কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ১৬

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-3907508.html#pid3907508

🕰️ Posted on November 2, 2021 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 782 words / 4 min read

Parent
ক্যান্টিন থেকে সোজা চলে এলাম নীচে, এডিটর রুমে ঢোকার মুখে দেখলাম একজন সিকুউরিটি গার্ডের মতোন লোক দাঁড়িয়ে আছে। ঢুকতে যেতেই আমাকে বাধা দিলেন। কি প্রয়োজন জিজ্ঞাসা করলেন। তারপর বললেন, ঐখানে গিয়ে স্লিপ করতে। দেখলাম, নিচে যে রিসেপশনিস্ট ভদ্রমহিলা বসতেন তিনি বসে আছেন কাদের সঙ্গে যেন কথা বলছেন। আমি বাধ্য ছেলের মতোন সেখানে গেলাম, আমাকে দেখেই ভদ্রমহিলা মুচকি হেসে বলে উঠলেন আরে অনিন্দবাবু যে, কি দরকার। -এডিটর সাহেবের সঙ্গে দেখা করবো। -ওঃ , এই সিকুরিটি টাকে নিয়ে পারা যাবে না। সবাইকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে দেখুন তো। -কি আর করা যাবে, ও তো আর আমাকে চেনে না। -চিনবে না কেনো। আপনি এই হাউসের লোক। -ও আজ আমাকে প্রথম দেখছে। -ঠিক আছে চলুন আমি বলে দিচ্ছি। -না না আপনি একটা স্লিপ লিখে পাঠিয়ে দিন। -না না এটা হয় না। -কেনো হয় না, যেটা অফিসের ডেকোরাম সেটা তো মানতে হবেই। ভদ্রমহিলা আমার মুখের দিকে তাকালেন। কি যেন ভাবলেন। হয়তো শেষের কয়টা কথা বেশ কঠিন হয়ে গেছিল। খুব খলবলি ভদ্রমহিলা। আমি খুব একটা পাত্তা দিই না। তবে অফিসের অনেকেই ওকে পাত্তা দেয়, দেখতে শুনতেও খারাপ নয়। ভেতরে গিয়ে ইন্টারকমে একটা ফোন করতেই আমার যাবার ডাক এলো। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম। দেখলাম সুনীতদা তার দলবল নিয়ে বসে আছেন। আমাকে আসতে দেখেই বললেন, আয় আয়। আমি একটা চেয়ার নিয়ে বসলাম। সুনীতদা বললেন, বল কেমন আছিস। -ভাল। -চা খাবি। -না। ক্যান্টিন থেকেই আসছি। -তোর সঙ্গে একটা জরুরি কথা ছিল। -বলো। -তুই আজ সবে মাত্র ফিরলি। -তাতে কি হয়েছে। -না মানে। তোকে আমি চেন্নাই-এর ব্যুরো চিফ করেছি। -কার অনুমতি নিয়ে? -আমিই ঠিক করেছি। তবে ম্যানেজমেন্ট সেটায় সায় দিয়েছে। -আজকাল কি তুমি এসব ঠিক করছ নাকি !! -না ম্যানেজমেন্ট গত সপ্তাহে আমাকে দায়িত্ব তুলে দিয়েছে। -আমাকে কেউ এখনো জানায় নি। -এই তো আমি জানাচ্ছি। সুনীতদা জানে আমার মতো খারুয়া ছেলে এই হাউসে একটাও নেই, মাজে মাঝে অমিতাভদা পর্যন্ত ফেল মেরে যেতো, কিন্তু আমি বেঁচে যাই শুধুমাত্র লেখার জন্য। সুনীতদার দিকে তাকিয়ে বললাম, -ম্যানেজমেন্টকে বলো আমার সঙ্গে কথা বলতে। -সেটা কি করে হয়। -কেনো, যাবে কে তুমি না আমি। -তুই। -তাহলে আমার সঙ্গে একবার আলোচনা করা উচিত ছিল। -সেটা ঠিক, তবে আমি জানি তুই ……. -সরি আমি যেতে পারছি না। তাছাড়া আমি এতো বেশি অভিজ্ঞ নই যে একটা অফিস চালাব, তার চেয়ে বরং তুমি চলে যাও। তা না হলে আমার থেকেও অনেক সিনিয়র জার্নালিস্ট এ হাউসে আছে। তাদের পাঠাবার ব্যবস্থা করো। -তাহলে তুই যাচ্ছিস না। -না। সবাই আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়েছিল। ঘরটা নিস্তব্ধ। সুনীতদা আমার মুখের দিকে তাকালেন, কিছু হয়তো বলবেন ঠিক করছিলেন তার আগেই আমি উঠে দাঁড়ালাম। বললাম, তাহলে এবার আসি। -তুই একবার ভেবে দেখতে পারিস। -সরি। -তাহলে আমার কিছু করার নেই। হাসলাম। তোমার ম্যানেজমেন্ট আমারও ম্যানেজমেন্ট তাদের সঙ্গে আমি বসবো, তাতে তোমার আপত্তি কোথায়, তোমার ব্যক্তিগত আপত্তি থাকলে আলাদা কথা। -না, তুই হয়তো সব জানিস না। -সে তো হতেই পারে, আমি পনেরো দিন পরে ফিরলাম, আমার সমস্ত ব্যাপার না জানারই কথা। -ঠিক আছে তুই যা। আমি বেরিয়ে এলাম। এটুকু জানি আমাকে এই হাউস থেকে সরানো খুব মুস্কিল। তাছাড়া মিত্রা এসব কি করলো। কার কথায় ও উঠছে বসছে। এই সুনীতদার কথায়। মুখে একটা খিস্তি বেরিয়ে এলো, কালকা জোগী গাঁড়মে বোলতা হ্যায় জটা। শুয়োরের বাচ্চা। নিউজ রুমে চলে এলাম। নিজের টেবিলে এসে বসলাম। সন্দীপ এলো, কিরে কি বললো। -চেন্নাইয়ের ব্যুরো চিফ বানিয়েছে। -আমি জানি শালা নিশ্চই একটা প্ল্যান ফেঁদেছে, শালা অমিতাভদার সবকটা হ্যান্ডসকে এক সপ্তাহের মধ্যে -এখানে ওখানে সরিয়ে দিয়েছে। তুই কি বললি। -যাবনা বলে দিয়েছি। -ব্যাস হয়ে গেলো। -তোর চাকরি নট। -তো। -এরপর কি করবি। -কোন কাগজের এডিটর হবো। -হ্যাঁ তোর সেই দম আছে। হাসলাম। -অনি আমার একটা চাকরির ব্যবস্থা করিস। -কেনো, তোর চাকরি চলে গেছে। -যায় নি , তবে চলে যাবে। -কি করে বুঝলি। -খবর নিয়েছি কাগজপত্র তৈরি। -পিটিআই, ইউএনআই সামলাবে কে। -লোক এসে গেছে। আমি সাতদিন ধরে আসছি আর চলে যাচ্ছি। -কোন নিউজ করিস নি। -না। -ও। অনিন্দ্যবাবু কে আছেন। একজন সিকুরিটি এসে পাশে দাঁড়াল। আমি ভদ্রলোকের দিকে তাকালাম, ভাল করে মাপলাম, ভদ্রলোক নয় একটা বাচ্চা ছেলে। সন্দীপ আমাকে দেখিয়ে বললো, উনি। আপনাকে একবার মেমসাহেব ডাকছেন। -কে? -মেমসাহেব। -সে আবার কে। বসতে বলো। -আপনাকে এখুনি ডাকছেন। সন্দীপের মুখের দিকে তাকালাম। সন্দীপ ইশারায় বললো মালকিন। -তোমার মেমসাহেবকে বলো আমি একটু পরে যাচ্ছি। -জরুরি দরকার আছে। -আরি বাবা এ তো ঘোরায় জিন দিয়ে এসেছে। আমি উঠে পরলাম। ওর পিছন পিছন গেলাম। এই চেম্বারটা আগে ছিল না নতুন হয়েছে। এই পনেরো দিনে অফিসের হাল হকিকত একেবারে বদলে গেছে। দোষ আমার, কেননা আমি অফিসে খুব বেশিক্ষণ থাকতাম নয়। বেশির ভাগটাই বাইরে বাইরে কাটাতাম। তাছাড়া মাথার ওপর ভাববার অনেক লোক ছিল তাই নিজের লেখা নিয়েই থাকতাম। আসতে পারি বলে দরজাটা খুলতেই অবাক হয়ে গেলাম, যারা কয়েকদিন আগেও অমিতাভদাকে তেল দিত তারা এখন ম্যানেজমেন্টের কাছের লোক, সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, মিত্রা একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে, আমাকে দেখে ও একটু অবাক হলো। কিন্তু কাউকে বুঝতে দিল না। আমার পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত ভাল করে মাপলো। দেখলাম সুনীতদা ম্যাডামের পাশেই একটা চেয়ারে বসে আছেন। আমাকে দেখেই মুখে একটা পরিতৃপ্তির হাসি।
Parent