কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ১৫২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4711867.html#pid4711867

🕰️ Posted on March 14, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1379 words / 6 min read

Parent
অনেক সকালে আমার ঘুম ভাঙলো। কাল রাতে আমি আগে চলে এসেছিলাম। মিত্রা কখন এসেছে আমি জানি না। আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম। মিত্রাও আমাকে ডাকে নি। ঘুম ভাঙতে দেখলাম, মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরে শুয়ে আছে। আমি ওকে ডাকলাম। ও উঠে পরলো। -কিরে কটা বাজে। আমি মিটসেফের কাছে গিয়ে মোবাইলের ঘড়িটা দেখলাম। পাঁচটা বাজে। ওকে বললাম। মিত্রা ওর আগোছালো শাড়ি ঠিকঠাক করে নিলো। আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। নিচে নামলাম। এখনো ভোর হয়নি ভোরের পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে। আমি মুখ হাত ধুয়ে ফ্রেশ হলাম। মিত্রা বিছানা গোছাচ্ছে। মাঝে মাঝে আমার দিকে টেরিয়ে টেরিয়ে দেখছে। আমি পাজামা পাঞ্জাবী ছেড়ে প্যান্ট গেঞ্জি পরলাম। মিত্রা আজ কোনো দুষ্টুমি করলো না। বুঝলাম কাল রাতে একটা গোল টেবিল হয়েছে। হয়তো দাদার সঙ্গেও কথা হয়ে গেছে। -কিরে এখুনি বেরোবি। -হ্যাঁ। -বড়মাকে ডাকি। -ডাক। যেতে পারবি। -পারবো। -মনে হচ্ছে মিত্রার একটু একটু পরিবর্তন হচ্ছে। ওর কনফিডেন্টের জায়গায় আবার ফিরে আসছে। -বুবুন। -উঁ। -একটা কথা বলবো। -বল। -রেগে যাবিনা। -রাগ করবো কেনো। ও আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমার দু’কাঁধে হাত রেখে বুকে একটা চুমু খেলো। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। -কি বলবি বল। -কাল নিরঞ্জনদা সব কথা বলেছে। -তুই কি বলতে চাস বল। -নিরঞ্জনদার কোনো ক্ষতি হবেনা। -নিরঞ্জনদা ব্লাইন্ড হলে ক্ষতি হবে। নাহলে কিছুই হবেনা। -তোকে সত্যি কথা বলি। -বল। -বড়মা এই দায়িত্বটা আমার ওপর দিয়েছে। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। ফিক করে হেসে ফেললাম। -তুই হাসলি। -বড়মাকে এতো ভালোবাসি তবু আমার প্রতি বড়মার বিশ্বাসের ভিতটা ততটা শক্ত নয়। -তা নয়। তোকে আমি যেমন ভয় পাই তেমনি বড়মা, ছোটমাও তোকে ভয় পায়। ওদের দৃঢ় বিশ্বাস তুই কোনো অন্যায় কাজ করবি না। তবু কোথায় যেনো একটা... -জানি। তোর মধ্যেও এই ব্যাপারটা আছে। কেনো? আমি বাঘ না ভাল্লুক। তুই বড়মাকে বলিস নিরঞ্জনদা তার স্বার্থ রক্ষার জন্য আমার স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। তাই আমি মেনে নিতে পারছি না। -দাদা শোনার পর ঠিক এই কথা বলেছে। দাদা তোকে সাপোর্ট করেছে। নিরঞ্জনদাকেও খুব বকেছে। এমনকি বড়মাকে। দাদাকে কাল প্রথম একটু রাগতে দেখলাম। -নিরঞ্জনদা, বড়মা কি বললো। -চুপচাপ দাদার কথা শুনে গেছে। -ইসলাম ভাই ছিলো? -হ্যাঁ। -ইসলাম ভাই মনে হয় তোর ছকটা কিছুটা বুঝেছে। কালকে দাদার সঙ্গেও কথা হলো। দাদা ইসলাম ভাইকে সাপোর্ট করলো। -ছোটমা? -ছোটমা চুপচাপ কোনো কথা বলেনি। খালি একবার বলেছে। দিদি অনি কোনো অন্যায় কাজ করবেনা। -কোথায় বসে কথা হচ্ছিলো। -ওই বাড়ির বারান্দায়। -নিরঞ্জনদা বড়মাকে বললো, না বড়মা জিজ্ঞাসা করলো। -তুই চলে আসার পর নিরঞ্জনদা সবাইকে নিয়ে বারান্দায় গেলো। সব বললো। তুই নিরঞ্জনদাকে বলেছিস তুমি যদি দাদা বড়মার পরিচিত না হতে তাহলে তোমাকে ছাড়তাম না। -হ্যাঁ। -নিরঞ্জনদা ওই কথায় আরো ভয় পেয়েছে। বড়মার হাতে পায়ে ধরছে। দিদি তুই আমাকে অনির হাত থেকে বাঁচা। ও যদি একবার লেখে আমার কেরিয়ার ডুম। বড়মা প্রথমে নিরঞ্জনদাকে দেরে মুশে গালাগালি করেছিলো। পরে বলেছে অনি আমাকে এই বিষয়ে পাত্তা দেবে না। তুই তোর দাদাকে ফোন কর। আর এই দায়িত্ব মিত্রাকে দে। -তুই কি বললি। -আমি বলে দিয়েছি। এই ব্যাপার নিয়ে আমি বুবুনকে কোনো রিকোয়েস্ট করতে পারবোনা। অন্য ব্যাপারে বলো আমি বলছি। হাসলাম। -দাদার সঙ্গে আমার ফোন থেকে কথা হলো। -রেকর্ডিং করেছিস। -না। -ছাগল। আমার শোনা হলো না। -যাঃ রেকর্ডিং করা যায়। -দাদা সব শোনার পর তেরে গালাগাল করলো নিরঞ্জনদাকে। বলে কিনা অনি যদি তোর সম্বন্ধে লেখে আমি ছাপবো। এজ এ এডিটর। তোর কি করার আছে কর। না হলে অনি যা বলবে শুনে যা। ও একটা পরিকল্পনা মাফিক এগোচ্ছে। আর তুইতো চুনোপুঁটি। তোর পার্টির অনেক রাঘববোয়াল ওকে খুব ভালোবাসে। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি। -হ্যাঁ, দাদা ঠিক কথা বলেছে। -তুই এতো কানেকসন তৈরি করলি কি করে। -জেনে কি করবি। -আমারও তো একটু জানতে ইচ্ছে করে। -একটা সময় কোনো কাজ ছিলনা লেখা আর আড্ডামারা ছাড়া। তখন তুইও ছিলিনা যে একটু প্রেম করবো। -দেখ দেখ তুই কিরকম লাইটভাবে কথাটা নিলি। -এটা সিরিয়াস ব্যাপার নয়। -তোর কাছে কোনটা সিরিয়াস, কোনটা সিরিয়াস নয় বোঝা মুস্কিল। ইসলাম ভাই পর্যন্ত তোর ব্যাপার স্যাপারে ঘাবড়ে যাচ্ছে। -এই মিটিং থেকে তুই কি শিখলি। -একটা ব্যাপার শিখলাম বুবুন ছাড়া আমার বাঁচার কোনো গতি নেই। মিত্রা আমার বুকে মুখ রাখলো। জাপ্টে ধরলো। -আমাকে ছেড়ে কোনোদিন চলে যাবি নাতো। -যেতে পারি কিন্তু কেনো যাবো। কার কবিতার লাইন বলতো। -সুনীলের। -পড়েছিস। -পড়েছি কিন্তু বোধোগম্য হয়নি। -পড়ে নিস ভালো করে। -অনি। বড়মার গলা। মিত্রা আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি বারান্দায় গিয়ে বড়মাকে মুখ দেখালাম। -কিরে তোর হয়ে গেছে। -অনেকক্ষণ। নিরঞ্জনদা? -তৈরি হচ্ছে। -তাড়াতাড়ি করতে বলো। -আয়। -যাচ্ছি। আমি মিত্রা দুজনে নিচে নেমে এলাম। মিত্রা শাড়িটা আটপৌরে করে পরেছে। বেশ দেখতে লাগছে। ও এখন বেশ ঝকঝকে। আমরা দুজনে এ বাড়িতে এলাম। দেখলাম বারান্দায় সবাই বসে আছে। নিরঞ্জনদা ইসলাম ভাই কথা বলছে। আমায় দেখে একগাল হেসে বললো -কাল দারুন ঘুমিয়েছিস। -তোমার ঘুম ভালো হয়নি? -তুই ঘুমোতে দিচ্ছিস কোথায়। খালি টেনসনে ফেলে দিচ্ছিস। -কেনো। -কাল আমি দিদিমনিকে তোর কাছে ছাড়তে গেছিলাম। -ডাকলেনা কেনো। -তুই যেভাবে ঘুমোচ্ছিলি মায়া হলো। আমি ইসলাম ভাই-এর পাশে বসলাম। নিরঞ্জনদা আমার দিকে তাকিয়ে ফ্যাকাসে হাসি হাসলো। -মর্নিং স্যার। -আর মর্নিং মর্নিং করিসনা। চা খেয়ে নিয়ে তাড়াতারি চল। ইসলাম ভাই হো হো করে হেসে ফেললো। বড়মা আমার পাসে এসে বসলো। -কি ম্যাডাম কাল সব শুনলে ভাই-এর কাছ থেকে। -শুনলাম। -বলুন আপনার হুকুম। ছোটমা চা নিয়ে এলো। খামারে অনাদি আর চিকনার বাইক এসে দাঁড়ালো। -দাওনা ওর কানটা মূলে। ওই ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো। আমি ছোটমার দিকে তাকালাম। হাসলাম। -হাসিসনা তোর হাসিটা দেখলে গা জ্বলে যায়। আমার হাতে চায়ের কাপটা দিয়ে বললো। নাও চা গেলো। আমি বড়মার দিকে তাকালাম। বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে পড়ার চেষ্টা করছে। -তাকিয়ে আছো কেনো। -তুই কবে আসবি। -পর্শু রেজিস্ট্রি অফিসে দেখা হবে। -ওখানে গিয়ে আবার কি গন্ডগোল পাকাবি। আমি চায়ের কাপটা রেখে বড়মার গলা জড়িয়ে ধরলাম। -অনিকে বিশ্বাস হয়না। -না। -কেনো। -তুই একটা পাগল। পাগলকে বিশ্বাস করা যায়? -তাহলে দাদাকে বিশ্বাস করলে কি করে। -তখন বয়সটা অনেক কম ছিল তাই। -এখন কমিয়ে ফেলো। -পারিনা যে। -তুমি যার জন্য চিন্তা করছো। তোমায় কথা দিচ্ছি তার গায়ে একটা আঁচড় পরবে না। যদি পরে দেখবে তার অবস্থা মলের মতো করে ছেড়ে দেবো। তখন অনি সত্যি পাগল হয়ে যাবে। -কথা দিচ্ছিস। -কথা দিলাম। -ঠিক। -তিন সত্যি। নিরঞ্জনদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। -তুমি ভয় পাচ্ছ কেনো। -তুই জানিসনা আমার ওপর কি প্রেসার। -নেতা হবে প্রেসার উপভোগ করবেনা তা হয়। -তোর জন্য। একটু থেমে মুখটা ঘুরিয়ে। আমি এখানে না এলে ভালো হতো। -তোমাকে আমি আসতে বলিনি। বড়মা বলেছে। বড়মার সঙ্গে বুঝে নাও। ইসলাম ভাই আবার হো হো করে হেসে ফেললো। ছোটমা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। মিত্রা মুখ ধুয়ে চায়ের কাপ নিয়ে এসে বসলো। ও চুপচাপ। ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম, তোমার সঙ্গে একটু কথা আছে। খামারে চলো। -এখানে বল। বড়মা বললো। হাসলাম। এটা আমার আর ইসলাম ভাই-এর ব্যাপার। কেউ মাথা গলাতে পারবে না। আর গলালেও ঢুকবে না। ইসলাম ভাই হাসছে। আমি আর ইসলাম ভাই খামারে এলাম। -আমি রতনকে বলে দিয়েছি। তোর সঙ্গে দেখা করে নেবে। -রতনের ফোন নম্বর আমার কাছে নেই। -আমার পুরোনো নম্বরে ফোন করবি। -রতনেরটা দাও। ইসলাম ভাই রতনের ফোন নম্বর দিলো। আমি আমার মোবাইলে সেভ করলাম। -আমার ফোন নম্বর রতনের কাছে আছে। -আছে। তোকে ও একটা ব্যাগ দেবে। নিয়ে আসবি। -ওখানকার লেটেস্ট নিউজ। -ফার্স্ট ক্লাস। তোর কাজ। কোনো খুঁত নেই। -মুখার্জী কোনো খোঁজ খবর করেছিলো। -প্রথম দিন তারপর আর করেনি। -অবতারের খবর কি? -রতন বললো ও খুব ভয় পেয়ে গেছে। তোকে খুব খোঁজা খুঁজি করছে। তোর সঙ্গে দেখা করতে চায়। -কেনো? তুমি কিছু বুঝতে পারছো। -তোকে জিজ্ঞাসা করবো ভেবেছিলাম। তুই যা ব্যস্ত। -ভিআইপি মানুষ। ইসলাম ভাই আমার পেটে একটা গুঁতো মারলো। -কেনোরে। -মিঃ ব্যানার্জী ওর ঘারে ঝুলে পরেছে। বাঁচতে চায়। ইসলাম ভাই-এর মুখটা কঠিন হয়ে গেলো। -তুই কি ভাবছিস। -আমি আগে এদিকটা সামলে নেবো। মলের শেষ পরিণতি কি হয় দেখবো। তারপর হাত দেবো। -আমি কালকে হাই কমান্ডে ফোন করেছিলাম। -কি বলছে। -এই ব্যাপারটায় ওরা খুব খুশি। -তুমি কোথায় জানতে চাইলো নাকি। -দেখলাম জানে। বললো খুব সেফটি জায়গা। ওখানে থাকো। নিরঞ্জনদার ব্যাপারটা শুনলাম। -তুমি কি বলো। -তোর জায়গায় তুই ঠিক আছিস। ওই সচিব ফেঁসেছে। -অনেক কামিয়েছে। নিরঞ্জনদার কে হয়। -মুখে বলছে কেউ নয়। তবে মনে হচ্ছে নিরঞ্জনদার খুব কাছের লোক। এক লবির হবে। -আজকে ওর প্যান্ট খুলবো যাই। -ওতো এমনিই তোকে ধসছে। একটা আন্ডার স্ট্যান্ডিং-এ যেতে চাইছে। ওকে মনে হয় ট্রান্সফার করবে। -তোমায় কে বললো। -হাইকমান্ড। -আমি আজ অনিমেষদার সঙ্গে কথা বলবো। কালকে খবর পাঠিয়েছি। -তোর লবি আমার থেকে স্ট্রং। -এইতো আবার গল্প দিলে। ইসলাম ভাই আবার হো হো করে হেসে আমার পেটে খোঁচা মারলো। -পর্শু চলে যাবে রেজিস্ট্রি অফিসে। আমি সব বানিয়ে নিয়ে আসছি। -শোন আমি চল্লিশ আনাচ্ছি আর লাগলে বলে দে রতনকে বলে দিই। -আর দশের কথা বলে দাও। লাগলে যাওয়া আসা করছি তো নিয়ে আসা যাবে। -আমাকে কবে ছাড়বি। -তোমার কি না গেলেই নয়। -ঠিক তা নয়। তুই বললে কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আসবো। -আমি যাই হালচাল বুঝি তারপর। দামিনী মাসিকে ফোন করেছিলে। -হ্যাঁ। ভজুর সঙ্গে কথা বলিয়ে দিয়েছি। দামিনী কেঁদে ফেললো। -কি জীবন আছে বলোতো। -সত্যি অনি তোর সঙ্গে দেখা না হলে জীবনে অনেক ঘাটতি থেকে যেতো। -চলো।
Parent