কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ১৮৭

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4782915.html#pid4782915

🕰️ Posted on May 6, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 838 words / 4 min read

Parent
-কিরে চা খাবি? -এই তোর পরিদার দোকান। -হ্যাঁ। আমাদের বসন্ত কেবিন। চারিদিক নিস্তব্ধ। ঝিঁঝিঁ পোকার মৃদু ডাক। পাখির কুহুতান। দুপুর বেলা লোকজন বিশেষ একটা থাকেনা। দু’একজন দাঁড়িয়ে আছে বাসের জন্য। আমাকে নামতে দেখে রবিন পরিদার দোকান থেকে বেরিয়ে এলো। ওরা সবাই গাড়ি থেকে নামলো। দেবাশিষ চারিদিক দেখে বললো। -অদিতি কি নির্জন বলোতো। তুমি কোনো আওয়াজ পাচ্ছ। -সত্যি ফ্রেশ এয়ার। পলিউশন ফ্রি। -কি বাবা রবিন। পরি দা আছে। -তোমার জন্য বাড়ি থেকে এসেছে। তুমি আসবে শুনেছে। -তাই নাকি। আমি সবাইকে নিয়ে পরিদার দোকানে ঢুকলাম। -কিরে তুই একা। -হ্যাঁ। চিকনাদা ছেড়ে দিয়ে পালালো। ওখানে অনেক কাজ। -পরিদা? -আয় বাবা আয়। তোর জন্য দুপুরে ঘুমোলাম না। -ছেলে কোথায়? -সেইতো ছিল। বললো গিয়ে তুই আসবি চলে এলাম। -বুঝলে পরিদা অনাদিরা যেমন আমার এখানকার বন্ধু। এরা আমার সব কলেজের বন্ধু। আমি একে একে সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলাম। ওরা পরিদাকে হাঁ করে দেখছে। পরিদার সাজ পোষাক দেখে ওরা শকড। একটা আট হাতি ধুতি, সেন্ডো গেঞ্জি কাঁধে গামছা। গোবেচারা গোবেচারা চেহারা। সেই বাচ্চা মেয়েটাকে দেখলাম। পরিদা ডেকে উঠলো -ও বোকনা। টিনা আমার দিকে তাকাচ্ছে। মিলি মুখে রুমাল চাপা দিয়েছে। অদিতি অবাক। আমি ইশারায় বললাম এর ইতিহাস পরে বলবো। টিনা চোখ দিয়ে বোঝাতে চাইলো আবার গল্প। আমি মুখ টিপে হাসছি। -পরিদা কিছু খাওয়াও। -কি খাবি বল। -কি আছে। -রসগোল্লা আর ছানার জিলিপি। -দাও। পরিদা দিলো। সেই বাচ্চা মেয়েটা প্লেটে করে এগিয়ে দিলো। -মিলি দেখ কি মিষ্টি মেয়েটা। মিলি মেয়েটাকে ডাকলো। এই শোনো। মেয়েটা কিছুতেই আসবেনা। -যা না যা। দিদিমনি ডাকতিছন। মিলি আমার দিকে তাকালো। -স্টক করো পরে উত্তর দেবো। -মেয়েটি কাছে এলো। মিলি ওকে একটা মিষ্টি নিতে বললো। -না নিবনি। দাদু বোকবন। মিলি আমার দিকে তাকায়। আমি উত্তর দিলাম। -তোমার নাম। -আমায় সকলে কচি বলে ডাকে। দাদু খালি বোকনা কয়। মিলির চোখ বড় বড় হয়ে যাচ্ছে। টিনা আমাকে টপকে মেয়েটির পাশে গিয়ে উবু হয়ে বসলো। দুজনে লেগে পরেছে বাচ্চাটার পেছনে। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে দেখছি। -বুঝলি অনি। সকালে মাসির মিষ্টি খেলাম। আর এই ছানার জিলিপি খেলেম। আকাশ পাতাল তফাৎ। -কোনটা বেটার? -জৌলুসের দিক থেকে মাসির মিষ্টি সেরা। কিন্তু টেস্টে পরিদা। -পরিদার নিজের হাতে তৈরি। -সত্যি। -হ্যাঁ। বাড়ির গরুর দুধ থেকে ছানা তৈরি করে করা। তুই চাইলে আর পাবিনা শেষ। -না বাবু, আজ গরুটা দুধ কম দিছে, তাই বানাইতে পারিনি গো। দেবা আমার দিকে তাকালো। -বস আমরা লাকি চ্যাপ। -আরো বাকি আছে। এরি মধ্যে কমেন্ট পাশ করিসনা। পরিদা চা দিলো। চায়ে চুমুক দিয়ে টিনা আমার দিকে তাকালো। দেবাশিষ হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দিলো এক্সিলেন্ট। সবেতেই একটা গ্রাম গ্রাম গন্ধ। ফোনটা বেজে উঠলো। -দেখো মিত্রাদি। ফোনটা পকেট থেকে বার করলাম। সত্যি তাই। -বল। -পরিদার দোকান থেকে রসগোল্লা নিয়ে আসবি। -সব শেষ। -কি হাগুড়ে তোরা। -আমি না, দেবাশিষ আর নির্মাল্য। -তুই খালি আমাকে পেটুক বলিস। অভিমানের সুর। -এবার থেকে বলবোনা। -মনে থাকে যেনো। -তোর কথা সবাই শুনছে। -শুনুক। আমি এখন হাটে ঢুকছি। -কারা কারা আছে। -সবাই। বিজয়ের ট্রলি নিয়ে এসেছি। -একটু অপেক্ষা কর পৌঁছে যাবো। -তাড়াতাড়ি আয়না। -আরি বাবা এসে গেছিতো। -আয়। দেবাশিষ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। -তুই কি করে ট্যাকেল করছিস বলতো। -করতে হচ্ছে কি করবো বল। -হ্যাটস অফ তোকে। তোর ধৈর্যকে। টিনা মিলি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। -জানিস দেবা, যতো জারি জুরি আমার কাছে। আমাকে কিছুতেই কাছ ছাড়া করতে চায়না। ইনসিকিওর ফিল করে। -ওর কথাবার্তায় বুঝতে পারছি। -খুব সেন্টিমেন্টাল। বুঝে শুনে কথা বলতে হয়। এমনি খুব নর্ম্যাল তুই বুঝতে পারবিনা। হঠাৎ হঠাৎ কেমন যেন হয়ে যায়। -সাইক্রিয়াটিক কোনো ব্যাপার? -না। পুরোটাই নার্ভাস সিসটেম। ডাক্তার দাদার কথায়। আমি ওকে তোলা কাপড় হিসাবে ব্যবহার করি। -স্ট্রেঞ্জ। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো। -চল এবার ওঠা যাক। -চল। -নির্মাল্য? -দাদা। -এটুকু রাস্তা রবিন চালাক। -ঠিক আছে। -তুই রাস্তাটা একবার দেখে নে। নির্মাল্য ঘাড় দোলালো। -ফেরার পথে চালাতে হবে। আমার পাশে বোস। -চলো। আমরা সবাই উঠে বসলাম। পরিদার পয়সা মেটালো টিনা। আমি হাসতে হাসতে বললাম -ব্যাগ ভর্তি পয়সা থাকলেও খরচ করার জায়গা নেই, এটা মনে রাখবে। টিনা হাসছে। রবিনকে বললাম কালভার্টের সামনে গিয়ে একটু দাঁড় করাস। -আচ্ছা দাদা। ওরা রাস্তা দেখতে দেখতে আসছে। মাঠে এখন ধান কাটা চলছে। কোনো কোনো খেতে সোনালী ধান এখনো মাথা উঁচু করে রয়েছে। টিনা মিলি অদিতির হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে চলেছি। রবিন গাড়ি চালাতে চালাতে হাসছে। আমরা এসে সেই কালভার্টের সামনে দাঁড়ালাম। সবাই নামলো। বিকেলের সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পরেছে। মিষ্টি সূর্যের আলোর ওম নিতে নিতে দেবাশিষ চারিদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে। যতদূর চোখ যায়। -হাউ বিউটিফুল! মিলি বলে উঠলো। -অনি আমি ভীষণ একসাইটেড হয়ে পরছি। তুই মনে কিছু করিসনা। -তোদের নিয়ে আসা আমার সার্থক। আমার এই ছোট্ট কথায় ওরা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। একে একে ওদের পীরবাবার থান, শ্মশান, বুড়োশিবের মন্দির, আমার স্কুল, সব দেখালাম। দূর থেকে যতটুকু দেখা যায়। ছেঁড়া ছেঁড়া গল্পগুলো বললাম। -জানো অনিদা তোমার এই গ্রামটা দেখে অপুর কথা মনে পরে যাচ্ছে। -দারুন কথা বললেতো টিনা। দেবা বললো। -সেই যতোদূর চোখ যায় চোখ ভরে খালি দেখো। অজানাকে জানা অচেনাকে চেনা। ক্লাস টেনে অচেনার আনন্দ পিসটার কথা মনে পরে যাচ্ছে। তাই না। -হ্যাঁগো দেবাদা। এতো সবুজ আগে কখনো দেখিনি। -চল। আজ সব দেখে ফেললে চারদিন বোর লাগবে। মিলি চুপচাপ। দু’চোখ ভরে গিলছে। মুখে কোনো শব্দ নেই। আমরা সবাই আবার গাড়িতে বসলাম। মিনিট কুড়ির মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম। গাড়ি বাসুর দোকানের সামনে আসতেই গ্রামের বাচ্চাগুলো হৈ হৈ করে ঘিড়ে ধরলো। ওরা সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। চিকনা বাসুর দোকানের বারান্দায় বসেছিলো গাড়িটা থামতেই পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো। চিকনার পেছন পেছন বাসুও ওর দোকান থেকে বেরিয়ে এলো।
Parent