কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ৪

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-3901775.html#pid3901775

🕰️ Posted on November 1, 2021 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 836 words / 4 min read

Parent
অমিতাভদার বাড়িতে যখন পৌঁছলাম তখন ৫.৪০ হয়ে গেছে। গেটের মুখ থেকেই দেখলাম সকলে বাইরের লবিতে পায়চারি করছে। বড়মাকে দেখলাম না। ছোটমা আমাকে দেখেই চেঁচিয়ে উঠল ঐ যে শ্রীমাণ এলেন এতোক্ষণে, অমিতাভদা পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে বললেন, কিরে শরীর খারাপ নাকি? আমি মাথা দুলিয়ে বললাম, না। মল্লিকদা বললেন- কি বাবা আবার ঘুম। আমি মল্লিকদার দিকে তাকিয়ে বললাম, ছোটমাকে বলব নাকি সকালের ব্যাপারটা? এই তো আমাদের দুই কলিগের কথা সে তো অফিসেই হয়ে গেছে আবার বাড়িতে কেন? কি রে অনি, কি হয়েছে রে, ছোটমা চেঁচিয়ে উঠলেন। আমি হেসে ফেললাম, এই ভদ্রলোকদের অফিসে এদের যদি দাপট কেউ দেখে অবাক হয়ে যাবে, আর বাড়িতে ছোটমা কিংবা বড়মার কাছে অমিতাভদা, মল্লিকদা যেন কেঁদো বাঘ। বড়মা ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন, কিরে তোর কি হয়েছে, এত দেরি কেন? -কোথায় দেরি হয়েছে, তোমাকে বললাম ৫ টা নাগাদ আসব এসেছি ৫.৩০টা। -চল ভেতরে চল, সব গোছ গাছ করে নিয়েছিস তো, ছোট একবার ওর ব্যাগ খুলে দেখে নে তো সব ঠিক ঠাক নিয়েছে কিনা। আমি ভেতরে এসে খাবার টেবিলে বসলাম, দেখলাম তিনজনের জায়গা হয়েছে। বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম এখানে তিনজনের জায়গা দেখছি আর দুজনের। -ওরা খেয়ে নিয়েছে, একন আমি তুই আর তোর চোটমা খাব। -তুমি কি আমার জন্য না খেয়ে বসে আছ ? বড়মার চোখ ছল ছল করে উঠল, তুই খেতে চাইলি তোকে না খাইয়ে , খাই কি করে বল। -আর ছোটমা? -ও-ও তোর জন্য না খেয়ে বসে আছে । -শিগগির ডাক আমার ব্যাগ দেখতে হবে না, আমি ঠিক ঠিক গুছিয়ে নিয়েছি। বড়মা চেঁচিয়ে উঠল ছোট আয় চলে আয়, আগে খেয়ে নিই তারপর না হয় ওর ব্যাগ গুছিয়ে দিস । একসঙ্গে তিনজন খেতে বসলাম, বড়মা আজ দারুণ দারুণ সব পদ রান্না করেছে, চিংড়ি মাছের মালাইকারি ট্যাংরা মাছের ঝোল ভাপা ইলিশ, নিঃশব্দে তিনজন খাচ্ছিলাম, আমি একটা ট্যাংরা মাছ বড়মার পাতে তুলে দিলাম, বড়মা হেই হেই করে উঠল, আর একটা ইলিশ মাছ ছোটমার পাতে তুলে দিলাম, ছোটমা কপট গম্ভীর হয়ে বলল, অনি এটা কি হলো, সারাটা দুপুর ধরে আমরা দু'বোনে তোর জন্য রান্না করলাম আর তুই যদি…… -আমার যতটা খাওয়ার আমি ঠিক নিয়ে নিয়েছি, বাড়তিটা তোমাদের দিলাম। বড়মা খেতে খেতেই বলল, হ্যাঁরে অনি দুপুরে কি হয়েছিল, তুই নাকি তোর বসের সঙ্গে রাগারাগি করেছিস। -তোমাকে এ কথা আবার কে বলল? -মল্লিক বলল। -ও, আমি ছোটমার মুখের দিকে একবার তাকালাম, ছোটমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেকটা বন্ধুর মতো, কিন্তু বড়মাকে আমি শ্রদ্ধা করি, ভালবাসি, তাই বড়মার কোন কথায় আমি চট করে না করতে পারি না, অনেক ভেবে চিন্তে আমায় উত্তর দিতে হয়। -তুমি বড়মাকে বলেছ নাকি? -কি? -যা তোমাকে একদিন গল্পের ছলে বলেছিলাম। -ও মিত্রার ব্যাপারটা। -হ্যাঁ, আজ ঐ ব্যাপারটা নিয়েই একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। খেতে খেতে মাথা নীচু করেই কথা বলছিলাম, কিছুক্ষণ সবাই নিঃশব্দ, খালি খাবার হাপুস হুপুস শব্দ। -তা হ্যাঁরে তুই জানিস না ও তোদের মালকিন। -জানতাম না আজ জানলাম। কয়েকদিন আগে ওর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল বেঙ্গল ক্লাবে, বড় সাহেব পাঠিয়েছিল একটা এ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে ওখানে গিয়ে ওর সঙ্গে দেখা হলো। ও ওর হাসবেন্ডের সঙ্গে আমায় আলাপ করিয়ে দিল, তারপর জোর করে ওর বাড়িতে টেনে নিয়ে গেল। অনেক রাত পর্যন্ত ওর বাড়িতে ছিলাম। সেদিন তোমার এখানে আসার কথা ছিল, আসা হয় নি। কেন ছোটমাকে আমি তো সব বলেছিলাম। -হ্যাঁ ছোট বলেছিল, বয়স হয়েছে এখন আর খেয়াল থাকে না। -আরে হোল ৭.৩০ টায় ট্রেন, এতটা পথ যেতে হবে তো। অমিতাভদার গলায় অভিযোগের সুর। -নিজেরা তো চব্বচোষ্য গিলেছে আমাদের কি একটু শান্তিতে খেতেও দেবেনা। কি হিংসুটে ব্যাটাছেলেরে বাবা। সবাই হো হো করে হেসে উঠল, মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে একবার চোখ মারল। -নে নে তোর কাগজপত্র সব বুঝে নে আমায় আবার অফিসে যেতে হবে। আমি আমার ট্রেনের টিকিট, হোটেলের বুকিংয়ের কাগজপত্র অফিসিয়াল কিছু কাগজপত্র সব বুঝে নিলাম। সবাইকে একে একে প্রণাম করলাম বড়মার চোখ ছলছলে, আমার হাতে একটা খাম দিয়ে বলল, সঙ্গে রাখ জানি তোর কাছে আছে, লাগলে খরচ করিস, না লাগলে এসে ফেরত দিস। আমি হাসলাম, আজ পর্যন্ত বড়মা আমার কাছে থেকে কিছু ফেরত নেন নি, খালি দিয়ে গেছেন। আমি মুখের দিকে তাকালাম চোখদুটি ছল ছল করছে। বেরিয়ে এলাম, অফিসের গাড়ি রেডি আছে। অমিতাভদা বলল, শোন আমাদের এক করেসপন্ডেন্স আছে ওখানে বালচন্দ্রন নাম ও কাল তোর সঙ্গে যোগাযোগ করে নেবে, তবে আজ তোর জন্য ওখানে আমাদের অফিসের গাড়ি থাকবে, অফিসিয়াল ফাইলের ওপরে যে চিঠিটা আছে দেখবি ওতে গাড়ির নম্বর লেখা আছে। তাছাড়া আমি ওখানকার অফিসে বলে দিয়েছি, তোর কোচ নং টিকিটের নম্বর দিয়ে দিয়ে দিয়েছি। তার মানে মোদ্দা কথা হোল আমার যাতে কোন অসুবিধা না হয় তার জন্য সমস্ত বন্দোবস্তই পাকাপাকি ভাবেই তৈরি করা হয়ে গেছে। স্টেশনে পৌঁছে দেখি ট্রেন ছাড়তে আর দশ মিনিট বাকি, আমার টিকিট এসি টু টায়ার, টিকিটের সঙ্গে কোচ মিলিয়ে নিয়ে ট্রেনে উঠলাম দেখলাম আমার জন্য একটি কুপ বুক করা হয়েছে। মাত্র দুটি সিট, সেখানে আর একজন যাত্রী কে দেখতে পেলাম না। যাই হোক আমার একটা মাত্র ব্যাগ, সিটের তলায় ঢুকিয়ে দিয়ে একটু বাইরে বেরিয়ে এলাম, বহু মানুষের দৌড়াদৌড়ি, চেঁচামেচি, গাড়ির ড্রাইভার কাছে এগিয়ে এসে বলল অনিন্দা আমি এবার যাই, আমি বললাম, হ্যাঁ যা, গিয়ে একবার বলে দিস আমি ঠিক ঠিক ট্রেনেই উঠেছি। ছেলেটি হেসে ফেলল, আমি ভেতরে চলে এলাম, ট্রেনটা একটু দুলে উঠেই চলতে শুরু করল।   আমি আমার জায়গায় এসে বসলাম, কুপের দরজাটা খোলাই রেখেছি। একটু পরেই টিটি আসবে। রাত্রি বেলা, অতএব ঠেসে ঘুম, খাওয়া দাওয়া বেশ ভালই হয়েছে, তবে এককাপ গরম কফি পেলে বেশ ভাল হতো, কপাল ভাল থাকলে হয়তো এরা দেবে, না হলে নয়।
Parent