কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ১৫৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4711877.html#pid4711877

🕰️ Posted on March 16, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1506 words / 7 min read

Parent
আমরা চলে এলাম। বড়মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। মিত্রা হাসছে। বুঝলাম ওরা সারাক্ষণ আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে ছিল। ওদের চোখমুখ তাই বলছে। -চলো এবার বেরিয়ে পরি। নিরঞ্জনদার দিকে তাকিয়ে বললাম। নিরঞ্জনদা হতাশার সুরে বললো চল। আজ তোর ওপর আমাকে নির্ভর করতে হবে। এখানে দিদির সামনে এক বলছিস। গিয়ে দেখবো তুই আর এক মূর্তি ধারণ করেছিস। -আচ্ছা, তোমার কত ক্ষমতা! তুমি এখুনি একটা ফোন করলে আমাকে এখান থেকে পুলিশে এ্যারেস্ট করে নিয়ে চলে যাবে। মিথ্যে মামলায় ছ’মাস জেল খাটাবে। -সেতো বুঝলাম তারপর ছমাস বাদে যখন বেরোবি তখনতো আমার ষষ্ঠীপূজো করে ছেড়ে দিবি। তোকে বেশি ঘাঁটায়। যে ঘাঁটাবে সে মরবে। মিত্রা হো হো করে হেসে ফেললো। -তুই হাসিসনা। যত নষ্টের গোড়া তুই। -বড়মা দেখছো। সব দোষ আমার ঘারে চাপিয়ে দিচ্ছে। -থাম তুই। আমি বড়মা ছোটমা সবাইকে প্রণাম করলাম। বড়মা আমার থুতনিটা ধরে চুমু খেলো। আমার সম্মানটা রাখিস। হাসলাম। গাড়িতে যেতে যেতে নিরঞ্জনদা আমার সঙ্গে একেবারেই কথা বলছে না। খালি জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ফোনে কথা বলে চলেছে পার্টির লোক জনের সঙ্গে। সবাইকেই একটা কথা বলে দিচ্ছে আমি কলকাতা যাচ্ছি ফিরতে চার-পাঁচদিন সময় লাগবে। শেষে আমি বললাম। -কিগো তুমি কি আমার সঙ্গে কথা বলবেনা বলে ঠিক করেছো। -তুই কথা বলছিসনা তাই বলছিনা। তোকে বোঝা মুস্কিল। -দাদার সঙ্গে কথা হয়েছে। -হ্যাঁ, কালকে রাতে বলেছি। সেতো তোর থেকে এককাঁটা ওপরে। উল্টে আমাকে ধমক দিলো। -কে ঠিক আমি না দাদা। -তোরা দুজনেই ঠিক আমি একমাত্র ভুল। হাসলাম। -হাসিসনা তোদের দুজনের কথা শুনে আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। -আচ্ছা ভদ্রলোক তোমার কতটা কাছের। -আরে আমার আত্মীয়। -দাদা জানে। -না। -তাহলে। -তাহলে আবার কি জানলে আরো গালাগালি করবে। -ভদ্রলোকের ট্রান্সফারের অর্ডার হয়ে গেছে। নিরঞ্জনদা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তুই এটা কি করলি। -আমি করিনি। অনিমেষদা করেছে। নিরঞ্জনদার গালে কেউ যেনো একটা চড় মারলো। থম মেরে কিছুক্ষণ বসে রইলো। -কিগো বলো কিছু। -কি বলবো। কি ভাবছে বলতো পার্টিতে। সকলে একটাই কথা বলবে আমি এর মধ্যে জড়িত। -ওই দায়িত্বটা আমার ওপরে ছেড়ে দাও। -তুই দায়িত্বটা নিবি। -অবশ্যই নেবো। -তুই বিশ্বাস কর আমি অনেকবার বারণ করেছি শোনেনি। দাদা তোর কথা বলেছে। গা করিনি। তোকে প্রথম দেখার পর দাদাকে সব বলেছি। -পুরোনো কাসুন্দি ঘেঁটে লাভ নেই। -নারে বিশ্বাস কর। পার্টিতে অনেকেই জানে ও আমার আত্মীয়। -কিরকম আত্মীয়। -আমার বোনের হাজব্যান্ড। -দাদা জানে। -না। আমার জন্যই ও ওখানে পৌঁছতে পেরেছে। -ভদ্রলোকের আরো দোষ আছে। -সেতো কালকে তুই বলার পর খোঁজ খবর নিতে শুরু করলাম। তখন সব পরিষ্কার হল। বোন বললো। -তোমার বোনের কপালটা খারাপ। -বোনের সঙ্গে আমার কপালটাও পুড়লো। -তোমারটা পুড়বেনা। ভদ্রলোকের এ্যাগেইনস্টে তদন্ত কমিশন গঠন হবে। -হোক। শালা মরুক। তারপর আমি বুঝবো। তুই আমাকে বাঁচা। পার্টিতে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে। কালকে থেকে আমার অপনেন্ট লবি উঠে পরে লেগেছে। -তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। আমি তোমায় কথা দিচ্ছি। -তোর কথায় আমি বিশ্বাস করিনা। তুই আর এক রাজনীতিবাজ। ঝপ পাল্টি খেয়ে যাবি। -এইতো তুমি ফর্মায় ফিরে এসেছো। এতো হতাশ হলে পার্টি করবে কি করে। -তুই জানিস না অনি এতদিন আমি পার্টি করছি কেউ আমার সম্বন্ধে টেঁ ফুঁ করতে পারেনি। আজ ওটার জন্য আমাকে পথে বসে পরতে হবে। তাই তোকে নিয়ে যাচ্ছি। যদি তুই আর না লিখিস তাহলে ও হয়তো বেঁচে যাবে। যতোই হোক ওপরের দিকে থুতু ফেললে নিজের গায়ে পরে। -তোমার সঙ্গে অনিমেষদার আলাপ আছে। -মুখ চেনে নাম জানে সেইভাবে কথা হয়না। তোর কথা মতো ওরা বড় ভাই আমি ছোটো ভাই ফুর্তি করি। কালকে তোর কথাটা শুনে খুব রাগ হয়েছিলো। তারপর ভেবে দেখলাম তুই টোটাল ব্যাপারের নির্যাসটা বলেছিস। -এবার বলো তুমি কি করতে চাও। -তুই যেভাবে বলবি করবো। -দাঁড়াও। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে অনিমেষদাকে ডায়াল করলাম। ভয়েজ অন করলাম। যাতে নিরঞ্জনদা শুনতে পারে। -হ্যালো। -দাদা আমি অনি। সুপ্রভাত। -বাবা খুব ফুর্তিতে আছিস মনে হচ্ছে। -একেবারেই না। -গলা শুনে মনে হচ্ছে। -কি করছেন। -চা খেতে খেতে তোর লেখাটা পরছি। আর ব্রিফ করছি। -কেনো দাদা আমার লেখাটা কি এতই ইমপর্টেন্ট যে ব্রিফ করতে হবে। -তুইতো আমায় সমস্যায় ফেলেছিস কিনা। -আমি আবার কি সমস্যায় ফেললাম। -শুক্রবার মিটিং আমাকে বিষয়টা নিয়ে বলতে হবে। -কেনো জেরক্সতো আপনার কাছে আছে। -খুঁজে পাচ্ছিনা। তুই কি ফিরছিস? -আপনি কি করে বুঝলেন! -গাড়ির আওয়াজ পাচ্ছি। -হ্যাঁ। আজকে একবার আপনার কাছে যাবো। -আমিও তোকে তাই বলবো মনে করছিলাম। তুইতো আমার মুখের কথাটা কেড়ে নিলি। -আমার একটা সমস্যা হয়েছে। -তুইতো সমস্যা ছাড়া আমাকে ফোন করিসনা। -এটা অভিমানের কথা। -তোর বৌদি লেখাটা পরতে পরতে বলছিলো অনি বড্ড ভালো লিখে ফেলেছে। -এটা অসম্ভব রকমের বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। -তোর সমস্যার কথা বল। -আজ আমাকে সরকারের এক আমলা ডেকে পাঠিয়েছে। তাই যাচ্ছি। -আবাসন দপ্তরের। -হ্যাঁ। -একবারে যাবিনা। লোকটা অনেক দিন থেকে জ্বালাচ্ছে। ওটাকে দূর করতে হবে। ওর আরো অনেক সমস্যা আছে। দাঁড়া ওটাকে এমন জায়গায় পাঠাবো আর কোনোদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। -তাহলে আমি যাবোনা ? -একবারে যাবিনা। তোর কাজ তুই করেছিস। ওর ক্ষমতা থাকলে প্রমাণ করুক। -আমিও সেটা দাদাকে বলেছিলাম। তবু দাদাকে ওরা প্রেসার করেছে। দাদা বললো তুই নিরঞ্জনকে নিয়ে একবার যা। -কে নিরঞ্জন? -বাবা তুমি পার্টির মাথা হলে কি করে বলোতো। অনিমেষদা হো হো করে হেসে ফেললো। -আরে পার্টি ওই একটা নিরঞ্জনকে নিয়ে চলে। বলনা কে সেই মহান ব্যক্তি নিরঞ্জনদা আমার দিকে ফ্যাকাসে চোখে তাকিয়ে আছে। -আমার জেলার সভাধিপতি। -ও, হ্যাঁ হ্যাঁ, ভদ্রলোকের সঙ্গে একবার আলাপ হয়েছিলো। মনে পড়ছে। ওই জেলার দায়িত্বে বিধান আছে। -বৌদি কি সকালে চা টা কড়া করে দেয়নি। -না রে আজকের চা টা কেমন পাতলা পাতলা করেছে। -দাদার সম্পর্কে ভাই হয় আমায় উনি সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন। -বলছিনা একবারে যাবিনা। তুইতো ফাইল নম্বর দিয়ে দিয়ে লিখেছিস। এটার দরকার ছিল। সব জায়গায় করাপসন। এত চেষ্টা করেও কিছুতেই বন্ধ করতে পারছিনা। এইসব লোক গুলোর জন্য আমাদের সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। -তুমি বললে যাবো, না হলে যাবোনা। -তুই এক কাজ কর নিরঞ্জনবাবুকে নিয়ে দুপুরে আমার বাড়িতে লাঞ্চের সময় চলে আয়। -দাদা, মল্লিকদা যদি সঙ্গে যায় আপত্তি আছে। -একেবারে না। অনেকদিন দেখা হয়নি।  কয়েক ঘন্টা গল্প করা যাবে। -ঠিক আছে। -আমি তোর বৌদিকে বলে রাখছি। তুই আসছিস। -তুমি বললে আমি যাবোনা তা হয়। -ঠিক আছে। ফোনটা আফ করলাম। রেকর্ডিংটা সেভ করলাম। নিরঞ্জনদা আমার দিকে এক দৃষ্টে দেখে যাচ্ছে। ফোনটা পকেটে ঢোকালাম। নিরঞ্জনদা আমার হাতটা ধরে ফেললো। অনি আজ আমার দফারফা হয়ে যাবে। -কেনো। -আমি অনেক অন্যায় করেছি। -ভুল স্বীকার করে নেবে। অনিমেষদা নিজের দায়িত্বে সব ঠিক করে দেবে। অনিমেষদার মুখের ওপরে কথা বলার লোক এই মুহূর্তে পার্টিতে খুব কম ব্যক্তি আছে। -তোর সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠতা কি করে হলো। -জেনে তোমার লাভ। -না বুঝতে পারছি পার্টিতে টিঁকতে গেলে তোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। -আমি ব্যবসায়ী লোক। আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে লাভ নেই। নিরঞ্জনদা আমার হাতটা ধরে আছে। প্লিজ তুই এরকম করিসনা। -আমার তিনশো একর জমি। -তুই যা ভাঁজ মারলি তাতে আমি না দিলেও তুই আদায় করে নিবি। -বৃথা তুমি বড়মাকে কাল রাত থেকে টেনসনে ফেললে। এই মাথা নিয়ে কি করে যে পার্টি করো বুঝতে পারিনা। -সত্যি রে মনে হচ্ছে আমার এখনো অনেক বাকি আছে। -কার জোরে জেলা সভাধিপতির পদটা বাগিয়েছো। -বিধানদাই দিয়েছে। -তখন তুমি ভালো ছিলে। দুবছরে অনেক কামিয়ে নিয়েছো। তাই না। -তুই এভাবে বলিসনা। -পার্টিটা কামানোর জায়গা নয়। ভালোবাসার জায়গা। জানো অনিমেষদার বাড়িতে গেলে তুমি অবাক হয়ে যাবে। কিন্তু ভদ্রলোক যদি মনে করতেন আমি রাজপ্রসাদে থাকবো এখুনি তা করতে পারেন। এক পয়সাও লাগবেনা। -জানি। -তাহলে পার্টি তোমাকে পুষবে কেনো। -আমার ভুল হয়ে গেছে। -তুমি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছো। ভুগতে তোমাকে হবে। আমি চেষ্টা করবো রিকভার করার। কিন্তু কতটা পারবো জানিনা। -তুই একটু দেখ। -আমি তোমার পেছনে বলছিনা। তোমার সামনে বলছি। এখন থেকে তোমার ভগ্নীপতিকে মুখ মুছে ফেলে দাও। নাহলে তোমার সামনে ঘোর বিপদ। -আমি কি করি বলতো। -আগে বড়মাকে ফোন করে সব জানাবে। বড়মা কষ্ট পাবে এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না। -ঠিক আছে ফোন করছি। -তোমার ফোন থেকে নয় আমি ফোন করছি তুমি কথা বলবে। আমার শোনার দরকার আছে। -তাই দে। আমি মিত্রার ফোনে ডায়াল করলাম। -কিরে ধাবায় বসে গিলছিস না। -হ্যাঁ। আলুপরোটা, চিকেন চাঁপ, মটর পনির। -দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি। -ঠিক আছে বড়মাকে দে। -বড়মা তোর কথা শুনতে পাচ্ছে। -তোরা কোথায়। -তোর স্কুলে এসেছি। ঘুরতে। -কে কে আছে। -সবাই আছে। -খুব বাড়িয়ে বাড়িয়ে আমার গুণকীর্তন করছিস। -বেশ করছি। নে বড়মা কথা বলবে। -দে। কিগো এখনো অনির ওপর রাগ পরেনি। -তোর ওপর রাগ করবো কেনো। -তাহলে অভিমান। চুপচাপ। -অনি ভুল কাজ করেনা। এটা বহুবার বলেছি। আবার বললাম। নাও নিরঞ্জনদার সঙ্গে কথা বলো। -দিদি। -বল। -আমার সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। -তাই। বড়মার গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে গেছে। -তোর সঙ্গে আর কথা বলবোনা। অনিকে দে। আমি ইশারায় নিরঞ্জনদাকে বললাম তুমি কথা বলো। আমি বলবো না। -কিরে চুপচাপ কেনো। অনিকে দে। -অনি তোমার সঙ্গে কথা বলবেনা। -তাহলে রেখে দে। তোর সঙ্গে যা কথা বলার হয়ে গেছে। মিত্রা ফোনটা বন্ধ কর। বড়মা ফোনটা রেখে দিলো। আমি ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে জানলার দিকে মুখ করে বসে থাকলাম। কলকাতার খুব কাছে চলে এসেছি। আবার পকেট থেকে ফোনটা বার করে দাদাকে ডায়াল করলাম। দেখলাম এনগেজড। মল্লিকদাকে ডায়াল করলাম। দেখলাম এনগেজড। পকেটে ঢুকিয়ে রেখে দিলাম। জানলার দিকে মুখ করে চুপচাপ বসে রইলাম। কিছু ভালোলাগছে না। এক স্বপ্ন দেখি আর এক হয়ে যায়। মানুষের জীবনের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলো মাঝে মাঝে এমনভাবে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে তল খুঁজে পাওয়া যায় না। এখান থেকেই মানুষের জীবনে জটিলতার সৃষ্টি হয়। একে অপরকে ভুল বোঝে। দূরত্ব তৈরি হয়। ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বার করলাম। দেখলাম মল্লিকদার ফোন। -বলো। -সরি স্যার, তোর ছোটমার সঙ্গে একটা ভাইট্যাল ব্যাপার নিয়ে কথা বলছিলাম। -বলো কি বলছো। -বাবা খুব গম্ভীর মনে হচ্ছে। -না। ঠিক আছি। -কলকাতা ঢুকতে আর কতটা বাকি। -আধঘন্টা। তোমরা কোথায়? -অফিসে ঢুকে পরেছি। -এত সকালে! -তুই যা শুরু করেছিস। এরপর খাট বিছানা নিয়ে অফিসেই থাকতে হবে। -কেনো। স-বাই এসে তোকে খোঁজে। না পেলে দাদা আমি। -ভালোই তো ভিআইপি হয়ে যাচ্ছ। -ক্ষমা দে। বুঝেছি তোর কথা বলার মুড নেই এখন। অফিসে আয় সব বলছি। -ঠিক আছে।
Parent