কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ২০২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4811594.html#pid4811594

🕰️ Posted on May 28, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 652 words / 3 min read

Parent
আমরা ক্ষেত থেকে উঠে এলাম। হাঁটতে হাঁটতে শ্মশানে এলাম। -বেশ লাগছে, বুঝলি অনি। কলকাতায় এইভাবে রাস্তা দিয়ে হাঁটবো কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনা। -কলকাতায় তুমি এরকম রাস্তা পেয়েছো যে হাঁটবে। দেবা নির্মাল্যের কথায় হো হো করে হেসে ফেললো। -কেনো। দুর্গাপূজোর সময় থিম হিসাবে গ্রাম দেখিসনা। -দূর কার সঙ্গে কার তুলনা করছো। ওটা কৃত্রিম এটা প্রকৃতির নিজের হাতে তৈরি। -তোর কি হয়েছে বলতো। -কেনো! -সকাল থেকে সাহিত্য ঘেঁষা কথা বলছিস। -মনটা খালি বলছে কিছু লিখি। -চল মিলিকে খবরটা দিতে হবে। -এই তো তুমি হ্যাজাতে আরম্ভ করলে। -এই যে জঙ্গল মতো জায়গাটা দেখছিস এটাই শ্মশান। -মরা পোড়ানো হচ্ছে কোথায় ? -দূর এখানে কি সব সময় পোড়ানো হয় নাকি। -তাহলে। -তুই কি এটাকে নিমতলা শ্মশান পেয়েছিস। -তবে কি দেখবো। -তুই একটা মিথকে দেখতে এসেছিস। দেখেছিস ধারে কাছে কোনো বসতি আছে। -না। -কোনো চাষের ক্ষেত আছে। -না। -কেনো বলতো। -কেনো? -এখানে ভূত আছে। চাষ করলে মানুষকে মাঠে এসে কাজ করতে হবে। যদি ভূত ধরে। -তুই কিন্তু সব ডেঞ্জার ডেঞ্জার কথা বলছিস। -কেনো ছোটো হয়ে গেছে এরি মধ্যে। -বাচ্চা ছেলেটার সামনে যা তা শুরু করে দিয়েছিস। -ভেতরে যাবি? না এখান থেকে পালিয়ে যাবি ? -না মানে….। -তুমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকো দেবা দা, আমি অনিদা একটু ঘুরে আসি। -ঢেমনা। ফিক করে হেসে ফেললাম। -চল তাহলে। -চল, যা থাকে কপালে। আমরা শ্মশানের ভেতরে ঢুকলাম। চারিদিকে পোড়া কাঠের ছড়াছড়ি। দেখে মনে হচ্ছে আমি শেষবার যখন এসেছিলাম তার পর কাউকে আর পোড়ানো হয়নি। যেমনটি দেখে গেছিলাম তেমনটিই আছে। গাছের পাতায় বাতাসের স্পর্শে সোঁ সোঁ আওয়াজ হচ্ছে। আমি ধীর পায়ে পুকুর পাড়ের বট গাছটার তলায় এসে দাঁড়ালাম। চারিদিক নিস্তব্ধ। একবার ওপরে দিকে তাকালাম। সেই একইভাবে বটের ঝুড়িগুলো নিচে নেমে এসেছে। মনে মনে বললাম, মা তোমার ছেলের শহুরে বন্ধুরা তোমায় দেখতে এসেছে। দেখতে পাচ্ছ। তোমার ছেলের বউ-এর মুখ দেখেছো মা? দেখোনি। দেখি তাকে আনতে পারি কিনা। ভয় পায় মা ও। আসতে চায় না। রাগ কোরোনা। আমিতো আসি তোমার কাছে।   বুঝতে পারলাম মনটা ভারি ভারি হয়ে এলো। বুঝতে পারছি চোখটা ছল ছল করে উঠলো। কোঁচর থেকে দুটো কলাই শাক বটগাছের তলায় রাখলাম। পুকুর থেকে এক মুষ্টি জল এনে কলাই শাকের ওপর ছড়িয়ে দিলাম। আমি স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে। চোখের পলক পরছেনা। -অনিদা। নির্মাল্যের দিকে তাকালাম। চোখ দুটো ছল ছল করছে। -এইখানে মাসীমাকে…..। মাথা দোলালাম। নির্মাল্য হাঁটু মুড়ে বসে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করলো। দেবাশিষ স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে আছে। আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। পাঞ্জাবীর হাতা দিয়ে চোখ মুছলাম। -মন খারাপ করিস না। -তুমি এখানে একা একা আসো। -হ্যাঁ। গলাটা ভারি ভারি। -তোমার সঙ্গে কেউ আসেনা। -না। -তোমার বন্ধুরা! -ওরা ভয় পায়। -রাতের বেলাও একা আসো। -হ্যাঁ। -ওই দিকটা কি আছে অনিদা। -জঙ্গল হয়ে আছে। সাপ শেয়ালের বাসা। -এখানে কেউ আসেনা। -আসে। কেউ মারা গেলে গাঁয়ের লোকরা দাহ করার জন্য আসে। -জায়গাটা কি নিরিবিলি। -বিকেল বেলা এলে আরো ভালো লাগে। ঠিক সন্ধ্যের সময়টা যখন পাখিরা বাসায় ফেরে চারিদিকে কিচির মিচির শব্দ তখন আরো ভালো লাগে। -আমাকে একবার নিয়ে আসবে। -আসবি। -তুমি নিয়ে এলে, আসবো। -এইগুলো একটু তোর কোঁচরে নিয়ে নেতো নির্মাল্য। নির্মাল্য পাঞ্জাবীর কোঁচরটা খুললো। দেবাশিষ সমস্ত কলাই শাক ঢেলে দিয়ে, জুতো খুলে পুকুর ঘাটে নামলো। হাতপায়ে জল দিয়ে মুখটা ধুলো। তারপর বটগাছের তলায় এসে প্রণাম করলো। -তোরা একটু এখানে দাঁড়া আমি আসছি। -যা। -আমি সামনের ঝোপের আড়ালে চলে গেলাম। ওখানে দইআঁতি পাতার গাছ আছে। অনেকটা দইআঁতি পাতা তুললাম। মোবাইলে সমানে ম্যাসেজ এসে যাচ্ছে। খুলে দেখতে আর ভালো লাগছেনা। ওদের কাছে এসে দেবাশিষের কোঁচরে সমস্ত দইআঁতি পাতা দিয়ে দিলাম। খুব তাড়াতাড়ি হেঁটে বাড়ির পেছন পাশ দিয়ে ঘরে ঢুকলাম। দেবাশিষকে বললাম তুই নির্মাল্য ওই বাড়িতে যা। -তুই যাবিনা। -না। -কেনো শুধু শুধু মন খারাপ করছিস। আমি হন হন করে খিড়কি দরজা দিয়ে ওপরে চলে এলাম। ঢোকার সময় একটা হৈ হৈ আওয়াজ কানে এলো। বুঝলাম নির্মাল্য আর দেবাশিষকে দেখে ওরা হৈ হৈ করে উঠলো। আমার কিছু ভালো লাগছে না। হঠাৎ আজ কেনো মার কাছে গিয়ে কেঁদে ফেললাম। আমিতো যখনই সময় পাই ওখানে যাই। কখনো সবাই জেনে যায় আমি গেছি। কখনো জানতে পারে না। নিজের ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। বুকের ভেতরটা ভীষণ ষন্ত্রণা করছে। আলমারিটা খুললাম। মায়ের বাক্সটা বার করলাম। ছবিটা হাতে নিয়ে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলামনা ঝর ঝর করে কেঁদে ফেললাম। কতোক্ষণ ওইভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেঁদেছি জানিনা।
Parent