কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ১১৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4631257.html#pid4631257

🕰️ Posted on January 23, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1077 words / 5 min read

Parent
কফি খেতে খেতে নানা রকম গল্প হলো। মিলিরা নিজেদের কথা কিছু কিছু বললো, মিলির হাজবেন্ড এখন সেপারেশনের জন্য ফাইল করেছে, অদিতি দেবাশিষকে নিয়ে মোটেই সুখী নয়, তবে থাকতে হয় থাকছে। এই যা। আমি কাজের কথায় এলাম। -তোমরা কিছু চাইলে নাতো আমার কাছে। -এরপরও চাইবার কথা বলছো। অদিতি বললো। -জীবনে চরম পাওয়া তোমার কাছ থেকে পেলাম। মিলির চোখদুটো ভারি হয়ে গেলো। আমার কাছে এসে আমার কাঁধে মাথা রেখে বললো -একটা অন্যায় করেছি অনিদা, তোমায় না জানিয়ে। -অন্যায় করেছো। কোথায়। -মিলি তোমায় শরবতি লেবুর সঙ্গে শিলাজিত খাইয়ে দিয়েছিলো। আমি অবাক হবার ভঙ্গি করে বললাম, তাই। আমি তো কিছু বুঝতে পারলাম না। -তোমার খুব কষ্ট হয়েছে, বিশ্বাস করো আজ দুজনে মিলে প্ল্যান করেছিলাম, তোমাকে নিয়ে এনজয় করবো। সেদিন তোমার বাড়িতে তোমার শরীরটা দেখে ঠিক থাকতে পারি নি। হেসে ফেললাম। -অদিতি আমায় বারণ করেছিলো, আমি শুনি নি। -এই দেখো বোকার মতো কাঁদে। আমাকে ঠিক মতো চাইলেই পেতে, আমি সবার জন্য। -কত দিন এনজয় করিনি জানো, প্রায় দুবছর। আমি মিলির দিকে তাকালাম। আমি মিলার মাইটা একটু টিপে দিলাম। এই মিলি। -না না প্লীজ আর নয়, তুমি চাইলেও আর পারবো না। -কেনো। -তুমি যে ভাবে করলে, কোনোদিন ভুলবো না। -ওটা আমি করিনি, তোমরা করিয়েছো। অদিতি মাথা নীচু করে বসে আছে। -এই ভাবে করে তোমরা স্যাটিসফায়েড। -এ প্রশ্ন করো না, উত্তর দিতে পারবো না। কাম পাগল মেয়েদের কাছে স্যাটিসফেকসন। -তোমার যেদিন ইচ্ছে করবে বলবে চলে আসবো। অদিতি বললো। হাসলাম। -আমরা তোমার জন্য যথাসর্বস্ব চেষ্টা করবো, আগামী মাসে আমাদের দুজনের কোম্পানীতেই সিক্স মান্থের বাজেট, তোমাকে যতটা বেশি সম্ভব পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো। -চলো আর একবার করবো। দুজনেই চেঁচিয়ে উঠলো , না। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম, সাড়ে পাঁচটা। -আবার কবে দেখা হবে। -তুমি চাইলেই। আমি উঠে দাঁড়ালাম। -চলি তাহলে। -চলি বলতে নেই অনিদা আসি বলো। অদিতি বললো। -ওদের চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো। মিত্রাদি খুব ভাগ্য করে জন্মেছে, তোমার মতো একটা ছেলে পেয়েছে। আমি দুজনের ঠোঁটে একটা করে চুমু খেয়ে বেরিয়ে এলাম।   ওদের হাত থেকে রেহাই পেয়ে নিচে এলাম, ওরা দুজনে কেউ নামলো না। মনটা ঠিক আজকের এই ব্যাপারটা মেনে নিচ্ছে না, এদের আজকের রিলেসনের ব্যাপারটা স্বতঃস্ফূর্ত নয়, তবু করতে হলো, মনে মনে নিজেকে বোঝালাম, ওরা ক্যাশে কোনো দিন যাবে না, সবসময় কাইন্ডের প্রত্যাশী। সামান্য এটুকু মেলামেশায় যদি দুজনের কাছ থেকে পঞ্চাশ কোটি টাকার ব্যবসা পাওয়া যায় ক্ষতি কি। ক্যাশ হলে দেবাশীষের মতো টেন পার্সেন্ট ছাড়তে হতো। আমার অফিসের এক মাসের মাইনে। ভাবতেই বুকটা কেমন ধড়াস ধড়াস করে উঠলো। অদিতি মিলি দুজনেই আমাকে কথা দিয়েছে, এ্যাডের ব্যাপারে তোমাকে কিছু চিন্তা করতে হবে না, আগামী মাসের প্রথম উইকেই তুমি নেক্সট তিন মাসের কনফার্মেসন পেয়ে যাবে। এও বললো দেবাশিষ, টিনা, নির্মাল্যকে বলার দরকার নেই। ওদের সঙ্গে তুমি আলাদা আলাদা ভাবে বুঝে নিও। তবে টিনা যে ভীষণ প্রিজার্ভ এটা ওরা স্বীকার করেছে। সত্যি কি মানুষের মন, তাই না, কতই রঙ্গ দেখবো দুনিয়ায়। -দাদা যাবেন নাকি। একটা ট্যাক্সি আমার সামনে দাঁড়িয়ে, ড্রাইভার জানলার কাছে এসে মুখ বাড়িয়ে বলছে। কখন যে বাইপাসের ওই ব্যস্ত রাস্তা পার হয়ে এপাশে চলে এসেছি মনে করতে পারছি না। চলো। উঠে বসলাম, পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলাম, সুইচ অফ। অন করলাম, প্রচুর মিস কল আর ম্যাসেজ ঢুকলো, দেখতে ইচ্ছে করলো না, মনটা কেমন ভারি ভারি। টিনার ব্যাপারটা স্বতঃস্ফূর্ত ছিলো এই ব্যাপারটা স্বতঃস্ফূর্ত নয়, এরা আমাকে শেষ পযর্ন্ত শিলাজিত খাইয়ে এই কারবার করবে, আমি ভাবতেই পারি নি। সেই জন্য তখন লেবুর রসটা একটু তিতকুটে স্বাদ লাগছিলো।   -কোথায় যাবেন? জানলা দিয়ে দেখলাম, পার্কসার্কাসের মুখে। না অফিসে যেতে ভালো লাগছে না। ঘড়ির দিকে তাকালাম, সাড়ে ছটা বাজে। বললাম ট্রাংগুলার পার্ক। সোজা অমিতাভদার বাড়ি চলে এলাম। ট্যাক্সি থেকে নামতেই ভজু ছুটে এলো -অনিদা এসে গেছো। -কেনো রে। -ওরা এখনো আসে নি। -তাই। -রান্না করবো। -দাঁড়া। আমি ভেতরে এলাম, ভজু সব আলো জ্বালায় নি। আমি ভজুকে বললাম, সব আলো জ্বালিয়ে দে। অন্ধকার অন্ধকার লাগছে। ভজু পটাপট সব আলো জ্বালিয়ে দিলো। -কাজের মাসি এসেছিলো। -হ্যাঁ। সব বাসন মেজে দিয়ে গেছে। -তুই কিছু খেয়েছিস। -না। -কেনো। -খিদে পায় নি। -ঠিক আছে। দাঁড়া আমি স্নান করে নিই তারপর এসে রান্না বসাচ্ছি। -এখন স্নান করবে। -হ্যাঁ, আজ অনেক ঘোরা হয়ে গেছে। -আমি আলু পেঁয়াজ কেটে রাখি। -বেশি কাটিস না, কম কম করে কাট। আমি ওপরে চলে এলাম, মনের ভেতরটা কেমন খচ খচ করছে, আমাকে আমার কেম্পানীর জন্য এতটা নামতে হবে ভাবতে পারি নি। কিন্তু নামতে হলো যখন তখন ঘোমটা দিয়ে লাভ নেই, এবার আমাকে অন্য খেলা খেলতে হবে। আমার আরো টাকা চাই। বাথরুমে গিয়ে ভালো করে স্নান করলাম, যেন দেহের সমস্ত আবর্জনা ডলে ডলে পরিষ্কার করছি। হঠাত আজকে এরকম মনে হচ্ছে কেনো? এর আগেও তো আমি তনুর সঙ্গে মিশেছি, ঝিমলির সঙ্গে মিশেছি, নীপার সঙ্গে মিশেছি, শেষ টিনার সঙ্গে, মিত্রার কথা বাদই দিলাম। কোথায় তখন তো এরকম মনে হলো না। মনে হচ্ছে নিজেই নিজেকে জটিল আবর্তের মধ্যে জড়িয়ে ফেলছি। -অনিদা আমার আলু কাটা শেষ। বাথরুম থেকেই চেঁচিয়ে বললাম, একটু বোস। যাচ্ছি। বেরিয়ে এসে পাজামা পাঞ্জাবী পরলাম। নিচে নেমে এলাম। ভজু চা করছে, আমায় এককাপ দিলো, নিজে এককাপ খেলো, বাইরে গেটে গিয়ে সিংজীকে দিয়ে এলো। সিংজীর সঙ্গে ভজু বেশ জমিয়ে নিয়েছে। চা খাওয়া শেষে ভজুকে বললাম, তোদের জন্য কিছু খাবার কিনে নিয়ে আয়, আর মুরগীর মাংস কিনে আন, একটা ফ্রাইএর মতো করে কাটবি, আট পিসের বেশি করবি না, আর একটা মুরগী চিলি করবো সেই ভাবে পিস করে আনবি। -ঠিক আছে। আমি ওকে টাকা দিলাম, দেশি পেলে আনবি, না হলে পোলট্রি। -আচ্ছা। ভজু চলে গেলো। আমি রান্নাঘরে ঢুকলাম। তেল মশলা সব গোছালাম। ওরা কখন আসবে তাও জানিনা। ফোন করতে ইচ্ছে করছে না। বার বার দুপুরের কথাগুলো মনে পরে যাচ্ছে। চেষ্টা করছি না ভাবার জন্য, কিন্তু কিছুতেই মন থেকে সরিয়ে দিতে পারছি না। গ্যাস জালিয়ে গরম জল বসালাম। ভজু খুব তাড়াতাড়ি ফিরে এলো। ভজুকে বললাম, কপিস নিয়ে এসেছিস। -দুটো ভালো মুরগি পেলাম, বুঝেছো অনিদা, একেবারে দেশি। ১৪ পিস করলাম। আর একটা ছোটো ছোটো টুকরে করে নিয়ে এসেছি। হাড় বাদ দিয়ে। -ঠিক আছে, টক দই নিয়ে এসেছিস। -হ্যাঁ হ্যাঁ। -তুই এদিকটা কেটে কুটে রেডি করে দে। আমি ওদিকটা দেখি। -আচ্ছা। ফোনটা বেজে উঠলো। রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ফোনটা ধরলাম। মিত্রার ফোন। -তুই কোথায়। -বাড়িতে। -বাড়িতে! এই সময়!! তুই কবে থেকে এত ভালো হলিরে। -কখন আসছিস। -কি করছিস। -রান্না করছি। -কি মজা, কি রান্না করছিস। -আলুভাতে ভাত ডাল। -তোকে কষ্ট করে করতে হবে না। আমরা গিয়ে করবো। -ঠিক আছে। -ছাড়িস না ছাড়িস না ধর ধর। -কি রে অনি তুই এই সময় বাড়িতে শরীর খারাপ। বড়মার গলা। -না। -তোর গলাটা কেমন কেমন লাগছে। -না না আজ কাজ করতে ইচ্ছে করছিল না চলে এলাম। -তোকে কিছু করতে হবে না, আমি গিয়ে সব করবো। -ঠিক আছে চলে এসো। ফোনটা কেটে দিলাম। -অনিদা আমি সব গুছিয়ে নিয়েছি। -আচ্ছা। অনেক দিন সেদ্ধ ডাল খাই নি, মসুর ডাল সেদ্ধ করলাম, শুধু মাত্র একটু তেল লঙ্কা দিয়ে বেশ ভারি ভারি করে, তারপর চিলি চিকেন বানালাম। ভজুকে বললাম, ডাল বাটতো। -কেনো অনিদা। -পাকোরা তৈরি করবো। ভজু ডাল বাটতে গেলো, আমি ড্রইংরুমের ঘরিটার দিকে তাকালাম, সাড়ে নটা বাজে।
Parent