কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ১৭৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4753009.html#pid4753009

🕰️ Posted on April 8, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1219 words / 6 min read

Parent
-কিরে অনি, দরজা খোল। দাদার গলা। -অনি, এই অনি কথা বলছিসনা কেনো? ধরা গলায় বললাম, খুলছি দাঁড়াও। আমি ভালো করে চোখ মুখ ধুয়ে দরজা খুললাম। আমার ঘরে তখন সবাই দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্তার সামন্ত এসেছেন। ডাক্তার দাদা আমাকে দেখেই এগিয়ে এলেন। রেজিস্ট্রার ম্যাডাম এগিয়ে এলেন। আমি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছি। মুখ তুলতে পারছিনা। -তুমি কষ্ট পেওনা অনি, কাল থেকে দেখছি এই বাড়িতে একটা হুলুস্থূল কান্ড চলছে। আমার মাথা নীচু। -রাতে কিছু বুঝতে পারিনি। আজ নিজে থেকে চলে এসেছি। ভাবলাম তোমার বান্ধবীর আবার কিছু হলো কিনা। এসে দেখলাম এই অবস্থা। অমিতাভ আমাকে সব বলেছে। ডাক্তারকে আমি খুব ভালো করে চিনি। ও আমাদের এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। যেনো মনে হচ্ছে আমার কান দিয়ে কিছু ঢুকছেনা। -আমি তোমাকে ওর ব্যাপারে আরো হেল্প করবো। কথা দিচ্ছি আজই ওর রেজিস্ট্রেশন আমি ক্যানসেল করার ব্যবস্থা করছি। ও যে এতটা নীচ জানতাম না। তুমি স্ট্রং ম্যান। ভেঙে পরলে চলবেনা। অমিতাভ ওকে নিচে নিয়ে যাও। আবিদ রতনের দিকে তাকালাম। ওরা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমার এই অবস্থাটা ওরা সহ্য করতে পারছেনা। এটা ওদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে। কিন্তু কিছু করার নেই এই পরিবেশ ওদের মতো নয়। আমি নিচে চলে এলাম। আমার পেছন পেছন নিরঞ্জনদা, মল্লিকদা, রেজিষ্ট্রার ম্যাডাম। বুঝলাম হিমাংশু রেজিষ্ট্রার ম্যাডামকে সমস্ত ঘটনা বলেছে। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলাম। বাগানের রাস্তায় চারটে গাড়ি দাঁড়িয়ে। গেটের বাইরে আরো দুটো গাড়ি। গাড়ির মধ্যে কয়েকটা ছেলে তাকিয়ে তাকিয়ে ওপরের দিকে দেখছে। চোখে মুখে চাপা টেনশন। খালি নির্দেশ পাওয়ার অপেক্ষা। আমি নিচের ঘরের সোফায় এসে মাথা নীচু করে বসলাম। ম্যাডাম আমার পাশে বসলেন। নিরঞ্জনদা এক গ্লাস জল এনে দিলেন। আমি টেবিলে রাখতে বললাম। -খেয়ে নে। মল্লিকদা বললেন। আমি জলটা খেলাম। বুঝতে পারছি আমার চোখ মুখ জবা ফুলের মতো লাল। নিজের চেহারাটা নিজে দেখতে পাচ্ছিনা। তবে সবার চোখ দিয়ে নিজের চেহারাটা দেখতে পাচ্ছি। নিরঞ্জনদা রান্নাঘরে গেলো। বুঝলাম চা করেছে। মল্লিকদাও রান্নাঘরের দিকে গেলো। তোমায় চিন্তা করতে হবেনা অনি। আমি আইনত যা যা করার দরকার করে দিয়েছি। হিমাংশু আমাকে সমস্ত ঘটনা বলেছে। ম্যাডাম আমার পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন। -আমি খুব খারাপ কাজ করে ফেললাম ম্যাডাম। -একটুও খারাপ কাজ করোনি। যা করেছো ঠিক করেছো। বরং কম করেছো। -না, ম্যাডাম। মুখে হাত চাপা দিলাম। -এই দেখো পাগলামো করে। মল্লিকদা বললেন। আমি মুখে হাতচাপা দিয়ে নিচু হয়ে বসে আছি। -তোরা ষন্ডামার্কাগুলো কি করতে আছিস। তোদের তাহলে কি করতে পাঠিয়েছি। পুঁচকে একটা ছেলে যদি সব চাপ নেবে তোরা ঘোড়ার ঘাস কাট ময়দানে গিয়ে। গলাটা শুনে মাথা তুললাম। এই বাজখাঁই গলা দামিনী মাসির ছাড়া আর কারুর নয়। উঠে দাঁড়ালাম। মাসি এখানে কেনো! -এটা ডাক্তার? -হ্যাঁ। রতনের গলা। -তোকে কুত্তার মতো মেরে দেবো। তোর কতো বড় ক্ষমতা আমি দেখবো। অনি কোথায়? -নিচে। -ছেলেটাকে তোরা শান্তিতে একটু বাঁচতে দিবিনা। সারাটা জীবন তোদের জন্য করে যাবে। গলাটা সামান্য ধরে এলো। আমি তাড়াহুড়ো করে ঘরের দরজা দিয়ে সিঁড়ির কাছে এলাম। দেখলাম আমার সামনে দামিনী মাসি। এই দামিনী মাসিকে আমি আগে কখনো দেখিনি। পাটভাঙা লালপাড় তাঁতের শাড়ি পরেছে। বাড়িতে মায়েরা যেরকম আটপৌরে ঢঙের কাপড় পরে সেই রকম। একেবারে বড়মার মতো লাগছে। মাথায় ডগডগে সিঁদুর। পেছনে কবিতা, দাদা, সামন্ত ডাক্তার, হিমাংশু, সন্দীপ সিঁড়ির ওপর দাঁড়িয়ে। রতন আর আবিদকে দেখতে পেলাম না। আমি দামিনী মাসিকে জড়িয়ে ধরলাম। দামিনী মাসির স্নেহভরা হাত আমার পিঠে। -কেঁদে কেঁদে মুখটা কেমন করেছিস দেখেছিস। তুইতো কাঁদার ছেলে নোস। বল আমাকে সব কথা।   আমি দামিনী মাসির কাঁধে মুখ রেখে চোখ বন্ধ করলাম। -তোর দামিনী মাসি এখনো মরেনি। মাসি মায়ের সমান। আমার কাছে জীবনের আঠারো মাস কাটিয়েছিস। বল আমাকে সব কথা। আমি দামিনী মাসির কাঁধ থেকে মুখ তুলছিনা। বুঝতে পারছি চোখ দিয়ে ঝড় ঝড় করে জল গড়িয়ে পরছে। -রতন! দামিনী মাসির গলার শব্দে সারাটা বাড়ি কেঁপে উঠলো। ওপর থেকে রতন যাই বলে ছুটে চলে এলো। -ওপরের ঘরটা খালি কর। আমি অনির সঙ্গে একা কথা বোলবো। ডাক্তারকে আমার গাড়িতে তোল। কবিতা? -হ্যাঁ মাসি। -যাঁরা এসেছেন দাদাদের সঙ্গে হাতে হাতে কাজ করে চা জলের ব্যবস্থা কর। আবিদ? -ওপরে আছে। রতন বললো। -কাউকে দিয়ে মিষ্টি আনা। আজকের শুভ দিনে সবাইকে মিষ্টি মুখ করা। -আচ্ছা মাসি। আমার পিঠে হাত দিয়ে বললেন। চল আমার সঙ্গে তোর ঘরে। মাসির সঙ্গে সিঁড়ি ভেঙে ওঠার সময় সবার দিকে তাকালাম। ওরা কেমন যেনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। দাদার চোখ দুটো ছল ছল করছে। সামন্ত ডাক্তার চোখ থেকে চশমা খুলে আঙুল দিয়ে মুছলেন। ওপর তলার সিঁড়ির মুখে আসতেই দেখলাম রতন, আবিদ, ডাক্তারকে কুত্তার মতো কলার ধরে টানতে টানতে নিচে নামাচ্ছে। আমরা ওপরে গেলাম। -তোর ঘরটা খুব সুন্দর। ভজু কোথায় শোয় রে। আমি আঙুল তুলে জায়গাটা দেখালাম। আমি না থাকলে আমার ঘরে। গলাটা ধরে এলো। -ঠিক জায়গায় শোয়। -এখন শীত পরেছে বলে বড়মা ওকে নিচের ঘরে থাকতে বলেছে। -ও। আমি দামিনী মাসিকে নিয়ে খাটে বসলাম। -তোর ফোনটা থেকে একবার ইসলামকে ফোন কর। -ভয়েজ অন করে দিই। -দে। আমি ডায়াল করলাম। রিং বাজতেই ইসলাম ভাই কথা বলে উঠলো। -হ্যাঁ বল অনি। ইসলাম ভাই-এর গলাটা ধরা ধরা মনে হলো। -আমি দামিনী। -বলো মাসি। -তুই সব জানিস। -জানি। এখনকার ঘটনা সব শুনলাম। এখুনি যেতে ইচ্ছে করছে। খালি অনির কথামতো এখানে পরে রয়েছি। -ও যা বলছে শুনে যা। -শুনছিতো। -হ্যাঁ শুনবি। আর আজ থেকে তোকে অনির বিষয়ে মাথা ঘামাতে হবেনা। আমি দায়িত্ব নিলাম। ও আমার ছেলে এটা মনে রাখিস। আমার ছেলের ক্ষতি করে কেউ আমার হাত থেকে রেহাই পাবেনা। -আমার জন্য কিছুটা রেখো। -ভেবে দেখবো। এখন রাখছি। -অনি কোথায়? -আমার সামনে বসে আছে। -একটু কথা বলবো। -এখন না। আমি ওর ঘরে বসে আছি। কথা বলছি। ওখানে যারা আছেন তাদের বলে দিবি কোনো চিন্তা করতে হবে না। দামিনী মরে যায়নি। -তোমার কথা সবাই শুনছে। -ঠিক আছে। এখন রাখ। আধঘন্টা বাদে অনির ফোনে ফোন করবি। -আচ্ছা। কবিতা মিষ্টি জলের গ্লাস নিয়ে ঢুকলো। -সবাইকে দিয়েছিস? -হ্যাঁ। -দিয়ে কাজ সেরেছিস না খাইয়েছিস। -সবাই খেয়েছে। তুমি গিয়ে দেখো। -নিচে যা। কবিতা ট্রেটা রেখে চলে গেলো। -নে মিষ্টি মুখে দিয়ে সব বল। -তুমি খাও। -খাচ্ছি। আমি একটা মিষ্টি মুখে দিলাম। জল খেলাম। একে একে দামিনী মাসিকে সব খুলে বললাম। দামিনী মাসির চোখ মুখের চেহারা বদলে গেলো। -কাগজগুলো তোর কাছে সব আছে। -আছে। -মিত্রার ছবিগুলো? -আমার কাছে। ভিডিও ওর বাড়িতে আছে। -স্বীকার করেছে। -হ্যাঁ। -তোকে চিন্তা করতে হবেনা। ওটা উদ্ধারের দায়িত্ব আমার। তুই এখন কি করতে চাস। -কালকে ওখানে ওই ব্যাপারগুলো রেজিস্ট্রি আছে। দাদারা যাবে। আমাকে লেখাগুলো লিখে ফেলতে হবে। -এখন ছাপিসনা। আমি দামিনী মাসির দিকে তাকালাম। -আরো গল্প আছে মনে হচ্ছে। আমাকে একটু খোঁজ খবর নিতে দে। -তুমি বলো। -তুই দাদাদের সঙ্গে চলে যা। -সবাই চলে গেলে কাগজ চলবেনা। বুঝতে পারছ না। -ঠিক আছে আমি দাদার সঙ্গে কথা বলবো। -বলো। -মন খারাপ করিসনা। কি করবি। মেয়েটার ভাগ্য আমি তুই লিখি নি। ওর ভাগ্যে যেটুকু ছিলো সেটুকু ঘটেছে। আর ঘটবেনা। আমি মাথা নীচু করে দাঁড়ালাম। -ও আদৌ সিডিটা বাজারে ছেড়েছে কিনা কি করে জানবো। -সব জেনে নেবো। কবিতা চা নিয়ে এলো। খাটের ওপর রাখলো। -কবিতা দাদাদের একটু ডাক। কবিতা নিচে চলে গেলো। একটু পরে দাদা, মল্লিকদা, নিরঞ্জনদা, সামন্ত ডাক্তার এলেন। দাদা ঘরে ঢোকা মাত্র দামিনী মাসি দাদার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। সামন্ত ডাক্তারকে প্রণাম করলো। নিরঞ্জনদা, মল্লিকদার দিকে তাকিয়ে হাতজোড় করে নমস্কার করলো। -আপনারা আমার থেকে অনেক ছোটো তাই প্রণাম করলাম না। -ঠিক আছে, ঠিক আছে। -ডাক্তার বাবু আপনি আমাকে চিন্তে পারলেন না? -আপনার গল্প নিচে শুনলাম। আমিতো অবাক হয়ে যাচ্ছি। -আপনি আমার ছেলেকে সুস্থ করে তুলছেন। -কে? ভজুর কথা বলছেন। বড়ো ভলো ছেলে। -হ্যাঁ। তাছাড়াও আমি বহুবার আপনার শ্যামবাজারের চেম্বারে গেছি। আমি দামিনী মাসির দিকে তাকালাম। এ দামিনী মাসি আমার পরিচিত নয়। একেবারে অপরিচিত। -অনি তুই বাইরে যা। আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। সন্দীপ দাঁড়িয়েছিলো। -হিমাংশু কোথায়? -ম্যাডামকে এগিয়ে দিতে গেছেন। -সিগারেট আছে? -আছে। -একটা দিবি। -দেবো। চল ওই দিকটায় যাই। -বউকে ফোন করেছিলি? -করেছিলাম। -সব কথা বলার দরকার নেই। -কিছু কিছু বলেছি তাতেই রেগে টং। পারলে এখুনি এসে গলা টিপে দেয়। -ছেলে দুটোকে কোথায় পাঠিয়েছিস। -তোর কথা মতো কাজে পাঠিয়ে দিয়েছি। -অফিস সামলাচ্ছে কারা? -লোক আছে তোকে চিন্তা করতে হবে না। সিগারেট ধরালাম।
Parent