কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ৫২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-3990879.html#pid3990879

🕰️ Posted on November 21, 2021 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1244 words / 6 min read

Parent
পরদিন সকালে নীপা এসে যখন ডাকলো, তখন সাড়ে নটা বেজে গেছে, আমি হুড় মুড় করে উঠে বসলাম, নীপা মিত্রার দেওয়া সেই লং-স্কার্ট আর গেঞ্জিটা পরেছে, গোল গলার গেঞ্জিটা নীপাকে দারুণ মানিয়েছে, মাই দুটো উঁচু উঁচু লাগছে, এই মুহূর্তে, ওর বুক ওরনাতে ঢাকা নেই। আমি ওর বুকের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। -কি দেখছো। -তোমাকে। দারুন মানিয়েছে। -মিত্রাদির চয়েস আছে, কি মোলায়েম। আমি খাটে বসে আছি, নীপার স্নান হয়ে গেছে, মাথায় শ্যাম্পু করেছে, চুলটা কালো মেঘের মতো ফুলে আছে। -মিত্রাদি ফোন করেছিলো। -তোমায়। -হ্যাঁ। -কি বললো। -তোমার কথা জিজ্ঞাসা করলো, আর বললো ওকে গুঁতিয়ে তোল, না হলে ওর ঘুম ভাঙবে না। হাসলাম। -হাসলে যে। -শেষের কথাটা বাড়িয়ে বললে। -ঠিক আছে, তুমি ফোন করে জেনে নাও। -ঠিক আছে। -ওঠো বিছানাটা গুছিয়ে দিই, তুমি দাঁত মেজে নাও। -ঘুটের ছাই আছে। -কেনো। -অনেক দিন ঘুটের ছাই-এ দাঁত মাজিনি। -তুমি সত্যিই গাঁইয়া। -আমি শাঁইয়া কে বলেছে। -কি বললে। -শাঁইয়া। গ্রামের লোকেরা যদি গাঁইয়া হয়, শহরের লোকেরা শাঁইয়া। -সত্যি তোমার মাথা বটে। হাসলাম। -তুমি ক্যাবলার মতো হেসো নাতো। -আমি ক্যাবলা। -তা নয় তো কি। -কাল রাতের কথা মনে আছে। নীপার চোখ মুখ চক চক করে উঠলো। -উঠবো দেখবে। -না না প্লিজ প্লিজ সবে স্নান করে এসেছি। -ঠিক আছে ছেড়ে দিলাম। -তোমার সারপ্রাইজের কথা বললে নাতো। -কি করে জানলে। -কাল রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তোমাদের সমস্ত কথা শুনেছি। -আমি মাথা নীচু করলাম। -দিবাকরদা তোমায় একেবারে সহ্য করতে পারে না। -এটা ওর স্বভাব। সেই ছোট থেকে। -কেনো। -ও স্কুলে ফার্স্ট হতো আর আমি সেকেন্ড, কিন্তু ফাইন্যালে গিয়ে, ওকে বিট করলাম। -মসাই বলেছে, তুমি স্টার পেয়েছিলে, সাতটা বিষয় লেটার, আচ্ছা অনিদা তুমি বাংলায় লেটার পেলে কি করে। -কি করে জানবো, হয়তো ভালো লিখেছিলাম। -জানো তোমার পর কেউ এখনো পর্যন্ত বাংলায় লেটার পায় নি। উনা মাস্টার পদে পদে সবাইকে শোনায়। -স্যার আমাকে খুব ভালবাসতেন। -তোমার মাথাটা আমার ফাঁক করে দেখতে ইচ্ছে করে। -ঠিক আছে একদিন দেখাবো। আমি বিছানা থেকে উঠে, নীপার কোমরে একটা খোঁচা মারলাম। -আ। -কি হলো। আমার হাত ধরে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বললো যাও মুখ ধুয়ে এসো। আমি বেরিয়ে এলাম। পুকুর ধারে একটা কচি বাঁশের ডগা নিয়ে দাঁতন বানালাম, বেশ কিছুক্ষণ ভাল করে রগড়ে পুকুরে মুখ ধুয়ে চলে এলাম। নীপা চা বিস্কুট নিয়ে হাজির। চা খেতে খেতে নীপাকে বললাম তুমি কখন বেরোবে। -একটা নাগাদ। -তাহলে তোমার সঙ্গে আমার সেই বিকেলে দেখা হবে। -আজকে না গিয়ে যদি কালকে যাও। -কেনো। -তাহলে তুমি আমার সঙ্গে যেতে। -তাহলে কি হতো। -আমার বুকটা ফুলে যেতো। -তোমার বুকটা তো এমনি ফোলা ফোলা দেখছি, আর ফুলিয়ো না, খারাপ দেখাবে। নীপা ছুটে এসে, আমার মাথাটা ধরে বললে, একেবারে মাথাটা ভেঙে দেবো। খালি মাথায় কু বুদ্ধি। নীপার বুক আমার মুখের কাছে। নীপাকে আজ ভীষণ মিষ্টি লাগছে। -সকাল বেলা চিকনাদা এসে একবার তোমার খোঁজ করে গেছে। আমাকে বললো এককাপ চা দে, চা খেয়ে চলে গেলো। তুমি আজ না গেলে নয়। -আরে বাবা, যেতে আসতে যতটুকু টাইম লাগে। -ঠিক আছে, যাও। নীপা মিটসেফের কাছে চলে গেলো, কি যেনো খোঁজাখুঁজি করছে, মিটসেফের ওপরে। আমি ডাকলাম, নীপা, নীপা ফিরে তাকালো। আমার মানিপার্টসটা নিয়ে এসো। নীপা আমার মানিপার্টসটা হাতে করে নিয়ে এলো। আমি ওখান থেকে তিনটে একশো টাকার নোট বার করে ওর দিকে এগিয়ে দিলাম। রাখো। -কি হবে। -রাখো না। -না। -আমি একদিন মেলায় গিয়ে কষ্ট পেয়েছি এটার জন্য, আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও। নীপার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো। নাও। নীপা টাকাটা হাতে নিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো, তুমি এতো ভাব। -ভাবি না ফিল করি। নীপা গলা জড়িয়ে আমার কোলে বসলো। কাঁদে না। কান্না দুর্বলের প্রতীক, দাঁতে দাঁত চেপে লড়বে সব সময়, কাউকে এক তিলার্ধ মাটি বিনা যুদ্ধে ছেড়ে দেবে না। নীপা আমার দিকে তাকালো, আমার চোখের আগুনে ও পরিশুদ্ধ হলো, আমার ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বললো -আমি পারবো অনিদা। -নিশ্চই পারবে, আমি তো আছি। নীচ থেকে কাকার গলা পেলাম, আমার নাম করে ডাকছে, আমি জানলা দিয়ে মুখ বার করে বললাম, কি হয়েছে। -তোর কাকীমা জিজ্ঞাসা করলো কখন বেরোবি। -এই তো স্নান করেই বেরিয়ে যাব। -খাবি না। -না । এসে খাবো। -সে কি হয় নাকি। -ঠিক আছে তুমি যাও আমি যাচ্ছি। নীপা আমার দিকে তাকালো। কাছে এসে আমায় প্রণাম করলো। -এটা কিসের জন্য। -তোমার সম্মানটা যেন আজ রাখতে পারি। -নিশ্চই পারবে। যাও।   আমি উঠে পড়ে স্নান করে রেডি হলাম, কাকীমা খাওয়ার কথা বললো, আমি বললাম, তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো, তুমি চিন্তা করো না, পারলে একটু মুড়ি আর চা দাও। সুরমাসি মুড়ি আর চা নিয়ে এলো, আমি সুরমাসিকে জিজ্ঞাসা করলাম, হ্যাঁগো চিংড়িমাছের টক আছে। সুরমাসি হাসলো। কেনো। -এসে চিংড়িমাছের টক দিয়ে পান্তা খাবো। -আছে। বাসু ঠিক সময় এলো, মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকালাম, ১১.৩৫ বাজে। বাসুকে বললাম, চা খাবি। -বানাতে হবে নাকি। তা তো বলতে পারবো না। ঠিক আছে সুরমাসিকে জিজ্ঞাসা করি দাঁড়া। সুরমাসিকে ডাকলাম। সুরমাসি বললো, আছে, নিয়ে আসছি। বাসু আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হেসে বললো, অতো বেলা পর্যন্ত ঘুমোচ্ছিলি কেনো। -তোকে আবার কে বললো। -চিকনা। -ও, হ্যাঁ নীপা বলছিলো, চিকনা আমায় খোঁজ করতে এসেছিলো। কেনো বলতো। -একটা চিঠি লিখে দিতে হবে। -কিসের জন্য। -কোথায় একটা ইন্টারভিউ দিতে যাবে। -তার মানে বায়োডাটা। -হ্যাঁ, হ্যাঁ মনে পরেছে। -ওর কি চাকরির খুব দরকার। মাঠে খেটে আর কত দিন চালাবে বলতো। অতগুলো পেট। কতই বা ধান হয়। -হুঁ। ঠিক আছে। তোর কাছে গেছিলো নাকি। -হ্যাঁ। আমি বললাম অনাদির কাছ থেকে লিখে নে। দিল গালাগালি, তোকে আমাকে দুজনকে। তোকে একটু কম আমাকে বেশি। হাসলাম। বাসু বললো, চল এবার বেরোনো যাক। আমি বললাম হ্যাঁ চল। -নীপাকে দেখছি না। -বাবাঃ সে তো আজ পৃথিবীর ব্যস্ততম মানুষ। বাসু হাসলো। আমি ভেতরের ঘরে গিয়ে কাকাকে বলে বেরিয়ে এলাম।   মোরাম রাস্তায় উঠতেই পচার সঙ্গে দেখা। মাঠে কাজ করছে। দেখা হতে, মাঠ থেকে উঠে এলো, বললো, আর ঘন্টাখানেক কাজ করে চলে যাবে। আমায় জিজ্ঞাসা করলো, নার্সিংহোমে যাচ্ছি কিনা। আমি বললাম হ্যাঁ। বেরিয়ে এলাম, আসার সময় বাসুকে সমস্ত ব্যাপারটা বললাম। -সর্বনাশ, তুই ম্যাডামকে কোথায় রাখবি। -কেনো, আমার ঘরে। -ওরে, থাকবে তো, না পালিয়ে যাবে। -আমি দশ বছর ধরে ওর সঙ্গে মিশছি, মনে হয় না ওর কোন অসুবিধে হবে। তোকে একটা কাজ করতে হবে। -কি। -গাড়িটা রাখার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। -সেতো বাজারেই রাখা যাবে আমার দোকানের সামনে। -বাজার পর্যন্ত রাস্তা হয়ে গেছে। -হ্যাঁ। -তাহলে তো কোনো চিন্তা নেই। তুই কি যেখানে থাকতিস সেখানেই আছিস। -হ্যাঁ, তবে বাজারের শেষ প্রান্তে একটা ঘর করেছি। বাড়িতে সমস্যা, তাই বউ ছেলে নিয়ে এখানে চলে এসেছি। -বাবা-মা। -বাড়িতেই আছেন। প্রত্যেক দিন সকাল বিকেল যাই। -বাড়িতে বাবা-মা ছাড়া কে আছেন। -মেজ ভাই, ছোট ভাই, আর ওদের বউ, মেজ ভায়ের বউটা সুবিধার নয়। -কি করে। -জমি জমা সব ভাগ হয়ে গেছে, চাষ করছে আর খাচ্ছে। -তোর কি খালি দোকান। -হ্যাঁ। শ্বশুরের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে ছিলাম, আর জমি বেচেছি। তাই দিয়ে দোকান। কিছুটা জমি চিকনা চাষ করে। -ব্যবসা কেমন চলছে। -চলে যায় আর কি। এখানকার পরিস্থিতি তো জানিস। সব ধারে বিজনেস, মাসে মাসে টাকা। -আমার ব্যালেন্সটা তোর বলার কথা ছিলো। -তোর কাছ থেকে আর কিছু পাবো না। -সে কি করে হয়। কাকার পাওনা, আমার পাওনা। -সব মিলিয়ে…… আর দু একশো টাকা হয়তো পাবো। -সেটাও তো টাকা নাকি টাকা নয়। -তুই এতো হিসেব করিস না। -ঠিক আছে। ফোনটা বেজে উঠলো। বাসু বাইক থামালো, পকেট থেকে বার করে দেখলাম, মিত্রার ফোন। -কোথায় এখন। -আমি পৌঁছে গেছি। -এতো তাড়াতাড়ি। -তুই আয় বলবো। তুই কোথায়। -আমার যেতে আরো মিনিট পনেরো লাগবে। -ঠিক আছে। -কি ম্যাডাম পৌঁছে গেছেন। বাসু বললো। -আর বলিস না, আমার অনেক জ্বালা, সংসার নেই তবু ভরা সংসার। -সত্যি তুই ছিলি, না হলে স্যারের যে কি হতো। -দুর ওই সব নিয়ে ভাবি না। -নারে অনি, ললিতাকে তোর কথা বলতেই, ও বিস্ময়ে আমার দিকে তাকায়। -তোর বউকে এর মধ্যে একদিন দেখতে যাব। -কবে যাবি। -কথা দেবো না। হুট করে চলে যাবো। -তুই বাইক চালাতে জানিস না। -না। -সাইকেল চালাতে পারিস তো। -পারতাম তো, এখন পারবো না। অভ্যাস নেই। -দাঁড়া তোকে বাইকটা শিখিয়ে দেবো। -না, তার আর দরকার পরবে না। -কেনো। -কলকাতায় অফিসের গাড়ি চড়ি , কোথাও গেলে প্লেন, কিংবা ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাস। বাইক চালাবো কখন। -তাও ঠিক। কথা বলতে বলতে নার্সিং হোম পৌঁছে গেলাম।
Parent