কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ১৩১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4681230.html#pid4681230

🕰️ Posted on February 17, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1069 words / 5 min read

Parent
আমি বেরিয়ে এলাম। পুকুরঘাটে গিয়ে মুখ হাত পা ধুলাম, পাখিরা সব নিজের বাসায় ফিরছে, চারিদিকের গাছগুলোয় খালি কিচির মিচির শব্দ। ঘরে ফিরে যে যার কাজের হিসেব দিচ্ছে যেনো। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কথা বোঝার চেষ্টা করলাম। পারলাম না। -সং-এর মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছো। দেখলাম নীপা আমার পেছনে। পোষাক বদলানো হয়ে গেছে, এটা নতুন দেখছি, একটা থ্রি কোয়ার্টার জিনসের প্যান্ট আর একটা টপ পরেছে। বেশ মিষ্টি লাগছে, ঠোঁটে হাল্কা প্রলেপ। -ড্যাব ড্যাব করে কি দেখছো। -চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। -ওসব ছাড়ো এখন থেকে খালি মিত্রাদির ধ্যান করো। যা হয়ে গেছে, গেছে। -কেনো। -নেকু, আগে জানলে ওইটুকুও পেতে না। -আজ জেনে ফেলেছো। -সব। -বাবাঃ তোমরা সবাই তো সাংবাদিক। -ছোঁয়া পাচ্ছি না। যাও যাও ওঠো, আমি বাসন কটা ধুয়ে নিয়ে যাই। না হলে মাসিকে আবার আসতে হবে। আমি ওঠার সময় নীপার বুকটা একটু টিপে দিলাম। -ওঃ দুষ্টু কোথাকার, দাঁড়াও মিত্রাদিকে বলছি গিয়ে। ওর দিকে ফিরে একটু হাসলাম।   নিজের ঘরে চলে এলাম, কেউ নেই। ইসলাম ভাই ও বাড়িতে গেছে। আমি মিটসেফের ওপর থেকে পাজামা পাঞ্জাবীটা নিলাম, একেবারে নতুন, তার সঙ্গে গেঞ্জি ড্রয়ার সব নতুন। ব্যাপারটা মাথায় ঢুকছে না। আবার নতুন পোষাক কেনো। দেখেছি বেশি ভাবতে গেলেই সব কেমন উল্টোপাল্টা হয়ে যায়, ছোটোমার ব্যাপারটা যেমন হলো, কি যে একটা বিচ্ছিরি স্বপ্ন দেখলাম, মনটা মাঝে মাঝে খট খট করছে। দরজাটা ভেজিয়ে দিলাম, ভিঁজে গামছা দিয়ে ভালো করে গাটা মুছলাম। খট খট করে দরজায় আওয়াজ হলো। -কে। -খোল। -আর কে আছে তোর সঙ্গে। -কেউ নেই। আমি দরজা খুললাম। একটা দারুন সুন্দর গন্ধ আসছে মিত্রার শরীর থেকে। -কিরে সব নতুন নতুন। -কোথায় নতুন দেখছিস। -দেখছি পাট ভাঙা কাপড় পরেছিস, আবার বলছে কোথায় নতুন। -পূজো দিতে যাবো না। -কোথায় পূজো দিবি। -যা বাবা সাত কান্ড রামায়ণ পরে বলে সীতা কার বাবা। -পীরবাবার ওখানে পূজো দিবি! ওটা খালি একটা অশ্বত্থগাছ, আর কিছু নেই। চারিদিক শূনশান। -তোকে অতো ভাবতে হবে না। বড়মার হুকুম চোখবুঁজে তামিল করে যা। -মনে হচ্ছে একটা কিছুর গন্ধ পাচ্ছি। -একথা বলছিস কেনো। -নীপা একখানা জমপেশ মাল লাগিয়েছে। তুই, তারপর দেখবো বড়মা ছোটোমা। -হ্যাঁ সবাই পরেছি, তোর আপত্তি আছে নাকি। -না। -নীপারটা কেমন হয়েছে রে, দারুন লাগছে না ওকে, এখন মনে হচ্ছে অনির যোগ্য উত্তরসূরী তৈরি হচ্ছে। -গ্রামের ছেলেগুলোকে তো জানিস না। জিভ দিয়ে চাটতে না পারলেও, চোখ দিয়ে চেটে খাবে। -তুইও নিশ্চই ওরকম ছিলি। নে পর। -তুই বেরো। -আমি বেরোবার জন্য আসিনিতো। -তাহলে কি করতে এসেছিস। -তোকে দেখতে, দেখাতে। -বুঝেছি দরজাটা বন্ধ কর। -ওটা আগেই করে দিয়েছি। -ওদিকে ফিরে তাকা। -দাঁড়া তোর কথা বার করছি। -একবারে গায়ে হাত দিবি না মিত্রা এগিয়ে এলো, আমার পাজামায় হাত দিয়ে খামচে ধরলো। -দিলে কি করবি বল। -কামড়ে দেবো তোর ঠোঁটে। তোর সাজ-পোষাক নষ্ট করে দেবো। -একবারে গায়ে হাত দিবি না। মিত্রা আমার চোখে চেখ রাখলো, ওর চোখ বলছে আজ ওর সবচেয়ে খুশির দিন পরিতৃপ্ত চোখের মনি দুটো। আই লাইনার দেওয়া চোখ দুটো বেশ বড় বড় দেখাচ্ছে। -এতো সেজেছিস কেনো, কে দেখবে এই অজ গাঁয়ে। তাও আবার সন্ধ্যে বেলা। -তুই। -আমি তোকে দিনরাত দেখি। -নতুন করে দেখবি। -আজ মনে হচ্ছে কোনো ঘটনা ঘটতে চলেছে। -কি। -মাথা খাটাতে ইচ্ছে করছে না। -বেশি মাথা খাটাস না বুড়ো হয়ে যাবি তাড়াতাড়ি। আমি গেঞ্জি-ড্রয়ার পরে পাজামা পাঞ্জাবী পরলাম। -তোকে আজ দারুন লাগছে, আমার পছন্দের কালার। -এই গেরুয়া রংটা তোর পছন্দের। -হ্যাঁ। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, চোখ চক চক করছে। -একটু সেন্ট লাগিয়ে দিই। অন্য সময় হলে না বলতাম, কেন জানি না ওকে না বলতে পারলাম না, সবারই কিছু না কিছু কষ্ট আছে, মিত্রারও আছে। -দে, বেশি দিস না। মিত্রা ফস ফস করে, আমার বগলে গায়ে সেন্ট স্প্রে করে দিলো। -আমি রেডি, চল এবার। আমি বেরোতে গেলাম, মিত্রা আমার হাত টেনে ধরলো। -কি। -একটা চুমু দিলি না। হেসে ফেললাম। ওর কপালে ঠোঁটে একটা চুমু দিলাম, আমার ঠোঁটে ওর ঠোঁটের লিপস্টিক লেগে গেলো, ও কোমর থেকে রুমালটা বার করে আমার ঠোঁটটা মুছিয়ে দিলো।   ঘরের বড় লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে ছোটো লাইটটা জ্বেলে দুজনে বেরিয়ে এলাম। একসঙ্গে নামলাম, একসঙ্গে বাইরের দরজায় সিকল তুলে বেরিয়ে এলাম। খামারে দুটো ট্রলি দাঁড়িয়ে, বিজয় বিজন দাঁড়িয়ে আছে। ওরাই ট্রলি চালাবে। আমি এবাড়িতে এসে সকলকে প্রণাম করলাম। বড়মা বললো এতো প্রণামের ঘটা কিসের রে। -বারে নতুন জামা কাপড় পরালে, একটা ঠুকে দিলাম। আমার দেখা দেখি মিত্রাও সকলকে প্রণাম করলো। -আরে অনিদা কি মাঞ্জা দিয়েছো। -তুমি কম কিসে, ডাকবো চিকনাকে। -আওয়াজ খেয়ে গেছি, এখন আর গায়ে মাখি না। আর কিছু বলবে। -উঃ মুখে যেন খই ফুটছে। বেরিয়ে এলাম। খামারে ওরা দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গেলাম। সঞ্জু কোথায় রে সকাল বেলা এলাম একবারও দেখা পেলাম না। -ঠিক সময় দেখা পাবি। ও নিয়ে ভাবিস না। তোর লাইট পাঁচ মিনিটের মধ্যে জ্বলে যাবে। -বাবাঃ বাসু অনাদিকে খুব খুশি খুশি মনে হচ্ছে। -একটা ভালো খবর আছে তাই। বাসু মুচকি হেসে বললো। -চিকনা তুই বেশ চকচকে, ব্যাপার কি। -রাতে জোর খাওয়া আছে এক জায়গায়, আমাকে পাবি না, তোর সঙ্গে এখন যাচ্ছি, তারপর ওড়াং। -কোথায় রে, সঞ্জুর আর্শীবাদ। -খবরটা বেমালুম আমাকে চেপে গেছিস। -চুপকে চুপকে হচ্ছে তাই চেপে গেছি। -কিরে বাসু। বাসু হাসছে। -সঞ্জুর আর্শীবাদ তোর কি। নে ট্রলিতে ওঠ। অনাদি বললো। ব্যাপারটা বেশ জটিল মনে হচ্ছে, একটা চক্রান্ত চলছে কোথায় মনে হচ্ছে।   বড়মারা ঘরের বাইরে পা দিয়েছে, সন্ধ্যা হতে এখনো আধাঘন্টা বাকি আছে বলা যেতে পারে গোধূলি, আমরা সবাই ট্রলিতে বসলাম, বড়মা, ছোটোমা, ইসলাম ভাই ভজু একটা ট্রলিতে আমি নীপা মিত্রা একটা ট্রলিতে ওরা বাইক নিয়ে আগে এগিয়ে গেলো। আমরা বড় বিলের পাশ দিয়ে যখন যাচ্ছি বড়মাকে বললাম -জানো সকালে এলে এই গ্রামের সব গরুগুলোকে তুমি দেখতে পাবে এই বিলে চড়ছে, বলতে পারো গোচারণ ভূমি। বিলের বুক চিরে নদী গেছে, এখানে একেবারে শুকনো। বিজয় নদীর কাছে এসে বললো মা এইবার একটু নামতে হবে, আমি নদীটা পার করে নিই। -আবার কি জল পেরোতে হবে নাকি রে বিজয়। -না না মা এখান একেবারে শুকনো। আমি নেমে এলাম। বড়মা আমার দিকে তাকালো, সকালে এই পথে এলিনা কেনো। -আসলে এক ঘন্টা লাগতো। পারতে, এখান থেকে মোরাম রাস্তাটা দেখতে পাচ্ছ। -ওর কথা একেবারে বিশ্বাস কোরো না। খালি তাপ্পি। আমি হাসলাম। সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে নদী পার হলাম। সামান্য এক চিলতে জল, এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। -হ্যাঁ রে অনাদিরা গেলো কোথায়। ওরা বাইকে যাচ্ছে, তাই ভেতর দিয়ে একটা রাস্তা আছে চলে গেছে। ওরা ট্রলি পার করে নিয়েছে, আমরা ট্রলিতে বসলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর বিজয়কে বললাম একটু দাঁড়াতো বিজয়। বিজয় ট্রলি দাঁড় করালো, আমি ট্রলি থেকে নামলাম। বড়মার ট্রলির দিকে এগিয়ে গেলাম। নীপা মিত্রাকে কিছু বললো, দুজনেই আমার কাছে চলে এলো। -কি হলো -সকাল বেলা এই বনটা তোমায় দেখিয়েছিলাম, মনে পরে। -শ্মশান। -হ্যাঁ। -তখন কতো দূরে মনে হচ্ছিল। -মোরাম রাস্তা এখনো অনেক দূর। ওই দেখা যায়। দেখো তিনটে বাইক দাঁড়িয়ে আছে দেখতে পাচ্ছ। -হ্যাঁ। -এই সরু আইল পথ গিয়ে শ্মশানে মিশেছে। ফেরার পথে যাবে নাকি। -যাবো। বড়মা মাথায় হাত দিয়ে প্রণাম করলেন, দেখা দেখি ছোটোমা মিত্রা নীপা এমনকি ইসলাম ভাই প্রণাম করলো। আমরা সবাই আবার ট্রলিতে উঠলাম, পীরসাহেবের থানে যখন পৌঁছলাম, চারিদিকে আলো নিভে গেছে।
Parent