কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ২১০

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4828166.html#pid4828166

🕰️ Posted on June 5, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 677 words / 3 min read

Parent
আমি মিনতিকে সঞ্জুকে কাছে ডাকলাম। চিকনা এগিয়ে এলো। বাসু অনাদি আমার পাশে। আমার মুখের ভাব ভঙ্গিতে ওরা বুঝতে পারেছে, আমি খুব সিরিয়াস। দুজনেই মাথা নীচু করে। -সঞ্জু তুই মিনতিকে ভালোবাসিস? সঞ্জু মাথা নীচু করে রইলো। -আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চেয়েছি। -হ্যাঁ। -মিনতি তুই? -হ্যাঁ। -এখন বিয়ে করতে চাস। না। -কেনো ? -আমি পড়াশুনো করবো। -সঞ্জু তুই কি বলিস। -আমার কোনো আপত্তি নেই। -যদি স্যার এখুনি মিনতির বিয়ে দিতে চায়। -আমি রাজি। -তারপর ওর পড়ার কোনো ডিস্টার্ব হবেনা। -না। কোনোদিন হবে না। যদি হয় আমি আলাদা হয়ে পালিয়ে আসবো। -সেটা সমস্যার সমাধান হলো। -ওর পড়াশুনায় যাতে কোনো ক্ষতি না হয় তা আমি দেখবো। -যদি ক্ষতি হয়। -তুই যা শাস্তি দিবি আমি মেনে নেবো। -মনে থাকবে। -হ্যাঁ। -যা দু’জনে একসঙ্গে পূজো দিয়ে আয়। ওরা দুজনে চলে গেলো। চিকনা আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। আমার মুখটার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। -তোর সঙ্গে এখন কথা বলতে ভয় লাগছে। -কেনো! -জানি না। -চল মন্দিরে যাই। -চল। আমরা মন্দিরের ভেতর এলাম। প্রচুর ফুল মিষ্টি। সবাই যে যার নিজের হাতে পূজো দিচ্ছে। বড়মা মনে হয় ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞাসা করেছে, মন্দির সম্বন্ধে, সে কিছু বলতে পারেনি। বড়মা কাকাকে মনে হয় কিছু বলছে। সবাই বেশ গোল হয়ে বসে। সূর্য একবারে পশ্চিম আকাশে ঢলে পরেছে। একটু পরেই মুখ লুকোবে। -বুবুন। আমি ঘুরে তাকালাম। -আয় একটু। -আমি কাছে এগিয়ে গেলাম। -শ্যাম, এই হচ্ছে অনি। -ওকে খুব ছোট সময় দেখেছিলাম। -হ্যাঁ। এখনতো ও কলকাতাতেই থাকে। এইটি বউমা। উনি দুজনের দিকে একবার ভালো করে তাকালেন। বুঝতে পারলাম চোখে অনেক প্রশ্ন। বুঝলাম কাকা তাকে সঙ্গে করে আনার সময় অনেক কথা বলেছেন। আমি প্রণাম করলাম। উনি আমার মাথায় আবীরের টিপ লাগিয়ে দিলেন। আরো প্রায় আধঘন্টা পর আমরা সবাই বেরোলাম। এখন গোধূলি। মিহি কুয়াশার মতো অন্ধকার আকাশটাকে ঢেকে ফেলছে। শুকতারা আকাশে জ্বল জ্বল করছে। অদিতি দেবাশিষের হাত ধরে। দুজনের মাথাতেই আবিরের ছোঁয়া। টিনা মিলি নির্মাল্য নীপা সবাই একে একে মন্দির থকে বেরিয়ে এলো। বড়মা সবার হাতে প্রসাদ দিলেন আমরা খেলাম।   -জানো বড়মা তোমরা যেখানে বসে পূজো দিলে। চৈত্র মাসে ওই জায়গাটা এক মানুষ গর্ত হয়ে যায়। -কেনো। -বহু মানুষ কোদাল দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে চলে যায়। -এ কি কথা। -হ্যাঁ গো। এই মাটিটা খুব উপকারী, যেকোনো ব্যাথায় তুমি যদি গুলে লাগাও তোমরা ব্যাথা কমে যাবে। -গর্ত বোঁজানো হয় কি করে। -ওই পুকুর থেকে কেটে নিয়ে আসা হয়। -খালি গপ্পো। -তুমি ওই ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞাসা করো। বড়মা ছোটমা আমার কথা শুনে সত্যি সত্যি ব্রাহ্মণের কাছে গেলো। ব্রহ্মণ হাসছে। বড়মা ওখান থেকেই আমার দিকে ফিরে হাসলো। -কি অনি গপ্পো বলে। বড়মা আমাকে জড়িয়ে ধরে গালে গাল ঘষলো। -তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো অনি। ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললো। -বলো। -তোদের এখানটা দেখলাম, তোর গল্প শুনলাম। আমার একটা কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোথায় পড়েছি ঠিক বলতে পারবোনা। -কি বলোতো। -পীর সাহেব এবং মহাদেব এক ব্যাক্তি। -তোমার কথা ঠিক। তুমি এ্যান্টনি ফিরিঙ্গীর জীবন বৃত্তান্ত পড়েছো? -না। -আমার কাছে আছে নিয়ে পড়ে নিয়ো। সেখানে কবিয়াল ফিরিঙ্গী সাহেব একজন বাঙালি ব্রাহ্মণ কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। যদিও কবিয়ালের সঙ্গে তার পরিচয় এক নবাবের বাড়িতে। সেখানে সেই ভদ্রমহিলা একজন বাইজী হিসাবেই প্রসিদ্ধা ছিলেন। তারপর সেই ভদ্রমহিলার দৌলতেই ফিরিঙ্গী সাহেব একদিন একজন নামজাদা কবিয়াল হন। একদিন ফিরিঙ্গী কবিয়ালের সঙ্গে তখনকার দিনের বিখ্যাত কবিয়াল ভোলা ময়রার কবির লড়াই চলছে। ভোলা ময়রার একটা প্রশ্নের উত্তরে ফিরিঙ্গী কবিয়াল বলেছিলেন, কিষ্ট আর খ্রিস্টতে প্রভেদ নেই কো ভাই/ শুধু নামের ফেরে জগত ফেরে/ আরতো কিছুই নয়। এখানে কিষ্ট বলতে কবিয়াল কৃষ্ণকে বুঝিয়েছেন। ইসলাম ভাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে। ডাক্তার দাদা ফিক করে হেসে বললো -কি ভায়া হজম হলোনা। ও তোমার কথাটা একটু ঘুরিয়ে বলে দিলো। উদাহরণ স্বরূপ। তারপর বড়মার দিকে তাকিয়ে বললো। -কি বান্ধবী তোমার ছেলের দৌড়টা দেখছো। বড়মা হাসি হাসি মুখ করে বললেন -আমি ওর দৌড়টা জানি তুমি বরং তোমার বন্ধুটিকে একটু বোঝাও। দেবারা হো হো করে হেসে ফেললো। দাদা কপট রাগে বললো -আমাকে আবার এর মধ্যে টানলে কেনো। আমি কি অন্যায় করলাম। -চলো আর এখানে নয় স্যার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। ওরা সবাই যে যার মতো বসলো। আমি অনাদিকে বললাম - তুই একবার আগে চলে যা স্যারকে গিয়ে বল। পারলে একটু সাহায্য কর। অনাদি হেসে ফেললো। বাসু বললো আমি চিকনা ওর সঙ্গে যাই। -যা। ওরা সবাই এগিয়ে গেলো। আমরা পেছন পেছন গেলাম। নীপাদের ট্রলি থেকে গানের কলি ভেসে আসছে। বুঝলাম ওরা আন্তাকসারি খেলছে। বড়মারা নীচু স্বরে কথা বলছে। আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই পৌঁছে গেলাম।
Parent