কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ১৮৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4783079.html#pid4783079

🕰️ Posted on May 8, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1078 words / 5 min read

Parent
আমি গাড়ি থেকে নামতেই চিকনা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার মুখে গায়ে হাত বোলাচ্ছে। আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে আছি। -তোর কিছু হয়নি। ওর চোখ মুখের চেহারা বদলে যাচ্ছে। -আবার এই সময়, তোকে কতবার বুঝিয়েছি। বাসু খেঁকিয়ে উঠলো। -শুয়োরের বাচ্চাটাকে যদি হাতের কাছে পেতাম মুরগী কাটার মতো কেটে ফেলতাম। -ওঃ তোকে বলেছিনা। -থাম তুই। আমার গুরুর গায়ে হাত পরলে এসপার ওসপার হয়ে যাবে তুই অনাদি আমাকে আটকাতে পারবিনা। দেবাশিষরা থতমতো খেয়ে গেছে। ওরা সব ভাসা ভাসা জানে। অনাদি ছুটে এলো। -আবার পাগলামো শুরু করেছে চিকনা। সরি আপনারা কিছু মনে করবেন না। আমি চিকনাকে জড়িয়ে ধরলাম। বাচ্চাদের মতো ভেউ ভেউ করে আমার বুকে মুখ লুকিয়ে কেঁদে উঠলো। দেবাশিষ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। পাংশু হয়ে গেছে মুখটা। -এইতো আমি, তুই কাঁদছিস কেনো, আমি ঠিক আছি, দেখ। গলাটা ধরে এলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো, শালা কুত্তার বাচ্চাটাকে আমাকে একবার দেখিয়ে দে। -ঠিক আছে তুই শান্ত হ। এইতো আমি তোর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। দেখ আমার কিছু হয়নি। আমি ওর মাথায় পিঠে হাত বোলালাম কিছুক্ষণ। চিকনা আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। দূর থেক দেখলাম মিত্রা ছুটে আসছে। কাছে এসেই বললো -চিকনা এবার আমি একটু ধরি। চিকনা চোখ মুছতে মুছতে ফিক করে হেসে ফেললো। মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। চিকনা আমাকে ছাড়লো। -তুই ঠিক আছিস। -কেনো বেঠিক থাকবো। -বাবাঃ যা গেলো। অনাদি চিকনাকে বাসুর দোকানে ধরে নিয়ে গিয়ে বসালো। -একবারে এখান থেকে কোথাও যাবিনা। মিত্রাকে দেখে ওরা আশ্বস্ত হলো। টিনা মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো। মিলি মিত্রার গালে গাল ঘষে দিলো। দেখলাম নীপা ছুটতে ছুটতে আসছে। -অনিদা তুমি ঠিক আছো তো। নীচু হয়ে পায়ে হাত দিলো। আমি হাসছি। দেবাশিষ বুঝতে পেরেছে কিছু একটা বড় ঘটনা ওখানে ঘটেছে। হঠাৎ মিত্রার গলা পেলাম। -ওকে বলিসনি তো। ভালো করেছিস। তোদের সব কটাকে বাঁশঝাড়ে লাইন করে বসিয়ে দিতো। আমি ওদের দিকে তাকালাম। টিনা ফিক করে হেসে ফেললো। -তুমি থামো, অনিদা….. -তুই জানিসনা ও কিরকম। তুই কষ্ট পাবি ও …… মিলি মিত্রার মুখটা চেপে ধরলো। -আয় আমার সঙ্গে আয়। দেবা চল হাতমুখটা একটু ধুয়ে নে। নির্মাল্য আয়। ওরা মিত্রার পেছন পেছেন চলে গেলো। আমি দেখলাম মিত্রা গট গট করে ওদের নিয়ে হাটের ভীড়ে মিশে গেলো। অনাদি আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছে। আমি অনাদির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম -কি দেখছিস। -তোর খোমাখানা। -কেনো। -কতোটা পরিবর্তন হলো। -হাসছি। জিনিসগুলো বার করে বাসুর দোকানে রাখ। -তোকে চিন্তা করতে হবেনা। সব নিজের ঘাড়ে নিয়ে মুখটার অবস্থা কি করেছিস দেখতে পাচ্ছিস। আমি মাথা নীচু করলাম। -ইসলাম ভাই কোথায়? -উঁ হুঁ ইসলাম ভাই নয়, মুন্না ভাই। ফিক করে হেসে ফেললাম। বাসু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে। -হাসছিস কেন? -তোকে দেখে। চল। -এই ভরা হাটে তোর দোকানে ভিড় করা যাবেনা। -বক্তব্য ঝাড়িসনা। গাড়ির চারপাশে তখনো বাচ্চাদের ভিড় থিক থিক করছে। রবিন গাড়ির কাঁচ তুলে দিলো। আমি অনাদির সঙ্গে বাসুর দোকানে এলাম। -বড়মা এসেছে? -পুরো ব্যাটেলিয়ান। -ওরা কোথায়? -যে যার ইচ্ছে মতো হাটে ঘুরছে। স্যারও এসেছেন। -তাই নাকি! -হ্যাঁ। দাদা নিয়ে এলেন। -ঘরে কে আছে। -সুরমাসি। কাকীমা। -চিকনা গেলো কোথায় ? -আছে এদিকে কোথাও।   আমরা ঢুকতেই বাসু ওর কাজের ছেলেটাকে বললো -দরজাটা হাফ ভেজিয়ে দে। সকাল থেকে অনেক বিক্রী করেছিস। ছেলেটি হাসতে হাসতে উঠে গেলো। আমি টুলে বসলাম। -এরা মনে হয় তোর বাড়িতে গেলো। -হবে হয়তো। ম্যাডামকে এখন সবাই চিনে গেছে অসুবিধে নেই। চা খাবি। -খাওয়া। অনাদি গেলো কোথায় ? -তুই ব্যস্ত হচ্ছিস কেন? বাসু ওর ছেলেটিকে বললো যা একটু চা বলে আয়। -এদিকের খবর বল। -এদিকের খবর আর কি আছে, সব তোর খবর। হাসলাম। -হাসিসনা। তোকে মাঝে মাঝে মনে হয় মেরে পাট করে দিই। -দে। -সে আর পারছি কোথায়। বাইরে চোখ পরলো দেখলাম বড়মা ছোটমা ইসলাম ভাই ঢুকছে। আমি উঠে দাঁড়ালাম। বাসু আমার আগেই বাইরে বেরিয়ে গেলো। ওরা ঘরে ঢুকলো। আমি এগিয়ে গিয়ে প্রণাম করলাম। বড়মা আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। চোখের কোলে জল টল টল করছে। আমার মুখে হাত বোলাচ্ছে। আমি জড়িয়ে ধরলাম। -কি হয়েছে, বলবে তো। বড়মা কোনো কথা বলতে পারছেনা। যন্ত্রণায় মুখটা পাংশু। ছোটমার দিকে তাকালাম। মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ইসলাম ভাই-এর চোখও ছলছলে। বাসু চেয়ার এগিয়ে দিলো। বড়মা আমার বুকে মুখ লুকিয়েছে। আমি বড়মার মুখটা তুলে বললাম -আমার কিছু হয়নি। -তোর মুখটা দেখেছিস। গলাটা ধরে এলো। -ঠিক আছে বোসো। হৈ হৈ করে দেবারা এসে বাসুর দোকানে ঢুকলো। ঘর ভরে গেলো। পেছন পেছন চিকনা। হাতে পাটালি আর ছোলা সেদ্ধ। -ওমা বড়মা তুমি এখানে। টিনা চোখ পাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো। ঝপা ঝপ সবাই বড়মার পায়ে লুটিয়ে পরলো। -কিগো চোখ ছল ছল কেনো! অনিদার কিছু হয়নি। চোখ মোছো। টিনা বড়মার কাপড়ের খোঁট দিয়ে চোখ মোছালো। ইসলাম ভাইকে ওরা দেখেনি। একটু ইতস্ততঃ করছিলো। মিত্রা পরিচয় করিয়ে দিলো। দেবা জড়িয়ে ধরলো ইসলাম ভাইকে। -জানো দাদা তোমার কতো গল্প শুনেছি ওর মুখে। আমার বন্ধুটা ভীষণ স্বার্থপর। একটু একটু করে ছাড়ে। কিছুতেই পুরোটা দেবেনা। -তবু তোমাদের কিছু দেয়, আমাকে কিছুই দেয়না। আমি মাথা নীচু করে হাসছি। -কিরে মাসিকে ফোন করেছিস। মিত্রা বললো। -সময় পেলাম কোথায়। -আমি জানিয়ে দিয়েছি। ইসলাম ভাই বললো। -অনিদা তোমার সঙ্গে ঝগড়া করবো। অদিতি বললো। -কেনো। -নীপা এই সব জানলো কি করে। নীপা ঘরের এককোনে দাঁড়িয়ে মিটি মিটি হাসছে। -ওকে জিজ্ঞাসা করো। -বড়মার গালটা নেড়ে মিলি বললো। বড়মা তুমি বলো এটা ঠিক। ছোটমা মুখে কাপড় চাপা দিয়েছে। -কি বলবিতো? -ওই সব কথা। -ওতো মিত্রা গল্প করেছে সবার কাছে। -কিগো বড়মা! ছেলেকে বাঁচাতে…..। মিত্রা এমন চোখ বড় বড় করে বললো। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। -মার ধরে ওকে। শয়তানি। আসা মাত্রই হাত করে নিয়েছে। সবাই হাসছে। দূরে দাঁড়িয়ে দেবাশিষ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছে ব্যাপারটা। -চিকনা। -ম্যাডাম। -তুমি তোমার গুরুর জন্য খালি নিয়ে এসেছো। -নীপা পয়সা দেয়নি। সবাই নীপার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে ফেললো। বাসুর মুখ থেকে বেরিয়ে এলো -ছাগল। -তুই ছাগল বললি। কতোবার চাইলাম। বলে কিনা বাজে খরচ হবেনা। -চিকনা দা। নীপা ধমকে উঠলো। -দেখেছিস। তুই যেমন কিপ্টা। তোর ক্যাশিয়ারও কিপ্টা। হাত থেকে জল গলবেনা। -মিত্রাদি! -থাম তুই। এই ঘরের কেউ আর গম্ভীর নেই। আমি বাসুকে আস্তে করে বললাম দরজাটা বন্ধ করে দে। তোর খরিদ্দাররা শুনলে কি বলবে। -তোমায় ফিস ফিস করে কি বলছে গো বাসু। মিত্রা ধমকে উঠলো। -কিছুনা। -জানো বড়মা ওদের গাড়ি থেকে নামতে দেয়নি। সেই আমাদের কেস। -মিত্রাদি চুপ চুপ। টিনা বললো। -তোর সব গুণের কথা বলবো এদের, তুই এতদিন ওদের বলেছিস। -তাই নাকি। মিলি কাছে এগিয়ে এলো। কাঁধ নাচিয়ে ভুরু কাঁপিয়ে বললো, কিগো অনিদা, বলেছিলাম না, দলটা আগে ভারি করি, সব উসুল করে নেবো। -আমার মুরগীর ঠ্যাং কোথায় বল। মিত্রা কোমরে কাপড় জড়িয়ে তেড়ে এলো। -দেবা আমাকে এদের হাত থেকে বাঁচা। -দেবা এলে দেবাকে উড়িয়ে দেবো ও ছাগলটা কি করবে। -মিত্রাদি। অদিতি চেঁচিয়ে উঠলো। -চুপ কর। তুই এখন আমাদের দলে। দেবা হাসতে হাসতে বললো। মিত্রা গাড়ির পেছনে আছে। -নিয়ে আয়। -চিকনা। যাতো একটু। আমি বললাম। চিকনা বেরিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর তিনজনে একসঙ্গে ঢুকলো দেখলাম পাঁচু পচা এসেছে। ইসলাম ভাই নিজের জিনিস চিনতে পেরেছে। -এটা আমার? -হ্যাঁ তোমার। তোমার সঙ্গে অনেক হিসেব আছে। -সে তুই করিস। তবে লাভ নেই। গেম তোর হাতের বাইরে। -ওঃ কি ভারী গো ইসলাম ভাই। চিকনা বললো। আমি হাসছি।
Parent