কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ২০০

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4801455.html#pid4801455

🕰️ Posted on May 24, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 961 words / 4 min read

Parent
আমি আবার পুকুর ঘাটে গিয়ে গেঁওটাল মাটি নিয়ে এলাম। ওর ওখানে লাগালাম। তারপর একটা লতা ছিঁড়ে পদ্মপাতা দিয়ে জায়গাটা বেঁধে দিলাম। -দারুণ ব্যান্ডেজ করলি তো। দেবা বললো। -কিছু শিখলে মিলিদি। নির্মাল্য গম্ভীর হয়ে বললো। -তুই চল তরপর হচ্ছে। -কি করবে। -চলনা দেখবি। অদিতি সব সানিয়ে রাখবি। আজ তোকে কুরমুর করে খাবো। -অনিদা আছে। -অনিদা তোকে পাহারা দেবে। -পেছন ছাড়ছিনা। আমি ফিক ফিক করে হাসছি। -এবার ওঠ। -দাঁড়া না। -এতো ঢেপুস হলে চলে। -তোর হলে কি করতিস। -কেউ জানতেই পারতিসনা। -নে উঠে দাঁড়া। মিত্রা আমাকে ধরে উঠে দাঁড়ালো। -জুতো কোথায়। -ওই যে খুলে চলে গেছে। -যা নাচানাচি করলি ছিঁড়ে যায়নি এই ভালো। নীপা গিয়ে জুতো নিয়ে এলো। -প্রজাপতি ধরেছিস। -সব উড়ে চলে গেলো। -ওগুলো মেয়ে প্রজাপতি ছেলে হলে ধরা দিতো। -যেমন তুই বল। -ছাগল। -লিঙ্গে ভুল করলি। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। টিনা মিলি অদিতি মুখে হাত চাপা দিয়েছে। -চালা চালা বেশ লাগছে মাইরি। সেই কলেজ লাইফটা যেনো ফিরে পাচ্ছি। -ফ্যাটকাসনা। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, চল অনেক হয়েছে। ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে চল। -না যাবো। -কোথায় যাবি। -তোর স্কুলে। -ওইতো দেখা যাচ্ছে চলে যা। -চলনা ওরকম করিস কেনো। ওদের স্কুলে নিয়ে এলাম। মিত্রা আমার হাত ধরে একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। -কি হলো। -ব্যাথা লাগছে। -বাড়িতে চল পল্তে পুড়িয়ে ছেঁকা দিয়ে দেবো, ঠিক হয়ে যাবে। -তুই আমাকে পুড়িয়ে মারবি। টিনা মিলি আমার দুপাশে। হাসছে। -তোর একটুও ব্যাথা লাগছে না। তুই মনে মনে ভাবছিস তোর ওখানে ব্যাথা। ওরা স্কুলের ভেতরে ঢুকে অবাক। নীপাকে বললাম -একটু নবদাকে ডাকোনা। -ও অনি এটা তোদের হায়ার সেকেন্ডারী স্কুল। -আমার সময় সেকেন্ডারী পর্যন্ত ছিলো। -তুইতো কলেজে ইলেভেন-টুয়েলভে ভর্তি হয়েছিলি। -হ্যাঁ। -কি নিস্তব্ধ জায়গাটা না মিলিদি। নির্মাল্য বললো। মিলি হুঁ বললো। -আয় আমার নাইন-টেনের বসার জায়গাটা দেখাই। ওরা আমার পেছন পেছন গেলো। আমি ওদের ঘুরে ঘুরে সব দেখালাম। ওদের প্রশ্ন শেষ হয়না। আমি একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে চলেছি। দেখলাম এখন বেঞ্চির সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের সময়ে তিনটে মাত্র বেঞ্চ ছিলো। -জানিস দেবা এটা তবু পদের, বুবুনের প্রাথমিক স্কুলটা দেখিসনি, ওখানে একটাও বেঞ্চ নেই মাটিতে বসতে হয়। মিত্রা বললো। -অনি একবার নিয়ে যাবি। -যাবো। -কোথায় রে অনি? ছেলেটার খালি নাম শুনি চোখের দেখা একবার দেখি। নীপার পেছন পেছন নবদা এলো। আমি এগিয়ে গিয়ে নবদার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম। -নবদা আমার থুতনি ধরে চুমু খেলো। এইতো ঠিক আগের মতো আছে। একটু যা ঢ্যাঙা হয়েছে। -তুমি কেমন আছো নবদা। -আর নবদা। সাতকাল গিয়ে এককালে ঠেকলো। এদের চিন্তে পারলাম না। আমি সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। শেষে মিত্রার সঙ্গে। নবদা মিত্রার থুতনিটা ধরে নাড়িয়ে দিলো। -বেশ হয়েছে বউমাটি। সবাই নবদার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। খালি গায়ে একটা গামছা পরে চলে এসেছে। -নবদা ল্যাবোরেটরি খোলা আছে। -হ্যাঁ চলে যা। -এদের একটু গ্রামের স্কুলের ল্যাবোরেটরি রুমটা দেখাই। -কি দেখবে বাপু একি আর শহরের স্কুলের মতো। -ওরা অনির সব কিছু দেখতে চায়। -দুটি মুড়ি খাবি। -না। -হ্যাঁ গো নবদা খাবো। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। -ও নীপা আয়তো মা একটু পেঁয়াজটা কেটে দিয়ে যা। সে কচিটা আসেনি আজকে। মিলি আমার দিকে গোল গোল চোখে তাকালো। টিনা বললো এখন না। স্টক করো। আমি হাসলাম। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম -খাই খাই করছিস, মুখ ধুয়েছিস। -তুই নিমদাঁতন দিয়েছিস। -দাঁড়া। আমি হন হন করে স্কুলের পেছন দিকে চলে গেলাম। নিমডাল ভেঙে নিমদাঁতন তৈরি করে সবার হাতে হাতে দিলাম। -নে চিবোতে আরম্ভ কর। পেঁয়াজ কাটতে কাটতে দাঁত ঘষা হয়ে যাবে। -ল্যাবোরেটরিতে যাবিনা। -চিবোতে চিবোতে চল। আমি ওদের ল্যাবোরেটরিতে নিয়ে এলাম। ল্যাবোরেটরি দেখে ওদের চোখ চড়কগাছ। -এটা কি ল্যাবোরেটরি রে! -এই ল্যাবোরেটরি ব্যবহার করে কতো ছেলে সাইন্সে ফার্স্ট ডিভিসন পাচ্ছে জানিস। দেবা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে। -ওই বাক্সটায় কি আছেরে বুবুন। -মাইক্রোস্কোপ। -সেইটা। -কিগো মিত্রাদি নিশ্চই গপ্পো। মিলি বললো। মিত্রা মাথা দোলালো। -দাঁড়াও আগে দেখে নিই। তারপর গপ্পোটা শুনবো। খোলো খোলো বাক্সটা। আমি এগিয়ে গেলাম। বাক্সটা খুলে মাইক্রোস্কোপ বার করলাম। -কি ভাবে দেখতে হয়। ওদের দেখালাম কোথায় চোখ রেখে কোথায় এ্যাডজাস্ট করে ব্যাপারটা দেখতে হয়। ওরা যে যার নিজের মতো করে দেখলো। -আমাকে দেখাবিনা। -যা দেখে নে। -তুই চল। আমি মিত্রাকে সঙ্গে করে মাইক্রোস্কোপের কাছে গেলাম। -নে এখানে চোখ রাখ। মিত্রা রাখলো। -দুর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। -তুইকি দু’চোখ খুলে দেখছিস। -হ্যাঁ। -দুর একটা চোখ এইভাবে বন্ধ কর। যেভাবে চোখ মারে সেই ভাবে ওকে দেখালাম। -আর একবার দেখা। দেখালাম। মিত্রা আবার ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রাখলো। -বুবুন। -কি। -কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা। -তোর দ্বারা হবেনা। আমার মতো তোরও গবেট মাথা। এবার রাখ চল মুড়ি খেয়ে বিদায় নিই। -আর একবার, আর একবার। -আবার ওকে রিপিট দেখালাম ভিউফাইন্ডারে চোখ রাখতেই এ্যাডজাস্ট করলাম। -কিরে দেখতে পাচ্ছিস। -হ্যাঁ এবার পাচ্ছি। -ছাড় অনেক হয়েছে। -দারুনরে জিনিসটা। -কাট। দেবাশিষ চেঁচিয়ে উঠলো। -মিলি ছুটে এসে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো। কি সুন্দর এ্যাকটিং করলে মিত্রাদি। -তারমানে। মিত্রার চোখে বিস্ময়। -নির্মাল্য সব মুভি করে রেখেছে। দেবা কাছে এগিয়ে এলো। -জানিস অনি তোদের দুজনকে দেখে দত্তার বিজয়া আর নরেনের কথা মনে পরে যাচ্ছিল। -কি ফালতু বকছিস। -তুলে রেখেছি। চল টিনার ল্যাপটপে ভরে তোকে দেখাবো। কি নাইস লাগছিলো তোকে। একেবারে ইনোসেন্ট। আমি অদিতি চেষ্টা করলেও পারবোনা। আমি মাইক্রোস্কোপ বাক্সে ভরলাম। দরজায় সেকল তুলে স্কুলের বাইরে বেরিয়ে এলাম। -তোদের এই মাইক্রোস্কোপ ছাড়া আর কিছু নেই। -ওই তো কয়েকটা স্পেসিমেন পরে রয়েছে। -ফিজিক্সের ল্যাবোরেটরি। -ওই একটা ঘরে সব। দেখলি না দেয়ালের ধারে একটা বস্তা আছে। -দেখলামতো। -ওর মধ্য ফিজিক্সের কিছু মাল পত্র আছে। কিছু টেস্ট টিউব রয়েছে, একটা বার্ণার রয়েছে ব্যাশ আর কি চাস। -আমি যদি কিছু জিনিষ কিনে দিই। থমকে দাঁড়ালাম। দেবার মুখের দিকে তাকালাম। সত্যি ও ভেতর থেকে বলছে। -দিলে খুবি ভালো। ছেলেগুলো পড়ে বাঁচবে। -আমি দেবো তুই ব্যবস্থা কর। -আমরাও যদি কিছু কন্ট্রিবিউট করি দেবাদা, তোমার অসুবিধে আছে। টিনা মিলি বললো। -একেবারে না। -তোরা কাকার সঙ্গে কথা বল। উনা মাস্টার এখনো পড়ায় স্যার ব্যবস্থা করে দেবে। -আজই কাকার সঙ্গে কথা বলবো। অনেক পয়সা নষ্ট করি। এখানে কিছু পয়সা নষ্ট করলে ক্ষতি হবেনা। একে একে সবাই পুকুর ঘাটে মুখ ধুলাম। নীপাকে নিয়ে মিত্রারা এরি মধ্যে কিছুক্ষণের জন্য হাওয়া হয়ে গেলো। নবোদা মুড়ি এনো দিলো। নিমেষের মধ্যে সব শেষ হয়ে গেলো। চা খেলাম। -অনিদা ও অনিদা। আবার কে ডাকে রে অসময়ে। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি বিজয়। -কিরে তুই! জানলি কি করে আমরা এখানে। বিজয় হাসছে। -বড়মা পাঠালো। -তুই একা। -হ্যাঁ।
Parent