কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ৫৪

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-3998386.html#pid3998386

🕰️ Posted on November 23, 2021 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 661 words / 3 min read

Parent
দুজনে মিলে খামারে এসে দাঁড়াতেই কাকা, কাকীমা, সুরমাসি ছুটে এলেন। সবাই অবাক মিত্রাকে দেখে, মিত্রা সবাইকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। কাকা চেঁচামিচি আরম্ভ করে দিয়েছে, আমি বললাম, তুমি থামো, ওর জন্য তোমায় ব্যস্ত হতে হবে না, কাকীমা ছুটে গিয়ে সরবত নিয়ে এলেন, এক হুলুস্থূল ব্যাপার। মিত্রা আরাম করে বেঞ্চিতে বসেছে, পায়ে ধুলো জড়িয়ে আছে। আমি বললাম, দেরি করিস না, বেলা গড়িয়ে গেছে, হাত-মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নিই, মেলায় যেতে হবে তো। মিত্রা চোখের ইশারায় বাথরুমের খোঁজ করছে, বাধ্য হয়ে বললাম, চল আমার ঘরে। আমি ওর ক্যামেরার ব্যাগ আর জামা কাপড়ের ব্যাগ হাতে নিয়ে, ও বাড়িতে গেলাম, মিত্রা আমার পেছন পেছন। আমি ওপরের ঘরে এলাম, লাইট জালালাম, মিত্রা ঘরে ঢুকেই, বললো আগে বাথরুম কোথায় বল। -বাথরুম! -ন্যাকা আমার তলপেট ফেটে যাচ্ছে। -এই গ্রামের গোটাটাই বাথরুম। তুই যেখানে খুশি বসে ব্যবহার করতে পারিস। -সত্যি বল না, অনি। -সত্যি বলছি। -আমি কষ্ট পাচ্ছি, তুই মজা করছিস। -আচ্ছা আয়, আমার সঙ্গে, নিচে নেমে এসে পেছনের খিড়কি দিয়ে পুকুর ধারে এলাম, এখানে কর। -ধ্যাত। -তোকে তো কালকে বলেছিলাম। -তুই মিথ্যে বলেছিলি। ওদিক দিয়ে যদি কেউ দেখে ফেলে, ওদিকটা জনমানব শূন্য, পুকুরের ধারেই খাল, যার পাশ দিয়ে বাঁধে বাঁধে এতোক্ষণ এলি। -আচ্ছা তুই ভেতরে যা। -কেনো। -যা না। মিত্রা আমাকে ঠেলে ভেতরে ঢুকিয়ে দিলো, খিড়কি দরজা ভেজিয়ে দিল। আমি ওপরে চলে এলাম, ব্যাগ গুলো ঠিক ঠাক ভাবে গুছিয়ে রাখলাম। -অনি । -কি হলো। -কোথায় তুই। -এই তো ওপরে। -তুই শিগগির নীচে আয়। দৌড়ে নীচে এলাম, মিত্রা খিড়কি দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে কাঠ। -কি হয়েছে। ওই দেখ। আঙুল দিয়ে নিচটা দেখাল, দেখলাম একটা গিরগিটি ওর দিকে জুল জুল করে তাকিয়ে আছে। আমি হেট করতেই গিরগিটিটা দৌড় লাগালো, মিত্রা পরি কি মরি করে আমার বুকে এসে ঝাঁপিয়ে পরলো। থর থর কাঁপছে। আমি হাসছি। -তুই হাসছিস। -কি করবো কাঁদবো। -ধ্যাত। -সিনেমায় গ্রাম দেখো, এবার অরিজিন্যাল গ্রাম দেখো। -অনি ও অনি। কাকীমার গলা। -চল কাকীমা ডাকছেন। হ্যাঁ যাই কাকীমা। -সাবানটা নিয়ে নে, হাত মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নিই। -কি খাওয়াবি। -পান্তা আর চিংড়িমাছের টক। খাবি তো। -হ্যাঁ। কোন দিন খাই নি তো। -খাস নি। খাবি। -কেমন খেতে। -খেলেই জানতে পারবি। ওপরে এলাম, ও ব্যাগ খুলে, ওর লিকুইড সোপ বার করলো। কাপড় খুলবো না। -এখন নয় খাওয়া দাওয়ার পর। -প্যান্টিটা ভিজে গেছে। -উঃ, তোকে নিয়ে আর পারা যাবে না। -তুই আসতে বললি কেনো। -আমি বললাম কোথায়, তুই তো নাচলি। -খুলে ফেলি। -খোল। -তুই ওদিকে তাকা। -কেনো, দেখে ফেলবো। -উঃ, তাকা না। -আমি পেছন ফিরলাম, মিত্রা কাপড় তুলে প্যান্টি খুললো, রাখবো কোথায়? -ওই তো আলনাটায়। -কেউ দেখে ফেলে যদি। -দেখলে কি হবে। -তুই না কিছু বুঝিস না। -বোঝার দরকার নেই। চল। মিত্রা কাপড়টা একবার ঠিক ঠাক করে নিলো। ওকে নিয়ে এ বাড়িতে এলাম, কারা যেনো এসেছে, আমাদের দেখলো, কাকা চেয়ারে বসে আছেন, আমরা ভেতর বাইর (বাড়ির ভেতরের উঠান) দিয়ে পুকুর ঘাটে এলাম, সুরমাসি, কাকীমা পেছন পেছন এলেন। -পুকুরে নামবি, না জল তুলে এনে দেবো। -পুকুরে নামবো। সুরমাসি বললেন, ওকে বালতি করে জল তুলে এনে দে অনি, হরকা আছে কোথায় পরে যাবে। লাগবে এখন। -লাগুক। -তুই রাগ করছিস কেনো। সুরমাসি হাসছেন। -শখ হয়েছে যখন, নামুক। কিরে নামবি। -হ্যাঁ, তুই হাতটা ধর। -ওই নিচের ধাপিটায় উবু হয়ে বসতে পারবি তো। -পারবো। -দেখ ওইটুকু জায়গা, খুব স্লিপারি। -আমি সাঁতার জানি। আমি মিত্রার হাত ধোরলাম, মিত্রা আস্তে আস্তে নামছে। -জুতোটা খুলিস নি। -কেনো। -ওটা কি জলে ভেঁজাবি। -খুলে আসি তাহলে। -যা। -তুই আয়। -আমি কি তোর সঙ্গে ওপর নিচ করবো। -আচ্ছা বাবা আমি যাচ্ছি। ওপরে উঠতে গিয়ে মিত্রা পা হরকালো, কাকীমা ওপর থেকে ধর ধর ধর করে চেঁচিয়ে উঠলেন, আমি কোন প্রকারে ওকে জাপ্টে ধরে টাল খেয়ে পুকুরে পরলাম, আমার হাঁটু পর্যন্ত জলে ভিজলো। ও চোখে হাত ঢেকে আছে। নীপা ওপর থেকে তার স্বরে চেঁচাচ্ছে, বুদ্ধি দেখো, নিজে পুকুরে ঠিক মতো নামতে পারে না, মিত্রা দিকে সঙ্গে করে নেমেছে। সম্বিত ফিরতে পুকুর পারে তাকিয়ে দেখলাম, অনাদি, বাসু, চিকনা, পচা, পাঁচু, সঞ্জয়। নিপা ঘাটে নেমে এসেছে। ওরা সবাই হো হো করে হাসছে, নীপা প্রথমে একচোট আমায় নিলো, তারপর মিত্রাকে আমার কাছ থেক ছিনিয়ে নিয়ে বললো, সত্যি অনিদা তোমার কোন বুদ্ধি নেই। মিত্রাদিকে নিয়ে কখনো এই পিছল ঘাটে নামে। আমি চুপচাপ। মিত্রার দিকে তাকালাম, ও চোখ মেরে হাসছে। মাথা নীচু করে, মুখ-হাত-পা ধুয়ে ঘাট থেকে উঠে এলাম।
Parent