কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ২০১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4811591.html#pid4811591

🕰️ Posted on May 27, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 665 words / 3 min read

Parent
-কিরে কে এসেছে। মিত্রা ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। বিজয়ের দিকে তাকিয়ে মিত্রা হেসে ফেললো। -বড়মা বললেন তোমাদের নিয়ে যেতে। -কেনো আমরা যেতে পারবোনা। -তা বলতে পারবোনা। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। -তোরা চলে যা, আমি, নির্মাল্য, দেবা পরে যাচ্ছি। -তুই আমাদের সঙ্গে চল। -মহা মুস্কিল। -ঠিক আছে, ঠিক আছে। সরি। ওদের ডাকি। -যা ডেকে আন। নবোদার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা সবাই বেরিয়ে এলাম। আসার সময় নবোদা হাতটা ধরে বললো, আবার আসিস। -এদিকে এলে অবশ্যই আসবো। মিত্রারা সবাই ট্রলিতে চাপলো। বিজয় ট্রলি চালাতে শুরু করলো। আমার মোবাইলটা বেজে উঠলো। ম্যাসেজ এলো। আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম। -দাঁড়াও দাঁড়াও বিজয়। -কি হলো, দিদিমনি। -তুমি একটু থামোনা। বিজয় থামালো। মিত্রা ট্রলি থেকে নেমে ছুটে আমার কাছে চলে এলো। -দে একটু দেখি। দেবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে জিজ্ঞাসা। আমি ওর হাতে মোবাইলটা দিলাম। অর্ক লিখেছে। “দাদা সকলা থেকে কাজ শুরু করলাম। আমার সঙ্গে দুটো চেলুয়াকে নিয়েছি। মনে কিছু করবেনা। ওরা তোমার কথা জানেনা। ঘুটি সাজিয়ে নিয়েছি। কাজ খুব স্মুথলি শুরু করে দিয়েছি। একটু আগে, আটটা দশ নাগাদ মিঃ ব্যানার্জী রাজনাথ বাবুর কাছে এসেছেন। গাড়ির নম্বর ডিএল জিরো টু সিক্স এইট নাইন ফোর। সঙ্গে একটা বড় ভিআইপি স্যুটকেস নিয়ে এসেছে। ভেতরে কি আছে খবর নিয়ে একঘন্টা পরে জানাচ্ছি।“ পড়া শেষ হতে মিত্রা আমার দিকে তাকালো, খুশির ঝলক ওর চোখে মুখে। আমাকে জড়িয়ে ধরে চকাত করে ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে নিলো। দেবাশীষের চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। নির্মাল্য মাথা নীচু করে নিলো। বুঝতে পারছি মিলি টিনারাও মিত্রার এই অস্বাভাবিক আচরণে একটু অবাক। -তুই কি করে আগে থেকে জানলি বল। -প্র্যাকটিস। -আমাকে শিখিয়ে দে। -দেবো। ছোট্ট মেয়ের মতো মিত্রা ছুটে চলে গেলো ট্রলির কাছে। একটু দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে -তাড়াতাড়ি আয় প্লীজ। -যা যাচ্ছি। আমরা তিনজন হাঁটতে আরম্ভ করলাম। মাঠ পেরিয়ে পীরবাবার থান। ওখানে মিনিট খানেক দাঁড়ালাম, আমার পাশাপাশি ওড়াও দাঁড়ালো। জুতো খুলে ওখান থেকেই প্রণাম করলাম। দেবারাও প্রণাম করলো। উঠে আবার হাঁটতে আরম্ভ করলাম। -দেবা একটা সিগারেট দে। -অনি। দেবা আমাকে সিগারেট দিলো। -এখানকার ঘটনাটা সত্যি। -বলতে পারবোনা। দেবা আমার দিকে তাকিয়ে। -বিশ্বাস কর শোনা কথা। তবে আমার বাবা দেখেছিলেন। বাবা এই স্কুলেরই মাস্টার ছিলেন। -রিয়েলি! -হ্যাঁ। আমার যখন চার বছর বয়স তখন বাবা-মা দুজনেই গত হন। -তারমানে তখন থেকে তুমি একা। নির্মাল্য বললো। -এইযে কাকা-কাকীমাকে দেখছিস এদের কাছে মানুষ। -এরা তোর নিজের কাকা-কাকীমা নন। মিত্রা বলছিলো। -বাবার বন্ধু। একই স্কুলে কাজ করতেন। পাশাপাশি বাড়ি করেছেন। জমিজমা সম্পত্তি সব একসঙ্গে। বলতে পারিস হরিহর আত্মা। -স্ট্রেঞ্জ। -সত্যি অনিদা তোমার সম্বন্ধে ভাসা ভাসা জানতাম। তোমার যতো কাছে আসছি, তত অবাক হয়ে যাচ্ছি। -কেনো? এটাও একটা জীবন। -হ্যাঁ রে মিত্রা হঠাৎ ওরকম করলো। -আমি জানতাম তুই এই প্রশ্নটা করবি। -তুই কি আবার কিছু ঘটনা ঘটিয়েছিস ? -হ্যাঁ। -বলবিনা? -না। খালি মিত্রাকে কাল রাতে শুয়ে শুয়ে বলেছি। মিলিয়েও দিয়েছি। তাই মিত্রা ইমোশনালি ঘটনাটা ঘটালো। ও কাল রাতে বিশ্বাস করতে পারেনি। -আমাদের সঙ্গে একটু শেয়ার কর, এখনতো কেউ নেই। -জানতে পারবি। না জানলে মঙ্গলবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আন্ডার প্রসেস। -অনিদা যখন বলতে চাইছেনা তখন ডিস্টার্ব করোনা। নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কিছু। আমরা মাঠের মাঝখান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে মোরাম রাস্তায় এসে পরেছি বুঝতে পারিনি। -অনিদা এই রাস্তায় কাল আমরা এসেছিনা। -হ্যাঁ। -ওইতো সেই কালভার্টটা। -চিনতে পেরেছিস। -দেবাদা দেখো অনিদার স্কুলটাকে কেমন ছোটোছোটো লাগছে। দেবা পেছন ফিরে তাকালো। -সত্যিতো। অনি কতটা রাস্তা হবে রে। -প্রায় তিন কিলোমিটার। -তারমানে সকাল থেকে প্রায় সাত কিলোমাটার হাঁটা হয়ে গেলো। -হ্যাঁ। -গড়িয়া থেকে আমার অফিস! শালা কিছুই বুঝতে পারলাম না। -হাসলাম। শ্মশানে যাবি। -চল, এসেছি যখন ঘুরেই যাই। -মোরাম রাস্তা পেরিয়ে আবার ক্ষেতের আইল পথ। সরু রাস্তা। দু’পাশের খেতে কলাই শাক বোনা হয়েছে সবুজ হয়ে আছে ক্ষেতগুলো। -দাঁড়া একটা ছোট্ট কাজ করে নিই। -কি করবি। -দাঁড়া না দেখ। আমি কলাই খেতে নেমে পড়লাম। বেছে বেছে কলাই শাক তুলতে আরম্ভ করলাম। আমার দেখাদেখি দেবাশিষ খেতের আইল থেকে মাঠে নেমে এলো। -কিভাবে তুলবো দেখিয়ে দে। আমরাও কিছুটা তুলে কোঁচরে ভরি। হাসলাম। ওদের দেখিয়ে দিলাম। -খালি ডগাটা তুলবি না হলে গাছ মরে যাবে। -ওরে অনি এতো চা পাতা তোলার মতো কেস। শিলিগুড়িতে চা বাগানে বেড়াতে গিয়ে দেখেছিলাম। -হ্যাঁ। খালি কচি কচি পাতাগুলো তুলবি। যে গাছে ফুল আছে। ওই অংশগুলো বাদ দিস। বেশ কিছুক্ষণ কলাই শাক তুললাম। তিনজনেরই পাঞ্জাবীর কোঁচর ভরে গেছে। -কি করবি। -ভাজা খতে দারুণ লাগে। -চল সুরমাসিকে গিয়ে বলতে হবে।
Parent