কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ১২৬

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4665751.html#pid4665751

🕰️ Posted on February 11, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1358 words / 6 min read

Parent
আমি বড়মাকে রিলে করতে করতে চলেছি, ইসলাম ভাই চারদিক গোগ্রাসে গিলতে গিলতে চলেছে। যতদূর চোখ যায় খালি সোনালী ধানে মাঠ ভরে গেছে, ধানকাটার মরসুম এসে পরলো বলে। বড়মা জানলা থেকে মুখ ফেরাচ্ছে না আমি একে একে সব বলতে বলতে যাচ্ছি। রবিনকে বললাম ওই বিলের মাঝা মাঝি যে কালভার্টটা আছে ওখানে একটু গাড়িটা থামাবি। আমাদের গাড়ির সামনে কেউ নেই, পেছনে আনাদি আর বাসুর বাইক আসছে। রবিন গাড়ি থামালো। আমি নেমে দাঁড়ালাম, পেছন পেছন সবাই নামলো, বড়মাকে দরজা খুলে নামালাম, ছোটো মাও নামলো। -এবার চারিদিক ঘুরে একবার দেখো। বড়মার চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো। সত্যি অনি প্রকৃতি যেনো নিজে হাতে সব সাজিয়ে দিয়েছে, ওই যে দূরে একটা টালির বাড়ি দেখতে পাচ্ছ। -হ্যাঁ। -ওটা আমার স্কুল। তার আগে একটা ঝাঁকরা অশ্বত্থ গাছ দেখতে পাচ্ছ। -হ্যাঁ। -ওটা পীরবাবার থান। বড়মা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, ছোটমা একটা হাত ধরেছেন। -আমাকে আজ ওখানে নিয়ে যাবি। -যাবে। -যাবো। এখন গিয়ে আবার অতটা যেতে পারবে। -পারবো। -অনি তুই না করিস না আজই যাবো, জুম্মাবার। ইসলাম ভাই বললো। -এবার এদিকে তাকাও। বড়মারা সবাই পেছন ফিরে তাকালো, ওই যে গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা একটু উঁচু জায়গা দেখছো। -হ্যাঁ। -ওটা শ্মশান। -ওটাতো একটা বন দেখতে পাচ্ছি। -ওই হলো আর কি। -বড়মা, অনির সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। আমরা দিনের বেলা একলা যেতে ভয় পাই ও রাতের অন্ধকারে যায়। অনাদি বললো। বড়মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে গালে হাত বোলাচ্ছেন। -হ্যাঁরে তোর কোনো ভয় লাগে না। ছোটমা বললেন। -না। বরং তুমি যদি আমার সঙ্গে যাও তুমিও ওর প্রেমে পরে যাবে। -যাবো তোর সঙ্গে। -নিয়ে যাবো। মিত্রা আমাকে একদৃষ্টে দেখে যাচ্ছে কোনো কথা মুখে নেই। -চলো এবার যাওয়া যাক। -চল। -একটা কথা বলি। -বল। -তোমরা যদি বাজার দিয়ে ঘুরে যাও তাহলে ৪৫ মিনিট বেশি লাগবে, আর এখান থেকে একটু গিয়ে যদি ভেতর দিয়ে হেঁটে যাই তাহলে ১০ মিনিট লাগবে। -যেটা কম সময় লাগবে সেটাতেই চল। -একটা ছোটো নদী পেরোতে হবে, এই সময় হাঁটু জল থাকে। -আমাদের ছোটো নদী চলে আঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। -ছাগল। এটা পৌষ। -কারুর পৌষমাস কারুর সব্বনাশ। -কার। -তোর। আবার কার। বড়মা বললো, মিত্রা থাম। -সব সময় তুমি আমাকে থামতে বলো, ওকে বলতে পারো না, কবিতাটা কি আমি লিখেছি। -আচ্ছা আচ্ছা ঘাট হয়েছে। ইসলাম ভাই হা হা হা করে হেসে উঠলো, ওর হাসির শব্দে চারিদিক অনুরণনের সৃষ্টি হলো। সবাই গাড়িতে উঠে বসলো -ঠিক আছে রবিন চল ওই বাঁকের মুখে নামিয়ে দিস। তারপর তোরা গাড়ি রেখে আসিস। আবার গাড়ি চলতে শুরু করলো। আমরা মিনিট পাঁচেকের মধ্যে চলে এলাম। সবাই নামলাম। অনাদি, বাসুকে বললাম, জিনিষপত্রগুলো ঠিকঠাক নিয়ে আসিস। রবিন গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। এবার আমরা ছজন। বড়মা খুব আস্তে আস্তে হাঁটছে, মাটির রাস্তা তাও আবার এবরো খেবরো চলতে অসুবিধে হচ্ছে, আমি বড়মাকে ধরে আছি। -তুই ছাড় আমি একলা যেতে পারবো। -না তোমার অভ্যাস নেই হোঁচট খেয়ে পরে যেতে পারো। ইসলাম ভাই বললো, জানিষ অনি তোর গ্রামটা দেখে, আমার গ্রামের কথা মনে পরে যাচ্ছে। ছোটোমার দিকে তাকিয়ে বললো, না রে মন। -হ্যাঁরে মুন্না। মনে হচ্ছে ফিরে যাই আমাদের পাবনার সেই নতুনহাট গ্রামে। আমি ছোটো মার দিকে তাকালাম, চোখদুটো ঝাপসা। মিত্রা কাপড় তুলে হাঁটছে। -তুই ওই ভাবে হাঁটছিস কেনো। -একবার শিক্ষা হয়েছে, আবার। -কি। ছোটোমা ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো। -ওই চোর কাঁটা। সবাই ওর দিকে তাকালো, বড়মা হেসে বললো ও মিত্রা একটু নামা। -তুমি থামোতো, কেউ দেখবে না। -আরে মুন্না আছে। -থাকুক মুন্না ভাই এমবিবিএস। সবাই হাসছে। আমরা বাঁশ বাগানের ভেতরে এসে পরলাম। থমথমে পরিবেশ। হাওয়ায় বাঁশের গায়ে ঘষা লেগে কেঁচর কেঁচর আওয়াজ হচ্ছে। আমি বললাম এখানে একটু দাঁড়াও, কান খাঁড়া করে রাখো শুনতে পাবে কত রকমের আওয়াজ। ওরা দাঁড়ালো -তুই এখানে রাতের অন্ধকারে একা একা ঘুরিস। -হ্যাঁ। -তোর ভয় করে না। -ভয় করলেই ভয়, না করলে নয়। -তোদের এখানে বাঘ ভাল্লুক নেই। -না, শেয়াল আছে। -কোথায়। -আশেপাশে কোথাও আছে, ভাগ্য ভালো থাকলে দেখতেও পারো। -তুই থাম বাপু চল তাড়াতাড়ি। আমরা গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে নদীর ধারে এসে পরলাম। জল কমে যেতে নদীর খাঁড়িটা অনেকটা নীচু হয়ে গেছে। ঢালটা একটু বেশি। -জানো বড়মা ভরা বর্ষায় তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছো, সেখানে দু মানুষ জল থাকে। -কি বলিস রে। -সে এক অদ্ভূত দৃশ্য। বাঁধ ছাপিয়ে জল গ্রামে ঢুকে পরে, যে রাস্তা দিয়ে তুমি এতোক্ষণ গাড়ি চেপে এলে, ওই রাস্তার ওপর এক মানুষ জল। আমরা সেই সময় কতো মাছ ধরি তেলের জন্য খাওয়া হয় না। -তার মানে। -এতো মাছ হয়ে যায়, মাছ ভাজার তেল থাকে না। এসো আমার হাত ধরে আস্তে আস্তে নামো। আমি বড়মাকে ধরলাম, ইসলাম ভাই ছোট মাকে ধরেছে, ভজু মিত্রাকে ধরতে গেলো। -তুই থাম ও যেমন এই পথ দিয়ে নিয়ে এসেছে, ও ধরে নামাবে। আমি চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম, মোটা মাথা। -দেখছো বড়মা, সত্যি তুমি ওদের গ্রামে এসেছো বলে ও যা বলবে তাতেই তুমি সায় দিচ্ছ। -তুই ভজুর হাতটা ধরে নাম না। -ভজু নিজেকেই সামলাতে পারছে না আবার আমাকে সামলাবে। ভজুর কীর্তিটা দেখ একবার। পেছন ফিরে দেখলাম ভজু বসে বসে নামছে। -কিরে। -না অনিদা হরকে যাবো। বলতে বলতেই ভজু হরকালো। দুম ফটাস। -দেখলে। আমরা নদীর মধ্যে দাঁড়িয়ে হাসছি। -তোমরা দাঁড়াও ওটাকে নামিয়ে নিয়ে আসি। আমি আবার ওপরে গেলাম - জুতো খোল। -কেনো। -তোর এই হিল তলা জুতো হরকাবে। দেখছিস কতো নুড়ি পরে আছে। -এতো হাঁড়ি ভাঙা। -হ্যাঁ তোকে বলেছে। -বল এরও একটা গল্প আছে। -আছে তো। আমি ওর হাতটা ধরে আস্তে আস্তে নিচে নামিয়ে আনলাম। -বাবাঃ কি ঢালু দেখেছো বড়মা, ওপরটা আর দেখা যাচ্ছে না। -বর্ষাকালে এর যা স্রোত দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যায়। -এই টুকু পার হতে হবে। তার জন্য তুই যা গল্প ফাঁদলি ওখানে। -ঠিক আছে, তুই আগে চলে যা। আমরা দাঁড়িয়ে আছি। বড়মা মুচকি মুচকি হাসছে। যা। মিত্রা দাঁড়িয়ে রইলো। -কিরে যা। -তুই চল। -দাঁড়া আমি আগে নেমে দেখে আসি, কতটা জল। -তার মানে। -পথটা ঠিক করে আসি, একটু এদিক ওদিক হলে একেবারে কাতলা মাছ ধরবি। -তুই জেনেও আমাকে আগে পাঠাচ্ছিলি। -আমি। দেখলে বড়মা, ঝপ পাল্টি। ইসলাম ভাই হাসছে। ভজু বললো আমি পরে গেলে স্নান করে নেবো। আমি এগিয়ে গিয়ে আস্তে আস্তে দেখে নিলাম, আমার হাঁটু জলই আছে। প্রথমে আমি বড়মাকে পার করে ওপারে রেখে এলাম, বড়মা আমাকে শক্ত করে ধরেছিল, এমন আবস্থা আমিই নিজেই নড়তে চড়তে পারছিলাম না। ভজুকে বললাম আমি যেমন ভাবে পার হলাম সেই ভাবে পার হয়ে ওপারে চলে যা। ভজু মহা উতসাহে নাচতে নাচতে গেলো, সত্যি সত্যি কাদায় হরকে জলে আছাড় খেলো। জামা প্যান্ট সব ভিজে একসা। আমি তাড়াতাড়ি করে গিয়ে ভজুকে তুলে ওপারে রেখে আসলাম। ইসলাম ভাইকে বললাম যাও। -তুই চল। আমি ইসলাম ভাইকে ধরে ওপারে নিয়ে গেলাম, অসুবিধে হলো না, ইসলাম ভাই বললো খুব কাদা রে। আমি বললাম কাদা না, এই যে গাছের পাতা পরেছে, পচে গেছে। সেই জন্য এত হড়কা। এবার ছোটোমার পালা, ছোটোমা আমার হাত ধরে জলে নেমেই আবার উঠে গেলো। -কি হলো। -দাঁড়া কাপরটা একটু তুলে নিই। বড়মা হাসছে, আমিই সবচেয়ে ভালো এসেছি। -ছোটোমা তুমি বরং দাঁড়াও আমি আগে পার হয়ে যাই। -কেনো। -যদি শেয়াল আসে। -ঠিক বলেছিস, এতোক্ষণ মনে ছিলো না। -মুন্নাভাই-এর উচিত ছিলো সবার শেষ যাওয়া। -চল দুজনে যাই। -চলো। -আমি যেখানে যেখানে পা ফেলবো সেখানে সেখানে পা ফেলবি, না হলে ভজুর দশা হবে। -তুইতো আগেই ভয় পাইয়ে দিচ্ছিস। -বেরো তোকে যেতে হবে না। -ওরকম করছিস কেনো। ওপারে বসে বড়মা ইসলাম ভাই ভজু হেসে কুটি কুটি হচ্ছে। আমি দুজনকে নিয়ে জলে নামলাম, দুজনে আমার দুহাতে। আমি আস্তে আস্তে এগোচ্ছি ওরাও এগোচ্ছে। আমি জানি অনিদা এই কীর্তি করবে, যখনই গারিটা হুশ করে বেরিয়ে গেলো তখনি বুঝেছি, অনাদিদা চেঁচিয়ে বললো বলে, ওগো তোমরা আছাড় খাবে, খুব হরকা এই জায়গাটা, নীপা ধুপ ধাপ করে নদীর ভেতরে নেমে আসছে। -এই গেলো গেলো গেলো। -কি হলো রে। -কাপড়টা কোমর থেকে খুলে গেলো। আমি ছোটোমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে মিত্রা আমার হাত ছেড়ে কাপড় ঠিক করতে গেলো, পা হড়কালো, আমি কোনো প্রকারে ধরে ফেললাম। -শয়তান, আর জায়গা পেলিনা নিয়ে আসার। আমি হাঁসছি। -গাঢ়ল, হাঁসছিস আবার। এখুনি আছাড় খাচ্ছিলাম। বড়মা হেসে খুন। ও ছোটো তুই চলে আয়, ওরা থাকুক। ছোটোমা কোনো কথা বলছে না, আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ওটা কি পোকা রে। -মাছ খেকো মাকড়সা। -উরি বাবারে। মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরলো। -ওরে মিত্রা অনিকে ছার আমি আছাড় খাবো। -খাবো, পোকাটা কই। -তোকে দেখতে হবে না। কাপড় গোঁজা হলো। -হলো কই তুমি কি পোকার কথা বললে। -আর তোকে গুঁজতে হবে না নীপা জলে নেমে এসেছে। মিত্রা একটা হাতে আমাকে ধরেছে, আর একটা হাতে নীপাকে ধরেছে। -ওর বুদ্ধি শুনতে গেছো কেনো। -আমি শুনেছি, বড়মা বড়মা এই পাশ দিয়ে গেলে দশ মিনিট লাগবে। মিত্রা ভেংচি কাটলো। আমি হাঁসবো না কাঁদবো। কোনো প্রকারে জল থেকে ওদের টেনে তুললাম। উঠেই মিত্রার প্রথম ডায়লগ, বড়মা দারুন এক্সপিরিয়েন্স তুমি না থাকলে এই ভাবে যে বৈতরণী পার হওয়া যায়, জানাই যেতো না। -সেকিরে, এই তো তুই অনির শাপ শাপান্তর করছিলি। -তাই নাকি, কই নাতো। অনি তো ভালো ছেলে। আমার গালে দুবার খামচি মারলো। সোনামনা সোনামনা। ছোটোমা হাসছে, বড়মা হাসছে।
Parent