কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ১৩৬

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4696840.html#pid4696840

🕰️ Posted on February 23, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 892 words / 4 min read

Parent
বারান্দায় অনাদিরা সবাই বসে আছে, আমাদের দেখে ওরা উঠে দাঁড়ালো, নিরঞ্জনদা অনাদিকে ডাকলো। -হ্যাঁ দাদা। -ঠিক আছে থাক খেতে বসে বলবো। ভেতরে এলাম, অনাদি আমার পাশে, মুখটা শুকনো করে বললো, কিরে কিছু গরবর। আমি ইশারায় বললাম না। অনাদি হাসলো। যেনো ধরে প্রাণ এলো। মিত্রার গলা শুনতে পাচ্ছি, ফুল ফ্লেজে ব্যাট করছে, বড়মাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো, দারুণ মজা হচ্ছে জানো। -তাই। -হ্যাঁ গো ভজু গান গাইছে। বলে কিনা বুবুন টিন নিয়ে তবলা বাজাতো ও গান করতো। বড়মা তাকালো মিত্রার দিকে এই ঠান্ডাতেও ওর কাপালে হাল্কা ঘামের ছোঁয়া। -অনেক দৌড়ো দৌড়ি করেছিস এবার একটু থাম। -আমি তো থেমেই আছি। -খাবি তো। -হ্যাঁ। -জায়গা কর। সুরমাসি হলো গো। -হ্যাঁ দিদি হয়ে গেছে। কাঞ্চন লতা ভজু একসঙ্গে বসে ছিলো। ভজু উঠে এলো। -বড়মা তোমার হাঁটু মালিশ করা হলো না। -শোয়ার সময় একটু করে দিস। -ঠিক আছে। বসে বসে গা ব্যাথা হয়ে গেলো। বড়মা ভজুর কথায় হাসছে। দেখলাম ছোটোমা কোমরে কাপড় জড়ালো, বুঝলাম এবার রান্না ঘরে ঢুকবে। দালানে টানা আসন পাতা হচ্ছে। মিত্রা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, আমার হাতটা ধরলো। আমি ওর দিকে তাকালাম, চোখে খুশির ছোঁয়া ক্লান্তি সারা মুখ জুড়ে। -কি? -আমি যাবো। -রান্নাঘরে‍! -হ্যাঁ। -পারবি? -পারবো। -যা। কোমরে কাপড়টা গুঁজে নিলো। ছুটে চলে গেলো। ছোটোমা ওকে দেখে বললো -আমি বেরে দিই তুই আর নীপা দিয়ে আয়। মিত্রা খুব খুশি। -রাতে কলা পাতা আর থালা নয়। আমি সুরমাসিকে বললাম কাকার খাওয়া হয়ে গেছে। -হ্যাঁ খাইয়ে শুইয়ে দিয়েছি। -বেশ করেছো। আমি একবারে ধারে, আমার পাশে বড়মা তারপাশে মিত্রা তার পাশে ছোটোমা তারপাশে নিরঞ্জনদা তারপাশে ইসলাম ভাই তারপাশে নীপা এরপর সবাই লাইন দিয়ে বসেছে। অনাদিরা আমাদের ঠিক অপজিটে বসেছে। কাঞ্চন, লতা দেখলাম বোসলো না। কাকীমা, ছোটোমা নীপা মিত্রাকে ঠেলে রান্নাঘর থেকে বের করে দিয়েছে। ওরা এসে বসলো। -তুই এখানে কেনো। -কেনো তুইতো বড়মা ছোটোমার মাঝখানে বসছিস। -না। তুই আমি বড়মা ছোটোমার মাঝখানে বসবো। -বুঝেছি, মাথায় রাখবি আমার পাতে হাত দিতে পারবি না। -এই শুরু করলি দুজনে। ইসলাম ভাই নিরঞ্জনদা মুচকি মুচকি হাসছে। আমি বসে পরলাম, বড়মা আমার আসনে গেলো। খাওয়া শুরু করলাম। নিরঞ্জনদা বললো মিত্রা তুই তো সব টেস্ট করেছিস। মিত্রা মাথা দোলালো। -কোনটা সবচেয়ে ভালো হয়েছে। -এখন বলবো না। -কেনো রে। -বুবুন নেবে না, ওর পাতেরটা খেতে হবে না। নিরঞ্জনদা বিষম খেলো। বড়মা হাসছে। ছোটোমা মুখে হাত চাপা দিয়েছে। আমি গম্ভীর। নীচু হয়ে খেয়ে যাচ্ছি। -কটা মাছের ডিমের বড়া খেয়েছিস। -বেশি না পাঁচটা। -সকাল থেকে পটি করেছিস। -না। -এখানে কিন্তু এ্যাটাচ বাথরুম নেই। -জানি তোকে বক বক করতে হবে না। মাঠেতো যেতে হবে না। আবার ঝক ঝকে লাইট আছে। -অনি। ছোটোমা ডাকলো। আমি ছোটোমার দিকে তাকালাম। -তুই ওর পেছনে লাগছিস কেনো। -জানো ছোটোমা, বড়মা এখন শুনতে পাবে না, যেই মিত্রা বলবে অমনি বড়মা শুনতে পেয়ে যাবে। বড়মা চাপা হাসি হাসতে হাসতে বললো তুই থাম বাপু। লতা আমার পাশে একটা বাটি রেখে গেলো। বুঝলাম চিংড়ি মাছের টক। -তোর এই বাটিটা এখানে রাখ। -এটা কি? -তোর স্পেশাল। -তোকে দেবে না? -তোর মতো মেখে দেবে না। সুরমাসি মুখে কাপড় চাপা দিয়ে হাসছে। নিরঞ্জনদা ইসলাম ভাই মুখ তুলছে না। মুচকি মুচকি হেসে যাচ্ছে, অনাদিরাও হাসছে। -অনাদি। নিরঞ্জনদা ডাকলো। -হ্যাঁ দাদা। -বাজারের জায়গাটা কার রে। অনাদি বললো। -বাজারের প্রেসিডেন্ট কে। -বাসু। -কোনজন? অনাদি দেখালো, বাসু মুখ তুললো। -বাসু -বলুন। -কাল ওকে একবার সকালে ডেকে আনিস তো। কথা বলবো। -ঠিক আছে। -তোরা ওর সঙ্গে কথা বলেছিস তো। -হ্যাঁ। -কি বুঝলি। -দিয়ে দেবে। মিত্রা আমাকে খোঁচা মারলো। ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো কি। আমি মাথা নীচু করলাম, এবার বড়মার দিকে ঢলে পরলো বড়মাকে জিজ্ঞাসা করলো, বড়মা ওকে কি বললো, ও আবার খেতে শুরু করে দিলো। আমি নিরঞ্জনদাকে বললাম, সঞ্জু মেশিনের কোটেসন নিয়ে এসেছিলো। -কে সঞ্জু? সঞ্জু মুখ তুলেছে, খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। -ও। তোমারও কি ওখানে দোকান আছে নাকি। -হ্যাঁ। ও সেক্রেটারি। অনাদি বললো। -ওরে বাবা, অনি এতো দেখছি পঞ্চায়েত প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি সব তোর বাড়িতে হাজির। তোর আর চিন্তা কিসের। -তোমারটা বললে না। -আমিতো ফাউ। তাই না মিত্রা। মিত্রা বললো, এই দেখো এটা টেস্টফুল একটু খাও। আমার বাটি থেকে তুলে নিয়ে নিরঞ্জনদার পাতে দিলো, এখনো এঁটো করি নি। -এটা সকালে খেয়ে এলাম রে। পান্তার সঙ্গে দারুন লাগে। -কাল সকালে খাবো কাকীমা বলেছে। -আমার বাড়িতে চল তোকে খাওয়াবো। -কবে নিয়ে যাবে। -তুই বল কবে যাবি। -বড়মাকে বলো। -ভাবছি, তোর বড়মা আমাকে হুকুম করে নিয়ে এলো, আমি এবার তোর বড়মাকে হুকুম করে নিয়ে যাবো। -এখনি করো না। -এখন না পরে কয়েকটা কাজ আছে সেরে নিই। -বুবুন যাবে না। -কেনো রে! -ও বড় খ্যাচ খ্যাচ করে, আমি, বড়মা, ছোটোমা। নিরঞ্জনদা হাসছে। -কিরে তুই নিলি না। -না। তুই খা। -বললাম বলে রাগ করলি। -না। -তাহলে আমিও খাবো না। -রেখেছিস কোথায় সবইতো খেয়ে নিয়েছিস। -ওই তো রয়েছে। -ওটুকু তুই খা। কাল নিজে মেখে পান্তা দিয়ে সাঁটাবো। -দেখছো বড়মা কিরকম করে। -ঠিক আছে দে। আমি একটু খেলাম। -বড়মার পাত থেকে কি কি সাঁটালি। একেবারে ঠেসে নিয়ে বসেছিস। -তুইতো ছোটোমার পাত থেকে একটা মাছ নিলি। -তোর থেকে কম। -বলেছে। মুখ ভ্যাংচালো। -আঙুল চাটলি না। -আচ্ছা অনি তোরও …….. হাসলাম। -খাওয়া শেষ হোক চাটবো। -এখনো শেষ হয় নি। -বড়মার পাতে চিংড়ি মাছটা আছে, বড়মা দিক ওটা সেঁটে নিয়ে চাটবো। বড়মা আমার দিকে তাকালো, ইচ্ছে করে বললো -অনি নে। -না ওকে না আমাকে, কখন থেকে তীর্থের কাকের মতো বসে আছি। আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসছি। নিরঞ্জনদা বললো তোর অনারে জব্বর খাওয়া হলো বুঝলি মিত্রা। -কালকের মেনুটা আরো স্ট্রং। -কোনো রে। -মুন্নাভাই স্পনসর করছে। -তাই নাকি। -ও বাড়িতে রান্না হবে। -এ বাড়িতে নয় কেনো। -ঠাকুর আছে। -ও। -উঠি এবার। -তোমার পেছন পেছন আমিও যাচ্ছি। মিত্রা হাঁই হাঁই করে উঠলো। -কি হলো। -দেখো না বুবুনটা চিংড়িমাছটা খেয়ে নিচ্ছে, হাফ দে। নিরঞ্জনদা হাসছে। ইসলাম ভাই হাসছে। ছোটোমার পাতে একটা আছে। আমি বললাম। -তুই ওখান থেকে হাফ দে আমাকে আমি এখান থেকে হাফ দিচ্ছি তোকে। তাই করলাম। বড়মা ছোটমা হাসছে।
Parent