কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ২৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-3927853.html#pid3927853

🕰️ Posted on November 7, 2021 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 825 words / 4 min read

Parent
আমি পাজামা পাঞ্জাবী খুলে প্যান্ট গেঞ্জি চড়ালাম। নীচে এসে দেখি বাইরের বারান্দায় বেশ কয়েকজন বসে আছে। কাকা মাঝখানে তাকে ঘিরে বাকি সকলে। আমাকে দেখেই ওরা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি কাছে গিয়ে কাকাকে বললাম, আমি একটু নীপার সঙ্গে হাটের দিকে যাচ্ছি। -তুই এখনো যাস নি। -না। -ওঃ। -কেনো, নীপাতো অনেকক্ষণ আগে বেড়িয়ে গেছে। -ওইতো দাঁড়িয়ে আছে। -দেখো দেখি কান্ড, আমাকে এক ঘন্টা আগে বললো হাটে যাবে। আমি হাসলাম। -যা যা তাড়াতাড়ি ঘুরে আয়, ৫.৩০টা বেজে গেছে এখুনি সন্ধ্যা হয়ে যাবে। সবাই চলে যাবে। তবে বেশ কয়েকটা নতুন দোকান হয়েছে দেখে আয়। আমি সবার মুখের দিকে একবার তাকালাম। -এরা তোর জন্য বসে আছে তোর সঙ্গে দুটো কথা বলবে বলে। -আমার সঙ্গে। -কেনো। সে অনেক কথা আগে তুই ঘুরে আয় তারপর বলছি। কৈ হে, এই হচ্ছে অনি দেখে চিনতে পারছ। আমার তো চোখ গেছে, ওকে ঠিক মতো দেখতেও পাই নি। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সবাই কেমন হৈ হৈ করে উঠলো। আমি বললাম ঠিক আছে আমি যাই। -এসো। আর শোন, একটা টর্চ নিয়ে নে, আস্তে আস্তে বেলা পরে যাবে, কোথায় হোঁচট ফোঁচট খাবি। আমি হাসলাম, না না লাগবে না। -ও অনিদা কি হলো। -যা যা ঐ পাগলী ডাকছে।   আমি বেরিয়ে এলাম, নীপা কখনো আমার পাশে কখনো আমার থেকে একহাত আগে। বাঁধের ওপর দিয়ে প্রায় আধঘন্টা হাঁটলে, তবে হাটে গিয়ে পৌঁছবো। যেতে যেতে নীপার সঙ্গে অনেক কথা হলো, নীপা এখন এই গ্রামের খুব পরিচিত, অনেকে যেতে যেতে আমাকে যেমন তির্যক দৃষ্টিতে দেখছে, তেমনি নীপার সঙ্গে যেচে যেচে কথা বলছে। নীপা এই গ্রামের মেয়েদের নিয়ে একটা নাচের দল করেছে, এখানে ওখানে নাচতে যায়, সপ্তাহে তিনদিন করে নাচের মহড়া হয়, এখানে এসে কাকার কাছ থেকে আমার সব কিছু জেনেছে, তাছাড়া, এই গ্রামে আমাকে নিয়ে খুব আলোচনা হয়, প্রত্যেকদিন আমাদের বাইরের দালানে আড্ডা বসে চলে রাত ৯টা পর্যন্ত তারপর সকলে ফিরে যায়, আমার লেখা নিয়ে আলোচনা হয়, বাক-বিতন্ডা চলে, আরো কত কি।   নীপা কল কল করে কথা বলে চলেছে, আমি খালি হুঁ হাঁ করে ছেড়ে দিচ্ছি। এক সময় নীপা বলে উঠলো, মামনি ঠিক কথা বলেছে, দেখিস ও সাত চড়ে রা করে না। আমি বললাম কে মামনি। -কেনো তোমার কাকীমা। বুঝলাম, ঊষা কাকীমাকে নীপা মামনি বলে ডাকে। -আমাকে নিয়ে তোমরা অনেক আলোচনা করো তাই না। হ্যাঁ। তুমি আমাদের গ্রামের গর্ব, তাছাড়া তুমি আমাদের বাড়ির ছেলে, সেই ফ্লেভারটুকু তো আমরা পাইই। -সেই জন্য কলকাতায় খেত বসে আমি এত বিষম খাই। -তাই বুঝি। ……এঁ কি বললে। ……বিষম খাও, …..আমাদের জন্য, নীপা আমার হাতে একটা রাম চিমটি দিলো। আমি উঃ করে উঠলাম, নীপার চোখদুটো কেমন হয়ে গেলো, ও বললো সরি অনিদা।   আমি হাসলাম। ওর আয়ত চোখদুটি, ঝিরি ঝিরি হাওয়ায় কেঁপে কেঁপে উঠলো। সূর্য্যি মামা পশ্চিম দিকে একেবারে হেলে পড়েছে, দূরে একটা মিহি মিহি আওয়াজ কানে এলো অনেক লোকে একসঙ্গে কথা বললে মিলে মিশে যেমন একটা শব্দ বের হয় ঠিক তেমনি। বুঝলাম আমরা হাটের খুব কাছাকাছি এসে গেছি। -অনিদা। -উঁ। -আমার ওপর রাগ করলে। -কেনো। -না থাক। -নীপা। -উঁ। -তুমি হাটে রেগুলার আসো। -হ্যাঁ। কেনো। -একটা সময় ছিলো, তোমার বয়সি কোন মেয়ে হাটে আসতে পারতো না। -তাই। -হ্যাঁ। -সে অনেক দিন আগের কথা। এখন সব বদলে গেছে। -তাই। -দেখছো না চারিদিকে। হাসলাম। -অনি না। ভদ্রলোকের দিকে তাকালাম। মুখটা চিনি চিনি কিন্তু ঠিক ঠাহর করতে পারছি না। -কি নীপা আমি ঠিক কথা বলছি। -হ্যাঁ। -শালা, ঢেমনা চিন্তে পারছো না। বলে আমার হাতটা ধরে এমন জোরে করমর্দন করলো আমি কঁকিয়ে উঠলাম। নীপা বললো, চিনতে পারছো না, যার কথা আজ দুপুরে খেতে খেতে বলছিলে এইই সেই বিশেষ ব্যক্তি। -অনাদি! -হ্যাঁরে, ঢেমনা অনাদি। অনাদির পাশে অনেকে দাঁড়িয়ে ছিল, নেতা হলে যা হয়, ফেউরা ভিড় করে থাকে। আমি অনাদিকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। দশ বছর আগে দেখা অনাদির সঙ্গে এখনকার অনাদির অনেক পার্থক্য, অনের শার্প। কেমন আছিস। -ভাল। কদিন থাকবিতো এখন। -হ্যাঁ, তবে পর্শুদিন চলে যাবার কথা। -সে কি রে…….আচ্ছা আচ্ছা তুই এখন হাটে যাচ্ছিস তো। -হ্যাঁ। -নীপা তোরা বাসুর দোকানে থাকিস আমি এখুনি একটা কাজ সেরে ঘুরে আসছি। চলে যাসনা যেন।   আমরা আবার হাঁটতে আরম্ভ করলাম। নীপা আমার পাশে পাশে চলেছে। কখনো মাথাটা মাটির দিকে করে আবার কখনো মাথাটা সামনের দিকে। -তোমাকে দেখে আমার হিংসে হয় জানো অনিদা। হাসলাম। কেনো। -তোমার পপুলারিটি। -তাহলে বলো আমি এই গ্রামের একজন সেলিব্রেটি। -সেলিব্রেটি বললে ভুল হবে, তার থেকেও যদি বেশি কিছু থাকে তুমি তাই। -বাড়িয়ে বলছো। -না গো, সত্যি বলছি। বারান্দায় যাদের দেখলে, তারা প্রত্যেক দিন এসে মসাই এর কাছে তোমার খোঁজ খবর নেবে। তুমি তো কোনদিন ফোনও করো না, আর চিঠিপত্রও দাও না। মসাই ওদের প্রত্যেকদিন বানিয়ে বানিয়ে তোমার কথা বলে, তারপর কাগজ বার করে তোমার লেখা পড়া হয়, তুমি নাকি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ।   আমি নীপার দিকে তাকালাম। সত্যি তো, গত চার বছরে আমি একটা চিঠিও লিখি নি, মনা কাকা অফিসের ঠিকানায়, কয়েকটা চিঠি লিখেছে, অমিতাভদা আমায় বলেছেন এই মাত্র। তবে নিয়ম করে টাকাটা আসতো আর আমার খবরা খবর অমিতাভদাই দিতেন। নীপার দিকে অপরাধীর মতো তাকালাম, -সত্যি নীপা একদম সময় পাই না। -একটা ফোন করার সময় পর্যন্ত পাও না। -ফোন যে এখানে আছে তাই জানি না। -তুমি জানোনা! -না, সত্যি বলছি। আর মোবাইলটার কথা বলছো, এই গত মাসে ভাইজ্যাক গেছিলাম, ইলেকশন কভার করতে তখন অমিতাভদা এটা কিনে দিয়েছেন। ও আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। -আমি সত্যি বলছি। তবে এবার দেখো এ ভুল আর হবে না। নীপা হাসলো। ওর হাসিটাই বলে দিচ্ছে, ও জিতে গেছে।
Parent