়। আমি দিবাকরের দিকে কটকট করে তাকালাম। কেনো! কাল রাতে এখান থেকে ওরা চলে গেছে। তারমানে! কোথায় খোঁজ নাও। কি করে নেবো। আমাকে বলে গেছে নাকি।
Parent