কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ১৯৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4801453.html#pid4801453

🕰️ Posted on May 22, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1045 words / 5 min read

Parent
-পেটে রস আছে না সব বার করে দিলি। -আর থাকে। পুরো জায়গাটা কাদা করে দিয়ে এসেছি। -যাক তাহলে এতো দিন পরে নামটা লিখতে পারলি। -মিলিদি আবার শুরু করেছো। -ঠিক আছে আর বলবোনা। -দেবা ওই টালির বাড়িটা দেখতে পাচ্ছিস। -হ্যাঁ। -ওটা আমার আর নীপার স্কুল। -তুই শালা এখান থেকে ওই জায়গায়! হ্যাটস অফ মাইরি। -দেবাদা এই ভাবে। টিনা আমার সামনে মার্চ পাস্টের ভঙ্গিতে এসে স্যালুট করলো। -টিনা খুলে পরে যাবে। মিলি বললো। -ধ্যাত। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। যেতে যেতে পথের বামদিকে পীরসাহেবের থান পরলো। আমরা সবাই দাঁড়ালাম। মিত্রা আমাকে ধরে দাঁড়ালো। -যা ওদের নিয়ে যা। আমি এখানে বসি। -তুই চল। -যাচ্ছি তোরা যা। মিত্রা ওদের নিয়ে গেলো। সবাই জুতো খুলে পুকুরে হাত পা মুখ ধুলো। তারপর সেই অশ্বত্থ তলায় প্রণাম করলো। দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারছি মিত্রা ওদের সেই সব গল্প শোনাচ্ছে। ওর গোল হয়ে সব দাঁড়িয়ে আছে। আমি পুকুরের এপারে বসে আছি। ওরা চারিদিকটা ঘুরে ঘুরে দেখলো। তারপর ধীর পায়ে সবাই আমার কাছে এলো। দেবাশিষ আমাকে এসে জড়িয়ে ধরলো। মিলি টিনা অদিতি নির্মাল্য ঢিপ ঢিপ করে প্রণাম করলো। -আরি বাবা এইসব আবার কি হচ্ছে। ওরা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। -অনিদা আশীর্বাদ করো যেন তোমার মতো হতে পারি। অদিতি আমার ডানহাতটা নিয়ে মাথায় ঠেকালো। -কেনো আমি কি ভগবান। -তাকে তো দেখার সৌভাগ্য হবেনা। তার রিপ্রেজেন্টেটিভকে দেখে চোখ জুড়াই। -ভুল করছো। জায়গাটা আমার ভালো লাগে। আমিও তোমাদের মতো ওই গাছটার কাছে আসি। -সত্যি তুই দেখেছিস। -না। -তাহলে। -বলতে পারবোনা। ব্যাখ্যা করতে পারবোনা। বলতে পারিস একটা মিথ। আমার বিশ্বাসের বড় জায়গা। -ছবি তুলতে পারবো অনিদা। টিনা বললো। -কেনো পারবেনা। মিলি টিনা অদিতি ওদের মোবাইলের সার্টার অন করলো। মিত্রা আমার হাতটা ধরে বললো -আজ আর একটা জিনিষ চাইলাম। হাসলাম। -ওদের সবার কাপালে মাটি লাগিয়ে দিয়েছি। -বেশ করেছিস। নির্মাল্য খুব গম্ভীর হয়ে রয়েছে। ওর দিকে তাকালাম। চোখে চোখ পরতেই মাথাটা নীচু করে নিলো। -কি নির্মাল্য বাবু। নির্মাল্য কাছে এগিয়ে এলো। চোখে হাজারো প্রশ্ন।   -তুমি রাতের অন্ধকারে এখানে একলা আসো! -হ্যাঁ। -তাহলে তুমি সাপ মারতেই পারো। -এতোক্ষণে তুই বুঝলি। মিলি বললো। নির্মাল্য মাথা নীচু করে নিলো। -অনিদা। -কি। -না থাক তোমায় পরে বলবো। -এখন বলনা। -মিলিদি রা ইয়ার্কি মারবে। -ঠিক আছে। -চল। -অনিদা কুল খাবো। টিনা বললো। -এখানে পাওয়া যাবেনা। -যাবে তুমি চেষ্টা করলেই হবে। -এখবর তোমায় কে দিলো। -হট কালেকসন। -টিনা দারুন দিয়েছি মাইরি। দেবাশিষ হাসতে হাসতে বললো। আমরা পায়ে পায়ে স্কুলের সামনে এলাম। সবে মাত্র ভোর হয়েছে। পূব আকাশটায় গাঢ় কমলা রং ছড়িয়ে পরেছে। ওরা ক্যামেরায় কেউ মুভি তুলছে, কেউ স্টিল ফটো তুলছে। -নীপা নবোদা এখনো আছে। -আছে। -এখনো এখানে থাকে ? -হ্যাঁ। -অনি। পেছন ফিরে তাকালাম। -এই মাঠে খালি ধান চাষ হয় না অন্য কিছু। -খালি ধান চাষ হয়। এগুলো সব তিন ফসলী জমি। -তুই এগুলো সব জানিস। -গ্রামের ছেলে। -শহরের ছেলেগুলোর কতো মাইনাস পয়েন্ট বলতো। -এখানে যখন এসেছিস প্লাস করে নে। -একটা করলাম। যা জীবনে কখনো করিনি। অদিতি দেবার দিকে তাকিয়ে বললো যাঃ। -মিত্রা কোথায় রে ? -ওই দেখ কি করছে। তাকিয়ে দেখলাম স্কুলের সামনে মাঠের ধারে যে ঝোপটা আছে সেখানে দৌড়া দৌড়ি করছে। -কি করছিস রে। -দাঁড়া একটা জিনিষ ধরছি। অদিতি দেবার হাতটা ছেড়ে তীরের মতো ছুটে চলে গেলো। দেখা দেখি টিনা মিলি দৌড়ালো। নির্মাল্য একটু দূরত্ব রেখে একা একা এদিক ওদিক ঘুরছে। বড় আনমনা মনে হচ্ছে। -একটা সিগারেট দে। দেবা পকেট থেকে বার করলো। আমাকে একটা দিলো নিজে একটা ধরালো। নির্মাল্যর দিকে তাকিয়ে বললাম -একা একা কি করছিস নির্মাল্য। নির্মাল্য পায়ে পায়ে কাছে এগিয়ে এলো। -জানো অনিদা এখানে এসে অলস অথচ এনজয়বেল টাইমটা উপভোগ করছি। -ঠিক বুঝতে পারলাম না। -দূর তোমার মতো ভাষা আছে নাকি। -ঠিক আছে তুই তোর মতো করে বল। -কলকাতায় সকালে ঘুম থেকে উঠেই কতো কাজ নাকে মুখে দেখতে পাইনা। মাঝে মাঝে কাজ করতে ইচ্ছে করে না। -ঠিক। -এখানে দেখো। কোনো কাজ নেই কিন্তু মনের মধ্যে কোনো অলসতা নেই। -তার মানে কলকাতায় অলস সময়গুলো তুই এনজয় করতে পারিসনা এখানে সেটা পারছিস। -একেবারে ঠিক। -জানো অনিদা মায়ের মুখ থেকে শুনেছিলাম আমাদের নাকি একটা দেশ আছে। বর্ধমানের ওইদিকে। সেটাও গ্রাম। -যাস নি ? -না। মায়ের মুখে খালি গল্পই শুনেছি। আজ পুরোপুরি উপভোগ করছি। -তোর ভালো লাগছে। -দারুণ। সবচেয়ে ভালো লাগছে নির্জনতা। এতো নির্জন, এসি রুমে একা বসে থাকলেও পাইনা। -দারুণ কথা বললি। -ফিরে গিয়ে একাটা আর্টিকেল লিখবো একটু এডিট করে দেবে? -অবশ্যই, কেনো দেবোনা। -একটা বড় কাজ এসেছে। আমাদের কপিরাইটাররা কিছুতেই নামাতে পারছেনা। তুমি এখানে নিয়ে এসে আমার মনের পলিগুলো ড্রেজার দিয়ে কেটে পরিষ্কার করে দিচ্ছ। -বাবা তোর ভাবতো দুধের মতো উথলে উঠছে। -দেখছো অনিদা দেখছো দেবাদা কিরকম বলছে। -তুই যে একটা অত বড় পোস্ট হোল্ড করে রেখেছিস সেটা পাত্তাই দেয়না। -মিথ্যে কথা বলবোনা। দেবাদা অনেক হেল্প করে। দায়ে অদায়ে দেবাদার কাছে ছুটে যাই। অফটার অল দেবাদা এই ফিল্ডে আমার সিনিয়র। -বুবুন। মিত্রার তারস্বর চিৎকারে ফিরে তাকালাম। দেখলাম মিত্রা মাটিতে বসে পা ছুঁড়ছে। অদিতি মিলি টিনা নীপা মাগো বাবাগো মাগো বাবাগো করছে। আমি এক ছুটে কাছে গেলাম। দেবাশিষ নির্মাল্য আমার পেছন পেছন। কাছে যেতেই মিত্রা হাউ হাউ করে কেঁদে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। পার দিকে আঙুল দেখালো। তখনো সজোরে পা ছুঁড়ছে। তাকিয়ে দেখলাম একটা জোঁক ওর পায়ে বসে আছে। টেনে জোঁকটাকে বার করলাম। একটা মাটির ঢেলা দিয়ে পিষে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলাম। রক্ত বেরোচ্ছে। জায়গাটা চেপে ধরলাম। মিত্রা আমার কাঁধে মাথা দিয়েছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। -আরে বোকার মতো কাঁদে। দেখ কিছু হয়নি। টিনা মিলি অদিতি মাটিতে থেবরে বসে হাঁপাচ্ছে। ভয়ে ওদের চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা। নীপাকে বললাম -যাও তো একটু ককসীমা গাছ ভেঙে আনোতো। নীপা হাঁপাতে হাঁপাতে বললো -চিনিনা। -মেনি বেড়ালের মতো উঁ উঁ করছিস কেনো। কিচ্ছু হয়নি। -কতোটা রক্ত খেয়ে নিলো। -তোকে এখানে কে আসতে বলেছিলো। -প্রজাপতি ধরছিলাম। -শখ দেখোনা। প্রজাপতি ধরছে বুড়ো বয়সে। টিনা, মিলি, অদিতি ফিক করে হেসে ফেললো। দেবাশিষ নির্মাল্য থ। আমি জায়গাটা থেকে আঙুল সরালাম দেখলাম রক্ত বন্ধ হয়ে গেছে। -বস এখানে আসছি। -কোথায় যাচ্ছিস। -মরতে। মিত্রা হেসে ফেললো। -নির্মাল্য একটু আয়তো। নির্মাল্য আমার কথা মতো পেছন পেছন এলো। আমি স্কুলের পুকুর থেকে একটা পদ্মপাতা তুলে তার মধ্যে জল দিয়ে নির্মাল্যকে বললাম যা গিয়ে পাটা ধুয়ে দে আমি যাচ্ছি। পুকুরের ওপারে গেলাম। ককসীমা গাছ ছিঁড়লাম। এসে দেখলাম ওরা গোল হয়ে বসে আছে। আমি একটা একটা ডাল ভেঙে যে রস বার হলো তা ওর পায়ে লাগালাম। ওরা সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে আমার দিকে দেখছে। -বুবুন চুলকোচ্ছে। -চুলকুনি বন্ধ করার জন্য গোবর লাগাতে হবে। লাগাবি। -এমাগো। টিনা নাক সিঁটকিয়ে উঠলো। -তুই খেঁচাছিস কেনো। -দেহি পদ পল্লব মুদারম। হো হো করে হেঁসে ফেললো সবাই। দেবাশিষ আমার কাঁধটা ঝাঁকিয়ে বললো। হাইড দিয়েছিস গুরু। -তুমি পুরো বৈষ্ণব পদাবলী ঝেড়ে দিলে। মিলি বললো। -তুমি গেঁওটাল মাটি চেনো। নীপার দিকে তাকিয়ে বললাম। -কাকে বলে। -তুমি গ্রামে আছো কি করে। -মশাই একপাও বেরোতে দেয়না। -আমাকেও দিতো না। -তুমি আমি এক। -দাঁড়া। নিয়ে আসি।
Parent