কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ৫৬

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4009106.html#pid4009106

🕰️ Posted on November 24, 2021 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1001 words / 5 min read

Parent
আমি ওপরে গেলাম। নীপা, মিত্রা দুজনে শাড়ি পরেছে, এত সুন্দর লাগছে, চোখ ফেরাতে পারছি না। আমাকে দেখেই নীপা বললো, এই প্যান্ট জামাটা পরে ফেলো। আমি একটু আসছি। নীপা বেরিয়ে গেলো। আমি আজ কোন কথা বললাম না। মিত্রার দিকে তাকালাম, দারুন মাঞ্জা দিয়েছিস, আজ রাতে তোকে চটকাবো। এখন চটকাস না, প্লিজ সাজগোজটা নষ্ট হয়ে যাবে। -দে কোনটা পরতে হবে। -খাটের ওপর আছে। -হঠাৎ হৈ হৈ শব্দ। -কি হলো বলতো। -ও তুই বুঝবি না। আমি কোন কথা না বলে প্যান্টটা খুললাম, মিত্রা এগিয়ে এলো, -একদম হাত দিবি না, নীপা এখুনি চলে আসবে, -আসুক আমার জিনিসে আমি হাত দেবো। খাটে বসে, জিনসের প্যান্টটা পরলাম, সেদিন মিত্রা যেটা কিনেছিলো, গেঞ্জিটাও লাগালাম। খারাপ লাগছে না, আসতে পারি। নীপার গলা। -আসুন। ঢুকেই ফস করে আমার গায়ে কি ছিটিয়ে দিলো। -ইস এটাও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিস। কে দেখবে বলতো। -দেখার অনেক লোক আছে। চলোনা মেলায়। নীপা বললো। -তাড়াতাড়ি করো। ওরা বেচারা আমাদের জন্য বসে আছে। মেলায় ওদের অনেক কাজ। -তুই যা পাঁচ মিনিটের মধ্যে যাচ্ছি। মিত্রা ভুরুতে শেষ টান দিচ্ছে। আমি নিচে চলে এলাম, চারিদিকে সেন্টের গন্ধ ম ম করছে। ওই জন্য তোরা তখন চেঁচাচ্ছিলি। -তুই জানিস অনি, মেয়েটা আজ আমাদের মারবে। একটু ভালো করে কান পাত, শুনতে পারবি, নাম ধরে ধরে কেমন ডাকছে। -কে আছে ওখানে। -তুই চিনতে পারবি না, শান্তনু বলে একটা ছেলে আছে। -রথ কখন বেরোবে। -এই সাতটা নাগাদ। -অনেক দিন রথের দড়িতে হাত দিই নি, চিকনা ঠাকুরকে একটু মিষ্টি কিনে দিস। -কেনো তুই যাবি না। -আমি হেসে ফেললাম। -মিত্রা, নীপা নীচে নেমে এলো। ওদের চোখের পাতা আর নড়ছে না। সবাই অবাক হয়ে ওদের দেখছে। চিকনা আমার হাত ধরে দাঁতে দাঁত চিপে বললো, অনি, আমি ম্যাডামের বডিগার্ড হবো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি কোথায় থাকবো। নীপা দেখে ফেলেছে। -চিকনাদা কি বলছে গো অনিদা। -তোমরা দারুন মাঞ্জা দিয়েছো তাই। নীপা একবার কট কট করে চিকনার দিকে তাকালো। চিকনা ইশারা করে দেখালো, মেলায় গিয়ে গলাটা কাট। নীপা হেসে ফললো। মিত্রা আমার পাসে এসে বসল। ঠিক আছে তো। আমি হাসলাম। -চল। আমরা তো রেডি। আমার ব্যাগ দুটো নিয়ে যেতে হবে। -কিসের ব্যাগ। -ক্যামেরা আর, সাজগোজের। -কেনো। -আমি সিডি বানাবো। -ব্যাটারি শেষ হয়ে গেলে। -কেনো কারেন্ট নেই। -মেলায় হ্যাচাক পাবি। কারেন্ট পাবি না। -ও অনি থাক না। অনাদি বললো। -দেখেছো অনাদি ও আমাকে কেমন করে। -ঠিক আছে চলুন ম্যাডাম আপনার কোন অসুবিধে হবে না, সব ব্যবস্থা করে দেবো। -চিকনা, মিত্রা আর নীপাকে নিয়ে তুই যা। -আমি! চিকনা বললো। -হ্যাঁ। -না। -তুই যা। আমি বরং ব্যাগ বই। -ওরা আবার গেলো কোথায়। -ভেতরে গেলো। -সত্যি অনি তোর ধৈর্য্য আছে। বাসু বললো। -আরো নিদর্শন পাবি, চল একবার মেলায়, দেখতে পাবি। -অনিদা কি বলছে গো আনাদি দা। নীপা বললো। -কিচ্ছু না। আমি মিত্রাকে বললাম, তুই অনাদির বাইকের পেছনে নীপাকে সঙ্গে করে চলে যা। মিত্রা কিছুতেই বাইকে উঠবে না। অগত্যা অনাদিকে বললাম, তোরা এগিয়ে যা। -হ্যাঁরে ট্রলি পাঠাবো। -যাবে। -আমার বাড়ির সামনে থেকে যাবে। -দূর না থাক, তোরা যা, আমি হেঁটে যাচ্ছি। অগত্যা ওরা বেরিয়ে গেলো। আমি বাসু আর মিত্রা হাঁটতে আরম্ভ করলাম। বাসুর বাইক পাঁচু চালিয়ে নিয়ে গেছে। সন্ধ্যে হয় নি, তবে বেশি দেরি নেই, ঘরির দিকে তাকালাম, পাঁচটা পাঁচ। প্রায় আধ ঘন্টার পথ। তার মানে মেলায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। মিত্রাকে দেখাতে দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি, এইটা বড়মতলা, ওই যে সেই পেয়ারা গাছ। ওটা তাঁতী পারা, ওটা চন্দ্রের পারা, ওই দিকটা হাঁড়ি পারা, ওই যে দূরে বনটা দেখছিস, ওইটা দীঘা আড়ি। মিত্রা আমার হাতটা শক্ত করে ধরলো। -কাল আমায় নিয়ে আসবি। -আসবো। -তোর মুখ থেকে গল্প শুনেছি এতদিন, এবার চাক্ষুষ দেখবো। হ্যাঁরে কতোক্ষণ লাগবে যেতে। বাসুর দিকে তাকালাম, হ্যাঁরে বাসু, এভাবে হাঁটলে কতোক্ষণ লাগবে। -আধঘন্টা। -আমি বললে বিশ্বাস করতিস না। -তুই সব সময় হেঁয়ালি করিস তাই বিশ্বাস করতাম না। বাসু হাসলো। -হ্যাঁগো বাসু, জানোনা তোমার বন্ধুটিকে। আমি দশ বছর ওর সঙ্গে মিশছি আমি জানি। দীঘা আড়ির কাছে আসতে একটা হৈ হল্লা শুনতে পেলাম, মিত্রাকে বললাম, ওই দূরে আলোর রোশনাই দেখতে পাচ্ছিস। -হ্যাঁ। -ওইটা মেলা। -এতোটা যেতে হবে এখনো। -হ্যাঁ। -মেলায় গিয়ে একটা ঠান্ডা খাওয়াস। -ঠান্ডা! -বল সেটাও পাওয়া যাবে না। কঁত কঁত করে খালি জল গিলতে হবে। -ঠিক আছে আপনি চলুন ব্যবস্থা করে দেবো। বাসু বললো। -দেখ, তোর মতো ঢেপসা নয়। বাসু হাসলো। আমি ওর হাতটা একটু চিপে দিলাম। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো। মেলার কাছাকাছি এসে, সন্ধ্যে হয়ে গেলো। আমি টর্চ জাললাম, মিত্রা আমার হাত শক্ত করে ধরলো। -উঃ। -কি হলো। -পায়ে কি জড়িয়ে গেছে। মিত্রা তারস্বরে চেঁচাচ্ছে, আমাকে জড়িয়ে ধরে, আমি ওর পায়ে টর্চের আলো ফেললাম, দেখি একটা খড়ের টুকরো, নীচু হয়ে জুতোর ফাঁক দিয়ে খড়ের টুকরো বার করলাম। বাসু হাসছে। তোকে নিয়ে আমার বড় জ্বালা। -কি করবো, আমি ইচ্ছে করে জড়িয়েছি। ঠিক আছে চল। মিত্রা আমার বাম হাতটা চেপে ধরে আছে, ওর সুডৌল বুকের স্পর্শ পাচ্ছি। আস্তে করে বললাম, সামনে বাসু আছে। -থাক। -কি ভাবছে। -ভাবুক। এরকম অন্ধকার রাস্তায় এলি কেনো। -তোর জন্য লাইট পাবো কোথায়। -অনাদিকে বল, ও তো পঞ্চায়েত। শেষের কথাটা বাসুর কানে গেলো। বাসু ঘুরে একবার হাসলো। ম্যাডাম দেখছেন তো আমরা কি ভাবে বেঁচে আছি। -এই অন্ধকারে অনি কালকে একা শ্মশানে ছিলো। -ওরে বাবা। -কি হলো। বাসু আবার থমকে দাঁড়ালো। দেখ পায়ে কি ঢুকেছে। আমি আবার ওর পায়ের কাছে বসলাম, চোরকাঁটা। শাড়ির পাড়টা চোর কাঁটায় ভরে গেছে। ওকে কিছু বললাম না, চল এসে গেছি, মেলায় গিয়ে ব্যবস্থা করছি। -কি বলবি তো। -উঃ পা ঝারিস না। এগুলো বার করতে সময় লাগবে। -বলনা কি আছে। -চোর কাঁটা। বাসু ফিক করে হাসলো। এই অন্ধকারেও মিত্রার মুখটা দেখতে পেলাম, পাকা আপেলের মতো রং। মেলার মুখে ওরা সবাই দাঁড়িয়েছিলো। আমরা যেতেই চিকনা বললো, নীপার হুকুম, ম্যাডামকে গ্রিনরুমে নিয়ে যেতে হবে। আমি বললাম, তুই নিয়ে চলে যা। -তুইও চল। মিত্রা বললো। -আমি ওই মহিলা মহলে গিয়ে কি করবো। তুই সেলিব্রেটি, দেখনা ওখানে গিয়ে মালুম পাবি। মিত্রা এমনভাবে আমার দিকে তাকালো, বাসু চিকনা পর্যন্ত হেসে ফেললো। -ঠিক আছে চল, হ্যাঁরে চিকনা আর কে কে আছে। -ওই সব মিউজিশিয়ান মেক-আপ ম্যান এই সব। -মিত্রার ক্যামেরার ব্যাগ কোথায়। -ওখানে, নীপার জিম্মায়। -কয়েকটা পাঁপড় আর জিলিপি নিয়ে আয় না। -চল সব ব্যবস্থা আছে। -তুই কি রাক্ষস। মিত্রা বললো। -কেনো। -এই তো এক পেট ভাত গিলে এলি। -ভাত নয় পান্তা। এতোটা যে হাঁটালি। -আমি হাঁটালাম কোথায়, তুইতো হাঁটালি। -তুই চিকনার বাইকের পেছনে বসলেই হাঁটতে হতো না। তার ওপর উপরি বোনাস, দুবার পা ধরালি। -অনি খুব খারাপ হয়ে যাবে বলছি, তুই যা নয় তাই বলছিস। আমাদের দুজনের কথা-বার্তায় চিকনা বাসু হাঁসতে হাঁসতে প্রায় মাটিতে গড়িয়ে পরে।
Parent