কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ১৪০

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4704858.html#pid4704858

🕰️ Posted on February 28, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 732 words / 3 min read

Parent
ঘুমটা হঠাত ভেঙে গেলো, দেখলাম আমাকে জড়িয়ে ধরে মিত্রা শুয়ে আছে, নাইটির হাল অত্যন্ত খারাপ অবস্থায়, সে প্রায় বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলেছে। আমি নিস্তব্ধে নামিয়ে দিলাম, ওর হাত থেকে উন্মুক্ত হয়ে মিটসেফের কাছে এলাম, ঘড়িটা একবার দেখলাম, পৌনে পাঁচটা বাজে, মাত্র কয়েক ঘন্টা ঘুমলাম, মিত্রার কাছে গেলাম ওকে সোজা হয়ে শুইয়ে ওর গাল ধরে নাড়াচাড়া করলাম, চোখ খুলছে না, ভীষণ চুমু খেতে ইচ্ছে করছিলো, ওর কপালে একটা চুমু খেলাম। -মিত্রা? -উঁ -যাবি নাকি। ও চোখ খুললো। সচেতন হলো। হাসলাম - ঠিক করে দিয়েছি। ও হাসলো। -যাবি? -কোথায়? -চল একটু ঘুরে আসি। -শীত শীত করছে। -বেরোলে ঠিক হয়ে যাবে। -বাবা এখনো অন্ধকার। -হ্যাঁ, শীতের রাত এখনো ঘন্টাখানেক বাকি আছে সকাল হতে। মিত্রা উঠে বসলো, চল। -বাথরুমে যাবি নাকি। ও মাথা দোলালো, যা বারান্দার কোনে গিয়ে করে আয়। জল নিয়ে যাস মুখে দিয়ে আসিস। মিত্রা উঠে চলে গেলো। আমি পাজামা পাঞ্জাবীটা গায়ে চড়ালাম, সত্যি বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। মিত্রা এলো আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, জল দিতে কি ঠান্ডা লাগছে। -শীত পরছে ঠান্ডা লাগবে না। নে তারাতারি রেডি হয়ে নে। -শালোয়ার পরি। -পর। আমি আলমারি খুললাম, ও শালোয়ার বার করলো, আমি আমার দুটো পুরনো চাদর বার করলাম। -ওটা কি হবে। -গায়ে জড়িয়ে নিবি, ঠান্ডা লেগে গেলে গন্ডগোল। মিত্রা রেডি হয়ে নিলো। আমি বাইরে গেলাম, মুখে জল দিয়ে এলাম। মিত্রা চুলটা আঁচড়ে নিলো। -বুবুন? -উঁ। -আজ কোথায় যাবি? -যেখানে গেছিলাম, সেখানে যাবো। -আজ নতুন একটা জায়গায় চল না। -ঠিক আছে আগে বেরোই। দুজনে বেরিয়ে এলাম। খামারে এসে পেছন ফিরে বারান্দার দিকে ঘুরে তাকালাম, সবাই ঘুমুচ্ছে, সঞ্জুর ছেলেগুলো লাইট নিভিয়ে দিয়েছে, বারান্দায় বেশ কয়েকটা মশারি টাঙানো আছে দেখলাম, বুঝলাম সুরমাসি কাকীমা ওদের ঘর ছেড়ে দিয়ে বারান্দা এসে শুয়েছে। তেঁতুল তলার ভেতর দিয়ে ধানখেতে এসে পরলাম, মিত্রা আমাকে জাপটে ধরে হাঁটছে। চাঁদের আলো চারিদিকে থিক থিক করছে, ধান গাছগুলো শিশিরের জলে স্নান করে ফেলছে, চাঁদের আলোয় ডগা গুলো চিক চিক করছে। আমরা ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে শরু আল পথে হাঁটছি। -সাবধানে হাঁটিস পা হরকে যেতে পারে। ঘসগুলো ভিঁজে ভিঁজে আছে। -কি উঁচু নীচুরে বাবা। -দেখে হাঁট, জ্যোৎস্না রাত রাস্তা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। -হ্যাঁরে। যা আলো ইলেকট্রিককে হার মানাবে। -আস্তে কথা বল। এখানে তুই একটু জোড়ে কথা বললে অনেক দূর পযর্ন্ত শোনা যায়। আমি বড়মতলার পুকুর ধারে ছোট্ট পেঁপে গাছটা থেকে একটা পাতা ভাঙলাম। -ওটা কি করবি? -চুপ করতে বলেছি না। -আচ্ছা আচ্ছা। এর থেকে আস্তে কথা বলা যায় নাকি। -যায়, চেষ্টা কর। আকাশে ঝকঝকে চাঁদের আলোয় তারাগুলোকে ম্রিয়মাণ লাগছে, তবু তারা তাদের নিজস্ব আলোয় মহিয়ান, অন্ধকার পক্ষে আকাশের তারাগুলোকে আরো বেশি সুন্দর লাগে। আমরা বাঁশবাগানের ভেতর দিয়ে ভূততলায় এলাম। -কিরে ভূত দেখবি। মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ লুকালো। -কি হলো। -তুই ভূত দেখ আমি দেখবো না। -সামনের দিকে একবার তাকা, দেখতে পাবি। -না তাকাবো না, কি অন্ধকার লাগছে। আমি তোকে ছাড়ব না। -এটার নাম ভূততলা। -আচ্ছা তোর কি ভূতপ্রেত ছাড়া যাবার জায়গা নেই। পায়রার বুকের মতো ওর বুকটাও থির থির কাঁপছে, ওর চিবুকটা ধরে একটু নাড়িয়ে দিয়ে বললাম -গ্রামে এটা ছাড়া কি আছে। -এই জায়গাটার নাম ভূততলা হলো কেনো রে। খালি বাঁশ বন দেখতে পাচ্ছি। -ওই যে ঢিপিটা দেখতে পাচ্ছিস ওখানে একটা জোড়া বটগাছ ছিলো। মরে গেছে, বলবো পরে গল্পটা। এই জায়গাটা সাবধানে আসিস, দেখছিস তো চারপাশ। -উঁ কি গন্ধ বেরোচ্ছে। হাসলাম। -নীচের দিকে একটু তাকা। -এমাগো পটিতে ভর্তি। এখানে লোকে পটি করে নাকি। -তাহলে কি তোর মতো বাথরুমে করে। -তুই এখান দিয়ে এলি কেনো। -তুই তো বললি নতুন জায়গা দেখবি। -তাই বলে এই পটি করা রাস্তার মধ্যে দিয়ে। -বেশি কথা বলিস না, পা পরে গেলে…..। -এমাগো উঁ……। আমরা ভূততলার ঢিপিকে ডাইনে রেখে নদী বাঁধে এসে উঠলাম। -দাঁড়া, কি উঁচুরে বাবা। -সাবধানে আসিস সারারাতের শিশির পরে একটু হরকা হয়ে গেছে। -তুই ধর। আমি ওর একটা হাত ধরলাম। -বাঃ কোথা থেকে কোথায় চলে এলি, কি সুন্দর জায়গা, এটা কি সেই নদী, কালকে যেটা পেরোলাম। -হ্যাঁ, যেখানে যেরকম জল, এখানে মাঝখানে প্রায় দুমানুষ জল। চওড়াটাও প্রচুর। -মাঝখানে ওগুলো কিরে? -নৌকো বাঁধা আছে, খড় ধান নিয়ে যায়। চকের হাটে। ওই হাটটা এখানের সবচেয়ে বড় হাট, শহরের ব্যাপারীরা আসে। মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। -চাদরটা মাথায় দে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। -তুই দে। -আমার সহ্য করার ক্ষমতা আছে। তোর নেই। মিত্রা আমার কথা শুনলো। -বুবুন? -কিরে। -আবার বাথরুম পেয়েছে। -বসে যা। আমি পেছন ফিরে আছি। -এখানে! -তাহলে কোথায়। -সত্যি তুই না। এর থেকে সুন্দর জায়গা পৃথিবীতে আছে। মিত্রা আমার দিকে ঘুরে তাকালো, ওদিকে মুখ ফেরা। আমি নদীর দিকে ফিরে তাকালাম। জল এখন অনেক কম, তবু যতটা আছে তার সৌন্দর্য্য কম নয়। চাঁদের আলো পরে চিক চিক করছে, হালকা উত্তুরে বাতাস বইছে। -চল হয়ে গেছে। -কি রকম মজা পেলি বল, একটা অন্ততঃ থ্যাঙ্কস দে। ও আমাকে জাপ্টে ধরে গালে চকাত করে একটা চুমু খেলো।
Parent