কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ১০০

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4504979.html#pid4504979

🕰️ Posted on January 1, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1187 words / 5 min read

Parent
দেবাশিষ উঠে এলো। ওর গাড়ি নিয়ে ওষুধটা নিয়ে এলাম। ডাক্তারবাবু ওদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। আমায় দেখে বললেন, -তোকে দিয়েছে। -হ্যাঁ। আপনার সইটা চিন্তে পেরেছে। -দেখি। আমি ওঁর হাতে ওষুধটা দিলাম। ঠিক ওষুধ দিয়েছে। উনি কি ভাবে খেতে হবে বলেদিলেন। সাতদিন পর বাড়ির বাইরে বেরোবার পারমিশন দেবেন। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, শুনে নে, ঘ্যানর ঘ্যানর করবি না। -অনি ঠিক বলেছে মা। তুমি এই বাড়ির মধ্যে থাকবে, খুব বেশি হলে নিচের বাগানে ঘুরতে যাবে। আজ রাত থেকে ওষুধ চালু করে দাও। আমি যাই নিচে গিয়ে বান্ধবীদের সঙ্গে একটু আড্ডা মারি। আমরা সবাই হেসে ফেললাম। ডাক্তারবাবুকে নিচে পৌঁছে দিলাম, ছোটমা বললেন অনি দাঁড়া এগুলো একটু ধর। আমি একবুক নিঃশ্বাস নিয়ে বললাম, কি দারুণ গন্ধ। -দেবো কান মূলে। ছোটমার সঙ্গে ট্রে ভাগাভাগি করে ওপরে নিয়ে এলাম, আমায় দেখে মিত্রা নামতে চাইছিলো, টিনা বললো তোমায় যেতে হবে না মিত্রাদি, আমি যাচ্ছি। টিনা আমার হাত থেকে একটা ট্রে নিয়ে বিছানার ওপর রাখলো। আমি ছোটমার হাত থেকে ট্রে নামিয়ে রাখলাম। -এবার একরাউন্ড চা। আমি বললাম। -ওটা গেল আগে, তারপর দিচ্ছি। ছোটোমা বললেন। -তথাস্তু। টিনা, মিলি, অদিতি হেসে ফেললো। ছোটমা চলে গেলেন। আমরা খেতে খেতে কথা বললাম, কলেজ লাইফের কথা কর্মজগতের কথা। দেবাশিষ বলে উঠলো। কালকের ঘটনাটা তুই দারুণ দিয়েছিস। -তুই কার কাছ থেকে শুনলি। -আবার কে চম্পক। -তোকে ফোন করে বললো! -হ্যাঁ। আক্ষেপ করছিলো, আমাকে দিলে না। দিয়েছি কাঁচা কাঁচা খিস্তি। তারপর বললো সব ঘটনা। আমিও বললাম, অনি বলে আপনার চাকরিটা গেলো না, না হলে কি হতো বুঝতে পারছেন, ওই হাউস থেকে কেউ বেরোয় না তাড়ানো হয়, আপনি আর কোথাও চাকরি পেতেন। চুপ করে গেলো। তারপরের ব্যাপারগুলো বল। -সে অনেক কথা, তোকে একদিন গিয়ে বলবো। -আমি কিছু কিছু জানি। তবে মালটাকে তুই দারুণ টাইট দিয়েছিস। তোকে আমার প্রয়োজন হবে। -যখন প্রয়োজন হবে বলিস, অবশ্যই সাহায্য করবো। -আমিতো টিনার মুখ থেকে শুনলাম, খবরটা। মিত্রার শরীর খারাপ, সঙ্গে সঙ্গে ডিসিশন। -আমারই জানানো উচিত ছিলো। -তোর সকালের ম্যাসেজটা পড়লাম, ১১টার পর। ওই কানা রাতে কি করছিলি। -ফিরছিলাম। -কোথা থেকে। -বিশ্বযুদ্ধ করে। মিত্রা মাথা নীচু করে মুচকি মুচকি হাসছে। দেবাশিষ ইশারায় একটা ইঙ্গিত করছিলো, আমি ইশারাতেই ওকে বললাম না। -ও হাসছে কেনো রে। -তুই জিজ্ঞাসা কর। -আমি তো ভাবলাম, কাল রাতেই কিছু একটা হয়েছে। -ঠিকই ধরেছিস, কাল থেকেই চলছিলো। আজ বার্স্ট আউট হলো। সকালের সেই দৃশ্য দেখলে তুই ঘাবড়ে যেতিস। -মিত্রা তোর ফোন নম্বরটা দে। মিত্রা ওদের ফোন নম্বর দিলো। প্রত্যেকে মোবাইলে ফোন নম্বরটা সেভ করে নিলো। দেখতে দেখতে নটা বেজে গেলো। ওরা উঠলো। আমি মিত্রা নিচ পযর্ন্ত ওদের এগিয়ে দিলাম। গুডনাইট বলে সবাই চলে গেলো।   আমরা দুজনে নীচে এসে বসলাম, বড়মা রান্নাঘরে, ছোটমা টিভি দেখছে, সিরিয়াল। কিছুক্ষণ বসে দেখলাম, ছোটমা কথার ফাঁকে ফাঁকে বললেন -হ্যাঁরে অনি, তুই যে কলেজ লাইফে এই তেঁদড়ামো করতিস, কে শেখাতো তোকে, মিত্রা। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে -না মিথ্যে বলবো না, আমার মাথায় তখন নিত্য নতুন বুদ্ধি আসতো, ইনস্ট্যান্ট, একচুয়েলি গ্রামের ছেলে তো শহরে এসে দাদা হতে হবে, তাই এসব আর কি। -তোর কি ছোট থেকেই দাদা হবার শখ। -কেনো। -মিত্রার মুখ থেকে ওখানকার গল্প শুনছিলাম, ওখানে তোকে সবাই দেবতা হিসাবে মানে। -ঠিক তা নয়। একটা সময় ছিল, যখন যে কেউ দায়ে অদায়ে ডাকলেই আমাকে পেতো। তাছাড়া আমার একটা প্লাস পয়েন্ট ছিলো আমি মা-বাপ হারা ছেলে। যেখানে খুশি চলে যেতাম বাধা দেবার কেউ নেই। -বাজে বকিস না। -এই দেখ সত্যি কথা বললেই বাজে বকা হয়ে গেলো। -ছোটো, কি বক বক করছেরে অনি। -দেখনা যা জিজ্ঞাসা করছি তার উত্তর না দিয়ে উল্টো গল্প ফাঁদছে। -ওটা ওর দাদার থেকে পেয়েছে। কিছুতো পেতে হবে, সোজা কথা কোনোদিন সোজা করে বলে না। আমি উঠে রান্না ঘরে চলে গেলাম। ছোটমা মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো -চললেন তেল মারতে। আমি হাসলাম। রান্নাঘরে গিয়ে বড়মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। -ওরে ছার ছার পুরে মরবো। -কি ভাজছো। -মাছের ডিমের বড়া, খাবি। দেখলাম, মিত্রাও আমার পেছন পেছন উঠে এসেছে। -ওকে একা নয়, আমিও পেছনে আছি। -ছোটোরে, ওদের একটা প্লেটে দেতো। ছোটোমা উঠে এলেন। -দূর তোমার প্লেট, আমি থালা থেকে দুটো বড়া তুলে নিয়ে চলে এলাম। -আমাকে দে। -তোর জন্য প্লেট। বড়মা ফিরে তাকালেন -তোকে দেয় নি। -না। -কি বদমাশ ছেলেরে বাবা। স্বার্থপর এক নম্বরের। আমি বড়া খাচ্ছিলাম। মিত্রা আমার পাশে এসে বসলো। দেখলাম ওর প্লেটে চারটে। দিলাম একটা খাবলা। মিত্রা না না করে উঠলো। বড়মা চেঁচিয়ে উঠলেন -কি হলো রে আবার। -দেখনা, আমার প্লেট থেকে দুটো তুলে নিল। -অনি। -না গো বড়মা মিথ্যে কথা বলছে। -মিত্রা, তুই আয় আমি দিচ্ছি। মিত্রা রান্নাঘরে গেলো। বাইরে হর্ন বেজে উঠলো, বুঝলাম সাহেবরা ঢুকলেন। আমি হাত মুখ মুছে, সোফার এক কোনে বসলাম। মিত্রা বড়মার সঙ্গে রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ফুসুর ফুসুর গুজুর গুজুর করছে। মল্লিকদা ঘরে ঢুকলেন -কি অনিবাবু স্যার আজ সারাদিন গ্যারেজ। কোনো কথা বললাম না। ছোটমা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। -জীবনে প্রথম, বুঝলে ছোটো। -সারাদিন ওর কীর্তিকলাপ শুনলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। -তাই। রাতে দুঘন্টা সময় দিও। -ছোটমা ব্যাপারটা কিন্তু ঠিক দাঁড়াচ্ছে না। -বাবা, অনিবাবুর দেখি রাগও আছে। মল্লিকদা বললেন। -থাকবে না, যতই হোক রক্তমাংসের শরীর বলে কথা। ছোটমা বললেন। -কইগো শুনছো। অমিতাভদা চেঁচিয়ে উঠলেন। -দেখছিস মিত্রা দেখছিস, কেমন ষাড়ের মতো চেঁচাচ্ছে, যেন বিশ্বজয় করে এলো। -আরে এদিকে এসো আগে। আমি অমিতাভদার দিকে তাকালাম, মল্লিকদা সোফায় হেলান দিয়েছেন, ছোটমা, ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা জলের বোতল বার করে গ্লাসে ঢালছেন। বড়মা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন, পেছন পেছন মিত্রা। বড়মার দিকে তাকিয়ে বললেন -আজ অনি ফাটা ফাটি করে দিয়েছে। আমার দিকে ঘুরে, তুই কাল সারারাত অফিসে ছিলি বলিসনি তো কই। -আরো অনেক জায়গায় ছিলেন। ছোটমা বললেন, জুরি বেঞ্চে গোপন জবানবন্দী দিয়েছে। -তাই নাকি, কি করে জানবো। -ন্যাকা জানেনা যেন কিছু। কালকে যেগুলো ফুস ফুস করছিলে, আজ পুরোপুরি বললো। মনটা শান্তি হলো। -বলেছে বুঝি। তা ভালো, তা ভালো। মিত্রা মুখে কাপড় চাপা দিল। -হ্যাঁরে তুই তো মল্লিকের কাজ বাড়িয়ে দিলি। দাদার দিকে তাকালাম। -কাল সারারাত যে ছেলেগুলোকে বুদ্ধি দিয়েছিলি, তারা আজ ১টা থেকে হাজির। আমাকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে মারলে, তোর কথা বলে, শেষে আমি বললাম, ও হঠাত আজ সকাল বেলা কলকাতার বাইরে চলে গেছে, এক সপ্তাহ বাদে আসবে। বেশ মল্লিকের টেবিলে চলে গেলো, তুই বেশ ভালো ভালো সাবজেক্ট দিয়েছিলি ওদের, লিখেছেও বেশ, আমি মল্লিককে বলেছি, একটু কারেকশন করে দে, কাউকে বল ছবি-টবি তুলে আনতে। সুনীত তো থ তুই কাল ওই রাতের বেলা অফিস গেছিস শুনে। -ওর লেখাটা বলো। -মার্ভেলাস নামিয়েছিস। আমি সার্কুলেসনের ছেলেটাকে ডেকে বললাম যদি পারিস একটু বেশি ছাপিস। -কেনো বললে। রিটার্ন হলে তুমি কিনবে। আমি বললাম। -আচ্ছা আচ্ছা আর বলবো না। বড়মা আমার আর মিত্রার মাঝখানে বসেছে, আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, যেটা তুই বললি, ওই মিউজিয়াম না কি। -হ্যাঁ। -তার জন্য এতো চেঁচামিচি। -তুমি নিউজের কিছু বোঝ। -দেখ কথা, শোনো, সাতকান্ড রামায়ণ পরে বলে সীতা কার বাপ, আজ তিরিশ বছর তোমার সঙ্গে ঘর করছি, আমি বুঝবোনা কি তুমি বুঝবে। বড়মা এমন ভাবে কথা বললেন সবাই হো হো করে হেসে ফললো। -এই বলে রাখি শোনো, মেয়েটা অসুস্থ সামন্ত ডাক্তার বলে গেছে, সাতদিন বেরোনো বন্ধ, অনিকে একেবারে বিরক্ত করবে না। যদি করো অনর্থ হয়ে যাবে। -ঠিক কথা একেবারে মনে ছিল না, কেমন আছিসরে। দাদা মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললেন। মিত্রা মাথা দুলিয়ে বললো, ভালো। -এখন উঠে পরোতো দেখি, তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পরতে হবে। অমিতাভদা ছোটমার দিকে তাকালেন, দিচ্ছি দাঁড়ান। -একেবারে দিবি না। -ছোটমা আমার জন্য একটু। আমি বললাম। ছোটমা মিত্রার দিকে তাকালেন, কি রে তোরও লাগবে। মিত্রা হেসে ফেললো। বড়মা মুখ ভেটকে বসে রইলেন। বড়মা অমিতাভদা যখন কথা বলেন বেশ মজা লাগে, মাঝ মাঝে, বড়মার কথা জানতে ইচ্ছে করে, কিন্তু কখনো তা প্রকাশ করি নি। এদের মধ্যেও একটা সুইট রিলেশন আছে। সে দিক থেকে দেখতে গেলে, ছোটমা মল্লিকদা অনেক রিজার্ভ। আমি বসে বসে নিউজ চ্যানেল দেখছি, মল্লিকদা দাদা কথা বলছেন, মিত্রা বড়মা কথা বলছেন। ছোটমা চা নিয়ে এলো।
Parent