কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ৪০

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-3954047.html#pid3954047

🕰️ Posted on November 13, 2021 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1174 words / 5 min read

Parent
সবাই ঠিকঠাক সময়ে এসেছে, খালি দিবাকর আসেনি, আমরা সকলে বারান্দায় বসে চা খাচ্ছি নীপা চা দিয়ে গেছে, চিকনা বললো, হ্যাঁরে অনাদি দিবাকর কোথায়। অনাদি বললো আমি কি জানি, কালকে সকলের সামনেই তো কথা হলো। -সে গো মারানি। আমি চিকনার দিকে তাকলাম। -সরি, তুই বল অনি, আজকে ওর গাদন দেবার দরকার পরলো। -ওকি তোর কথা বুঝতে পারবে। সঞ্জীব বললো। -তাও তো ঠিক। ভানুর দিকে তাকিয়ে বললো, হ্যাঁরে গোরা এসেছে। -কাল রাত থেকে এখানে এসে বসে আছে। ভানু বললো। -আরও কয়েকট নতুন ছেলে এসেছে, আমি চিনতে পারলাম না, চিকনাকে বললাম ওরা কারা। -অনাদির কালেকশন। আমি কথা বাড়ালাম না। অনাদিকে বললাম বাড়িতে কারা থাকবে। -তোকে চিন্তা করতে হবে না। -ঠিক আছে। -গাড়িটা মোরাম রাস্তায় আছে, অনাদি বললো তিনটে বাইকে করে কাকীমা কাকাদের পাঠিয়ে দিই তারপর আমরা যাবো। কয়েকজন হেঁটে চলে গেলো, আমি অনাদি, চিকনা, সঞ্জীব, বাসু বেঞ্চে বসে আছি, ওরা সবাইকে একে একে নিয়ে গেলো, নীপাকে বললাম, মোবাইলটা একটু দাও, নীপা মোবাইলটা দিয়ে গেলো, চিকনা বললো, কিরে তুই রেডি হলি না। নীপা বললো এখুনি হয়ে যাবে। নীপা ভেতরে চলে গেলো, আমি সঞ্জীবের দিকে তাকিয়ে বললাম, সিমটা খুলে এই সিমটা লাগা। -এ্যাকটিভেট হয়ে গেছে। -হ্যাঁ। -দেখছিস এই হচ্ছে সঞ্জীব। -বোকাচোদা। চিকনা বললো। -এদের কাছ থেকে কোন দিন ভাল কাজ করে ভাল কথা শুনবি না, খালি খিস্তি খিস্তি। আমি হাসলাম। -হায় হায় কত মিসকল। -কার। -তোর। -দেখি দে। দেখলাম অনেক মিসকল তার মধ্যে বড়মা, মিত্রারও আছে। বুঝলাম ওরা বেরিয়ে পরেছে। -তোদের বাইকগুলো কে চালাবে। -কেনো। -ভাবছিলাম। ওই ছেলেগুলো যদি বাইকগুলো নিয়ে যেতো তাহলে আমরা একটা গাড়িতে সবাই যেতাম। বাসু আমার মনের কথা পড়তে পারলো, ও অনাদিকে বললো বাইকে করে ওদের চলে যেতে বল, ভানুকে কাকার গাড়িতে বসতে বল। নীপা কি ওই গাড়িতে যাবে? -না। আমাদের সঙ্গে যাবে। আমি বললাম। -ঠিক আছে। চিকনা তোর বাইকটা। -পোঁদ পাকাটাকে দিস না, বিজনকে দে । বাসু বললো ঠিক আছে। অনাদি বাসুর কথা মতো সব ব্যবস্থা করলো। নীপা আজ নতুন সালোয়ার পরেছে, বেশ সুন্দর দেখতে, চিকনের কাজের ওপর, বাসু যে এত সুন্দর সালোয়ার রাখতে পারে আমার জানা ছিল না। নীপাকে মানিয়েছেও বেশ, বাসন্তী কালারের ওপর বেদানা রংয়ের সুতো দিয়ে কাজ করা। -বাবাঃ, বহুত মাঞ্জা দিয়েছিস। চিকনা বললো। নীপা চিকনার দিকে একবার তাকালো। -না দিদিভাই, অন্যায় হয়েছে, আর হবে না। -হ্যাঁরে সঞ্জু চিকাটা সবার পেছনে লাগে …….. -হারামী। -তোর বাবা ঘরামী। -ওঃ তোরা কি এখনো সেই ফাইভের ছেলের মতো। -কি করি বল অনি সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি আর এইটুকু । নীপার দরজায় তালা দেওয়া শেষ হলো। চিকনার দিকে তাকিয়ে বললো, আমি রেডি, অনাদি বললো চল। আমি অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম, তোর লোক কোথায়। -ওঃ তোকে বলেছি না, ঠিক সময় চলে আসবে। আমার পায়ে পায়ে মোরাম রাস্তার কাছে চলে এলাম, অনাদি একটু আগে আগে হাঁটছে আমার পাশে নীপা, বাসু, পেছনে চিকনা সঞ্জীব। চিকনা সঞ্জীব খুনসুটি করেই চলেছে, বাসু আমার দিকে তাকিয়ে বললো, হরিহর আত্মা, একদিন দেখা না হলে দুজনে পাগল হয়ে যাবে, ওরা আমাদের অক্সিজেন। হাসলাম। গাড়ির সামনে থেকে একটু হই হই আওয়াজ পাচ্ছি, বাসু বললো স্যারের গলা, খেপেছে। পা চালিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ির কাছে এলাম। -ওই তো অনি এসেছে। অনাদি বললো। -এসেছে। কাকা আমার আসায় আশ্বস্ত হলেন। -কি হলো। স্যার তখন থেকে খালি অনি অনি করছে। আমি কাকাকে বললাম কি হয়েছে। -না কিছু হয় নি। তুই আসলি না এরা কি এসব পারবে। -খুব পারবে, ওরাও তোমার ছাত্র। ফ্যাল ফ্যাল করে কাকা আমার দিকে তাকালো। -ঠিক আছে তোমাকে ব্যস্ত হতে হবে না, আমি নীপাকে নিয়ে পেছনের গাড়িতে বসছি ভানু, পাঁচু তোমার গাড়িতে বসছে। -ঠিক আছে। গাড়ি ছাড়লো, আমি নীপা পেছনে, মাঝে বাসু, সঞ্জীব, অনাদি, সামনে চিকনা, পচা। -কিরে অনি তোর কি টেনশন হচ্ছে। -কেনো। -চুপচাপ। -না। নীপা ফিক করে হাসলো। -কিরে নীপা হাসলি কেনো। চিকনা বললো। -বীরপুরুষ। বুকটা ধক করে উঠলো। নীপা এখানে বে ফাঁস কিছু বলে ফেলবে না তো। -কে। -কে আবার। -কেন কি হয়েছে। আমি নীপার দিকে তাকালাম, চোখ পাকাচ্ছে। কাল সারারাত বারান্দায় পায়চারি করেছে, আর সিগারেট খেয়েছে। -হ্যাঁ, টেনশন তো একটু থাকবেই। অনাদি বললো। ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম অমিতাভদার ফোন। -হ্যাঁ বলো, কোথায় তোমরা। -আমরা পৌঁছে গেছি। -তার মানে। -গাড়ল কোথাকার একটা কান্ডজ্ঞান নেই। কটা বাজে দেখেছিস ঘড়িতে। -ঘড়ি নেই। -সেই জন্য। ধর কথা বল। বড়মার গলা। -কাল সারারাত ঘুমোও নি নাকি। -খুব ভাল ঘুমিয়েছি। -তাহলে এত সকালে পৌঁছলে কি করে। অনাদি, বাসু, নীপা আমার দিকে তাকিয়ে। -আমরা কাল রাতে এসেছি। -তার মানে। -হ্যাঁ। তুই আয় সব বলবো। -ঠিক আছে। -আচ্ছা পাগলদের নিয়ে আমি পরেছি। -কি হলো। -দাদারা কাল রাত থেকে এসে আছেন, বোঝ। -অনাদি আমার দিকে তাকালো, কাল রাতে। থাকলো কোথায়? -ওনার থাকার জায়গার অভাব । -ঠিক বলেছিস।   আমি মানিপার্স থেক অনাদির হাতে চারটে পাঁচশো টাকার নোট দিয়ে বললাম, এটা রাখ, প্রয়োজনে চেয়ে নিবি, পৌনে সাতটা নাগাদ পৌঁছলাম। অনাদির চেলুয়াগুলো আমাদের বেশ কিছুক্ষণ আগেই পৌঁছে গেছে। অনাদি নেমে আগে চলে গেলো। রিসেপশনিস্ট কাউন্টারে গিয়ে বলতেই, ভদ্রমহিলা কাউন্টার ছেড়ে ছুটে ভেতরে চলে গেলেন।   নার্সিং হোমের ক্যাম্পাসটা বেশ বড়, কালকে তাড়াহুড়োর চোটে কিছু দেখা হয় নি। পেছনের দিকে স্টাফ কোয়ার্টার আছে। এই রকম অজ জায়গায় সাজানো গোছানো একটা আধুনিক নার্সিং হোম থাকতে পারে আগে কখনো ভাবি নি। তবে বম্বে রোডের একেবারে গায়ে এই যা । কমিউনিকেশন খুব সুন্দর, অনাদি কাল যেতে যেতে বলেছিল, এই নার্সিং হোমটা এখন এই এলাকার হাসপাতাল, নীপা আর চিকনা কাকাকে ধরে ধরে ভেতরে আনলো। সোফায় বসালো। অনাদি বললো ভদ্রমহিলা গেলেন কোথায় বলতো।   কিছুক্ষণ পরে দেখলাম, ভদ্রমহিলা একজন স্যুট টাই পরা ভদ্রলোকের সঙ্গে বেরিয়ে এলেন। ভদ্রলোক এসে আমার নাম ধরে খোঁজ করলেন। আমি এগিয়ে গেলাম, আমার হাত ধরে বেশ কিছুক্ষণ ঝাঁকিয়ে ইংরাজীতে আমাকে জানালেন, উনি এখানকার ম্যানেজার, নাম মিঃ রঙ্গনাথন। বুঝলাম উনি সাউথ ইন্ডিয়ান, বাংলার ব ও জানেন না। কিন্তু কালকে এই ভদ্রলোক ছিলেন কোথায়? উনি আমাকে জানালেন, উনি আমাকে বিলক্ষণ চেনেন, তবে নামে, আমার লেখার উনি ভীষণ ভক্ত, কিছু বললাম না, আমি লিখি বাংলায় ও বেটা পরে কি করে? সন্দেহ ঠেকলো, মুখে কোন বহিঃপ্রকাশ করলাম না। হেঁসে হেঁসে আমিও তার প্রতি উত্তর দিলাম ইংরাজীতে, আমার সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পর, কিছুক্ষণ ওনার সঙ্গে কাকার ব্যাপার নিয়ে কথা বললাম, কাকার ব্যাপারটা উনি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে আমার কাছে জানলেন, মনে হল ওনাকে ঠিক স্যাটিসফায়েড করতে পারলাম না, বললাম আপনি কাকার সঙ্গে কথা বলতে পারেন, উনি মাথা দুলিয়ে বললেন, ওটাই ঠিক, যা কথা হচ্ছে সব ইংরাজীতে, নীপা আর বাসু আমার দুপাশে, তার পাশে অনাদি আর চিকনা। ওরা আমার দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। আশেপাশে বড়মা, ছোটমা, মল্লিকদা, মিত্রা কাউকে দেখতে পেলাম না।   কাকার সামনে গিয়ে কাকাকে দেখলেন, ইংরাজীতে দুচারটে কথা জিজ্ঞাসা করলেন, আমি দোভাষীর কাজ করলাম। তারপর রিসেপশন কাউন্টারে গিয়ে রিসেপশনিস্ট ভদ্রমহিলাকে কি যেন বললেন, উনি একটা চেয়ার নিয়ে এলেন। কাকাকে চেয়ারে বসিয়ে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ওনার কেবিন নম্বর এস-৬।   অনিকে বললাম, এরা টাকার কথা কিছু বললো নাতো, কালকে বলেছিলো, ব্যালেন্স টাকাটা ভর্তি হওয়ার আগে দিয়ে দিতে হবে, ব্যাপারটা ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। অনাদি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। -কি হলো। -দাঁড়া হজম করতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। হাসলাম। -তুই শালা পেঁয়াজ। -কি করে বুঝলি। -খালি খোসা ছাড়িয়ে যেতে হবে, আসল মালটা অনেক ভেতরে। নীপা হাঁ করে তাকিয়ে আছে। আমার একটা হাত চেপে ধরে আছে। -ছাড় ও সব কথা। কলকে এই ভদ্রলোক ছিলেন কোথায়। -সে তো আমিও বুঝতে পারছি না। -মনে হচ্ছে এর মধ্যে কোনও একটা খেলা চালু হয়েছে। বাসু আমার দিকে তাকালো, তুই ভাল বুঝতে পারবি আমাদের থেকে। চিকনার দিকে তাকিয়ে বললাম, ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেনো, ছেলেগুলো এসেছে অদ্দূর থেকে ওদের কিছু খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা কর। -ওই দায়িত্বে পচা আছে, তোকে ভাবতে হবে না। আমি তোর কাছ ছাড়া হচ্ছি না। -সঞ্জীব কোথায়। -বাইরে আছে। -চল একবার গিয়ে কেবিনটা দেখে আসি।
Parent