কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ১৫৭

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4716361.html#pid4716361

🕰️ Posted on March 21, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1074 words / 5 min read

Parent
আমি মিত্রার ঘরের দিকে গেলাম। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই হিমাংশু উঠে দাঁড়ালো। -আবার কি হলো। -আর বলিসনা। সব শালা হারামী। হিমাংশু মুচকি হাসলো। আমি ওর পাশে বসে সংক্ষেপে সব বললাম। ও শুনে থ। -কালকেই রেজিষ্ট্রি করবো। সব ব্যবস্থা কর। আজ বিকেলে অফিসে একবার আয়। -তুইতো আমাকে মেরে দিবি। -কি করবো তুই বল। -সেও ঠিক মালিক হওয়ার পর নিঃশ্বাস নিতে পারছিস না।। -দাঁড়া। মিত্রার টেবিলের ফোনটা নিয়ে দাদার ঘরে ফোন করলাম। -হ্যালো। -দাদা নিরঞ্জনদার কাছে একটা দলিল আছে। হরিদাকে দিয়ে মিত্রার ঘরে পাঠিয়ে দাও। ফোনটা রেখে দিলাম। হরিদা কিছুক্ষণ পর এলো। এই নাও। -হরিদা তোমার ছেলে কোথায়? -দাদা নিউজ রুমে ডিউটি দিয়েছে। বলেছে দিদিমনি এলে দিদিমনির ঘরে থাকবে। -তাই। তুমি খুশি। -হ্যাঁ ছোটবাবু। ছেলেটা একেবারে বখে যাচ্ছিল। -একবার কথা বলিয়ে দিও। -ঠিক আছে। হরিদা চলে গেলো। হিমাংশুকে সমস্ত পরিকল্পনার কথা বললাম। -তুই কি করতে যাচ্ছিস একবার ভেবে দেখেছিস। -আমি ভেবে চিন্তেই সব করছি। -এখানে আমার লোককে ফুল টাইম রাখতে হবে। -ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। -তাই কর। না হলে আমার পক্ষে ম্যানেজ করা সম্ভব নয়। -বলছি তো তাই হবে। তুই এই দুটো আগে সাল্টা। বিকেলে একবার অফিসে আয়। -ঠিক আছে। এখন উঠি। -শোন স্ট্যাম্প পেপার কিনে নে। -কত টাকার কিনবো? -লাখ খানেক টাকার। তোর আগের বিলগুলো পেয়ে গেছিস। -হ্যাঁ। -ঠিক আছে যা আমি কিছু কাজ সেরে নিই। হিমাংশুকে ছেড়ে সোজা নিউজরুমে চলে এলাম। আমাকে দেখেই ঘরটা কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। সন্দীপ উঠে এলো। আর সেই ছেলে দুটো। -অনিদা শরীর খারাপ? -না। -তোমার মুখটা কেমন কেমন লাগছে। আমি একটার পিঠ চাপড়ে বললাম -সব সময় অনিদার মুখটা ঝকঝকে থাকবে তা হয়। চেষ্টা করি। হয়না। -চা নিয়ে আসবো? -খাওয়াবি? -তোমাকে চা খাওয়াবো এটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। -যা বলে আয়। ছুটে চলে গেলো। সন্দীপকে নিয়ে আমার টেবিলে এসে বসলাম। সন্দীপ বুঝলো জরুরি কথা আছে। -বল। -আমি পর্শুদিন ব্যাক করে যাবো। আমার সঙ্গে দাদা মল্লিকদা যাবে। কাগজ সামলাতে পারবি। -এই কাজ! সন্দীপ এমন ভাবে কথা বললো যেনো কিছুই না। সাতদিন আগেও সন্দীপ কিছু বলতে গেলে সাতবার ভাবতো। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। -তাকিয়ে আছিস কেনো। বিশ্বাস হচ্ছেনা। হাসলাম। -আমি কথা দিচ্ছি। তোর ওই দুটো পোলা যদি থাকে আমার কাউকে দরকার নেই। -তৈরি করে নিয়েছিস। -কাজের ব্যাপারে দারুন সিরিয়াস। এরি মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে লেগে গেছে। -কেনো? -ওরা রিপোর্টিংয়ে ভুল ধরে। হাসলাম। -সলিড মাল। চা এলো। -কিরে তোরা ঝগড়া করছিস সিনিয়রদের সঙ্গে। -সন্দীপদা বলেছে। হাসলাম। সন্দীপকে বললাম জলের বোতলটা এগিয়ে দে। ছেলেটা এগিয়ে দিলো। ঢক ঢক করে কিছুটা জল খেলাম। চায়ে চুমুক দিলাম। -দুদিনের কাগজের খবর কি। -হট কেক। নো রিটার্ন। -কালকেরটা বেরোতে দে। -বেরোতে দে মানে। এতোক্ষণে ছাপা হয়ে বাইরের কাগজ চলে গেছে। -ফলোআপ করে যাচ্ছিস। -তোর চেলা দুটো এঁটুলে পোকার মতো লেগে আছে। নাম ফাটছে না। হরিদা এসে দাঁড়ালো। দাদাবাবু ডাকছে। -কেনো। -কোথায় যাবার আছে উনি ফোন করেছেন। -যাও যাচ্ছি। সন্দীপের সঙ্গে কথা শেষ করে দাদার ঘরে এলাম। -অনিমেষ ফোন করেছিলো? -তুমি কথা বলেছো। -হ্যাঁ। আমাদের জন্য তাড়াতাড়ি চলে এসেছে। -চলো বেরিয়ে পরি। মল্লিকদার মুখটা খুশি খুশি দেখাচ্ছে। এতোক্ষণ একটা বিষ কালো মেঘে মুখটা ঢেকে রেখেছিলো। আমাকে দেখেই হেসে মুখটা নীচু করলো। বুঝলাম ছোটমা বড়মার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। -এইনে তোর ফোন। দাদার হাত থেকে ফোনটা নিলাম। -অফিসের গাড়িতে যাওয়া যাবেনা। ট্যাক্সি করে যেতে হবে। অমিতাভদা আমার মুখের দিকে তাকালো। আমরা বেরিয়ে এলাম। নীচে রিসেপসনিস্ট ম্যাডাম উঠে দাঁড়িয়ে মাথা নীচু করে নিলেন। আমরা বাইরে এলাম। নিরঞ্জনদার ড্রাইভার এগিয়ে এলো। নিরঞ্জনদা ওনাকে এখানেই অপেক্ষা করতে বললেন। সিকুউরিটির ছেলেটিকে বললাম একটা ট্যাক্সি ডেকে আন। ছেলেটি একটা ট্যাক্সি নিয়ে এলো। ইসমাইল এগিয়ে এসে বললো ছোটদা আমি যাবো না। হাসলাম। -দিদিমনি কেমন আছে? -ভালো। -তোর ছেলে কেমন আছে। -এখন একটু ভালো। -আমি ফিরে আসছি একবার দেখা করিস। -আচ্ছা। ট্যাক্সি আসতে আমরা তিনজন উঠে বসলাম। আমি অলি গলির মধ্যে দিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে অনিমেষদার বাড়ি পৌঁছলাম। দাদা আমার ওপর গজ গজ করছে। কলকাতা শহরে আর কি কোনো রাস্তা নেই। তুই কি আমাদের রাস্তা চেনাচ্ছিস। আমি চুপচাপ। ট্যাক্সি ড্রাইভার আমার ওপর বিরক্ত হচ্ছে। মুখে কিছু বলতে পারছে না। অনিমেষদার বাড়ির সামনে এসে ট্যাক্সি ছেড়ে দিলাম। পকেট থেকে ফোনটা বার করে রতনকে একটা ফোন করলাম। -অনিদা বলো। -আমাক আর পাহারা দিতে হবে না। -উঃ তুমি ধরে ফেলেছো। -কেনো অলি গলি দিয়ে ট্যাক্সি করে এলাম বুঝতে পারলিনা। -দাদা আজ তোমার পেছন ছাড়তে বারণ করেছে। -আমি তোকে বলছি তুই যা। এখান থেকে যখন বেরোবো তোকে জানাবো। খাওয়া দাওয়া করেছিস? -হ্যাঁ দাদা। তোর সঙ্গে যারা আছে। তাদের খাওয়া দাওয়া হয়েছে। -হ্যাঁ। -ওটাকে কোথায় তুললি? -আমাদের হোটেলে। -কাগজপত্র সব নিয়ে এসেছে। -আবিদ দেখে নিয়েছে। ব্যাটা সব নিয়ে আসতে চাইছিল না। আবিদ ওর আলমারির সব কাগজ নিয়ে চলে এসেছে। এক ট্র্যাঙ্ক। -করেছিস কি তোরা। -তোমার কোনটা দরকার কি করে জানবো। -ঠিক আছে তুই এখন যা। -আচ্ছা দাদা। দাদার দিকে তাকালাম। দাদা একবার চলতে চলতে থেমে আমার দিকে তাকালো। নিরঞ্জনদা দেখছে। মল্লিকদা মুচকি হাসছে। -দাঁড়ালে কেনো চলো। -তোকে দেখছি। -দেখে লাভ নেই। বাঁচতে গেলে এসব করতে হবে। মালিক বানিয়েছো। দাদা মাথা নীচু করে আমার পাশে পাশে হাঁটছে। দোতলায় উঠে বেল বাজাতেই কাজের মেয়েটি দরজা খুললো। -আয় ভেতরে আয়, তারপর তোর পিঠ ভাঙছি। অনেক বড় রাইটার হয়ে গেছিস। বৌদির গলা। -এখন পিঠ ভেঙোনা আমার সঙ্গে অনেকে আছে। জুতো খুলতে খুলতে বললাম। ভেতরে ঢুকে বৌদিকে প্রণাম করলাম। আমার পেছন পেছন সবাই ঢুকলো। আমি ছাড়া এই বাড়িতে সবাই প্রথম এলেন। দাদার সঙ্গে অনিমেষদার পরিচয় আছে। এই পর্যন্ত। কাজের তাগিদে পরিচয়। সব কাগজের এডিটরের সঙ্গেই অনিমেষদার পরিচয় আছে। আমি দাদার সঙ্গে নিরঞ্জনদার সঙ্গে মল্লিকদার সঙ্গে বৌদির পরিচয় করিয়ে দিলাম। দাদা ঘরের ভেতর ছিলেন বেরিয়ে এলেন। -তাহলে তুই এলি। -কেনো সন্দেহ ছিলো। -তুই এখন কাগজের মালিক। কোটি কোটি টাকা তোর। আমার মতো নগণ্য মানুষকে পাত্তা দিবি কিনা সন্দেহ ছিলো। -বৌদি আমি আসি, যেদিন কাগজের মালিক থাকবোনা সেদিন আসবো। -এ জম্মে হবে না। তুই যে ভাবে পাকে পাকে জড়াচ্ছিস। মাথা নীচু করলাম। -চলুন দাদা আমরা ভেতরে যাই। ও এখানে থাকুক। দাদারা সবাই অনিমেষদার সঙ্গে ভেতরে চলে গেলো। -ছোটো ম্যাডাম কোথায় ? -কলেজে। এসে পরলো বলে। -কি রান্না করেছো। -মন্ডা মিঠাই। -তাহলে খাবো না। -তোর জন্য স্পেশাল রান্না আছে। আলু পোস্ত ডাল ছাড়া তো কিছু খাস না। -কে দেবে বলো। এখন তবু বড়মার কাছে থাকি। -বিয়ে করছিস কবে? -তোমাকে সব বলবো। -তারমানে করা হয়ে গেছে। -আমার আবার বিয়ে। -কেনো মিত্রাকে পেয়েছিস তো! -পেয়েছি। এই যা। বৌদির পেছন পেছন রান্না ঘরে এলাম। -তোর দাদার মুখ থেকে কিছু কিছু শুনি। কালকে তোর লেখাটা পড়ে বলেছি, এই বার অনির কলমের ধার অনেকটা কমে যাবে। -না বৌদি তা হতে দেবোনা। তুমি দেখবে। -হলেই ভালো। -কি করবে? -খাবারগুলো একটু গরম করি। -তুমি সরো আমি করে দিচ্ছি। -না তোকে এখন কিছু করতে হবে না। তুইকি এখন সেই অনি আছিস। বিজনেস ম্যাগনেট বলে কথা। -তুমিও বলবে। -আচ্ছা বাবা বলবো না। -সুরো কখন আসবে? -ওর বাবা ফোন করেছিলো। বললো অনিদা আসবে আমি বেরোচ্ছি। -চলো জায়গা করে নিই খিদে পেয়েছে। -কাকলী? বৌদির ডাকে কাজের মেয়েটি রান্নাঘরের সামনে এলো। -জায়গা করেছিস? -হ্যাঁ -আমি গিয়ে ডেকে আনি তুমি ব্যবস্থা করো। সবাই একসঙ্গে বসবো। -যা।
Parent