কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ৬২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4024236.html#pid4024236

🕰️ Posted on November 28, 2021 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 888 words / 4 min read

Parent
ওপরে এলাম। মিত্রাকে আমার প্ল্যানের সমস্ত ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললাম, ওর চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে, তুই কি বলছিস। -আমি যা বলছি তাই কর। নীপা ফোন তুলে নিলো, ভয়েস অন করে রেকর্ডিং চালু করে দিলাম। সনাতন বাবু হ্যালো করে উঠলেন। -অফিসের কি খবর। -ম্যাডাম আমাকে রেহাই দিন, আমি আর পারছি না, এরা কিছুই মানছে না। -ঠিক আছে। আমি টেলি কনফারেন্সে আজ এগারোটার সময় মিটিং করবো, ওদের সবাইকে সাড়ে দশটার মধ্যে অফিসে হাজির হতে বলুন, সবাইকে আমার ঘরে বসাবেন, আর শুনুন সব রেকর্ডিং করবেন। -ঠিক আছে ম্যাডাম। -আমি ঠিক এগারোটার সময় ফোন করবো। আপনার মোবাইলে। -আচ্ছা ম্যাডাম। নীপা মুড়ি চা নিয়ে এলো, আমার দিকে কিছুতেই তাকাচ্ছে না, আমি খাটে পা ঝুলিয়ে হাতের ওপর হেলান দিয়ে একটু পেছনে হেলে বসে আছি। মিত্রা আমার পাশে খাটের ওপর, নীপা মুড়ির বাটিটা খাটের ওপর রেখে আমার পায়ের কাছে বসে, আমার কোলে মাথা রেখে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো, প্রথমটায় ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পরে ছিলাম, আমায় ক্ষমা করো অনিদা। আমি ওর মাথায় হাত রাখলাম, কেনো। -আমি তোমাকে না জানিয়ে চিকনাদাকে ফোন করেছিলাম, তুমি বিশ্বাস করো আমার মাথাটা তখন কোনো কাজ করছিল না। -দূর এ সব নিয়ে এতো কেউ ভাবে। -না গো মিত্রাদি ওই রকম রেগে যেতে পারে, আমি ভাবতেই পারি নি। -রাগটাও তো মানুষের একটা ধর্ম। -কই তুমি তে কোনো দিন রেগে যাও নি। -আমি তো বোকা। বোকারা কখনো রাগতে পারে। এমনভাবে কথাটা বলে ফেললাম, এই সিচুয়েশনেও নীপা কাঁদতে কাঁদতে হেসে ফেললো, মিত্রা হো হো করে হেসে বিছানায় গড়িয়ে পরলো। -তুই হাসছিস না কাঁদছিস। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম। -কেনো হাসছি। -আমি ভাবলাম তুইও কাঁদছিস। নীপা উঠে গিয়ে মিত্রার ওপর ঝাঁপিয়ে পরলো। -হ্যাঁরে তোর বাথরুম পায় নি। -পেয়েছে, তুই মুখ পাত। -উঃ মিত্রাদি তুমি না। -তোর অনিদা যেরকম, সেরকম উত্তর না দিলে বিপদ আছে। -না কালকের পর তোকে…… -বুবুন খারাপ হযে যাবে। -নীপা চোখ পিট পিট করছে, তার মানে। -কি বলবো। -প্লিজ অনি। -ঠিক আছে। -তাহলে ওটা করবি। -হ্যাঁ। না না…….. -ওরা দুজনেই হো হো করে হেসে উঠলো। ওরা সবাই ঠিক সময়ে এসেছে, দিবাকরও এসেছে, আমার মুখে কোনো বিকার নেই। আমার এই ঘরে এখন লোক দাঁড়াবার জায়গা নেই, আরো দু’চারজন নতুন মুখ এসেছে, আমি তাদের চিনতে পারলাম না। বুঝলাম অনাদির চাল। অনাদি কারুর সঙ্গেই আলাপ করিয়ে দিলো না। দিবাকর এসেই কাঁদুনি গাইতে আরম্ভ করেছে, আমি ওকে ভাল মুখে সব কথা স্বীকার করে নিতে বললাম, ও কিছুতেই স্বীকার করবে না, বার বার একি কথা অনাদি ওকে প্ল্যান করে ফাঁসিয়েছে। আমি মিত্রার দিকে তাকালাম ,মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে। দিবাকরের ফোনটা বেজে উঠলো, আমি চিকনার হাত থেকে সেটটা নিলাম, ভয়েস অন করে দিবাকরের হাতে দিয়ে বললাম, তোর হবু বস ফোন করেছে, রেসপন্স কর। নাহলে চিকনার কালকের কথাটা মনে রাখিস, একেবারে বেগড় বাই করবি না, খুব সাধারণ ভাবে, যে ভাবে গত চারদিন কথা বলেছিস সেই ভাবে বলবি। চিকনা রেকর্ডিংটা টিপে দে। চিকনা রেকর্ডিংটা অন করে দিলো। -হ্যালো হ্যালো। -বলুন। গলাটা গম্ভীর, আমি দিবাকরের দিকে তাকালাম, হাতের ইশারা করলাম। -আরে তুমি কোথায়, কালকে থেকে কতবার তোমায় ফোন করেছি, কি বলবো। লেটেস্ট খবর কি বলো। -খুব একটা ভালো নয়। আমি দিবাকরের দিকে কটকট করে তাকালাম। -কেনো। -ওরা কাল রাতে এখান থেকে চলে গেছে। কোনো ট্রেস করতে পারছি না। -ইস তারমানে দীঘা ফিগা পালিয়ে গেছে বলো। -হবে হয়তো। মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো, আমি ওর মুখ টিপে ধরলাম। -শোনো তুমি আজ কোলকাতায় আসছো তো। -না। এখানে একটা কাজ পরে গেছে। -এ মা, এই কিছুক্ষণ আগে ম্যাডামের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে আমি সব বললাম, উনি তো ভয়ে কাবু, আরে কিছু হোক ছাই না হোক সম্মানের একটা ব্যাপার আছে তো, ওই রকম একটা ফালতু ছেলের সঙ্গে ঢলানি। এই ফাঁকে আমি আমার কাজ গুছিয়ে নিলাম, বাধ্য হয়ে উনি সব মেনে নিলেন। আমি অনির জায়গায় তোমায় বসাবো, তুমি যে কি উপকার করলে। আরে হুঁ হাঁ করছো না কেনো। দিবাকর আমার দিকে তাকালো, আমি ইশারা করলাম, কথা তাড়াতাড়ি শেষ করতে। -আপনার কথা শুনছি। ঠিক আছে কিছুক্ষণ পর আপনাকে ফোন করছি। -এনি নিউজ। -রাখছি। সঞ্জয় ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে কেটে দিয়ে রেকর্ডিংটা সেভ করলো। মিত্রা মুখ নীচু করে বসে আছে। -এবার বল দিবাকর। তোর কিছু বলার আছে, দিবাকর হাঁউ মাউ করে কেঁদে উঠলো। চিকনা ওকে প্রায় মেরেই দিচ্ছিলো, সঞ্জয় ধরে ফেললো। -বল, তোর যদি কিছু বলার থাকে। দিবাকর ছুটে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরলো, আমায় বাঁচা অনি, এরা পার্টির সব ওপর তলার লোক, আমায় আস্ত রাখবে না। আমি ওদের দিকে তাকালাম। ঘরের সব হো হো করে হাঁসছে। অনাদি একে একে সবার সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিলো। ওদের লোকাল কমিটির ভদ্রলোক বললেন, আপনার কথা অনেক শুনেছি, আজ চাক্ষুষ দেখলাম। সত্যি আপনার বুদ্ধির প্রশংসা করতে হয়। অনাদির কাছে আপনার সমস্ত ঘটনা শুনেছি। আমাদের সৌভাগ্য আপনি ম্যাডাম একসঙ্গে আমাদের এই অজগ্রামে পায়ের ধুলো দিয়েছেন। আমি হাসতে হাসতে বললাম, যেখানে আপনি দাঁড়িয়েছেন, ওইখানে আমি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলাম। ভদ্রলোক অপ্রস্তুত হয়ে পরলেন, কোথায় দাঁড়াবেন ঠিক করতে পারছে না। -কটা বাজে। -এগারোটা পাঁচ। দিবাকরের দিকে তাকালাম, তুই চুপচাপ থাকবি না মুখ-হাত-পা বেঁধে ওখানে ফেলে রাখবো। দিবাকর কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো, আমি তোর পায়ের কাছে বসবো। নীপা আমার পাশে এসে বসলো, ও এই অনিদাকে দেখে নি। মুখ চোখ শুকিয়ে কাঠ। ও ঠিক ঠাহর করতে পারছে না, ব্যাপারটা কি ঘটছে। মিত্রা এবার তোর খেলা শুরু কর। ঘরে পিন পরলে আওয়াজ হবে না। সবাইকে বললাম চুপ চাপ থাকবেন। কোন কথা বলবেন না। মিত্রা যা যা বলেছি খুব ঠান্ডা মাথায়, কখনই উত্তেজিত হবি না। মনে রাখবি এ্যাডমিনিস্ট্রেসনের কাছে মা-বাবা-ভাই-বোন-আত্মীয় স্বজন বলে কিছু নেই, ব্যাপারটা এইরকম আই এম করাপ্ট বাট গুড এ্যাডমিনিস্ট্রেটর। মিত্রার চোখে মুখের চেহারা বদলে গেলো। এটা সবাই লক্ষ্য করলো। -দিবাকর কোনো আওয়াজ করবি না, যদি বাঁচতে চাস। তোর মোবাইলটা কোথায়? চিকনা এগিয়ে দিলো। দিবাকরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম, ইশারায় কাজ করবি। -তুই যা বলবি তাই করবো। -ঠিক আছে।
Parent