কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ২১১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4828188.html#pid4828188

🕰️ Posted on June 6, 2022 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 901 words / 4 min read

Parent
উনা মাস্টারের বাড়িতে কারেন্ট আছে। লাইট জ্বলছে। কাকা ট্রলি থেকে নেমেই চেঁচিয়ে উঠলো -কিরে উনা কোথায় গেলি রে? স্যার বেরিয়ে এলেন। বড়মা ছোটমার সঙ্গে স্যারের পরিচয় ছিলো। কাকা দাদাদের সঙ্গে পরিচয় করালেন। স্যার সবাইকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন। ডাক্তার দাদাকে প্রণাম করে বললেন -আপনি আমাকে চিনতে পারবেন না। আমি একবার আপনার শ্যামবাজারের চেম্বারে গেছিলাম। -কেনো। -কোমরের হাড় সরে গিয়ে ব্যাথা হচ্ছিল। -ব্যাথা কমেছে না বেড়েছে। -কমেছে। -তারপর আর গেছিলেন। -না। -কেনো। -আপনি বলেছিলেন যতদিন বাঁচবেন এই ওষুধগুলো খাবেন। -খেয়ে যাচ্ছেন। -যাচ্ছি। সুস্থও আছি। -এবার আমাকে কি খাওয়াবেন। অনেকটা পথ এলাম। মিত্রার দিকে তাকিয়ে। কিরে মা ঠিক কথা বললাম কিনা। -একবারে ঠিক। বড়মা খিঁচিয়ে উঠলো। খালি খাই খাই। পেটে জায়গা থাকে কি করে। -ও তুমি বুঝবেনা বান্ধবী। সবাই আবার হেসে ফেললো। দেবাশিষকে কাছে ডাকলাম। বললাম কাকাকে বলেছিলি তোদের মনের কথা। -বলেছিলাম। -কাকাকে মনে করিয়ে দে। স্যারকে বলুক। মিত্রা সকলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো। শেষে বললো -তুমি বুবুনকে বেত মারবে বলেছো আজ? সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। -তোর বুবুন যদি অন্যায় করে। -কি করেছে। -বলেছে তোদের লঙ্কাভাজা দিয়ে ঢেঁকি ছাঁটা চিঁড়ে ভাজা খাওয়াতে। -বাঃ বাঃ তোফা রেসিপি। ডাক্তারদাদা চেঁচিয়ে উঠলো। -কিগো কিছু বুঝলে। মিত্রা বললো। যেনো স্যারকে ধমকাচ্ছে। -আমার অন্যায় হয়েছে মা। তোর কাকীমা অনির কথা মতো চিঁড়ে ভেজেছে শুকনো লঙ্কা দিয়ে। -ঠিক আছে। এবার বুবুনের বন্ধু মানে আমারও বন্ধু ওরা তোমাকে কিছু বলবে তুমি শোনো। দেবা সবিস্তারে সব বললো। -তোদের অনি মাইক্রোস্কোপ দেখিয়েছে! -হ্যাঁ। -জানিস ওই মাইক্রোস্কোপটা নিয়ে একটা গল্প আছে। -জানি। বুবুন বলেছে। -তোদের বলেছে। -হ্যাঁ। স্যার নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে চোখটা ছল ছল করে উঠলো। -জানিস মা। ওই দিনটার কথা এখনো মনে পরলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনা। ও আমার ছাত্র ওর কাছে ক্ষমা চাইতে পারিনা। মনার কাছে গিয়ে বহুবার ক্ষমা চেয়ে এসেছি। আজ তোর কাছে ক্ষমা চাইছি। -এমা এ তুমি কি কথা বলছো ভায়া। ডাক্তার দাদা বললো। -না ডাক্তারবাবু আমি ঠিক কথা বলছি। সেদিন বুঝিনি, আজ আমি অনুভব করি সেদিন আমি কতো বড় ভুল করেছিলাম। আজো আমার মাঝে মাঝে আক্ষেপ হয়। -সে ঠিক আছে। মাথায় রাখবেন অনি আপনার ছাত্র। ও কিন্তু ওর স্যারের বাড়িতে আমাদের নিয়ে এসেছে। ডাক্তারদার কথায় মেঘ কাটলো। স্যার বেঞ্চিতে বসলেন। -এবার দেবাদের ব্যাপারটা কি হবে বলুন। মামনি দেখনা চিঁড়ে ভাজা কতদূর। -ওরা যা দেবে আমি ল্যাবোরেটরিতে রাখবো। -আপনার কি কি লাগবে বলুন। -আমি কালকে একটা লিস্টি করে দেবো। -দেবাবাবু তোমাদের কাজ হয়ে গেলো। এবার কেটে পরো। আচ্ছা অনি গেলো কোথায় বান্ধবী। -আছে কোথাও দেখো, নাহলে আবার কোথাও গল্পের সন্ধানে গেছে। আমি অন্ধকারে বাইরের ক্ষেতটায় ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনছি। মিনতি, মিত্রা, টিনা, মিলি কাঁচের বাটিতে করে চিঁড়ে ভাজা সাজিয়ে নিয়ে এলো। -ওঃ গন্ধটা দারুণ বেরিয়েছে নারে মামনি। -আমি একমুঠো খেয়ে নিয়েছি। দারুণ। -অ্যাঁ। -হ্যাঁ। -তুমি খাও দারুণ টেস্ট। বড়মা ফিক করে হেসে ফেললো। জুড়িদারটা ভালো। স্যার ডাক্তারের কান্ড কারখানায় মুচকি মুচকি হাসছে। -বুবুন কোথায় গেলো বড়মা। -কেনো ভেতরে নেই। -ছিলো তো এখুনি তারপর কোথায় ফুরুত করে হাওয়া হয়ে গেলো। -তুই ধরে রাখতে পারলিনা। ডাক্তার বললো। -আমার সাধ্যি নেই। -সে কিরে! -হ্যাঁ গো। তোমরা পারছো ? -বুঝেছি। মিত্রা চলে গেলো। -হ্যাঁ গো উনা মাস্টার? -বলুন দিদি। -তোমায় অনি কোনো কথা বলেছিলো। -কিসের ব্যাপারে বলুন তো। -তোমার মেয়ের ব্যাপারে। -হ্যাঁ বলেছিলো। -ও আজকে তোমার মেয়েকে নিয়ে গেছিলো? -হ্যাঁ। যাবার সময় বললো। আপনারা সবাই আসবেন। -সেতো বুঝলাম। ছাত্রের মনের হদিস পাওনা তো ছাত্রকে কেমন পরিয়েছো। -আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারছিনা। -ওখানে গিয়ে আমাকে বললো সুভদ্রা হরণ করে নিয়ে এলাম। হো হো করে হেসে ফেললেন স্যার। বুঝেছি। -এবার মনের কথাটা বলে ফেলো। -ওর জেদের কাছে হার মানছি। -তাহলে আমি অনিকে বলতে পারি। -বলতে পারেন। -লাইট ম্যান? ডাক্তার বললো। বড়মা সামন্তর দিকে তাকিয়ে ফিক করে হাসলো। -অনি বুঝি তোমায় ঘটকালি করার দায়িত্ব দিয়েছে। -আসার সময় ফিস ফিস করে বললো। স্যারের মনের কথাটা একটু জেনে নিও। স্যার আবার হো হো করে হেসে ফেললো। -দেখুন ও কতটা সেন্সেটিভ। এর মধ্যেও ওর কোনো প্ল্যান আছে। -তা বলতে পারবোনা। আমাকে বললো তুমি একটু স্যারকে কথাটা পারবে। -ওকে বলে দেবেন আমার মনের কথা। ওরা ওদের মতো গল্প করতে শুরু করে দিলো। আমি পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকলাম। তখন ওখানে হৈ হৈ চলছে। সঞ্জু চিকনা তরজা। সবাই বেশ এনজয় করছে। মিনতিও আছে। আমাকে দেখে দুজনে চুপ করে গেলো।   -কি রে তুই কোথায় ছিলি? দেবাশিষ বললো। -বল, এইতো এখানেই ছিলাম। মিত্রা বললো। হাসলাম। -আমারটা কোথায় ? -পাবিনা। আগে সত্যি কথা বলবি তারপর পাবি। আমি মিত্রার পাশে গিয়ে বসলাম। -একবারে আমার বাটিতে হাত দিবিনা। বাটিটা চাপা দিয়ে কোলের কাছে তুলে নিলো। -মিনতি একটু চা আনো তো। -একবারে দিবিনা তুই বোস। মিনতি উঠতে পারছে না। একবার আমার দিকে তাকায় একবার মিত্রার দিকে। -দেখছিস কার ক্ষমতা বেশি। -অবভিয়াসলি তোর। -তাহলে। আমি মিত্রার মুখের দিকে তাকিয়ে। হাত চলে গেছে ওর কোলের ভেতর লুকিয়ে রাখা বাটিতে। -না না না। তার আগেই মুঠো ভর্তি হয়ে গেছে। খেলাম। -মনে রাখিস এটা আমার জন্য। রেসিপিটা আমার বুদ্ধিতে। মিত্রা আমার দিকে হাসি হাসি চোখে তাকিয়ে। -কিছু বলবি ? মাথা নীচু করলো, তোর কাছে হেরেও আনন্দ। -ঠিক বলেছো মিত্রাদি। মিলি বললো। -ভালো সাগরেদ তৈরি করে নিয়েছিস। জল উঁচুতো উঁচু, জল নীচুতো নীচু। -কখনই না, যা সত্যি, মিলি তাই বললো। হাসলাম। ওর গালটা ধরে একটু নেড়ে দিলাম। ওর চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। -এবার দে। বাটিটা এগিয়ে দিলো। এক মুঠো তুলে নিলাম। চিঁড়ে ভাজা চিবোতে চিবোতে মিনতির দিকে তাকিয়ে বললাম। চা। মিনতি উঠে দাঁড়ালো। -দেবা তোর কাজ করেছিস। -হ্যাঁ। ডাক্তার দাদা আজ ফুল ফর্মে ব্যাট করলো। স্যার ডাক্তার দাদার পুরনো পেসেন্ট। -এ গ্রামের সকলেই কি ডাক্তারদাদার পেসেন্ট! -এই ফিল্ডে আর কে আছে বলতো ? -ঠিক। তোরা কি ঠিক করলি। -আগামী সপ্তাহে একবার আসবো। -তা তো হবেনা। আমার একটা কাজ আছে রবিবার। হয়তো তোদেরও থাকতে হবে। -ধর আমরা সোমবার এলাম সেদিনই ফিরে গেলাম। -এরা কষ্ট পাবে। এটলিস্ট ওয়ান নাইট তোকে স্টে করতে হবে। -দেখা যাবে।
Parent