কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ১৪৪

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4711423.html#pid4711423

🕰️ Posted on March 5, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1343 words / 6 min read

Parent
অনাদি খামারে বাইক রাখলো, আমি নেমে দাঁড়ালাম, মিত্রা বাইক থেকে নামলো, বাইরের বারান্দায় নিরঞ্জন দা, কাকাসহ আরো অনেকে বসে আছে। আমি বারান্দায় উঠলাম, নিরঞ্জনদা হেসে ফেললো -তুই তো মানুষকে পাগল করে দিবি রে! আমি মাথা নীচু করে হেসে ফেললাম -তুই আগে দাদাকে ফোন কর। মুখের জিওগ্রাফি চেঞ্জ হয়ে গেলো। -এতোবড় একটা কান্ড করলি, তার সঙ্গে শেয়ার করবো না। -আর কিছু। -না তেমন কিছু নয় আমি ম্যানেজ করে দিয়েছি। অনাদি আমার পেছনে। ও আমার চোখে মুখের চেহারার পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে। মিত্রা বুঝে গেছে হাওয়া গরম। ও ভেতরে চলে গেলো। আমি এবাড়িতে এসে ফোনটা দেখতে পেলাম না। নিচে নেমে আসার মুখে মিত্রা এ বাড়িতে আসছে দেখলাম, -এই নে তোর ফোন। সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা নিয়ে দাদাকে ধরলাম। দাদার ফোন স্যুইচ অফ। অনাদি বাসু এসে পাশে দাঁড়িয়েছে, মিত্রা আমার সামনে। মল্লিকদাকে ফোনে ধরলাম। -হ্যাঁ, বলো। -তুই কোথায়? -এই ফিরলাম। খবর বলো ভালো না খারাপ। -বাবা তোকে বেশ গম্ভীর গম্ভীর মনে হচ্ছে, সকাল বেলা হানিমুনে গেলি, কি করলি একটু ছাড়। -এখন ওটা বলার মতো মুড নেই। আগে বলো খবর খারাপ না ভালো। -ভালো। -দাদার ফোন বন্ধ কেনো? -দাদা সকাল থেকে আর পারছে না। বাধ্য হয়ে ফোন বন্ধ করে রেখেছে। -আমার ফোন নম্বর দাওনি কেনো? -তুইতো ফোন নিয়ে যাস নি। -যার দরকার সে আমাকে খুঁজে নেবে। আমি কারও তাঁবেদারি করতে যাই নি। -দাদা ভেবেছিলো কিন্তু তোর পারমিশন না নিয়ে দেয় কি করে। -কারা ফোন করেছিলো? -সেক্রেটারিয়েট থেকে ঘন ঘন ফোন আসছে। কর্পোরেশনের মেয়র ফোন করেছিলো। কতো বলি। -ঠিক আছে দাদাকে দাও। ভয়েজ অন করা আছে। হ্যাঁ, বলো। -তুই তো একটা যা তা করে দিলি। -কেনো। -যা লিখেছিস সকলের ঘুম কেরে নিলি। -কি বলতে চায়। -মোদ্দা কথা ক্রমশঃ লেখা যাবে না। আজ যা বেরিয়েছে বেরিয়েছে কাল স্টপ করুন। -তুমি কি বলেছো। -আমি বলে দিয়েছি, মালিক কাম এডিটর কলকাতার বাইরে, যে লিখেছে সে কলকাতার বাইরে, আমি ভারপ্রাপ্ত এডিটর কাজ সামলাচ্ছি। -কারা বলছে স্টপ করতে। -শেষে, চিফ মিনিস্টারের সেক্রেটারি। -কি বলেছো। -যা বললাম তোকে। -নো কমপ্রমাইজ, বলে দাও আমাকে ফোন করতে। ডকুমেন্ট ঠিক করে রাখবে, পারলে দশটা জেরক্স করাও, যদিও অরিজিন্যাল আমার কাছে। ফোন অফ করবে না, যদি ভেজারাম ভেজারাম করে বলে দাও কেস করতে, আমি বুঝে নেবো। মলের লাস্ট আপডেট। -সকাল পযর্ন্ত খবর, ভেন্টিলেসন। -কাগজ দেখে মুখার্জী ফোন করেছিলো। -হ্যাঁ। বলেছে দারুন লিখেছে অনি, তোকে ফোন করেছিল নো রেসপন্স হয়ে যাচ্ছে। -অফিসের হাল হকিকত। -আজ আবার কাগজ ছাপতে বলেছিলো, সার্কুলেসন ম্যানেজারকে না করে দিয়েছি, ভাল করিনি বল। -কালকেও বেশি ছাপবে না, যেমন আজ ছাপা হয়েছে ঠিক তেমনি। -যাই বল অনি কাগজের মাইলেজটা আজ অনেক বেড়ে গেলো। আমরা আজ এক্সক্লুসিভ কেউ করতে পারে নি। -ওই দুটোর খবর কি। -পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট এসেছে। মার্ডার কেস চালু করেছে। -দুটো গ্যারেজ। -খবর নিই নি। -ওরা কাগজের এভিডেন্স চাইবে। বলবে লিখিত দিতে তবে পাবে এবং সেটাও যেন কোর্টের অর্ডার থাকে। -ওসব আমি জানি না তুই এসে করবি। -তোমার, মল্লিকদার কালকের প্রেজেন্টেসনটা পেয়েছি। -কেমন দিলাম বল। -ওটার জেরক্স কপি আমার কাছে ছিল, কালকে অরিজিন্যাল পেলাম। -তোর কাছে ছিল। -ভাবলে কি করে তোমার আর মল্লিকদার জিনিস আমার কাছে থাকবে না। -ওরে মল্লিক দেখ অনি কি বলে, ওর কাছে নাকি ওই কপি দুটোর জেরক্স আছে। -ও বহুত ধুরন্ধর তুমি জানো না, বলছে যখন তখন নিশ্চই আছে। -তুমি দেখবে। -না। -দেতো দেখি একবার, ফোনে কথা বলাচ্ছি। বড় মা কখন এসে পাশে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারি নি। দেখলাম ছোটো মা নিরঞ্জন দা, ইসলাম ভাই, ভজু সবাই। বড় মা আমার হাত থেকে ফোনটা কেরে নিলো, এতোক্ষণ ভয়েজ অন ছিলো আমি কি কথা বলছি সবাই শুনেছে। আমার গলা যে সপ্তমে ছিলো সেটাও বুঝতে পেরেছে, অনাদি আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে, বাসু গম্ভীর, অনাদি এই অনিকে কিছুক্ষণ আগে দেখে নি। -বলি বয়স হয়েছে, কয়েকদিন বাদে ঘাটে যাবে আমিও তোমার সঙ্গে যাবো, ছেলেটা সবে এসেছে আর ওমনি ফোন। -আমি করলাম নাকি, অনিই তো করলো। -অনিকে কে বলেছে, সকাল থেকে পঞ্চাশ বার ফোন করেছ। -সে কি করে জানবো। নিরঞ্জন বলেছে হয়তো। আমি নিরঞ্জনকে সব বলেছি, তারপর থেকে তো ফোনটা একটু কমলো। -তোমরা দুই পালোয়ান ওখানে বসে আছো, সামলাতে পাচ্ছ না, আবার সুগ্রীবকে দোসর করেছো। অনি একা পারে কি করে। -ও যেমন নরমে গরমে দেয়, আমি দিতে পারি না। দেখ না তোমায় কতো দিন এসে রিপোর্ট করেছি অনিকে বোঝা খুব মুস্কিল, এখুনি হাসছে আবর এখুনি ও আস্তে করে ছুরি চালিয়ে দিলো। -ও তো তোমাদের মতো পেছন থেকে ছুরি চালায় না। যা করে সামনা সামনি। দেখাচ্ছি নিরঞ্জনকে। -বাবা আমার ঘাট হয়েছে, আজ সকাল থেকে কি হলো ওর সঙ্গে একটু শেয়ার করব না। -কেনো করো নি আমার সঙ্গে, তাতে আঁশ মিটলো না। -আচ্ছা আচ্ছা তোমার ছেলেকে বিরক্ত করবো না, ছোটোকে দাও মল্লিক কি কথা বলবে। ছোটো মাকে ফোনটা দিয়ে বড় মা নিরঞ্জন দার দিকে তাকালো। -তুমি বিশ্বাস করো দিদি আমি খালি বলেছিলাম, দাদা তোর সঙ্গে একবার কথা বলতে চায়, আমি অবশ্য ম্যানেজ করে দিয়েছি। -কেনো বারান্দায় ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এটা বলতে হবে। -আচ্ছা, আচ্ছা উইথড্র। ছোটো মা মল্লিক দাকে ফোনে বলছে, দিদির হাতে নিরঞ্জন দা ঝার খাচ্ছে। -চলতো অনি, একবারে ফোন খোলা রাখবি না বন্ধ করে রাখবি। বেশ করেছিস ফোন নিয়ে যাস নি। এখন আমি বুঝতে পারছি কেনো তোর ফোন মাঝে মাঝে বন্ধ থাকে। কোথায় গেছিলি? আমি চুপ করে থাকলাম, মেজাজটা বিগড়ে গেছে। মিত্রা আমার পকেট থেকে বকুল বিচির বাঁশিটা বার করে নিয়ে টি টি করে বাজিয়ে উঠলো, বড়মা ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সকলে হো হো করে হাসছে। ভজু এগিয়ে এসেছে -আমায় একটা দাও দিদিমনি। মিত্রা আমার পকেট থেকে একটা বাঁশি বার করে ভজুর হাতে দিলো। ভজু বাজাতে আরম্ভ করলো। বড়মা আমার দিকে তাকালো। -মাথা ঠান্ডা হয়েছে? -এটা তো একটা ইনস্টলমেন্ট দেখছো। আর একটা যদি বলি না, তোমার মাথা খারাপ হয়ে যাবে। মিত্রা বললো। -আর আমার মাথা খারাপ করার দরকার নেই। বড়মা মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো। আমার দিকে তাকিয়ে বললো - সকাল থেকে উঠে এই বাঁশি তৈরি করতে বেরিয়েছিলি। পেছনে তখন মিত্রা আর ভজুর বাঁশি টিঁ টিঁ করে বাজছে। -তোমার জন্য পদ্ম নিয়ে এসেছি। -কোথায় রে! -ওই তো মিত্রার কাছে আছে। কিরে দে বড়মাকে। -ঠিক করে বল, না হলে এখুনি চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলবো তোর কীর্তি। আমি হেসে ফেললাম। নীপা মুচকি মুচকি হাসছে। আমরা সবাই বারান্দায় এলাম, বড়মা আমাকে জাপ্টে ধরে আছে। -মুখ ধুয়েছিস? -হ্যাঁ। -ও নীপা একটু চা কর। নীপা ছুট লাগালো। আমি এসে বাইরের বারান্দার বেঞ্চিতে বসলাম। ইসলাম ভাই পাশে এসে বসলো একপাশে অনাদি বাসু। চিকনাকে দেখতে পাচ্ছি না, তখন একবার আমার বাড়ির বাঁশ ঝাড় থেকে উঁকি মেরেই আবার চলে গেলো। নিরঞ্জন দা চেয়ারে বসে আছে। নিরঞ্জন দাকে বললাম -তোমায় কে ফোন করেছিলো? -সেক্রেটারি। -কেনো? -তোকে আজই নিয়ে গিয়ে হাজির করতে হবে। আমি বলেছি আপনি যেমন সেক্রেটারি ও তেমনি একটা কাগজের মালিক, প্লাস লেখাটা ও লিখেছে। আপনার থেকে ওকে ভালো করে চিনি, আপনার কথা বললে ও সোজা বলে দেবে প্রয়োজন আপনার আপনি এসে দেখা করুন। -তুমি বলেছো, না আমার সামনে বলছো। -তুই বিশ্বাস কর অনি এরা সামনে ছিলো আমি বলেছি কিনা জিজ্ঞাসা কর। ভেতরে খুব জোড় হাসাহাসি চলছে। ইসলাম ভাই বললো -অনি তুই বোস, আমি ভেতরের মজলিসে গিয়ে বসি, ম্যাডাম মনে হয় গল্প বলা স্টার্ট করেছে। ইসলাম ভাই উঠে গেলো। নিরঞ্জনদার দিকে তাকিয়ে বললাম। -তুমি একবারে ইন্টারফেয়ার করবে না। তুমি জানো না কতো কোটি টাকার স্ক্যাম এটা। -কি বলছিস তুই! -কাগজ আসে নি? -এবার আসবে -লেখাটা পড়ো, তাহলে বুঝতে পারবে। সরকারি সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নিয়ে মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং বানাচ্ছিল। -কি বলছিস তুই! -এরা সবকটা ইনভলভড এর মধ্যে। এবার তোমাদের টনক নড়বে দেখবে। ভেতরে খুব জোরে হাসির রোল উঠেছে। অনাদি বললো দাঁড়া দেখে আসি। অনাদি ভেতরে চলে গেলো। -এতো সব ব্যাপারতো আমি জানি না, দাঁড়া কাগজটা এলে ভালো করে পড়ি আগে, তারপর পার্টিতে প্রশ্নটা তুলবো। -কত টাকার স্ক্যাম হয়েছে জানো? -কতো? -আমার কাছে যা কাগজ আছে তাতে তিনশো কোটি টাকা। এর বাইরেও আছে তারমধ্যে মিত্রার এক্স জড়িয়ে আছে। নিরঞ্জনদা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। -বলিস কি! -অনি ফালতু কথা বলে না। বাসু, ওই ভদ্রলোককে নিয়ে এসেছিলি। -হ্যাঁ। -কাজ হয়ে গেছে? -দু লাখে রাজি করিয়েছি। আমি ছুটে গিয়ে নিরঞ্জনদাকে একটা পেন্নাম করলাম। -আর তোকে পেন্নাম করতে হবে না। -বলো কি তুমি আমার মিশনের একজন। তোমাকে পেন্নাম করবো নাতো, কাকে করবো। -টাকা ধরিয়েছো? -কোথায় পাবো। -কেনো তুমি বড়মাকে বলতে পারতে। হেসে ফেললো। -তোর বড়মার কাছে আছে। -আলবাত আছে, আমার মিত্রার সব কিছু বড়মার কাছে। -দিয়েছিলো, আমি বলেছি রেজিস্ট্রির সময়। -কবে দিন ঠিক করেছো। -তুই না এলে হবে কি করে। -দূর, আগে তুমি তোমাদের নামে রেজিস্ট্রি করে নাও তারপর দেখা যাবে। শুভশ্র শীঘ্রম। -দাদা মল্লিকদাকে চাই। -তুমি সোমবার ডেট করো আমি দাদাকে নিয়ে চলে আসবো। -তাড়াহুড়ো করিস না। -আমি তোমাদের মতো ধরে খেলি না। -ঠিক আছে ব্যবস্থা করছি। -আর তিনশো একর? -খবর পাঠিয়েছি ওরা দেখে এসে দুপুরে খবর দেবে।
Parent