কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ১২৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4681013.html#pid4681013

🕰️ Posted on February 14, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 2411 words / 11 min read

Parent
আমি মুখ তুললাম, সোজা হয়ে বসলাম। মিত্রা খাটের ওপর বসে মাথা নীচু করে বসে আছে। বড়মা আমার পাশে সোফায় উঠে বসলো। ইসলাম ভাই বড়মাকে জায়গা করে দিলো, বড়মা আমার বুকটায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। -আমার সব কাজের সাক্ষী হিসাবে আমি অন্ততঃ একজনকে রেখে যাচ্ছি, দেখছি সেও সব বোঝে না। মাঝে মাঝে ইসলাম ভাই-এর কাছে ছুটে যাই, ইসলাম ভাইকে দোষ দিই না, সে সব জানে না। তাকে বলিও নি। তারও তো নিজের সাম্রাজ্য আছে। -আমি কথা দিচ্ছি অনি আমি তোকে এবার থেকে সাহায্য করবো। ইসলাম ভাই এবার থেকে নিজেকে বদলে ফেলবে, তুই আমাকে মাস দুয়েক সময় দে। -মুন্না সত্যি দেখ না, একরতি ছেলেটা এই সব বাঘ ভাল্লুকের সাথে কত লড়বে বলতো। ছোটোমা বললো। -আমি কথা দিচ্ছি মন, আমি আজ থেকে অনির পাশে আছি, আমি অনিকে একটা দিক সাপোর্ট দিতাম। এবার থেকে আমি ওর অনেক খোঁজ খবর রাখবো। দুনিয়াটা যে ঠিক নয়। ওইটুকু মেয়েটার কম সর্বনাশ ওরা করেছে। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো। আমি জেনে শুনে চুপ করে থেকেছি। কিছু করতে পারি নি, যখন জানলাম ও অনির খুব কাছের লোক, তখন সব শেষ। -কিগো চলো, আমি সব রেডি করে এসেছি। বড়মা তুমি এরকম ভাবে বসে আছো কেনো, অনিদার শরীর খারাপ লাগছে। নীপা ঘরের চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে। দাঁড়াও অনাদিদাকে ডাকি। -উঃ এই মেয়েটাকে নিয়ে তো পারা যাবে না। দাঁড়া না মা। -যাও তোমরা স্নান করে নাও। আবার বিকেল বেলা যাবে বললে। বড়মা আমাকে বুকে টেনে নিলো, বড়মার ওপর রাগ করিস কেনো, বড়মা না জেনে তোকে জিজ্ঞাসা করে ফেলেছিলো। -ঠিক আছে তাড়াতাড়ি করো। মুন্না ভাই তুমি পুকুরে না বাথরুমে। -আমি পুকুরে। -তাহলে চলে যাও স্নান সেরে ফেলো। -আমি তুই এক সঙ্গে যাবো। -ঠিক আছে। নীপা অনাদিদের একটু ডেকে দাও তো। মুন্না ভাই-এর থাকার জায়গা কোথায় করেছো। -ও বাড়িতে। -ভজু। -সব ও বাড়িতে। এবাড়িতে খালি তুমি। -আচ্ছা। -তাহলে মুন্না ভাই-এর কাপড়-জামার জায়গাটা নিয়ে গিয়ে গুছিয়ে দাও। -ঠিক আছে। ওরা সবাই চলে গেলো। ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকালো। -ইসলাম ভাই একটা কথা বলবো। -বল। -ভীষণ সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে। -তুই তো খাস না। -খাই না এখন খেতে ইচ্ছে করছে। ইসলাম ভাই ব্যাগ থেকে একটা ৫৫৫ কার্টুন বার করে হাতে দিয়ে বললো -একটা প্যাকেট তোর কাছে রাখ আর একটা প্যাকেট আমায় দে। এই ফাঁকে মেশিনটা আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখ। ইসলাম ভাই কোমর থেকে মেশিনটা বার করলো। আমি আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখলাম, আর এই প্যাকেটটা নে, দানা আছে। আমি আলমাড়িতে ঢুকিয়ে রেখে চাবি দিলাম। অনাদিরা এলো, ওরা মুন্না ভাইকে দেখেছে আলাপ হয় নি। যা ঝামেলা গেলো -কিরে খাওয়া দাওয়া করেছিস। -হ্যাঁ। কালকে থেকে যা গেলো। একবারে সব সেরে এলাম, বলে এসেছি এখন তোর বাড়িতেই গ্যারেজ, যদি প্রয়োজন হয় ডেকে নিতে। -চিকনাবাবু খবর কি? -তুমি গুরু যা দিয়েছো একবারে পেট পযর্ন্ত। তারপরেই জিভ বার করলো। -ও মুন্না ভাই-এর সঙ্গে তোদের পরিচয় হয় নি। -করালি কোথায়। আমি ওদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। ওরা সবাই মুন্না ভাই-এর সঙ্গে হাত মেলালো। -একখান সিগারেট দে। চিকনা বললো। আমি প্যাকেটটা এগিয়ে দিলাম। -গুরু বিদেশী ব্রান্ড, চিকনা নিজে একটা নিলো, ওদের সবাইকে একটা দিলো, আর একটা নিয়ে কানে গুঁজলো। -ওটা আবার কি। -একখান আমার, একখান সঞ্জুর জন্য, তখন আবার পাবো কিনা, তাই। -সত্যি তো সঞ্জু কই রে। -এসে পরবে। কালকে সারারাত দেবার বাড়িতে পাহারা দিয়েছে, দলবল নিয়ে। -কেন? -যদি ফিরে আসে। হাসলাম। -হাসিসনা, কাল যা টেনসন গেলো না, অপনেন্ট পুরো ঢুকে পরেছিলো, মালপত্রের টান পরে গেলো শেষ পযর্ন্ত, অমল বিট্রে করলো, কি যে অবস্থা, কি ভাবে সামাল দিয়েছি আমি জানি আর জানে পাঁচু পচা, একলা লড়ে গেছে। ও তোকে একটা কথা বলবো, তোকে তো ফাঁকা পাওয়া যায় না। -বল। -মুন্না ভাই-এর সামনে বলছি মুন্না ভাই কিছু মনে করবে নাতো। -বলনা কিছু মনে করবে না। -পাঁচু পচা আর হাঁড়ি পাড়ার হিরন এদিকটা দেখে, আমাদের অস্ত্রশস্ত্র ওদের কাছেই থাকে। -তোদের অস্ত্রশস্ত্র, মানে। -পার্টি করতে গেলে লাগে। ইসলাম ভাই মুচকি মুচকি হাসছে। -ওরা মাঝে মাঝে খড় বোঝাই করে হলদিয়া হয়ে বাবুঘাট যায়। ওখান থেকে জোগাড় করে আনে। -এটাতো আগে বলিস নি। -এটা তোকে বলা যায়। -তারপর কি হয়েছে বল। -বাবুঘাটে আবিদ বলে একটা ছেলে আছে। ওই এসব সাপ্লাই করে ওদের, এবার টাকা নিয়ে আর মাল দিচ্ছে না। খালি ঘোরাচ্ছে, মাস দেড়েক হয়ে গেলো। পাঁচু খবর নিয়েছে ও নাকি ইসলাম ভাই-এর লোক। তোর ইসলাম ভাইকে একটু বলনা। -এতো খুব কঠিন কাজ। আমি ইসলাম ভাই-এর মুখের দিকে তাকাচ্ছি। ইসলাম ভাই না পারছে হাঁসতে না পারছে কিছু বলতে, খুব গম্ভীর হয়ে রয়েছে, কিন্তু চোখে হাসির ছটা। -দেখ আমি এই ব্যাপারে ইসলাম ভাই-এর সাথে কোনো কথা বলতে পারবো না, আমি ইসলাম ভাই-এর কাছে নিউজ সংগ্রহের জন্য যাই। ও কি ভাববে বলতো। -তাও ঠিক। তুই একটা অবলিগেশনের মধ্যে পরে যাবি। -ঠিক আছে থাক আমরা একটু ঘোরা ঘুরি করি, টাকাটা মনে হয় গিও। -তোরা কি আনতে দিয়েছিলি। -ওয়ান সার্টার চারটে। -ব্যাশ। -এই এখানে অনেক, জানতে পারলে কেউ ধারে কাছে ঘেঁষবে না। -বাবাঃ তোদের তো এবার ভয় করে চলতে হবে। -অনাদি এবারে তোকে চাটতে শুরু করবে অনি। চিকনা বললো। -চাটুক, ওকে বলবো নাতো কাকে বলবো। -ছেড়েদে। বাসু বললো। -ট্রলি ঠিক করে রেখেছিস। -কেনো দেখিস নি। -আমি তো খিড়কি দিয়ে ঢুকে ওপরে চলে এলাম। -দুটে রাখা রয়েছে, বড়মা খামার থেকে ট্রলিতে উঠবে আর খামারে এসে নামবে। একটুও পায়ে হাঁটতে হবে না। ইসলাম ভাই হেসে ফেললো। নীপা ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকলো। -কি হলো তোমরা এখনো বসে আছো উঠবে না। অনাদিদা খাবে তো। -না, খেয়ে এসেছি। -বড়মার কাছে গিয়ে রিপোর্ট করবে। খেয়ে এসেছো। আমি কিছু জানি না। -বাবা। তুই এ্যাসিসটেন্ট আছিস কি করতে। চিকনা বললো। -শোনো অনিদা তোমার ধানের ব্যবসা চিকনাদা লাটে তুলে দেবে। -কেনো। -সব ধান ইঁদুরে খেয়ে যাচ্ছে। -হিসাব তোর কাছে, টাকা তোর কাছে, আমি খালি জোগাড় করছি, অনিকে তুই হিসাব দিবি। -দেবো একখানা। -টাকা তুইও পাবি। তোকে এ্যাকাউন্টেন্ট রেখেছি। -আমি পারবো না যাও, আজই অনিদাকে হিসাব দিয়ে রিজাইন দিয়ে দেবো। -পালাবি কোথায়। -বুঝলে মুন্না ভাই এরা ভাই-বোন, এদের কাছে নীপাকে রেখে আমার কোনো টেনসন নেই। নাহলে যা সব শেয়াল কুকুর আছে এই গ্রামে। -তোর প্ল্যানগুলো দারুন। -আচ্ছা আচ্ছা পরে গল্প হবে, মুন্নাদা ওঠো এখন অনেক বেলা হলো। নীপা ইসলাম ভাই-এর হাত ধরে সোফা থেকে টেনে তুললো। আমরা স্নান করতে গেলাম। ইসলাম ভাই পুকুরের জল তোলপাড় করে স্নান করলো, প্রায় আধঘন্টা ধরে, মাঝে মিত্রা ছোটো মা, বড় মা এসে একবার তাড়া লাগিয়ে গেছে। ইসলাম ভাই জল থেকে উঠে বললো -জানিস অনি প্রায় দশবছর পর পুকুরে স্নান করলাম, লাস্ট একবার বনগাঁ গেছিলাম সেখানে স্নান করেছিলাম, আমাদের গ্রামে পুকুর ছিলো না, তবে একটা বড় দীঘি ছিলো, ভাগ করছিলো ঘাট, সেখানে স্নান করতাম, দীঘির এপার ওপার করা খুব মুস্কিল ছিলো, এককথায় বলতে পারিস ওটা আমাদের গ্রামের রিজার্ভার, মাছও ছিল, খাওয়া দাওয়া স্নান সব ওই জলে। জানিনা এখনও আছে কিনা দীঘিটা! ইসলাম ভাই-এর চোখদুটো ভারী হয়ে আসছে -আজকে নিজের গ্রামের কথাটা খুব মনে পরছেরে, মন-এরও হয়তো মনে পরছে, ও খুব চাপা প্রকাশ করে না। হাসিখুশি মেয়েটা কেমন যেন বোবা হয়ে গেছে। আমরা সবাই একসঙ্গে খেতে বসলাম, আমি আমার একপাশে বড়মা একপাশে মিত্রা তারপাশে নীপা, বড়মার পাশে ছোটোমা, আর একদিকে ইসলাম ভাই, ভজু, অনাদি, বাসু, চিকনা। কাকীমা সুরমাসি সবাইকে পরিবেশন করছে। সবাইকে গরম ভাত দিচ্ছে আমাকেও দিলো সুরমাসি। মিত্রা আমার দিকে তাকালো -কিরে তোর পান্তা। -তুমি জানোনা মিত্রাদি, মাকে ফোন করে আগে থেকে বলে দিয়েছে মেনুটা। নীপা বললো। -ওকি খাবে রে। -দেখোনা কি খায়। সুরমাসি কাঁচা সরষের তেল দিয়ে গেলো, তার সঙ্গে পেঁয়াজ কুচি, লঙ্কা। -কিরে তুই সরষের তেল দিয়ে ভাত খাবি নাকি। -তোর কি, তুই খা না। তোর ইচ্ছে হলে তুইও খা। -না না তুই খা। আমাদের মেনুটা তোর থেকে স্মার্ট। -আমি তো গাঁইয়া। -তাহলে কি সাঁইয়া! বড়মা আমার দিকে তাকালো, মুচকি হাসছে। সুরমাসি ওদের জন্য ডাল তরকারি ভাজা সব একে একে দিয়ে গেলো। -কিরে তুই এগুলো খাবি না। -না। -একবারে আমার পাতের দিকে তাকাবিনা, জিভ দিয়ে জলও বার করবি না। -ঠিক আছে। আমি গরমভাতে সরষের তেল মেখে পেঁয়াজ কুচি মাখলাম। সুরমাসি আমার জন্য ঘুনো চিংড়ি করা করে ভেজে পেঁয়াজ দিয়ে মেখে নিয়ে এসেছে। ওঃ দারুন গন্ধ বেরোচ্ছে। ঘ্রানেন অর্ধভোজনায়। আমি খাওয়া শুরু করলাম, মিত্রা টেরিয়ে টেরিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে, মাঝে মাঝে নাক টানছে। আমি খেয়ে চলেছি। মিত্রা আর থাকতে পারলো না -তুই কিরকম মেখেছিস দেখি। বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে খাচ্ছিস। আমার পাতে খাবলা মারলো। বড়মা ছোটোমা নীপা দেখছে, ও আমার পাত থেকে ভাত মুখে তুলে একটু ঘুনো চিংড়ির চার্ট মুখে তুলে বললো -বড়মা তুমি একবার খেয়ে দেখো, শয়তান নিজের চার্টের খাওয়াটা অর্ডার করে, আমাদের মাছ ভাত খাওয়াচ্ছে। আমার কোমরে চিমটি দিলো, আমি উঃ করে উঠলাম, সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। আমি না পারছি হাসতে না পারছি কিছু করতে, বড়মা আমার পিঠে হাত বোলাচ্ছে। -তোকে আর খেতে হবে না, তুই আমার থালাটা নে আমি তোর থালাটা নিচ্ছি। বড়মা হাসতে হাসতে বললো, ও মিত্রা করছিস কি। -তুমি একবার খেয়ে দেখো, তখন থেকে আমি নাক টানছি এতো সুন্দর ঝাঁঝালো গন্ধ আসছে কোথা থেকে, কতবার আমার ভাত শুঁকলাম, শয়তান পাশে বসে গপ গপ করে খাচ্ছে, লজ্জাও করে না। মিত্রা আমার পাত থেকে একগ্রাস তুলে বড়মার মুখে ঢুকিয়ে দিলো, ছোটো মাকেও দিলো, এবার বলো আমি মিথ্যে বলেছি। -না তুই মিথ্যে বলবি কেনো। অনাদিরা, ইসলাম ভাই হাসতে হাসতে পাতে গড়িয়ে পরছে। সুরমাসি বললো, ঠিক আছে মিত্রা আমি তোমায় দিচ্ছি। -না তুমি ওকে আবার নতুন করে দাও আমি ওর মাখা ভাতটা তুলে নিচ্ছি। এই চিংড়িমাছও ওকে আলাদা করে মেখে দাও। মিত্রা নিজের থালাটা আমার দিকে দিয়ে আমারটা টেনে নিলো। আমি মিত্রার পাতের মাখা ভাত খেতে আরম্ভ করলাম, সুরমাসিকে বললাম, আর লাগবে না, কাল আবার খাবো। সুরমাসি আমার কথাটা যেন ভুলে যেও না। -না না ভুলবো না। -মিত্রা তুই একলা খাবি। ছোটোমা বললেন। -তুমি নেবে। -ভাতটা সরষের তেল দিয়ে দারুন মেখেছেরে অনি। -এবার বলো। মিত্রা উঠে গিয়ে ছোটমার পাতে কিছুটা দিলো, বড়মা তাকিয়ে আছে, মিত্রা বড়মার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো, খালি মিত্রার দোষ দেখো না, তোমার ছেলেটার দোষ দেখো নাতো। দাঁড়াও দিচ্ছি। মিত্রা বড়মার পাতে কিছুটা দিলো। ইসলাম ভাই ওই দিক থেকে চেঁচিয়ে উঠলো, ম্যাডাম সবাই যখন পেলো, আমি ফাঁকে পরি কেনো, একটু টেস্ট করি। -ওমা বড়মা দেখেছো, বেড়ালের গলায় ঘন্টা খালি আমি একা বেঁধেছি। আমার দিকে ঘুরে বললো, এই আবার মাখ। খরিদ্দার অনেক। -তুই মাখ আমি পারবো না। -পারবিনা মানে, এতোক্ষণ বসে বসে গিললি, আমরা খেয়েছি? -তাহলে কি করলি এতোক্ষণ, গন্ধ শুঁকলি। -মিত্রাদি আমি। -ওমা দেখ। -দিদিমনি। ভজু চেঁচিয়ে উঠলো। -দেখ দেখ আমি হাগুরে নই, সবাই। সুরমাসি আবার গরম ভাত সরষের তেল পেঁয়াজ কুচি দিয়ে গেলো, বাধ্য হয়ে আমি ভাত মাখলাম, সবাই খেলো। বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, এই খাওয়াটা কোথা থেকে শিখলি। -আমাদের এখান থেকে একটু দূরে হাঁড়িপারা, ওদের আনাজ কেনার পয়সা থাকে না, মাঠে কাজ করলে চাল তেল নুন কয়েকটা আলু সিধা হিসাবে পায়, ওদের এই ভাবে খেতে দেখেছিলাম, এখানে হয়তো আরো কয়েক বাড়িতে এই ধরনের খাওয়ার চল রয়েছে, আমি কলকাতায় একদিন এক্সপেরিমেন্ট করলাম, দেখলাম চলেবেল, শুরু করলাম, ভজু কয়েকদিন ভাগ মেরেছিলো। -তুই আর কি কি খাস একটা লিস্টি দিস তো। মিত্রা বললো। -প্রথমে রাখ ইঁদুর পোড়া। -ওয়াক। -কি হলো রে। -দেখছো বড়মা। -তুই ওকে জিজ্ঞাসা করলি কেনো। -তাই বলে। শয়তান। দিলো আবার আমার কোমরে চিমটি। -আচ্ছা চল তোকে দেখাচ্ছি, খেলে বলবি অনি আর একবার খাওয়াবি। -আমি কিন্তু উঠে চলে যাবো। -পেটতো ঠেসে নিয়েছিস, উঠে গেলে খুব একটা ক্ষতি হবে না, কাল থেকে যা শুরু করেছিস। -উঃ নীপারে কালকে অনি যা চিকেন বাটার ফ্রাই করেছিলো না। আবার জিভে টক করে আওয়াজ। বড়মা হেসে ছোটমার ঘারে পরে গেলো। -আমার জন্য আনতে পারলে না একটা। -আনব কিরে যা কিপ্টা সবার ভাগে একটা করে গোনা গুন্তি, ওর হেল্পার কে ভজুরাম, সেও তেমনি, বাবু যদি বলে ছটা নিয়ে আসবি ও চারটে নিয়ে আসে। -বড়মা দেখছো, দিদিমনি কিরকম মিথ্যে কথা বলছে। ভজু ওদিক থেকে চেঁচিয়ে বললো। সবাই হেসে খিল খিল, অনাদিরা খাওয়া থামিয়ে দিয়ে খালি হাসছে। ইসলাম ভাই ছোটোমার দিকে তাকিয়ে বললো, মনু আর খাওয়া যাবে না ছোটো ম্যাডাম হাসিয়েই পেট ভরিয়ে দিয়েছে। বড়মা মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো, সত্যি করে বলতো মিত্রা কালকে তুই কটা খেয়েছিস। -বেশি না চারটে পুরো তোমার পাত থেকে হাফ। তাও তুমি দেখো আমার ভাগের একটা অনির ভাগের দুটো আর ছোটোমার ভাগের একটা। -আর রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনি যে ভাজতে ভাজতে তোকে একটা দিলো, তারপরে আমিও একটা দিলাম। -ও তো কালকে একটা গোটা মুরগি খেয়েছে। রাতে যদি ওর পেটে মুরগির ডাক শুনতে, সারারাত ঘুমোতেই পারলাম না। আমি বললাম। মিত্রা আমার পিঠে গুম করে এক ঘুসি দিলো। -বড়মার সাপোর্ট পেয়ে বড়বড় কথা। মুরগি ডাকা। বড়মার দিকে তাকিয়ে, তুমি কিছু বলতে পারো না। সবাই হাসছে, কাকা বাইরের বারান্দা থেকে এসে বললো, বাবা এতো দেখছি ভোজসভা বসেছে। বড়মা হাসতে হাসতে বললো বসুন না আপনি আপনার ভাইপোর তরজা গান শুনতে পাবেন। -ও মহা ফোক্কর। তোমরা জানো না, আমি হারে হারে চিনি। কত মার খেয়েছে এর জন্য। -কোথায় কোথায় মারতে বলোতো। মিত্রা বললো। -সে কি আর মনে আছে। -তবে একবার ওকে খুব মেরেছিলাম, মনটাও খুব খারাপ হয়ে গেছিলো, দুদিন ওর সঙ্গে ঠিক মতো কথা বলতে পারি নি। ওই যে সামনের পুকুরটা দেখছো, ওটার একবার জলটা একটু খারাপ হলো, আমরা গ্রামের লোকেরা মেশিন বসিয়ে জল ছেঁচতে শুরু করলাম, মাছও ছিলো পুকুরে। সিঙ্গি, লেটা, কই, মাগুর, পাঁকের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে ঢুকিয়ে সব মাছ ধরছে, তখন ও কিসে পরে ক্লাস নাইনে। ও নেমে পরেছে ওই পাঁকের মধ্যে মাছও ধরছে, তারপর একটা মাছ ধরে বলে উঠলো দেখ আমি একটা কত বড় মাছ ধরেছি, ভাবলাম হয়তো কুচে মাছটাছ হবে, দেখি পাঁক থেকে একটা গোখরা সাপ টেনে বার করলো, মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে, সবাই চেঁচিয়ে উঠলো, কামড়ে দিলে কি সব্বনাশ বলোতো, আমার তো আত্মারাম খাঁচাছাড়া। কামড়ে দিয়েছে হয়তো এই মনে ভাবলাম, ওর মরা বাপ-মা আমার গলা টিপে ধরলো বলে, সবাই ছুটে গিয়ে ওর হাত থেকে ছাড়িয়ে সাপটাকে মারলে, আমি রাগে দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে একটা বেড়া কলমি গাছ ভেঙে সপাং সপাং করে দিলাম। উনা, ছিল ভানু ছিল ওরা এসে সব ধরে ফেললো। কতো বলবো মা ওর গুনের কথা, এই তল্লাটে একটা নারকেল গাছে ডাব হওয়ার যো নেই। গাছে উঠে ওখানেই বসে ডাব খেয়ে গাছের ডালের ফাঁকে রেখে চলে আসবে। তোমরাই বলোতো মা, যদি একবার পা হড়কে ওখান থেকে পরে, রক্ষা পাবে। আমি মাথা নীচু করে বসে খেয়ে যাচ্ছি, ওরা কখনো অবাক হয়ে যাচ্ছে কখনো বিস্ময়ে কাকার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। নীপা মাঝে মাঝে মাথা নীচু করে আমার মুখ দেখার চেষ্টা করছে। -আচ্ছা কাকা তেল পেঁয়াজ মেখে ভাত খাওয়াটা কার কাছ থেকে শিখলো বলোতো। মিত্রা বললো। সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। বড়মা বললো তুই থামবি। -আঃ তুমি দাঁড়াও না, ওর সব কিছুর মধ্যে একটা ইতিহাস থেকে, কি বেরোলো তো। বড়মা বললেন, মুখপুরী। আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে হাসলাম -হাসছিস এবার তোর কলেজের গুণকীর্তনটা বলি সবার সামনে। ছোটোমা বললেন, মিত্রা ওইগুলো বলিস না। সবাই এ ওর মুখের দিকে তাকায়। বড়মা বললেন তোরা কি আরম্ভ করেছিস বলতো ছেলেটাকে খেতে দিবিনা না কি। -দেখলে, দেখলে ছোটোমা, অমনি ছেলেটাকে খেতে দিবিনা না কি। মুখ ভেঙচে। মিত্রা গম্ভীর হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, মনে রাখিস তোলা থাকলো, কালকে মাছ ধরাটা শিখিয়ে দিবি। সবাই হেসে গড়িয়ে পরলো। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, কাল রাতের কথা মনে রাখিস, বড়মাকে সব বলিনি, খালি ছুঁয়েছি, এবার ঝেড়ে কাশবো। প্লীজ প্লীজ আর হবে না তুই বিশ্বস কর, আমি উইথড্র করছি। বেশ শোধ-বোধ। আবার হাসির রোল উঠলো। ইসলাম ভাই খেতে খেতে পা ছড়িয়ে দিয়েছে। অনাদিরা হেলে হুলে বসে আছে। ভজু আমার পাতের সামনে, আমি যা রেখে যাবো, ভজু খাবে। বড়মাকে বললাম এবার ওঠো, একটু গড়িয়ে নাও দুজনে তারপর বেরোবো, নীপার দিকে তাকিয়ে বললাম, নীপা মুন্নাভাই-এর বিছানাটা একটু গুছিয়ে দাও, একটু গড়িয়ে নিক। বড়মা আমাকে বললেন ও অনি একটু টেনে তোল। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। -বড়মা আমাকে বলে নি তোকে বলেছে, দেখছিস না আঙুল চাটছি। -তুই পারিসও বটে। আমি বড়মাকে ধরে তুললাম।
Parent