কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ১৯০

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4783107.html#pid4783107

🕰️ Posted on May 11, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1166 words / 5 min read

Parent
-হ্যাঁ গো বান্ধবী, পাটালি আনতে বললে, অনির নাকি জিলিপি খুব ফেভারিট, কয়েকটা আনতে দাও না। -না। আর হবেনা। -নীপা মা? নীপা হাসতে হাসতে এগিয়ে এলো। -কি বলো। -এই পকেটে হাত ঢোকা। -কেনো বলো  না। -হাত ঢোকা না! -তুমি বলো। -হাটে ঢুকতেই যে ছেলেটা বসে আছে। ওর জিলিপিগুলো বেশ কড়া। তুই আমার, অনি এডিটর আর তোর জন্য নিয়ে আয়। গোনাগুন্তি দুটো করে। -আমরা কি বানের জলে ভেসে এসেছি। বড়মা চেঁচিয়ে উঠলো। -ও এডিটর শুনলে কথা। -তুমি শোনো, আমি তিরিশ বছর ধরে শুনছি। সবাই হাসছে। টিনা এসে ডাক্তারের পায়ের কাছে বসলো। -তুই আবার এখানে কেনো। -দাঁড়াও তোমার আর বড়মার কথাগুলো মুখস্থ করি। -পারবিনা। -চেষ্টা তো করি। পাঁচু জিলিপির ঠোঙা নিয়ে ঢুকলো। -দে দে বাবা আগে অনিকে দিয়ে বউনি কর। আমি একটা তুলে নিলাম। টিনা উঠে দাঁড়িয়ে সকলকে ভাগ করে দিলো। মিত্রার দিকে তাকালাম। ও এখনো একটা ঠ্যাং চিবোচ্ছে। -কিরে তোর এখনো শেষ হয়নি। -তুই তাকাচ্ছিস কেনো এদিকে। -জানো মিত্রাদি অনিদা ধাবায় পয়সা দেয়নি। মিলি বললো। -তার মানে! ফোঁকটে। ইসলাম ভাই হো হো করে হেসে ফেললো। -তুই একটু ধুলো দিস তোর কাছ থেকে শিখতে হবে। -আরে আমি না নিরঞ্জনদা…..। সবাই নিরঞ্জনদার দিকে তাকালো। -বুঝলে এডিটর পার্টিটা এই করেই গেলো। -না এবার আমি উঠি। নিরঞ্জনদা বললো। -আরে ভায়া উঠে যাবে কোথায়। তিনকুড়ি নয় বয়স হয়ে গেলো। -নাও এবার উঠে পরো। অনেক বাজার করেছো। রান্না করতে হবে। পথও কম নয়। -বাসু বাবা, একটু জল হবে। বড়ো নোংরা করে খাই। হাতটা একটু ধোবো। অনাদি জলের মগটা এগিয়ে দিলো। ডাক্তার দাদা বাইরে গিয়ে হাত ধুলো। -বড়মা আমার দিকে তাকালো। তুই চল। -যাচ্ছি তোমরা যাও। -কেনো একসঙ্গে চল। -তোমরা যাওনা। পরে যাচ্ছি। ইসলাম ভাই তুমি একটু থেকো। -আবার শলা পরামর্শ, দাঁড়া আমি দামিনীকে ফোন করছি। তুই যেমন বুনো ওল ও তেমনি বাঘা তেঁতুল। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। ওরা এগিয়ে গেলো। বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলাম সন্ধ্যা নেমে এসেছে। বাসু ঘরের লাইট জ্বাললো। ধুপ দিলো। -চিকনা এবার একটু চা বল। ঘন্টা দুয়েক কোথা থেকে যে চলে গেলো। -ডাক্তার দাদা কাকা কাকীদের দেখেছে। -দেখেছে মানে অর্ধেক রোগ সেরে গেছে। -যাঃ। -হ্যাঁ রে অনি বিশ্বাস কর। সুবলকাকার মুখ দেখে বললো, মাঠেঘাটে অনেক কাজ করেছেন। হাতটার এখানে বেদনা হয়। -কাকা হ্যাঁ বললো। -ঘরে গরু আছে। -গ্রামের ঘরে কার না গরু থাকে বল। কাকা হ্যাঁ বললো। -দিনে এক লিটার করে দুধ খাবেন। আর পাঁচ রকমের শাকের নাম বললো। বেশ ওষুধ দেওয়া হয়ে গেলো। আমি বাসুর দিকে তাকিয়ে আছি। -আর একটা ওষুধ দিলো। এখানে পেলাম না আমাদের সুধীন ফার্মাসিস্টকে দিয়েছি, বলেছে এনে দেবে। -আমাকে একটা ফোন করতে পারতিস। -দূর তুই ছাড়তো। -সত্যি অনি দেখলে বোঝা যায়না। হরে কৃষ্ণদা ডাক্তার দাদার সঙ্গে দেখা হতে প্রণাম করলো। বললো সাত মাস পরে এ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়েছিলো। এক হাজার টাকা ভিজিট। হাতটা শরু হয়ে গেছিলো। এখন ঠিক হয়ে গেছে। আমাদের কানা সামন্ত তো সাষ্টাঙ্গে প্রণাম সারলো। কাল যাবে বলেছে। অনাদি বললো। ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম একটা সিগারেট খাওয়াবে। চিকনা পকেট থেকে সঙ্গে সঙ্গে সিগারেট বার করলো। -কিরে সেই প্যাকেটটা। -না। বস আর এক প্যাকেট দিয়েছে। বাইরের কেউ এলে সিগারেট। না হলে বিড়ি। আমি হাসলাম। সিগারেট ধরিয়ে ইসলাম ভাইকে বললাম এদিকের খবর। -সব ঠিক আছে কাজ সারতে সারতে একটা বাজলো। তারপর খেয়ে দেয়ে এখানে চলে এলাম। -আমি জায়গাটা এখনো দেখিনি। -তুই দেখিসনি! -বিশ্বাস করো। -দেখো কান্ড, যার জন্য এতোসব, সেইই এখনো দেখেনি। চল চল দেখবি চল। -দাঁড়াও সিগারেটটা খেয়ে নিই। -অনি। -আমি অনাদির দিকে তাকালাম। -একটু কাজ সেরে নিয়ে ডাইরেক্ট তোর বাড়ি চলে যাচ্ছি। -আচ্ছা আয়। -চিকনা চল। চিকনা উঠে দাঁড়ালো। বাসুকে জিজ্ঞাসা করলাম তুই কখন যাবি। -তোর ওখানে নেমন্তন্ন, সপরিবারে। -সবার। -হ্যাঁ। সেই জন্য অনাদি দৌড়লো। না গেলে বৌ খেদাবেনা। আমি হাসলাম। -আমি ইসলাম ভাই যাবো কি করে। -তোকে চিন্তা করতে হবেনা। ইসলাম ভাই-এর বাহন আছে। -চিকনার টা ? -না ইসলাম ভাই কিনে নিয়েছে। আমি ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম। -কি করবো বল। তুই এখানে যেভাবে তাস সাজাচ্ছিস, ঘন ঘন এখানে আসতে হবে। কাঁহাতক হাঁটি বল। নীপার নামে কিনেছি। আমি না থাকলে নীপা চালাবে। -নীপা চালাতে পারে। -একটু একটু শিখেছে। -সত্যি তুমি পারো। -তোর জন্য নাক যখন কেটেছি একটু ভালো করেই কাটি। -বাসু উঠিরে, এখানে আর আসবোনা। লতাকে নিয়ে চলে আয়। -যা যাচ্ছি। আমি আর ইসলাম ভাই বেরিয়ে এলাম। -গাড়ি কোথায় রেখেছো। -সামনে সঞ্জুর দোকানে। -সত্যিতো সঞ্জুকে দেখতে পেলামনা। -দেখবি কি করে তোর ওখানে ব্যস্ত। -কি করছে। -এদের জন্য দুটো ঘর রেডি হলো। লাইট লাগাচ্ছে। সত্যি তোর বন্ধুগুলো দারুন। -তোমার জন্য একটা সুখবর আছে। -কিরে! -চলো বলছি। ব্যাঙ্কের টাকা তুমি দিলে। -হ্যাঁ। -এ্যাকাউন্ট হয়েছে। -হ্যাঁ। সাতজনের করিয়েছি। একটা করে সেভিংস। আর ডিডে যে নামটা তুই রেজিস্ট্রেসন করিয়েছিস সেই নামে একটা কারেন্ট এ্যাকাউন্ট। -কত টাকা জমা দিলে। -দাদা, মল্লিকদা, বড়দি, দিদি চেক দিয়েছে দু’লাখ করে নিরঞ্জনদা, মামনি আর আমার এ্যাকাউন্টে আমি ক্যাশ দিয়েছি। আর কো-অপারেটিভের এ্যাকাউন্টে তিরিশ জমা দিয়ে দিয়েছি। -সব শেষ করে দিয়েছো। -আজতো রতন আবার পাঠালো। -সেতো দেখলাম। -তোকে ভাবতে হবেনা। পায়ে পায়ে দুজনে জমিটায় এসে দাঁড়ালাম। একেবারে বাজারের মুখে। বেশ ভালো স্পট। এখানটা একটু অন্ধকার অন্ধকার। বুঝতে পারছি এইবার বাজারটা এই পর্যন্ত এগিয়ে আসবে। -অনাদিকে বলেছি কাল থেকে কাজ শুরু করে দিতে। -অনেক টাকা লাগবে। -তুই এটা নিয়ে ভাবিসনা। আমার ওপর ছেড়ে দে। -তোমায় যে আরো বড়ো কাজ করতে হবে। -তুইতো এখনো বললিনা। -অনিমেষদার কাছে গেছিলাম। -শুনলাম। -তোমার সঙ্গে অনিমেষদা বসতে চেয়েছে। -সত্যি! নিমেষের মধ্যে ইসলাম ভাই আমাকে কোলে তুলে নিলো। -আরে ছাড়ো ছাড়ো। করছো কি। আমি শূন্যে উঠে গেলাম। -পরে যাবো। ইসলাম ভাই কয়েক পাক ঘুরে আমাকে নিচে নামিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো। আমি ইসলাম ভাই-এর বুকের মধ্যে পায়রার মতো হাঁপাচ্ছি। -বিশ্বাস কর অনি। ভদ্রলোকের সঙ্গে বসার জন্য কতো চেষ্টা করেছি। কেউ পাত্তা দেয়নি। তুই আমার সাধটা পূরণ করলি। -সাধ পূরণ নয় তোমাকে একটা দায়িত্ব দেবে। -বল তুই। যে করেই হোক আমি কাজটা করবো। আমাকে ওই ভদ্রলোকের মন জিততেই হবে। -এই ডিস্ট্রিক্টে মাস দুয়েকের মধ্যে পাঁচটা সিটে বাই-ইলেকসন। সিটগুলো বার করতে হবে। আমাকে আড়ালে ডেকে বলেছে। নিরঞ্জনদা জানে না। -সেটা শুনলাম নিরঞ্জনদার মুখে। তোর সঙ্গে আলাদা কথা বলেছে। নিরঞ্জনদা এখন তোকে ভীষণ ভয় পাচ্ছে। -কেনো। -তোর সঙ্গে অনিমেষদার রিলেসন দেখে। -ভয় পাওয়ার কি আছে। -ওতো অনেক গজব করে রেখেছে। -সেটা অনিমেষদা জানে। নিজেকে শোধরাবে নাহলে মরবে। -বড়দি বলেছে এরপর আর অনিকে তোর জন্য বলতে পারবোনা। নিরঞ্জনদা স্বীকার করে নিয়েছে। -এ যাত্রায় নিরঞ্জনদা বেঁচে যাবে। -এটাই যথেষ্ট। কজন করে। -ডাক্তার ব্যানার্জী এখন কেমন আছে? ইসলাম ভাই আমার চোখে চোখ রাখলো। কেউ যেন ইসলাম ভাই-এর গালে কষে একটা থাপ্পর মারলো। ফিক করে হেসে ফেললো। -গিভ এন্ড টেক পলিসি। -না। -তুই আমার পেট থেকে কথা বার করতে পারবিনা। -তাহলে আমার সোর্স কাজে লাগাতে হবে। -লাগাতে পারিস। কাজ হবেনা। -ওকে আমার দরকার। -যখনি বলবি তোর কাছে হাজির করে দেবো। -টোডি ? -মামনিকে প্রমিস করেছি ও আর থাকবে না। বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে কাজ হয়ে যাবে। -ভুল করলে। -কেনো। -ওকে দিয়ে অনেক কাজ করানো বাকি আছে। -আর দরকার নেই। এখন যে কাজে হাত দিয়েছিস মন দিয়ে কর। আমি ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম। বোঝার চেষ্টা করলাম। -তুমি সব জানো। -দামিনী কাল ফোনে সব বলেছে। -কাল সারারাত মাসি ঘুমোয়নি কেনো ? -মামনির সঙ্গে কথা বলেছে। -কখন! -তোর সঙ্গে কথা বলার পর। -মিত্রার শরীরের ব্যাপারটা মাসি জানে। -জানতোনা। আমি বলেছি। দামিনী খালি কাঁদছে। আমি ফিরে যাই। -ছোটমার ব্যাপার। -বলেছি। -কি বললো। -তুই খুব ভাগ্যবান। আমার কপালে ঘর সংসার কিছুই জুটলনা, তোর তবু কিছুটা হলো। -মাসিকে এখানে নিয়ে আসা যাবে। -আর একটু সময় নে। -মাসি কষ্ট পাচ্ছিলো। -জানি। তবু তুই নিজেকে অনেক ভেঙ্গেছিস। আমি সব বুঝি। -তাই তোমার সঙ্গে কথা বলছি। ইসলাম ভাই চুপ করে রইলো। -দাঁড়াও অনিমেষদাকে একটা ফোন করি। -এখন! -হ্যাঁ।
Parent