কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ২৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-3927967.html#pid3927967

🕰️ Posted on November 7, 2021 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1117 words / 5 min read

Parent
আমরা হাটে পৌঁছে গেলাম। নীপা বললো চলো একবার বিউটি স্টেশনার্সে যাব। -সেটা আবার কি। -ওঃ তোমায় বলেছি না, তোমার দশ বছর আগের দেখা হাট আর এখনকার হাটের মধ্যে অনেক পার্থক্য। -ওখানে কি পাওয়া যায়। -ওখানে সাজগোজের জিনিষ পাওয়া যায়। -সে তো মনিহারীর দোকানে পাওয়া যায়। -কনসেপ্ট বদলে গেছে। হাসলাম। সত্যি লোকজন অনেক কমে এসেছে, তবে আগে সন্ধ্যা হয়ে এলে লম্ফ ছাড়া কোন আলো হাটে দেখা যেতো না, এখন দেখছি বেশ কিছু দোকানে নিওন আলো জলে উঠেছে। আগের থেকে অনেক ঝকঝকে, এখন আর হাট বলে মনে হয় না, বাজার বলাই ঠিক হবে। -এসো ভেতরে এসো।   আমি নীপার পেছন পেছন দোকানের ভেতরে গেলাম। একটা বছর কুড়ির ছেলে জিনিষ দেখাচ্ছে, মেয়েদের ভিড়ই বেশি। এই আজ পাড়াগাঁয়ে, এই সন্ধ্যে বেলা মেয়েদের এত ভিড় দেখে অবাক হয়ে গেলাম। দু’চারজন মেয়ে নীপাকে দেখে এগিয়ে এলো, চোরা চোখে আমাকে দেখে, নীচু স্বরে নীপাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলো। নীপা কিছু কথা বলতেই ওদের চোখের চাহুনি বদলে গেলো। নীপা যেন ডগমগ করছে, ওর পা যেন মাটিতে পরতে চাইছে না।   -ঋজুদা জিনিষগুলো এনেছো। -হ্যাঁ, সব পায় নি। -তা হলে। -এই দিয়ে এখনকার মতো চালিয়ে দাও। -সে কি হয় নাকি। আগামী শুক্রবার ফাংশন। -দেখি যদি কলকাতা যাই আমি এনে দেবো। -উঃ তোমায় নিয়ে আর পারা যাবেনা।   পিঠে দরাম করে একটা ঘুসি পরলো, শালা সন্ধ্যের সময় হাটে এসেছো, যাতে কেউ দেখতে না পায়, তাই না। বড্ড লেগেছে, তবু বুঝলাম এ পরিচিত কেউ হবে, পেছন ফিরে তাকালাম, ভানু, দিবাকর, সত্যেন, পচা আরো অনেকে আমার সব স্কুল লাইফের বন্ধু, হেসে ফেললাম, দিবাকর আমার হাত ধরে তো প্রায় মুচড়ে ভেঙেই ফেলবে এমন অবস্থা। হাত ছাড়তেই ভানুকে জড়িয়ে ধরলাম। কেমন যেন দেখতে হয়ে গেছে। কম বয়সে বুরোটে মারকা চেহারা, সেই ভানুর তাগড়াই শরীর কোথায়! -কিরে চেহারার এ কি অবস্থা। -আর বলিস কেনো, মাঠে খাটতে খাটতে………. -আরে দোকানের মধ্যে নয় বাইরে চল, যতই হোক ব্যবসার স্থান। -ওকে তুই চিনিস। -না। চিনবো কি করে। -উনা মাস্টারের ছেলে। যাকে তুই হামা দিতে দেখেছিস। ছেলেটি এবার কাউন্টার থেকে বেরিয়ে এসে আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। বাবার কাছে আজ সকালে আপনার কথা শুনেছি। -হ্যাঁ স্যারের সাথে তো সকালে দেখা হয়েছিলো। নীপার দিকে তাকালাম। নীপা আমার দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে, ওর চোখে অহংকারের প্রলেপ। আমি ছেলেটিকে বললাম, এই নীপা যা যা জিনিষ নেয় দিয়ে দাও, পয়সা নিও না, আমি দেবো। -ঠিক আছে। -এই নীপা শোন আমরা বাসুর দোকানে আছি, তোর সব কেনা কাটা হয়ে গেলে, ওখানে আসবি। অনি ওখানে থাকবে। পাঁচু বললো। নীপা কোন উত্তর দেবার আগেই আমি ওদের হাতে চালান হয়ে গেলাম। বাসুর দোকানে এলাম, বাসু আমাদের সঙ্গে ক্লাস এইট পর্যন্ত পরেছিলো, তারপর দুবার ফেল, ওর বাবা বললো আর পরতে হবে না বাপ, মাঠে কাজ করো খাওয়া পরার অভাব হবে না, সেই বাসু এখন বেশ জমপেশ করে রেডিমেড জামা কাপড়ের দোকান করেছে।   আমরা এক দঙ্গল ঢুকতে বাসু এগিয়ে এলো, বুঝলাম আজ ওর বেচা কেনা লাটে। ভানু স্বভাব সিদ্ধ মতো লিডারের পার্ট নিলো। আমি ওদের হাতের পুতুল, বাসু বললো অনি তুই আজ অতিথি কি খাবি বল। -তোর দোকান তো লাটে উঠে যাবে। -দূর সারাদিন ব্যবসা অনেক করেছি এবার একটু আড্ডা, কতদিন পরে তোর সঙ্গে দেখা। বললি নাতো কি খাবি। -খাওয়াবি। -অফকোর্স। কে যেন বলে উঠলো শালা ইংরেজি ঝাড়ছে রে। -ভানু পচাটাকে সামলাতো। বাসু বললো। আমি বললাম, একশো গ্রাম ছোলার পাটালি নিয়ে আয়। -হ্যাঁরে তোর কি আর কিছু চাওয়ার নেই। সেই ছোলার পাটালি। -দশ বছর খাই নি। -আজ সকালে কাকীর কাছে পান্তা খেয়েছি। তোর কাছে ছোলার পাটালি চাইলাম। ভানু চেঁচিয়ে উঠলো পচা, দেখতো জানাঘরের বুড়ির কাছে ছোলার পাটালি আছে কিনা। ওখানে যদি না পাস কামারঘরের অশ্বিনীর কাছে থাকবে।   -পচা আর একটা জিনিষ নিয়ে আসিস, একটু ছোলা সেদ্ধ আর কাঁচা লঙ্কা। আমি বললাম। সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে। ওরা বিশ্বাস করতে পারে না আমি এই ধরনের কিছু ওদের কাছে চাইতে পারি। আমি যেনো আবার সেই আমার স্কুল লাইফে ফিরে গেলাম, এরি মধ্যে বাসুকে বললাম, নীপার জন্য তোর দোকানে বেস্ট যে সালোয়ার কামিজটা আছে প্যাক করে রাখ। অনাদি এলো, আবার একচোট হই হুল্লা হলো, পাটালি আর ছোলা সেদ্ধ এলো সকলে ভাগ করে খেলাম, শেষে চা।   আমি অনাদি ভানু আর বাসু আলাদা করে কাকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম, ওরা আমাকে বললো এখানে খুব ভালো একটা নার্সিং হোম হয়েছে, তুই যদি বলিস তাহলে ব্যবস্থা করি, আমি বললাম আমি থাকাকালীন এটা করে যেতে চাই, ওরা আমায় কথা দিলো কাল দুপুরের মধ্যে সব ব্যবস্থা করে দেবে। আমি ওদের এ্যাসুয়র করলাম, টাকার ব্যাপার নিয়ে ভাববি না আমি কাকার চোখের আলোটা আবার ফিরিয়ে আনতে চাই। ওরা বললো ঠিক আছে। আর একটা কথা, আমার জমি জমা নিয়ে একটু কথা আছে, কাল তোরা আয় দুপুরের দিকে জমিয়ে আড্ডা মারা যাবে। অনাদি একটা সিগারেট এগিয়ে দিলো, আমি হেসে ফেললাম, অনাদির হাতটা চেপে ধরে বললাম, এখনো এটা অভ্যাস করি নি। কালে ভদ্রে একটা দুটো খাই। বাসুর চোখ কপালে উঠলো, অনাদি বললো কালে ভদ্রে খাস যখন এখন একটা খা। চারিদিক চেয়ে দেখলাম, অনাদিকে বললাম, বড়রা যদি কেউ থাকে। সতীপনা করিস না আশে পাসে এখন সিনিয়ররা কেউ নেই, সবাই এখন তোর বাড়িতে, ওখানে একটা মিটিং চলছে। আমি অনাদির দিকে তাকালাম। ভানু কোথায় গেলো রে। -আর বলিস না। কাল সব বলবো। -অবাক হলাম। -উনা মাস্টারের ছেলের দোকানে কিছু টাকা পাবে, নীপা কিছু জিনিষপত্র কিনেছে। -ও কাল দিবি। -না না। তুই পচাকে বল একটু দিয়ে আসতে। অনাদি পচা পচা বলে চেঁচাতেই, পচা এসে হাজির মানিপার্টস থেকে একটা হাজার টাকার নোট বার করে বাসুর দিকে এগিয়ে দিলাম, তোর দামটা নিয়ে বাকিটা পচাকে দে। -দূর শালা, সকাল থেকে পাঁচশো টাকা বিক্রি হয় নি তুই হাজার টাকা দেখাচ্ছিস। -আচ্ছা তোর দামটা নিয়ে দিবি তো। -না থাক। -তাহলে নেবো না। বাসু আমার দিকে কটমট করে তাকালো। অনিচ্ছা সত্বে উঠে গেলো। একটা পাঁচশো টাকার নোট পচার হাতে দিয়ে বললো যা দিয়ে আয়। আমি পচাকে বললাম, নীপাকে একবার বলে আসিস, এবার উঠবো। -সকলে হো হো করে হেসে উঠলো। -হাসলি যে। -ঐ দেখ নীপা দাঁড়িয়ে আছে। বাইরে দেখলাম নীপা ওর সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছে। বেশ কিছুক্ষণ হই হই করে কাটলো। আমি বললাম এবার উঠবো রে, ওরা বললো আর কিছুক্ষণ থাক না, আমি বললাম, কাকা তাড়তাড়ি যেতে বলেছে, কারা যেন এসেছে, অনাদি বললো, আজকে ২৫ ভাগ এসেছে, কাল ঠেলা বুঝবি। হাসলাম। নীপা মিথ্যে কথা বলে নি। আমি সত্যি সেলিব্রেটি।   -তুই এক কাজ কর আমার বাইকে বসে যা। অনাদি বললো। -আমি নয় তোর বাইকে বসলাম, নীপা যাবে কি করে। -সে ব্যাবস্থা আমি করে দিচ্ছি। অনাদি বেরিয়ে এলো। বাসুকে বললাম কাল তাহলে আসিস। ও বললো ঠিক আছে। নীপা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল, আমি আসতেই বললো, অনিদা এসো আমার বন্ধুদের সঙ্গে তোমায় আলাপ করিয়ে দিই। নীপা একে একে সবার নাম বলে চলেছে, কেউ আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে, কেউ আবার হাত জোড় করে। কারুরি মুখ এই আধো অন্ধকারে পরিষ্কার দেখতে পেলাম না। সবাইকে বললাম একদিন এসো , জমিয়ে গল্প করা যাবে। ওরা কল কল করে উঠলো। আমি অনাদির পেছন পেছন এলাম, নীপা আমার পাশে। অনাদি বাইকে স্টার্ট দিলো, বললো তুই আমার পেছনে বোস, নীপা তুই অনির পেছনে বোস। আমার চক্ষু চড়কগাছ। এই অন্ধকারে তিনজন! বোসতো, নীপা আছে বলে, না হলে তোকে………..। ঠিক আছে ঠিক আছে, হাত পা যদি ভাঙে ……। নীপা হো হো করে হেসে উঠলো, আমরা অনাদিদার বাইকে চারজনে বসি। আমি অবাক হলাম।
Parent