কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ৫৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-3998308.html#pid3998308

🕰️ Posted on November 22, 2021 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1284 words / 6 min read

Parent
নার্সিং হোমের দোরগোড়ায় মিত্রার গাড়িটা রাখা আছে। বাসু বাইকটা একটু সাইড করে রাখলো। আমরা দুজনে ভেতরে এলাম, সেই রিসেপশনিস্ট ভদ্রমহিলা ছিলেন, আমাদের দেখে বললেন, দাঁড়ান ম্যাডামকে ডেকে দিই। -আমার চশমা। -ওটাতো রেডি আছে, ম্যাডাম বলেছেন, আপনি এলেই খবর দিতে। মেয়েটি ভেতরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে বললো, আপনাকে একবার ভেতরে ডাকছেন। আমি ভেতরে গেলাম, বাসুও আমার সঙ্গে এলো। বুঝলাম এটা মালিকের বসার ঘর। আরও দু’তিনজন বসে আছেন, আমি কাউকে চিনতে পারলাম না, তবে ডঃ বাসুকে চিনতে পারলাম। আমাকে দেখে মুচকি হেসে মিত্রা বললো, বোস। -আমরা বাইরে আছি। মনে হচ্ছে মিটিং চলছে। -উঃ তোকে নিয়ে আর পারা যাবে না। মিটিং নয় একটু কথা বলছি। -ঠিক আছে তুই বল না, আমাকে নিয়ে এনাদেরও কিছু সমস্যা থাকতে পারে। -তোর সঙ্গে আলাপ করাবার জন্য এদের ডেকেছি। বাধ্য হয়ে বসলাম।   মিত্রা একে একে সবার সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিলো। বুঝলাম এরা সবাই ডাক্তার। এও জানাতে ভুললো না আমি কোম্পানীর ওয়ান অফ দেম মালিক। বাসু আমার দিকে একবার তাকাল, বিস্ময় ওর চোখে ঝরে পরছে, সত্যিতো আমি এই কথাটা ওদের গোপন করেছি। বাসুই প্রথম জানলো। বাসুর চোখে যেমন বিস্ময়, ঠিক তেমনি যারা এখানে বসে আছেন তাদের চোখেও বিস্ময়, ওরা যেন ভুত দেখছে, এরা নিশ্চই ভেবেছিলো, আমি এদের খুব পরিচিত তাই সব ফ্রি করে দিয়েছে। ডাক্তাররা সবাই এবার আমাকে চেপে ধরলেন, আমি খালি একটা কথাই বললাম, মিত্রা আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাই এই কথা বলছে। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে একবার হাসলো, বুবুন তুই এতবড় মিথ্যে কথাটা বলতে পারলি। আমি ওকে ফোন করবো। -না এই উপকার তোকে করতে হবে না। ফেরার দিন সময় নিয়ে আসবো জমিয়ে গল্প করা যাবে। -একটু কফি খা। -এখানে এসে, এই ঘরে বসে কফি খেতে ভালো লাগবে না। তার থেকে বরং বাইরে কোথাও খেয়ে নেবো।   আসর ভাঙলো, আমি সবার আগে বেরোলাম, কাউন্টারে এসে চশমাটা চাইতেই মেয়েটি দিয়ে দিলো, আমি ডঃ বাসুর চেম্বারে একবার গেলাম, উনি বসেছিলেন, আমি দরজাটা ফাঁক করে বললাম, আসতে পারি। দেখলাম ডঃ বাসু চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, এ কি বলছেন স্যার, ভাবটা এরকম পারলে আমার চেয়ারে আপনি বসুন। আমি চশমার ব্যাপারে ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, উনি সব বলে দিলেন, বললেন কোন অসুবিধে হবে না, দিন সাতেক রেসট্রিকশন-এ থাকতে বলুন, আর ওষুধগুলো পনেরো দিন কনটিনিউ চলবে। পনেরো দিন পর একবার দেখাতে হবে। -ঠিক আছে।   উনি একবার দেঁতো হাসি হাসলেন। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি, মিত্রা কাউন্টারের কাছে দাঁড়িয়ে। আমি বললাম চল। -দাঁড়া রবিন একটু বাইরে গেছে। -ইসমাইল আসে নি। -ওর বাচ্চাটার একটু শরীর খারাপ। রবিন এই এলাকার ছেলে, বললো সব চিনি। কিছুক্ষণ পর রবিন এলো, ধোপদুরস্ত পোষাক, অফিসের ড্রেস কোড, মাথায় টুপি কোমরে বেল্ট আমায় দেখে হেসে ফেললো, স্যার। -ও তুমি। -হ্যাঁ স্যার। -তুই চিনিস। -চিনবো মানে, ওকে সারাজীবন মনে রাখবো। -কেনো। -তোর বাড়িতে প্রথম দিন ওই ঢুকতে দেয় নি। রবীন মাথা চুলকোচ্ছে। -না স্যার মানে তখন …… -চিনতে না। এখন চিনে ফেলেছো। -হ্যাঁ স্যার। বাসু আমার কীর্তিকলাপ দেখে হাসছে, মিত্রা হাসতে গিয়েও গম্ভীর হতে চাইছে, ওর মুখটা অদ্ভূত লাগছে। -চল তাহলে। -তুই ওকে বলে দে। -গাড়িতে উঠি আগে। আমরা বেরিয়ে এলাম, দু’চারজন ডাক্তার পেছন পেছন এসেছিলো গাড়ির কাছ পর্যন্ত, আফটার অল মালকিন বলে কথা। মিত্রাকে বললাম, তুই তো গাড়ি চালাতে পারিস, এইটুকু রাস্তা তুই চালিয়ে নিয়ে চল। মিত্রা আমার দিকে একবার কট কট করে তাকালো। -পেছন দিকে বসার জায়গা রেখেছিস। মিত্রা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। -রবীন বাসুর বাইকে বসুক আমি সামনের সিটে বসি, তুই ড্রাইভ কর। মিত্রার চোখে দুষ্টুমির হাসি খেলে গেলো। বাসু আমার দিকে একবার চাইল। -আগে গাড়িটা ঠিক ঠাক রাখতে হবে, তারপর সব, বুঝলি বাসু। আর একটা কথা আনাড়ি ড্রাইভার, একটু আসতে চালাস। বাসু হাসলো। মিত্রা গাড়ি স্টার্ট দিলো। বাসু সামনে সামনে যাচ্ছে আমরা পেছনে। মিত্রা আজ একটা ঢাকাই জামদানী পরেছে, লাইট তুঁতে কালারের, তার সঙ্গে ম্যাচিং করে তুঁতে কালারের ব্লাউজ ওকে দারুণ লাগছে, অনেক দিন পর ওকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখলাম, মিত্রার চোখ সামনের দিকে, সব জানলার কাঁচ বন্ধ, ভেতরটা বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা। -এসিটা চালাবো। -চালা। মিত্রা সুইচ অন করলো। -ট্যাঙ্কি ভরে এনেছিস তো। -কেনো। -এখানে ২৫ কিমির আগে কোন পেট্রোল পাম্প পাবি না। -সে কি রে। -গ্রাম দেখার শখ এবার মিটে যাবে, আর আসতে চাইবি না। -তোকে বলেছে। রবীন আছে, ঠিক ব্যবস্থা করবে। -পেছনে এত কি নিয়ে এসেছিস। -একটা আমার জামা কাপড়ের ব্যাগ, আর একটায় ক্যামেরা, আর তোর বাজি। -এতো কি বাজি নিয়ে এসেছিস, বাজার শুদ্ধু তুলে এনেছিস নাকি। -আমি জানি না যা, ইসমাইলকে বললাম, ওর কোন পরিচিত দোকান থেকে নিয়ে এসেছে। -কত টাকার নিয়ে এসেছিস। -পয়সাই দিই নি। -তার মানে। ইসমাইল বললো, ম্যাডাম ফিরে এসে দেবেন। ওরা এখন দোকান বন্ধ করছে।   আমি সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। গাড়িটা যে চলছে বুঝতেই পারছিনা, কোন জার্কিং নেই, খুব স্মুথ চলছে, মিত্রার হাতটাও ভালো। বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। বাইরে রোদ ঝলমল করছে, কটা বাজে, রোদ দেখে মনে হচ্ছে দুটো কিংবা আড়াইটে। -কিরে বললি নাতো আমায় কেমন লাগছে। মিত্রার দিকে তাকালাম, ফিচলেমি করার খুব ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু ও গাড়ি চালাচ্ছে, ওর তলপেটের অনেকটা অংশ নিরাভরণ আমার চোখ ওদিকে চলে গেলো, সুপার্ব, কামরে খেতে ইচ্ছে করছে। -ধ্যাত। মিত্রা ব্রেক কষলো। যেখানে ব্রেক কষলো গাড়ি সেখানেই থামলো। আমার কপাল সামনের বনেটে ধাক্কা খেলো। মাথায় হাত দিয়ে মুখ তুললাম, দেখলাম বাসু বাইক থামিয়ে নেমে আসছে, রবীন ওর পেছন পেছন। মিত্রা আমার হাত চেপে ধরেছে। কানে এলো। -কি হলো। -আরে ওই ছাগলের বাচ্চাটা। -ম্যাডাম খুব সাবধানে, এখানে গাড়ি চাপা দিলে কেস খাবেন না, তবে ছাগল চাপা দিলে আপনার জরিমানা হবে। তোর আবার কি হলো। -আর বলিস না প্রাণ হাতে নিয়ে এই সিটে বসেছি। আমি এমনভাবে বললাম, সবাই হেসে ফেললো, চালা, পরেছি যবনের হাতে খানা খেতে হবে সাথে। -কি বললি। -না কিছু নয়। -খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। ওরা বাইক স্টার্ট দিলো। মিত্রা গাড়ি চালাচ্ছে। -খুব লেগেছে। -একটুও না, বনেটটা আমার কপালে চুমু দিলো। -ঠিক আছে চল গিয়ে বরফ লাগিয়ে দেবো। -বরফ! কোথায় পাবি। -কেনো, ফ্রিজ নেই। -ফ্রিজ, এমনভাবে বললাম মিত্রা হেসে ফললো। -সত্যি বল না। -এখানে ফ্রিজ বলতে পানা পুকুরের পঁচা পাঁক। -তুই সত্যি….. -নিজের চোখে দেখবি চল না। অনি সত্যি না মিথ্যে। -কি করবো বল ছাগলের বাচ্চাটা লাফাতে লাফাতে….. -দেখ এখনো আমি বিয়ে করি নি, বাবা হই নি….. -বিয়ে করার অত শখ কিসের, পরের বউকে নিয়ে রয়েছো, তাতেও শখ মিটছে না। -যতই হোক পরের বউতো। -মিত্রার গলাটা গম্ভীর হয়ে গেলো, নিজের বউ করে নে। চুপ চাপ থাকলাম, মিত্রার চোখ সামনের দিকে, চোখে জল টল টল করছে। আমি ওর সিটে হাত রাখলাম, -এরকম করলে এনজয়টাই নষ্ট হয়ে যাবে। মিত্রার হাত স্টিয়ারিংয়ে একবার ডান দিক একবার বাঁদিক করছে। -তুই ওরকম বললি কেনো। -আচ্ছা বাবা আর বলবো না। চকে এসে বাসু দাঁড়ালো, আমরাও দাঁড়ালাম। চা খাওয়া হলো, মিত্রা তাকিয়ে তাকিয়ে চারিদিক দেখছে, বিস্ময়ে ওর চোখ বিচ্ছুরিত, বাঁশের তৈরি বেঞ্চে বসে চা খেলাম, মিত্রা এক চুমুক দিয়ে আমার দিকে তাকালো, সত্যি অনি তোর কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। আমি ওর দিকে চেয়ে হাসলাম, রবীন একটু দূরে দূরে, বাসু বললো, ম্যাডাম এবার রবিন চালাক, আর মিনিট পনেরোর পথ। মিত্রা বললো কেনো আমি পারবো না। পারবেন, তবে রবিন চালাক। তাই হোক। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুই কোথায় বসবি। -আমি বাসুর পেছনে বসছি। ওর মন পসন্দ হলো না। মুখ দেখেই বুঝতে পারছি, কিন্তু মুখে কিছু বললো না। রবিন স্টিয়ারিংয়ে বসলো। আমরা আধাঘন্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম। বাসু মনে হয় ফোন করে সব ঠিক করে রেখেছিলো। গাড়ি থামতেই সবাই ঘিরে ধরলো। আমি বললাম বাসু ব্যাগগুলো পৌঁছোবার ব্যবস্থা করতে হবে। -ও তোকে ভাবতে হবে না। বরং চল তোদের পৌঁছে দিয়ে আসি। -তোর বাইকে তিনজন। মিত্রার দিকে তাকালাম। মিত্রা ঘার নাড়ছে। যাবে না। রবিন বললো ম্যাডাম আমাকে যদি ছুটি দেন কালকেই চলে আসবো, মিত্রা বললো, ছুটি মানে, তুমি কোথায় যাবে, রবীন বললো, পাশের গ্রামেই আমার আত্মীয়ের বাড়ি, তাছাড়া এখান থেকে গাড়ি আর কোথাও নিয়ে যাওয়া যাবে না, আপনাকে পায়ে হেঁটেই…. আমি হাসলাম, ঠিক আছে যাও, কালকে সকালে চলে আসবে কিন্তু। মিত্রা আমার দিকে তাকালো। -এখান থেকে মিনিট কুড়ি হাঁটতে হবে। -তাই চল। রাসপূর্নিমার মেলা বলে আজ এই জায়গাটা ফাঁকা ফাঁকা। না হলে এতোক্ষণ ভীড় হয়ে যেতো। আমরা হাঁটতে আরম্ভ করলাম, সত্যি মিনিট কুড়ি লাগলো। বাসু তার আগেই বাড়িতে সব পৌঁছে দিয়েছে, কাকা ওকে জিজ্ঞাসা করেছে, এত ব্যাগ বাগিচা কার, বাসু কোন জবাব দেয় নি, চলে এসেছে, রাস্তায় আমার সাথে দেখা হতে খালি বললো, সারা পারা মনে হয় রাষ্ট্র হয়ে গেছে। তোর সারপ্রাইজ রসাতালে যাবে। -তুই তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে আয়। -ঠিক আছে।
Parent