কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ১৮৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4782868.html#pid4782868

🕰️ Posted on May 2, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 927 words / 4 min read

Parent
-দেবা? -বল। -সামনে ব্রিজটা পেরিয়ে ডানদিকে একটা ধাবা পরবে। গাড়িটা ধাবায় ঢোকাস। খিদে লেগেছে। -আচ্ছা। কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা ধাবায় চলে এলাম। সবাই একে একে গাড়ি থেকে নামলাম। আমায় দেখেই ধাবার ম্যানেজার চিনতে পারলো। নিজের সিট থেকে নেমে এসে বললো -স্যার ওপরের কেবিনে চলুন। নিচেরটায় লোক আছে। দেবা আমার দিকে একবার তাকালো। ওর চোখে জিজ্ঞাসা। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। আমরা সবাই ওপরের কেবিনে এলাম। ম্যানেজার আমাদের সঙ্গে এলেন। -কালকে নিরঞ্জনদা বলে গেছিলেন আপনি আজ আসবেন। -ওরা কাল কখন এসেছিলেন। -পাঁচটা নাগাদ। -কেন! -গাড়ি খারাপ হয়ে গেছিলো। তারপর একটা গাড়িতে করে এখানে আসেন। শেষে আমার গাড়ি করে পাঠালাম। -আমাদের একটু খাবার ব্যবস্থা করতে হবে। কেবিনে ঢুকলাম। দেবাশিষ চারিদিক দেখছে। -কিরে কি খাবি? -তুমি বলে দাও। অদিতি বললো। -আমি আলু পরোটা, চিকেন ফ্রাই, মটরপণির আর মিক্সড তড়কা বললাম। ম্যানেজার চলে গেলো। -জানিস অনি অনেকদিন আগে আমি, অদিতি দীঘায় এসেছিলাম। তখন এই ধাবাটা পাইনি তো। -পেয়েছিস ঢুকিসনি। তোরা থার্মল পাওয়ারের গেটের সামনে যে ধাবাটা আছে সেখানে ঢুকেছিলি। -ঠিক ধরেছিস। -এইরকম একটা জায়গায় তাজ বেঙ্গলের ডেকোরেশন ভাবাই যায়না! -তোর ভালো লাগছে। -ভালো লাগছে মানে। এই ট্যুরটা অনেকদিন মনে রাখবো। -কি টিনা ম্যাডাম মুখটা শুকনো শুকনো। এখনো শকটা কাটলো না। টিনা মুখ নীচু করে আছে। -জীবনটা ধরতে শেখো। দেখবে কোনো দুঃখই দুঃখ নয়। -চেষ্টাতো করি। তোমার মতো পারিনা। -আমি একদিনে পারিনি। তোমার মতো একদিন আমিও কাঁদতাম এখন কাঁদিনা। -কি মিলি ম্যাডাম দুঃখ দুঃখ করে থাকলে চলবে। -তোমাকে খুব কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করছি। বোঝার চেষ্টা করছি। -নাও বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এসো। -মাঝে মাঝে একটা ব্যাপার মনে ভীষণ স্ট্রাইক করে। তুমি বাইরে থেকে যতটা আধুনিক তার থেকেও অনেক বেশি আধুনিক তোমার ভেতরটা। -ঠিক বলেছো মিলি প্রথম দিন অনিকে নিয়ে আমরা যখন তাজ বেঙ্গলে ঢুকেছিলাম। সেদিন ফিরে ওর সম্বন্ধে আমরা কি আলোচনা করেছিলাম তোমার মনে আছে। -হ্যাঁ। -আজকের অনির সঙ্গে সেদিনকার অনির কিছু মিল পাচ্ছ। -একবারে না। -এই দুমাসে ওর পরিবর্তন হয়নি। ওর এই পরিবর্তনটা ভেতর ভেতর ছিলো। ও প্রকাশ করেনি। সময় এবং সুযোগের অপেক্ষা করেছে। আমার দিকে তাকিয়ে -শেষ কথাটা তোর ধার করা। বাজারে চালু করে দিয়েছি। পাবলিক খাচ্ছেও ভালো। -তোমার কিরকম ঘ্যামাটা বেড়েছে সেটা বলো। অদিতি বললো। আমি হো হো করে হেসে ফেললাম। -হাসিস না। জিজ্ঞাসা কর নির্মাল্যকে। নির্মাল্যকে পাশে বসিয়ে অনেক ক্লায়েন্টকে তোর কথা দিয়ে পটিয়েছি। শুধু আমি নয় মিলি, অদিতি, টিনা কেউ বাদ নেই। সবাই হো হো করে হেসে ফেললাম। খাবার এলো। দেবাশিষ বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো -গন্ধে বুঝিয়ে দিচ্ছে খাবারটা দারুণ। আমি ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললাম। -ভাই তোমার ম্যানেজার সাহেবকে একটু ডেকে দেবে। -পাঠাচ্ছি স্যার। ছেলেটি বেরিয়ে গেলো। সবাই খাওয়া শুরু করলাম। -আচ্ছা অনি এখানে আসার পর থেকেই দেখছি সবাই তোকে স্যার স্যার করছে ব্যাপারটা কি বলতো। -আমায় না। -তাহলে। -নিরঞ্জনদার জন্য। -সেটা কে? -এই জেলার সভাধিপতি। বলতে পারিস মুখ্যমন্ত্রী। -দাঁড়া দাঁড়া বিষম লেগে যাবে। টিনা হাসছে। -তুমি জিজ্ঞাসা করতে গেলে কেনো। -আচ্ছা টিনা তোমার ইনটারেস্ট নেই। -আছে। জিজ্ঞাসা করিনি। যদি ঝোলা থেকে সাপ ব্যাঙ বেরিয়ে পরে। সামলাতে পারবোনা। সত্যি সত্যি হাসতে গিয়ে নির্মাল্য বিষম খেলো। আমি উঠে গিয়ে ওর মাথা চাপড়াই, পিঠ ডলে দিই। ওরা হাসছে। -ওরে নির্মাল্য, তুই কি ভাগ্যবান তোকে অনিদা পিঠ ডলে দিলো। মিলি বললো। নির্মাল্য হাসতে হাসতে বললো। -তুই বিষম খা দেখবি অনিদা ডলে দেবে। আবার হাসি। -নিরঞ্জনদা কে বলনা। কি করে পটালি। -বিশ্বাস কর আমি পটাই নি। নিরঞ্জনদা বড়মা’র ভাই। -যাঃ। খালি ঢপ। -অনিদা গুল মারছে দেবাশিষদা। -দেখছিস সবাই কি বলছে। -তাহলে সত্যি ঘটনা বলতে হয়। -আবার গল্প! মিলি বললো। -তাহলে থাক। -আচ্ছা বলো বলো। মিলি তুই মাঝখান দিয়ে টুকবিনা। ম্যানেজার ভদ্রলোক ঘরে ঢুকলেন। -দাদা আমার একটা উপকার করতে হবে। -বলুন স্যার। -আমরা যা খাচ্ছি। সেই মতো পাঁচটা প্লেট রেডি করে দিতে হবে, পার্সেল হবে। খালি আলু পরোটা একটু বেশি করে দিয়ে দেবেন। আর এক ক্রেট কোল্ড ড্রিংকস। মিশিয়ে দেবেন। সব দু’লিটারের বোতল। -ঠিক আছে স্যার। আর? -বিলটা করে আনুন। -তুই দিবি না আমি দেবো। দেবাশিষ চেঁচিয়ে উঠলো। -তুই জিজ্ঞাসা কর চাইলেও দিতে পারবিনা। -স্যার আপনাদের কারুর কাছ থেকেই বিল নিতে পারবোনা। নিরঞ্জনদার হুকুম। দেবাশিষ আলুর পরোটা মুখে ঢুকিয়ে হাঁ করে আছে। -আমি নিরঞ্জনদাকে ফোন করছি। -না স্যার, আমার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। ভদ্রলোকের সে কি কাকুতি মিনতি। বাধ্য হয়ে বললাম -ঠিক আছে আপনি যান। আমি নিরঞ্জনদাকে ফোন করবোনা। ভদ্রলোক আমার মুখ থেকে এই কথাটা আদায় করে বললেন -সব প্যাকিং করে রাখছি। আপনি নিচে গেলে গাড়িতে তুলে দেবো। -আচ্ছা। -স্যার চা না কফি? দেবাশীষের দিকে তাকিয়ে বললাম, কিরে। -কফি। -কফি পাঠিয়ে দিন। -আচ্ছা স্যার। ভদ্রলোক বেরিয়ে যেতেই অদিতি চেঁচিয়ে উঠলো, সব ফোঁকটসে। -থাম তুই, শুনতে পাবে। মিলি বললো। -অনিদা সত্যি গুরু তুমি। দেবাশিষ তাজ বেঙ্গলে প্রতিদিন লাঞ্চ করতে ঢোকে একদিনও ফোঁকটে খেতে পায়না। আর তুমি….। -দাঁড়াও এবার নিরঞ্জনদার কেসটা শুনতেই হবে। বল বল দেরি করিসনা, খাওয়া শেষ হয়ে এলো। ফোনটা বেজে উঠলো। -ওঃ শিট। দেবাশিষ বলে উঠলো। আমি পকেট থেকে মোবাইলটা বার করলাম। দেখলাম মিত্রা। দেবাশিষের দিকে তাকিয়ে বললাম, মিত্রার ফোন। -দে দে আমাকে দে। আমি ভয়েজ অন করে দেবাশিষের হাতে দিলাম। -কিরে ধাবায় বসে মুরগীর ঠ্যাং চিবোচ্ছিস? -বেশ করছি। তোর কি। -দাঁড়া আয় দেখাচ্ছি মজা। -বলতো আমি কে। -দেবা ছাগল। সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম। -তুই এখনো আমাকে এই ভাবে বলবি। -আমার জন্য নিয়ে আসবি। -তোর জন্য পার্সেল হচ্ছে। -এইতো ভালো ছেলের মতো কথা। বুবুন কইরে? -আমার অপরজিটে বসে ঠ্যাংএ কামড় দিয়েছে। মিত্রা মুখ দিয়ে জিভে জল পড়ার আওয়াজ করলো। -কি হলোরে। -জিভ দিয়ে জল পরে গেলো। -লোভ দিসনা। পেট খারাপ করবে। -কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে আসবি। -আসবো। -বুবুনকে দে। -তোর কথা শুনতে পাচ্ছে। -বল। -কখন আসবি? -আরো ঘন্টা দুয়েক লাগবে। -কাউকে পাঠাবো। -রবীনকে একবার পাঠা। -কেনো। -এতোক্ষণ দেবা গাড়ি চালালো এবার পালা করে নির্মাল্য, অদিতি, মিলি, টিনা চালাবে। কিন্তু ওইটুকু রাস্তার জন্য রবীন। -ঠিক আছে পাঠাচ্ছি। -তোরা যখন আসবি তখন আমরা হাটে থাকবো। -সব কাজ ঠিক ঠাক মিটলো। -হ্যাঁ। তোর জিলিপি আমি খেয়ে নিয়েছি। -বেশ করেছিস। -রাগ করলি। -একটুও না। -বিকেলে তোকে হাট থেকে কিনে খাওয়াবো। -আচ্ছা। -তাড়াতাড়ি আয়না। -যাচ্ছি। -আচ্ছা। আমি ফোন বন্ধ করে পকেটে রাখলাম।
Parent