কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ৪৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-3961059.html#pid3961059

🕰️ Posted on November 20, 2021 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1229 words / 6 min read

Parent
চা খেয়ে এ বাড়িতে কাকার কাছে এলাম, বললাম আমি একটু আসছি। কাকা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, সন্ধ্যে হয়ে আসছে, এই সময় কোথায় যাবি। -দেখি। -টর্চটা নিয়ে যা। -দাও। কাকা কাকীমাকে ডাকলেন, কাকীমা টর্চটা দিয়ে গেলেন, বললেন তাড়াতাড়ি চলে আসিস। -আচ্ছা। নীপাকে আশে পাশে কোথাও দেখতে পেলাম না।   আমি বেরিয়ে এলাম, আমাদের পুকুর পাড়ের পেছনের রাস্তা ধরে, বাঁশ বাগানের ভেতর দিয়ে একবারে খাল পাড়ে চলে এলাম, এই খালে কত নৌকা চালিয়েছি, আমি আর ভানু, সামন্তদের নৌকা, সে দিনগুলোর কথা মনে পরে গেলো, অনাদিরা তখনো এতো ক্লোজ হয় নি। টেন পরার সময় আমরা সবাই দলবদ্ধ হলাম, কিন্তু ভানু ভানুর জায়গায় রইলো। ও আমাদের থেকে বয়সে বড়, কিন্তু ওই যে সিং ভেঙে বাছুরের দলে ঢুকলো আর বেরোতে পারলো না।   গোধুলি শেষে, ঘন কুয়াশার মতো সন্ধ্যা নেমে আসছে একটু একটু করে। আকাশের দিকে তাকাতে, তারা গুলো মিট মিট করে জলছে, আমি পায়ে পায়ে হারুর কালায় এসে পরলাম, দূরে শ্মশানটা দেখা যাচ্ছে, আমি পুকুর পাড়টায় বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম, নিঝুম কেউ কোথাও নেই, জোনাকিগুলো আলো ছড়িয়ে উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে, দুএকটা আমার গায়ে এসেও বসছে, মাথার ওপর বড় বড় শাল, কদম গাছগুলোয় পাখিরা কিচির মিচির শব্দে জায়গাটাকে মাতিয়ে তুলেছে, আমি একটা বটগাছের তলায় বসলাম, মিত্রাকে সকাল থেকে ফোন করা হয় নি। মোবাইলটা পকেট থেকে বার করলাম, একটা সিগারেট ধরালাম। এখানে দেখছি টাওয়ারটা ফুল। মিত্রাকে ডায়াল করলাম। -হ্যালো। -তুই কোথায়। -তোর ঘরে, ছোটমার সঙ্গে গল্প করছি, আর তোর আদরে ভাগ বসাচ্ছি। হাসলাম। -হাসছিস, তোর হিংসে করছে না। -একেবারে না। -জানিস এসে চিংড়ি মাছের কালিয়া, শুক্তো দিয়ে ভাত খেলাম। -বাঃ বাঃ। -তোর লোভ হচ্ছে না। -চিংড়ি মাছটা শুনে একটু লোভ হচ্ছে, তবে ঠিক আছে, বড়মা আমার জন্য নিশ্চই তুলে রাখবেন। -না মশাই যেটুকু আনা হয়েছিল সব শেষ করে দিয়েছি। -অফিসে গেছিলি। -না। -এখানে কখন এসেছিস। -সেই সকালে। -দাদা বাড়িতে আছেন। -না। -মল্লিকদা। -দুজনেই একসঙ্গে বেরিয়েছে। -ও। -বড়মা কোথায়। -নিচে কারা এসেছেন কথা বলছেন। -ও। তুইতো এখানে আসতে চাইছিলি কাল আসবি। -হ্যাঁ। মিত্রার কথায় উচ্ছলতা, আমি ওর চোখমুখ দেখতে পাচ্ছি। -কি করে আসবি। -তুই এসে নিয়ে যাবি। -হবে না। তোকে একলা আসতে হবে। -যাব। -এখানে আসার কতগুলো শর্ত আছে। -বল। -এখানে কাপড় ছাড়া কিছু পরা যাবে না। -তাই পরবো। -খোলা আকাশের নীচে বাথরুম করতে হবে, তোর টাইলস বসানো এক্সিকিউটিভ বাথরুম পাবি না। -সে কি রে। -হ্যাঁ। -ঠিক আছে তাই করবো। কিন্তু কেউ যদি দেখে ফেলে। -দেখলে দেখবে। -তার মানে। -হ্যাঁ। -তুই এই ব্যাপারটা একটু দেখ। -হবে না। -অগত্যা। -টেবিল চেয়ার পাবি না। মাটিতে বসে খেতে হবে। -এটা পারব। -গাড়ি নিয়ে কোথাও যাওয়া যাবে না, মাঠে মাঠে হেঁটে হেঁটে ঘুরতে হবে। -হ্যাঁ, হ্যাঁ পারবো। -বড়মা-ছোটমার সঙ্গে কথা বল, ছোটমাকে দে। -ছোটমা তোর সব কথা শুনেছে। -ও। -ছোটমা হো হো করে হাসছে, সত্যি অনি তুইনা একটা……। -কি বলো….। -না । ফিরে আয় বলবো। -কে এসেছে নিচে। -দাদার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের মেয়ে। -বয়েস কতো। -সে জেনে তোর লাভ। -একটু…… -বুবুন খারাপ হয়ে যাবে বলছি। মিত্রার গলা, ছোটমা হাসছেন। -সত্যি তো, বেল পাকলে কাকের কি। -তুই এখন কোথায় পাখির কিচির মিচির শব্দ শুনছি, সেই জায়গায়। -না। -তাহলে। -শ্মশানে বসে আছি। ছোটমা চেঁচিয়ে উঠলেন, তুই এই ভর সন্ধ্যে বেলা শ্মশানে বসে আছিস, তোর কি একটুও ভয় ডর নেই। -জায়গাটা দারুন। -তুই আগে ওখান থেকে চলে আসবি, আমি দিদিকে বলে দিচ্ছি। -উঃ তোমাদের নিয়ে আর পারা যাবে না, ঠিক আছে চলে যাচ্ছি, মিত্রাকে বলো কিছুক্ষণ পর ফোন করতে। -আচ্ছা, তুই চলে যা ওখান থেকে। মিত্রা বললো। -যাচ্ছি রে যাচ্ছি।   চারিদিকে ঘন অন্ধকার, পাখির কিচির মিচির শব্দটা কিছুটা ম্লান হয়ে এসেছে, আকাশের তারাগুলোকে এখন বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, চাঁদ উঠেছে, তার স্নিগ্ধ আলোর পরশে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, আমাদের হাই স্কুলের টালির চালটা আবছা দেখা যায়, দূরে ওই অশ্বত্থ গাছের তলাটা পীর সাহেবের থান, আমরা প্রত্যেক দিন স্কুলে যাওয়া আসার পথে ওখানে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করতাম। ওর ঠিক পাশেই, প্রচুর কুলের গাছ, কুল পাকার আগেই গাছ পরিষ্কার হয়ে যেতো, কুল খাওয়ার যম ছিল পুনি আর সৌমি। ওরা এখন কোথায় হারিয়ে গেছে জানি না, অনাদিকে একবার জিজ্ঞাসা করতে হবে। ফোনটা বেজে উঠলো। মিত্রার ফোন। -হ্যালো। -অনুমতি পেয়ে গেছি, তুই বড়মার সঙ্গে কথা বল। বলো, বলো না ও ঠিক শুনতে পাবে। বুঝলাম, ও ভয়েস মুডে দিয়ে রেখেছে। -হ্যাঁরে তুই নাকি শ্মশানে বসে আছিস। -হ্যাঁ। -এখনো! -হ্যাঁ, ওখান থেকেই তোমার সঙ্গে কথা বলছি। -তোর কি কোন ভয় ডর নেই। -গ্রামের ছেলের ভয় থাকতে নেই। -পাকামো করতে হবে না। এখুনি বাড়ি যা। -যাবো। মিত্রার সঙ্গে কথা হয়েছে। -ও একটা মেয়ে কি করে যাবে। -আফটার অল ও একটা কোম্পানীর মালিক তো। সব সময় লেংবোট নিয়ে ঘুরলে চলবে। -ঠিক আছে ঠিক আছে, আমি যেতে পারবো, তুই নারসিং হোমের কাছে চলে আসবি আমি ওই রাস্তাটা পর্যন্ত চিনে চলে যেতে পারবো। -আচ্ছা। -কখন যাবো বল। -একটা ফোন এসেছে, পরে বলছি। মিত্রাকে ছাড়তেই সন্দীপের গলা ভেসে এলো। -কি হয়েছে। -কখন থেকে তোকে ট্রাই করছি কিছুতেই পাচ্ছিনা। -কেনো। -এখানে সব গজব হয়ে গেছে। -তোদের মালকিন কোথায়। -সে নাকি তোর সঙ্গে ভেগেছে। -আমার সঙ্গে। -হ্যাঁ। সেরকমি তো শুনছি। -এ খবর কোথা থেকে পেলি। -কাল সব পাকা খবর পাবো। তোকে বিকেলের দিকে ফোন করবো। আমারতো সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। -কেনো। -সুনীত যা বারাবারি আরম্ভ করেছে না, কি বলবো। সব নয়া নয়া মাল এ্যাপয়েন্টমেন্ট দিচ্ছে। -খাতা কলমে না মৌখিক। -মৌখিক, ম্যাডাম নাকি ওকে সমস্ত পাওয়ার দিয়ে তোর সঙ্গে লন্ডন গেছে। -তোর কি মনে হয়। -সে তো আমি বুঝতে পাচ্ছি, কিন্তু মন মানে না। -বাড়িতে গিয়ে মাথায় সিঁদুর আর হাতে চুরি পরে বসে থাক। -দূর তোকে মন খুলে দুটো কথাও বলতে পারবো না। -বলবি না। কাল লেটেস্ট নিউজ চাই। -আচ্ছা। সন্দীপের ফোনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো, সুনীতের নতুন চাল, নাঃ একটা কিছু করতে হবে। কাল সন্দীপের কাছ থেকে নিউজটা নিই আগে তারপর।   পায়ে পায়ে শ্মশানের একেবারে ভেতরে চলে এলাম, কয়েকদিন আগে কাউকে হয়তো দাহ করা হয়েছে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে পোড়া কাঠের টুকরো, শহুরে শ্মশানের মতোনয়, চারিদিকে শ্মশানের সেই ঘন জঙ্গল আর নেই, অনেক পরিষ্কার হয়েছে, কাকার মুখ থেকে এই শ্মশান সম্বন্ধে অনেক গল্প শুনেছি। অনেক মিথ এই শ্মশানকে নিয়ে তৈরি হয়ে আছে, সেই মিথের খোঁজেই আমি প্রথম শ্মশানে আসি যখন আমি টেনে পরি, আমার মা-বাবাকে এই শ্মশানে একই সঙ্গে দাহ করা হয়েছিল পাশাপাশি চিতায়, সেই জায়গাটা খোঁজার অনেক চেষ্টা করেছি, কাকা কখনো বলতেন পূব পারে যে অশ্বত্থ তলা আছে, তার কোল বেয়ে পোরানো হয়েছিল, আমি সেই অশ্বত্থ গাছ খুঁজে পেয়েছি, কিন্তু তার কোল খুঁজে পাই নি, এখনো সেই গাছটা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, আমি পায়ে পায়ে সেখানে গেলাম, মা বেঁচে থাকলে তার ছেলের কীর্তি হয়তো দেখে যেতে পারতেন, মনটা ভারি হয়ে গেলো, পারতপক্ষে এই সব চিন্তা করতে ভাল লাগে না, তবু মনে এসে যায়, পরিবেশ পরিস্থিতি মেনে।   একটা সিগারেট ধরালাম। মিত্রাকে ফোন করতে ইচ্ছে করছে। পকেট থেকে ফোনটা বার করে, ডায়াল করলাম। -হ্যাঁ বল। -কোথায়? -ফিরছি। -তুই এখনো ফিরিস নি। -কি করে বুঝলি। -ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শুনতে পাচ্ছি। হাসলাম। -কেন এরকম করছিস অনি ফিরে যা না। রাত বিরেতে কোথায় কি হবে। -না রে আমার কিছু হবে না, দেখবি। বড়মা কি বললো। -বললো সাবধানে যাস, ও একটা পাগল তুই ওর পাল্লায় পরে পাগল হোস না। -কালকে তুই বড় গাড়িটা নিয়ে আসিস না। -কেনো। -এখানে রাখার জায়গা হবে না। -তাহলে। -ছোট গাড়িটা নিয়ে আসিস। তোর সঙ্গে কে আসবে। -আমি একা ড্রাইভ করে যাবো। -না। বাইরুটে একলা আসিস না। ইসমাইলকে নিয়ে আসিস। -আচ্ছা। -দাদার সঙ্গে দেখা হলো। -হ্যাঁ, আমি যখন বেরোচ্ছি তখন দেখা হলো, দাদা ঢুকছেন। -বলেছিস। -না। বড়মা বলেছেন। -ঠিক আছে। -আসার সময় তুই একটা কাজ করবি। -বল। -কিছু বাজি কিনে আনবি। -সে কোথায় পাবো। -ক্যানিং স্ট্রীটে। -এখন তো অনেক রাত হলো। দোকান সব বন্ধ হয়ে যাবে। -কটা বাজে। -আটটা। ঠিক আছে দেখছি। -কাল এখানে একটার মধ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করিস। -ঠিক আছে। ফোন কাটতে না কাটতেই অনাদির ফোন। -তুই কোথায়। হাসলাম। কেনো। -আমরা কখন থেকে এসে বসে আছি। -আমি শ্মশানে। -একা। -হ্যাঁ। দোকা পাবো কোথায়। -সত্যি তোর মাথায় কি ছারপোকা আছে। -তা আছে বইকি। -ঠিক আছে, তুই বোস।
Parent