কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ৫৭

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4009205.html#pid4009205

🕰️ Posted on November 26, 2021 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1476 words / 7 min read

Parent
স্টেজের পাশে, গ্রিনরুম, চিকনা পর্দা সরিয়ে নীপা বলে চেঁচাতেই নীপা ছুটে এলো। মিত্রাকে হিড় হিড় করে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে গেলো। আরে থাম থাম, শাড়িতে পা জড়িয়ে উল্টে পরে যাবো, কে কার কথা শোনে, নীপা আজ হাতের চাঁদ পেয়েছে। আমি আমের আঁটি, আমে দুধে মিশে গেছে। আঁটি গড়াগড়ি খাচ্ছে। কি আর করবো, পকেট থেকে সিগারেট প্যাকেট বার করে চিকনাকে একটা দিলাম, বাসুকে একটা দিলাম, নিজে একটা ধরালাম। একটা ছেলে একটা স্প্রাইটের বোতল নিয়ে এসে হাজির, বাসুর দিকে তাকালাম, এটা কি। -ম্যাডামের জন্য। -তোর কি মাথা খারাপ। -কেন। -ও কি একা খাবে নাকি। -তাহলে । -এখুনি হুকুম করবে। আর নেই, ওদের জন্য নিয়ে আয়। -তাহলে। -আগে স্টক দেখ কত আছে। তারপর পাঠাবি। -ম্যাডাম বললো ঠান্ডা খাবে। -এমনি সাদা জল নিয়ে আয়। -তুই শালা একদম……. বাসু বললো। চিকনা খিল খিল করে হেসে ফেললো। বেশ জমেছে মাইরি। বাসু অগত্যা ছেলেটিকে বললো, কটা বোতল আছে। -বড় বোতল গোটা কুড়ি হবে। -ঠান্ডা হবে তো। -বরফ দেওয়া আছে। -ছোট বোতল কি আছে রে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম। -থামস আপ, স্প্রাইট, পেপসি…… -একটা স্প্রাইটের ছোট বোতল নিয়ে আয়। ছেলেটি চলে গেলো। এখান থেকেই বুঝতে পারছি মিত্রার প্রাণ ওষ্ঠাগত। সত্যি কথা বলতে গেলে আজ ও-ই এই মেলার সেলিব্রিটি। অনেক বড় বড় আর্টিস্ট আমাদের কাগজে স্থান পাওয়ার জন্য সম্পাদককে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে যায়। আর আজ ও যেচে এই অজ পাড়াগাঁয়ের একটা মেলায় এসেছে। একটা ফোন করলেই কালকের কাগজের ফ্রন্ট পেজে একটা কলম লেখা হয়ে যাবে। কিন্ত কেউ জানেই না ও এখন এখানে। আমি তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছিলাম, ও বেশ সামলাচ্ছে, কেউ হাত মেলাচ্ছে ওর সঙ্গে, কেউ পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করছে, কেউ জড়িয়ে ধরছে। নীপা খুশিতে ডগমগ, ওর মাইলেজ আজ অনেক বেড়ে গেছে।   -বাসু দা নিয়ে এসেছি। দেখলাম আর একটা ছেলে। -তুই। -ও গিয়ে বললো, অনেক লাগবে তাই। -ভাল করেছিস। -যা, ওই ভদ্রমহিলাকে গিয়ে দিয়ে আয়। বাসু দেখিয়ে দিল। ছেলেটি ভীড় ঠেলে ওর কাছে পৌঁছতেই মিত্রা গেটের দিকে তাকালো। বুঝলাম ও কিছু বলছে ওদের, তারপর এগিয়ে এলো। -বাসু ঠেলাটা বোঝ এবার। বাসু আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। মিত্রা এদিকেই এগিয়ে আসছে, আমি মিটি মিটি হাসছি। কেছে এসেই, ওর প্রথম কথা, তোর মতো বেআক্কেলে ছেলে আর দেখি নি। -কেনো, আমি কি দোষ করলাম। -আমি কি একা একা খাবো। -এখানে তোর জন্য অনেক কষ্টে একটা বোতল জোগাড় করা হয়েছে। -সবার জন্য পারলে আন নাহলে আমার চাই না। -কি বাসু বাবু, পালস বিটটা দেখেছো। মিত্রা আমার দিকে কট কট করে তাকিয়ে আছে। -ঠিক আছে তুই খা, ওদের জন্য আনছে। -না সবার জন্য আনুক তারপর খাবো। -তাহলে আমি খাই, বলে ছেলেটির হাত থেকে বোতলটা নিলাম, মিত্রা ছোঁ মেরে আমার কাছ থেকে বোতলটা ছিনিয়ে নিল, তুইও খাবি না। এটা চিকনাকে দে। -চিকনা তুই খা। তোর ভাগ্য ভালো। আমার কোমরে চিমটি পরলো, আমি উ করে উঠলাম। ছেলেটিকে বললাম, কটা বোতল আছে রে। -গোটা পঞ্চাশ হবে। -সবগুলো নিয়ে আয়। ঠান্ডা তো। -হ্যাঁ, বরফের পেটিতে আছে। -যা বাবা, বাঁচা। -চিকনা, বোতলটা শেষ করে আমাদের টিমটাকে একটু খবর দে। চিকনা হাসছে। -তারপর ম্যাডাম, বলুন কেমন বুঝছেন। -জানিস বুবুন সত্যি এখানে না এলে খুব মিস করতাম। -একটা ছোট্ট থ্যাঙ্কস যদি এ পোড়া কপালে পরতো। -দেবো এক থাপ্পর। দেখছো বাসু তোমার বন্ধুকে, খালি টিজ করবে। -এটা টিজ হলো। -তাহলে কি হলো, প্রেম হলো। চিকনা হাসতে গিয়ে বিষম খেলো, মিত্রা ওর দিকে এগিয়ে গেলো, বাসু হাসছে, চিকনা মিত্রাকে খক খক করে কাশতে কাশতে কাছে আসতে বাধা দিচ্ছে, ইশারায় বলছে কিছু হয় নি। মিত্রা আমার দিকে তাকালো, ব্যাপারটা এরকম, তোর জন্য দেখ কি হচ্ছে। চিকনার বিষম থামলো। ছেলেটি একটা আইসক্রিমের গাড়ি নিয়ে এসে হাজির। -এটা কি রে। -এর মধ্যেই তো আছে। -ভাল করেছিস। আমি খাবো না, চিকনা আমার জন্য পাঁপড় আর জিলিপির ব্যবস্থা কর। -আমিও খাবো। মিত্রা বললো। -এটাও কি সবার জন্য। -হলে ভালো হয়। -ঠিক আছে আগে জল খা। -ওদের ডাকি। -ডাক। মিত্রা নীপা বলে ডাকতেই নীপা ছুটে এলো। মিত্রা বললো, ওদের ডাক, কোল্ড ড্রিংকস খাবে। নীপা আমার দিকে তাকালো, সেতো অনেক লোক। -তোরা যারা পার্টিসিপ্যান্ট তাদের ডাক। -সেওতো তিরিশ জনের ওপর। -তোমায় পাকামো করতে হবে না, মিত্রাদি স্পনসর করছেন, পারলে মেলার সবাইকে খাওয়াতে পারেন। -অনিদা খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি। -তুই ওর কথায় কান দিস না, ও ওই রকম। নীপা ছুটে ভেতরে চলে গেলো। ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বার করতেই দেখি সন্দীপের ফোন। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি আসছি দাঁড়া। ওখান থেকে বেরিয়ে এলাম। বাসুও আমার পেছন পেছন বেরিয়ে এলো। তুই রাখ আমি তোকে রিংব্যাক করছি। মেলা থেকে একটু দূরে চলে এলাম, একটা কলরোল কানে ভেসে আসছে, আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ, চারিদিকে আলোর চাদর বিছিয়ে রেখেছে, কে বলে অন্ধকার, খেতের আল ধরে সোজা চলে এলাম টেস্ট রিলিফের ছোট বাঁধে, বাসু আছে, জায়গাটা মেলা থেকে প্রায় তিনশো মিটার দূরে, এখানে মেলার আওয়াজ ম্রিয়মান, বাসুকে বললাম, দেখতো আমার ফোনে রেকর্ডিংটা কোথায় আছে, বাসু বুঝতে পারলো, কিছু একটা হয়েছে, বললো দে দেখিয়ে দিচ্ছি। আমি ভয়েস মুড আর রেকর্ডিং মুড দেখে নিলাম। সন্দীপকে ফোন করলাম। -হ্যাঁ বল । -তুই এখন কোথায়। -আমার বাড়িতে। -মেলায় ঘুরে মজমা নিচ্ছ। -তুই জানলি কি করে। -এখানে ব্রডকাস্টিং হচ্ছে। -তাই নাকি। -তাহলে বলছি কি করে তোকে। ম্যাডাম তোর সঙ্গে আছে। তুই একটা প্লেবয় ওদের ফ্যামিলির দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছিস। -ওদের ফ্যামিলিতে প্রবলেম আছে এ খবর জানাজানি হলো কি করে। -সুনীতদা রটাচ্ছে। -বাঃ, ইনফর্মারটা বেশ গুছিয়ে খবর পাঠাচ্ছে বল। -হ্যাঁ। করিতকর্মা ছেলে, ওকে নাকি চিফ রিফোর্টার বানাবে সুনীতদা। -তাই। -অফিসের খবর বল। -আজ সনাতন বাবুর ঘরে তুমুল হট্টগোল হয়েছে। -কারা করেছে। -চম্পকদা লিড করেছে, সুনীতদা আর ওর চেলুয়াগুলো ছিল। -পুরোনো কারা কারা আছে। -এখন বোঝা মুশকিল। সমুদ্রের ঢেউ-এর মতো সকলে সুনীতদার শিবিরে ভীড়ে গেছে। -তাই। -হ্যাঁ। তুই গেলি গেলি ম্যাডামকে সঙ্গে নিলি কেনো। -কি হয়েছে বলবি তো। -ম্যাডামের সঙ্গে তোকে জড়িয়ে হুইসপারিং ক্যাম্প চলছে, তোকে ফোটাবার ধান্দা। তুই হচ্ছিস চম্পকদা আর সুনীতদার পথের কাঁটা। -হ্যাঁ সেতো সেই দিন থেকে যেদিন মিত্রার ডাকা মিটিংয়ে ওদের ঝেরেছিলাম। -ম্যাডামের সঙ্গে তোর সম্পর্ক কিরে অনি। -তোর জেনে লাভ। -বলনা। জানতে ইচ্ছে করছে, আমার চাকরি যায় যায়, কালকে আমাকে শোকজের নোটিস ধরাবে শুনতে পাচ্ছি। -কেনো। -এখনো জানি না। তবে পর্শুদিনের এডিটোরিয়াল পেজে একটা ভুল খবর ছাপা হয়েছিল। -ওই পেজের দায়িত্বে কে আছে। -অশোক। -তাহলে তোকে কেনো শোকজ করবে। -নিউজটা আমি করেছিলাম। -ভুল নিউজ করলি কি করে। কপি কোথায়। -খুঁজে পাচ্ছি না। নিউজটা ভুল নয়, অনেক পুরোনো। -ছাপা হলো কি করে। -সেটাইতো আমি বুঝতে পারছি না। -ইনফর্মার ছেলেটি কে, নাম জানতে পেরেছিস। -আমাদের পরিচিত কেউ নয়। -থাকে কোথায়। -তোদের গ্রামেই থাকে মনে হচ্ছে। -নাম বল। -তুই আমাদের প্রেসে অতীশবাবুকে চিনিস। -না। কোনদিন প্রেসে আমাকে যেতে দেখেছিস। -ঠিক। অতীশবাবু ছেলেটির পিসেমশাই। -ও। -কি বলেছে। -সব কি জানতে পারছি। তবে তোরা ওখানে আছিস, ঘোরা ঘুরি করছিস সেই নিয়ে একটা কেচ্ছা। -ম্যাডামের ক্ষতি হচ্ছে এতে। আমি বললাম। -ছাড়তো ওরা বড়লোক, তোর মতো দুচারটে ছেলেকে ওরা কেপ্ট হিসাবে রাখে, তারপর প্রয়োজন ফুরালে ছুঁড়ে ফেলে দেবে, কোটি কোটি টাকার মালিক ওরা। -ঠিক বলেছিস। আমি এতটা বুঝি নি। ম্যাডাম আস্তে চাইলো তাই নিয়ে এলাম। -বোকাচোদা। -সত্যি আমি বোকাচোদা। -গান্ডু। আমার ভীষণ ভয় করছে রে সন্দীপ চাকরি গেলে খাবো কি। -দাঁড়া তুই ধরে রাখ। আমার একটা ফোন এসেছে, কিছু নতুন নিউজ পাবো। -ঠিক আছে। আমি ধরে রইলাম, বাসু আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, ও কিছুই বুঝতে পারছে না, তবে সামথিংস রং এটা বুঝে নিতে ওর অসুবিধে হচ্ছে না। যতই হোক ও একজন ব্যবসায়ী। থট রিডিংটা ও জানে। -হ্যাঁ। শোন। -বল। ছেলেটার নাম দিবাকর মন্ডল। ও অতীশবাবুর শালার ছেলে, পড়াশুনায় বেশ ভালো, রেজাল্টও ভাল। বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটি থেকে বাংলায় এমএ করেছে। -তোর ইনফর্মার কে। -সুনীতদার ঘরেই কাজ করে। -ঠিক ঠিক দিচ্ছে তো না এডিটোরিয়াল পেজের মতো হবে। -তুই এ ভাবে বলিস না, তোর কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করছি। -বল। -সুনীতদা ওর বায়োডাটা নিয়ে আজ সনাতন বাবুর সঙ্গে ঝামেলা করেছে, ওকে আজই এ্যাপয়েন্টমেন্ট দিতে হবে। -সনাতন বাবু কি বলছে। -ম্যাডাম এলে সব হবে, বলে এড়িয়ে গেছেন। -কাগজ বেরোচ্ছে। -গত সাতদিনে এক লাখ সার্কুলেশন পরেছে। -কেনো। -ডিউটাইমে বেরোয় নি। -সনাতন বাবু কি করছে। -সনাতনবাবুকে মানলে তো। -ও। -আর দুজন নতুন এসেছে কিংশুক আর অরিন্দম বলে। যেহেতু ম্যাডামের এ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ওদের কাছে আছে, তাই কেউ কিছু বলে ওঠার সাহস পাচ্ছে না, তবে ওরা এক সাইড হয়ে গেছে। -পার্টিগত দিক থেকে কোনো ফর্মেসন। -হ্যাঁ একটা হয়েছে। তবে এখনো প্রকাশ্যে নয়। -তোকে যেখানে যেতে বলেছিলাম, গেছিলি। -গেছিলাম, কিছু কাজ হয়েছে। সেই জন্য তো এখনো পার্টি ইনভলভ হয় নি ফর্মেসনও হয় নি। তুই এলে তোর সঙ্গে কথা বলে ব্যাপারটা ঠিক হবে। -তুই আজকের লেটেস্ট নিউজ আমায় দে যত রাতেই হোক। তোর আজ কি ডিউটি। -নাইট। -গুড। তুই এখন কোথায়। -ময়দানে প্রেস ক্লাবের লনে। -প্রেস ক্লাবে ব্যাপারটা চাউর হয়েছে নাকি। -আমার হাউসের বোকাচোদা গুলো আছে না। কম পয়সায় মাল খেয়ে বাওল করেছে। -ঠিক আছে। ছেলেটার নাম কি বললি, দিবাকর মন্ডল। -হ্যাঁ তুই মালটাকে খুঁজে বার কর। শুয়োরের বাচ্চা এক নম্বরের খানকির ছেলে। -খিস্তি করিস না। -খিস্তি করছি সাধে, একটা ছেলের জন্য হাউসটার আজ সর্ব্বনাশ হতে বসেছে। -ঠিক আছে ঠিক আছে। রাখি, রাত একটার পর তোকে ফোন করবো। -না। আজ কাগজ ছাড়তে ছাড়তে দেরি হবে। -ট্রেন ধরাবি কি করে। -এই কদিন ফার্স্ট ট্রেন ধরছে না। -ঠিক আছে। রেকর্ডিংটা সেভ করলাম। বাঁধের ওপর ঘাসের ওপর বসে পরলাম। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। বাসুর দিকে তাকালাম। -অনাদিকে খবর দেবো। ওর দিকে হাত দেখিয়ে বললাম না। ও আমার পাশে বসে আমার কাঁধে হাত রাখলো। -অফিসে কোনো গন্ডগোল। মাথা নারলাম। -দিবাকরের ব্যাপারে কি বলছিলো। আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না। আমায় একটু একা থাকতে দে। তুই চলে যা। মিত্রা খুঁজলে বলবি, আমি একটু ঘুরতে গেছি। আমি এখানেই থাকবো, না হলে ওই স্কুল ঘরে। আচ্ছা।
Parent